প্রশ্ন
জুমআর নামাযে কুনুতে নাজেলা পড়ার হুকুম কী? বাংলাদেশের একজন আহলে হাদীস শায়েখ আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ তার ছেলেকে পুলিশ গ্রেফতার করার পর তিনি জুমআর নামাযে কুনুতে নাজেলা পড়েছেন।
এর অনুসরণে অনেককেই দেখা যাচ্ছে যে, ফিলিস্তিনে ইজরাইলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে জুমআর নামাযে কুনুতে নাজেলা পড়তে। এ বিষয়ে শরয়ী সমাধান জানিয়ে বাধিত করবেন।
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
কুনুতে নাজেলা এটা ইসলামী শরীয়তের একটি আমল। আর শরয়ী আমল সেভাবেই করতে হবে, যেভাবে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবাগণ রাজিআল্লাহু আনহুম থেকে তার পদ্ধতি বর্ণিত হয়েছে। নিজের পক্ষ থেকে এর কোন সূরত আবিস্কার করার সুযোগ নেই।
ফুক্বাহায়ে আহনাফের মতে কেবলমাত্র ফজরের নামাযে কুনুতে নাজেলা পড়ার সুযোগ রয়েছে। এছাড়া অন্যান্য নামাযে কুনুতে নাজেলা পড়ার কোন সুযোগ নেই। যদি পড়ে, তাহলে খেলাফে সুন্নাত কাজ বলে ধর্তব্য হবে।
শুধুমাত্র ইমাম শাফেয়ী রহঃ এর মতে ফজরের নামায ছাড়া অন্যান্য নামাযেও কুনুতে নাজেলা পড়ার কথা পাওয়া যায়।
কিন্তু জুমআর নামাযে কুনুতে নাজেলা পড়ার কথা ইমাম শাফেয়ী রহঃ সহ চার ইমামগণ থেকেও বর্ণিত নেই।
এছাড়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিংবা কোন সাহাবী জুমআর নামাযে কুনুতে নাজেলা পড়েছেন মর্মে বর্ণনা পাওয়া যায় না।
এ কারণেই হযরত তাউস রহঃ, আত্বা রহঃ, মাকহুল রহঃ এবং ইবরাহীম নাখয়ী রহঃ এর মতে জুমআর নামাযে কুনুতে নাজেলা পড়া বিদআত।
عَنْ طَاوُسٍ، قَالَ: الْقُنُوتُ يَوْمَ الْجُمُعَةِ بِدْعَةٌ
হযরত তাউস রহঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, জুমআর নামাযে কুনুত (নাজেলা) পড়া বিদআত। [মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা-১/৪৬৮, হাদীস নং-৫৪১৩]
عَنْ مَكْحُولٍ، أَنَّهُ كَانَ يَكْرَهُ الْقُنُوتَ يَوْمَ الْجُمُعَةِ
হযরত মাকহূল রহঃ থেকে বর্ণিত। তিনি জুমআর নামাযে কুনুত (নাজেলা) পড়াকে মাকরূহ বলতেন। [মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা-১/৪৬৮, হাদীস নং-৫৪১৪]
عَنْ إِبْرَاهِيمَ، قَالَ: الْقُنُوتُ فِي الْجُمُعَةِ بِدْعَةٌ
হযরত ইবরাহীম নাখয়ী রহঃ বলেন, জুমআর নামাযে কুনুত (নাজেলা) পড়া বিদআত। [মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা-১/৪৬৮, হাদীস নং-৫৪১৫, মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক-৩/১৯৪, হাদীস নং-৫২৮৯]
وعن الإمام مالك رحمه الله أنه سأل ابن شهاب عن القنوت يوم الجمعة فقال : محدث
হযরত ইমাম মালেক রহঃ কে হযরত ইবনে শিহাব রহঃ জুমআর নামাযে কুনুতে নাজেলা পড়া বিষয়ে প্রশ্ন করলে, উত্তরে ইমাম মালেক বলেন, এটা নবআবিস্কৃত বিষয়। [আলইস্তিজকার-২/৭৬]
عَنِ ابْنِ جُرَيْجٍ، عَنْ عَطَاءٍ قَالَ: قُلْتُ لَهُ: الْقُنُوتُ فِي رَكْعَتَيِ الْجُمُعَةِ؟ قَالَ: لَمْ أَسْمَعْ بِالْقُنُوتِ فِي الْمَكْتُوبَةِ إِلَّا فِي الصُّبْحِ، وَأَنْكَرَ أَنْ يَكُونَ فِي الْجُمُعَةِ قُنُوتٌ
ইবনে জুরাইজ রহঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি হযরত আত্বা রহঃ কে জিজ্ঞাসা করলাম জুমআর নামাযে কুনুতে নাজেলা বিষয়ে। তখন তিনি বললেন, আমি ফরজ নামাযের মাঝে ফজরের নামায ছাড়া কুনুতের কথা শুনিনি, এবং তিনি জুমআর নামাযে কুনূত পড়ার মতকে প্রত্যাখ্যান করেন। [মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক-৩/১৯৪, হাদীস নং-৫২৮৮]
عَنْ مَعْمَرٍ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، وَقَتَادَةَ، قَالَا: لَيْسَ فِي الْجُمُعَةِ قُنُوتٌ، قَالَ مَعْمَرٌ: وَأَخْبَرَنِي مَنْ سَمِعَ الْحَسَنَ يَقُولُ مِثْلَ ذَلِكَ
হযরত মা’মার রহঃ থেকে বর্ণিত। ইমাম যুহরী রহঃ এবং কাত্বাদা রহঃ বলেছেন যে, জুমআর নামাযে কুনূত নেই। মা’মার রহঃ বলেন, আমার কাছে এ কথাও পৌঁছেছে যে, হাসান বসরী রহঃ ও এমনটি বলতেন। অর্থাৎ জুমআর নামাযে কুনূতে নাজেলা পড়া যাবে না। [মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক-৩/১৯৪, হাদীস নং-৫২৮৭]
وأما القنوت فى الصلاة كلها للنوازل، فلم يقل به إلا الشافعى، وكأنهم حملوا ما روى عنه عليه الصلاة والسلا، أنه قنت فى الظهر والعشاء، كما فى المسلم، وأنه قنت فى المغرب ايضا، كما فى البخارى على النسخ (رد المحتار، زكريا-2/499، كرتاشى-2/11، مصرى قديم-1/628)
إن قنوت النازلة عندنا مختص بصلاة الفجر، دون غيرها من الصلوات الجهرية والسرية (رد المحتار،زكريا-2/499، كرتاشى-2/11، مصرى قديم-1/628، منحة الخالق على هامش البحر الرائق، زكريا-2/79، كويته-2/44، إعلاء السنن، دار الكتب العلمية بيروت-6/114، 120، كرتاشى-6/81)
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।
পরিচালক: শুকুন্দী ঝালখালী তা’লীমুস সুন্নাহ দারুল উলুম মাদরাসা, মনোহরদী নরসিংদী।
ইমেইল– ahlehaqmedia2014@gmail.com