প্রচ্ছদ / প্রশ্নোত্তর / সাক্ষীদের সামনে কাউকে বউ পরিচয় দিলে কি বিবাহ হয়ে যায়?

সাক্ষীদের সামনে কাউকে বউ পরিচয় দিলে কি বিবাহ হয়ে যায়?

প্রশ্ন

আসসালামুয়ালাইকুম। আমাকে সাহায্য করুন। আমি সমাধান না পেলে আত্মহত্যা করে মরে যাওয়া ছাড়া আর কোনো পথ আমার খোলা নেই। আমি পা ধরতেছি আমাকে সাহায্য করুন।

আমাদের বিয়ের আগে আমাদের মধ্যে অবৈধ হারাম সম্পর্ক ছিল। ‘হাসি ঠাট্টার ছলে বিয়ে হয়ে যায়’ আমরা এই বিষয়ে জানতাম না কখনো।

কিন্তু যখন শুনলাম তখন থেকে ভয় পাচ্ছি। পূর্বে আমার স্বামী কখনো আমাদের বন্ধু বান্ধবীদের সামনে আমাকে নিজের বউ বলে ডেকেছে কি না ভালো করে মনে করতে পারছিনা। ডাকলেও ছেলে মেয়ে সব বন্ধুদের সামনে ডেকেছে নাকি শুধু মেয়েদের সামনে ডেকেছে পরিষ্কার করে মনে করতে পারছিনা। হয়ত তখন আমি মুখে কিছু বলিনি কিন্তু শুনে হয়ত খুশি হয়েছিলাম। এই খুশি হওয়া কি মৌন সম্মতি ধরা হবে। যতদুর মনে পড়ছে এসবের মাধ্যমে বিয়ে হয়ে গেছে আমরা তখন থেকে স্বামী স্ত্রী হয়ে গেছি হালাল হয়ে গেছি তেমন কিছু ভাবতাম না। আমাকে একা একা অনেক সময় বউ ডাকত তাই সন্দেহ হচ্ছে সবার সামনে ডেকেছিল কি না। একবার মনে হচ্ছে আমাদের মধ্যে এইরকম হয়েছে আরেকবার মনে হচ্ছে না এইরকম হুবহু হয়তো হয়নি। ঘটনা গুলো ৩/৪ বছর আগের। ভয়ে আমার স্বামীকেও কিছু জিজ্ঞাসা করছিনা। তার ভুলে যাওয়ার সমস্যা আছে সে গন্ডগোল লাগিয়ে কথা বলবে।

একটাই বিষয় মনে আছে একদিন কলেজ যাওয়ার সময় আমাদের বন্ধু বান্ধবীরা বলেছিল এতক্ষন তোর বউয়ের জন্য অপেক্ষা করছিলি নাকি আমরা দুজনেই শুনেছিলাম আমরা হেসেছিলাম আর আমার স্বামী বলেছিল হ্যা আমার বউয়ের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। কিন্তু আমরা জানতাম ই না এভাবে বিয়ে হয় কি না আর তখন আমাদের বিয়ের কোনো উদ্দেশ্য ও ছিলোনা। আমাদের ইচ্ছা ছিলো আমরা পারিবারিক ভাবে বিয়ে করব। আর আমাদের বিয়ের আগে এই অবৈধ সম্পর্কে থাকার কারনে এবং বয়স কম থাকার কারণে আমাদের বাড়ি পাশাপাশি থাকায় আমরা অনেক যিনা করেছি। জানি না হাসি ঠাট্টার ছলে ওইটা বিয়ে হয়েছে কি না। কিন্তু আমরা মাঝে মাঝে রাতে দেখা করার সময় কিছু সময়ের জন্য দেখা করতে গিয়ে সব রকম যিনা করে ফেলেছিলাম। ওই সময় আমরা একজন আরেকজনের গোপনাঙ্গ স্পর্শ করেছিলাম সহবাস ছাড়া সবরকম যিনা করেছিলাম। কিন্তু আমরা স্বামী স্ত্রীর মতো একসাথে রাত কাটাইনি। আর তা ছিল দেখা করতে গিয়ে শুধু কিছু সময়ের জন্য। আমাদের মধ্যে কোনো সহবাস ও হয়নি। আমাদের মধ্যে ওইরকমই নির্জনবাস হলেও সহবাস হয়নি সুযোগ ছিল আবার সুযোগ ছিলনা কারন ধরা পড়ার ভয় ছিল। আর আমরা জানতামনা তখন হাসি ঠাট্টার ছলে বিয়ে হয়েছে কিনা। কিন্তু পারিবারিকভাবে প্রবাসে থেকে উকিল নিয়োগ করে বিয়ের পর আমাদের মধ্যে এখনো পর্যন্ত নির্জনবাস বা সহবাস দেখা সাক্ষাৎ কিছুই হয়নি তার আগেই একদিন ঝগড়া করে আমার স্বামী ভিন্ন ভিন্ন শব্দে তালাক দিয়েছিল। তখন দেখলাম বিয়ের পর সহবাসের আগে ভিন্ন ভিন্ন শব্দে তালাক দিলে একটি তালাক হয় তাই আমরা আবার বিয়ে করলাম। বর্তমানে কিছুদিন আগে স্বামীর কাছে চলে এসেছি। কিন্তু দিন দিন এইসব বিষয়ে জানার পর থেকে ভয়ে মাথা ছিড়ে যাচ্ছে চিৎকার করে কাদতেছি। আমরা কি আর সংসার করতে পারব। নাকি আলাদা হয়ে যাব। আমাদের সাহায্য করুন।

