প্রচ্ছদ / জায়েজ নাজায়েজ / বর্তমানে কাউকে দাসী হিসেবে রাখার সুযোগ আছে?

বর্তমানে কাউকে দাসী হিসেবে রাখার সুযোগ আছে?

প্রশ্ন

শফিক বিন জাকির

দাসিবান্দী রাখার প্রথা কি এখনো আছে, কেউ রাখলে কি হালাল হবে?

উত্তর

بسم الرحمن الرحيم

দাসী বলতে কাদের বুঝায়? এটা ভালো করে প্রথমে বুঝতে হবে।

দাসী বলতে স্বাধীন নারীরা নয়। যাদেরকে বর্তমান জমানার কতিপয় বিলাসী লোকেরা স্বাধীন মেয়েদের ‘রক্ষিতা, সুগার ডেডি ইত্যাদি বিকৃত নামে যে কাজ করে থাকে এরাও দাসী নয়।

যে  স্বাধীন মেয়েদের বাজারে বিক্রি করা হয়। ইসলামে দাসী বলতে তারাও উদ্দেশ্য নয়।

উদ্দেশ্য ঐ সকল মেয়েরাও নয়, যাদের ক্ষমতাশীল ব্যক্তিরা দুর্বল মেয়েদের জবরদস্তীমূলক নিজের করায়ত্বে নিয়েছে।

বাদী দাসী দ্বারা উদ্দেশ্য শরয়ী দাসী। শরয়ী দাসী বলতে  বুঝায়, ঐ সকল অমুসলিম মহিলা, যারা জিহাদের পর কাফেরদের থেকে গনীমতের মাল হিসেবে প্রাপ্ত হয়েছে। তবে যদি তারা আগে থেকে মুসলমান থাকে, তাহলে তাদেরকে গনীমত হিসেবে পাবার পরও দাসী হিসেবে রাখা যাবে না। তারা আযাদ তথা স্বাধীন।

এসব যুদ্ধলব্ধ অমুসলিম মহিলারা হলো শরয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে মূলত দাসী।

এসব দাসীদের ক্ষেত্রে ইসলামী রাষ্ট্রপ্রাধান কয়েকটি কাজ করে থাকেন। এক হলো তাদের এমনিতেই মুক্ত করে দিবেন। কিংবা মুক্তিপণ দিয়ে মুক্ত করবেন। অথবা তাদের বদলে কাফেরদের কাছে বন্দী হওয়া মুসলমানদের মুক্ত করবেন।

তবে যদি তাদের এমনিতেই মুক্ত করে দেয়া ইসলামী রাষ্ট্রের জন্য উপকারী না হয়, তাছাড়া তাদের পক্ষে মুক্তিপণও কেউ আদায় না করে, এছাড়া বন্দীবিনিময়ও তাদের দ্বারা সম্ভব না হয়, তাহলেই কেবল ইসলামী রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান এসব দাসীদের গাজীদের মাঝে  বন্টন করে দিবেন।

এর মাধ্যমে যুদ্ধ বন্দী এসব নারীদের একটি আশ্রয় তৈরী হয়। সেইসাথে তাদের সাথে উত্তম ব্যবহারের তাকীদ কুরআন ও হাদীসে বর্ণিত হয়েছে।

গাজীরা এসব দাসীপ্রাপ্তির পর তাদেরকে অন্য কারো সাথে বিয়ে দিয়ে দিতে পারে, বিয়ে দিয়ে দিলে উক্ত দাসীর সাথে মনীবের শারিরীক সম্পর্ক হারাম হয়ে যায়। বিয়ে না দিয়ে উক্ত দাসীকে মনীব বিয়েও করতে পারে, কিংবা এমনিতে তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করতে পারে। তবে যদি উক্ত দাসীর পেটে বাচ্চা  চলে আসে, তাহলে সে উম্মে ওয়ালাদ হিসেবে মনীবের মৃত্যুর পর এমনিতেই আযাদ হয়ে যাবে।

গোলাম বাদীর প্রথাটি ইসলাম ধর্মের অনেক আগে থেকেই প্রচলিত ছিল। ইহুদী, খৃষ্টান, হিন্দুসহ সকল ধর্মাবলম্বীদের মাঝেই এ প্রথা ব্যাপকভাবে প্রচলিত ছিল।