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

উপরোক্ত বিবরণ অনুপাতে আপনার স্বামীর বিয়ে পূর্ব সময়ে আপনাকে ‘বউ’ বলা ও আপনার চুপ থাকার মাধ্যমে কোন বিয়ে সম্পন্ন হয়নি।

তারপর উকীল নিয়োগের মাধ্যমে বিয়ে হবার পর যেহেতু ভিন্ন শব্দে তিন তালাক দিয়েছে। তাই নির্জনবাস ছাড়া উক্ত তালাক প্রদান করায়, কেবল প্রথম তালাকটি পতিত হয়েছিল।

তাই দ্বিতীয়বার আবার বিয়ে করার দ্বারা আপনারা আবার স্বামী স্ত্রী হিসেবে বহাল হয়ে গেছেন।

সুতরাং এখন আপনার স্বামী আর দুই তালাকের মালিক রয়েছেন। তাই আপনাদের ঘরসংসারে কোন সমস্যা নেই।

পেরেশান হবার কিছু নেই।

বিঃদ্রঃ বিয়ের আগে এভাবে অবৈধ সম্পর্ক রাখা মারাত্মক কবিরা গোনাহ। আপনাদের উভয়ের উচিত আল্লাহর কাছে খাস দিলে তওবা করা।

আর আত্মহত্যা করা মহাপাপ। এক পাপ করে এর প্রায়শ্চিত্ব হিসেবে আরেকটি পাপ করার চিন্তা করা কোন বুদ্ধিমানের কাজ নয়। তাই আপনার এহেন চিন্তা ও কথা সম্পূর্ণ অনুচিত ও গর্হিত কথা। এমন কথা ও চিন্তা থেকে মুক্ত থাকাও জরুরী।

فلو قال بحضرة الشهود هى امرأتى وأنا زوجها وقالت: هو زوجى وأنا امرأته لم ينعقد النكاح لأن الإقرار إظهار لم هو ثابت وليس بإنشاء الخ (البحر الرائق، زكريا-3\149، كويته-3\84)

إذا قال لامرأة هذه امرأتى وقالت المرأة: هذا زوجى وكان ذلك بمحضر من الشهود لا يكون نكاحا وكذا لو قال بالفارسية زن وشوشيم لا يكون ذلك نكاحا، (المحيط البرهانى-4\10، الفتاوى التاتارخانية-4\14، رقم-5383)

رجل وامرأة أقر بالنكاح بحضرة الشهود قال: هى امرأتى وأنا زوجها وقالت: هو زوجى وأنا امرأته وقال الآخر نعم لا ينعقد النكاح بينهما لأن الإقرار إظهار لما هو ثابت فهو فرع سبق الثبوت الخ (فتح القدير، زكريا واشرفية-3\185، كويته-3\104)

وفى الفتاوى رجل وامرأة أقر بالنكاح بين يدى الشهود وقالا بالفارسية مأزن وشوئيم لا ينعقد النكاح بينهما هو المختار، ولو قال: اين زن من است بمحضر من الشهود فقالت المرأة إين شوى من است ولم يكن بينهما نكاح اختلف المشائخ فيه والصحيح أنه لا ينعقد النكاح (خلاثة الفتاوى، اشرفية-2\4)

فإن فرق الطلاق (بغير الدخول بها) بانت بالأولى ولم تقع الثانية، والثالثة، وذلك مثل أن يقول أنت طالق، طالق، طالق، لأن كل واحد إيقاع على حدة (هداية، اشرفى-2\37، الفتاوى الهندية-1\373، جديد-1\440)

وإن فرق بوصف، أو خبر، أو جمل بعطف، أو غيره بانت بالأولى لا إلى عدة (الدر المختار مع رد المحتار، زكريا-4\512، كرتاشى-3\286)

وإذا كان الطلاق بائنا دون الثلث فله أن يتزوجها فى العدة وبعد انقضائها (هداية، اشرفى-2\399)

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।

পরিচালক: শুকুন্দী ঝালখালী তা’লীমুস সুন্নাহ দারুল উলুম মাদরাসা, মনোহরদী নরসিংদী।

ইমেইল– ahlehaqmedia2014@gmail.com 

আরও জানুন

কুয়েতে প্যাকেটজাত গোস্ত খাওয়ার হুকুম কী?

প্রশ্ন আসসালামু আলাইকুম। আমি বর্তমানে কুয়েতে থাকি। আমার প্রশ্ন হলো এখানকার মার্কেটে যে সমস্ত প্যাকেটিং …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আহলে হক্ব বাংলা মিডিয়া সার্ভিস