ইসলাম আসার আগে কয়েক প্রকারে গোলাম বাদী বানানো পদ্ধতি ছিল। যেমন

১ যুদ্ধ বন্দীদের গোলাম বাদী বানানো।

২ অর্থের অভাবে মানুষ নিজেকে বা নিজের সন্তানকে কারো কাছে গোলাম হিসেবে বিক্রি করে দিতো।

৩ অপরাধের কারণে কিংবা জুয়ায় হেরে যাবার কারণে কাউকে গোলাম বাদী বানানো হতো।

৪ কাউকে চুরি এনে জবরদস্তীমূলক গোলাম বাদী বানানো হতো।

ইসলাম আসার পর, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুদ্ধলব্ধ গোলাম বাদী ছাড়া বাকি তিন প্রকারকে শুধু হারামই করে নি, বরং মারাত্মক গোনাহের কাজ ও ভয়ানক আজাবের ধমকি প্রদান করে তা বন্ধ করে দিয়েছে।

এছাড়া বিভিন্ন কাফফারায় এসব গোলাম বাদীদের আযাদের কথাও শরয়ী বিধানে সন্নিবিষ্ট করে একথাই পরিস্কার প্রমাণ করছে যে, এ প্রথা রাখা ইসলামের মাকসাদ নয়। তবে জরুরতের কারণে তা বিদ্যমান রাখা হয়েছে।

যেহেতু গোলাম বানানো ইসলামের হুকুম নয়, বরং প্রয়োজনের খাতিরে তা রাখা হয়েছে। সুতরাং ইসলাম গোলাম ও দাসপ্রথাকে জীবিত রাখতে চায় এ দাবী করাটা বাস্তবসম্মত নয়।

সুতরাং বর্তমানে কোন মহিলাকে দাসী বাদী হিসেবে রাখা জায়েজ নয়। কারণ, দাসী হবার যেসব শর্ত ইসলামে আবশ্যক করা হয়েছে, যেমন ইসলামী জিহাদ থেকে কাফের যুদ্ধলব্ধ নারী, ইসলামী রাষ্ট্রপ্রদানের নির্দেশ ইত্যাদি শর্ত বর্তমান বাংলাদেশসহ অধিকাংশ মুসলিম প্রধান রাষ্ট্রে বিদ্যমান নেই।

তাই কাউকে এখন দাসী বলে ইসলাম সমর্থিত দাসীর মতো আচরণ করা জায়েজ হবে না।

 

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ قَالَ اللهُ ثَلاَثَةٌ أَنَا خَصْمُهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ رَجُلٌ أَعْطَى بِي ثُمَّ غَدَرَ وَرَجُلٌ بَاعَ حُرًّا فَأَكَلَ ثَمَنَهُ وَرَجُلٌ اسْتَأْجَرَ أَجِيرًا فَاسْتَوْفَى مِنْهُ وَلَمْ يُعْطِ أَجْرَهُ

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা ঘোষণা করেছেন যে, কিয়ামতের দিবসে আমি নিজে তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে বাদী হবো। এক ব্যক্তি, যে আমার নামে ওয়াদা করে তা ভঙ্গ করল। আরেক ব্যক্তি, যে কোন আযাদ মানুষকে বিক্রি করে তার মূল্য ভোগ করল। আর এক ব্যক্তি, যে কোন মজুর নিয়োগ করে তার হতে পুরো কাজ আদায় করে এবং তার পারিশ্রমিক দেয় না। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং-২২২৭, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২০৭০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২০৮৬]

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তা’লীমুল ইসলাম ইনস্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

প্রধান মুফতী: জামিয়াতুস সুন্নাহ লালবাগ, ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া ইসলামিয়া দারুল হক লালবাগ ঢাকা।

পরিচালক: শুকুন্দী ঝালখালী তা’লীমুস সুন্নাহ দারুল উলুম মাদরাসা, মনোহরদী নরসিংদী।

ইমেইল– ahlehaqmedia2014@gmail.com 

আরও জানুন

অযুতে কনুই ধৌত না করে নামায পড়লে নামায আদায় হবে কি?

প্রশ্ন আসলে আমি অযু করে নেওয়ার সময় আমার হাতের কনুইয়ের উপর ও উপরিভাগে পানি লাগে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *