প্রশ্ন
From: তানভীর আহসান
বিষয়ঃ ঢিলা কুলুখ
প্রশ্নঃ
আসসালামু আলাইকুম।
মুফতি সাহেব।
আমার প্রশ্ন হচ্ছে প্রসাবের পর ঢিলা ব্যাবহারে হাটতে হয়।
তাহলে পায়খানা করার সময়েতো প্রস্রাব হয় সে ক্ষেত্রে ঢিলা ব্যাবহারের নিয়ম কি হবে???
জাজাকাল্লাহ।
তানভীর আহসান।
মালিবাগ চৌধুরিপাড়া, ঢাকা।
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
সবার জন্য ‘প্রস্রাবের পর ঢিলা ব্যবহার করে হাটতে হয়’ আপনার এ ধারণাটি ভুল।
যাদের পেশাব শেষ করার পরও বেশ কিছুক্ষণ ফোটা ফোটা পেশাব ঝরে, তারা পরিপূর্ণ পবিত্রতার জন্য ঢিলা নিয়ে একটু হাটাহাটি করে থাকে। যাতে করে ফোটা ফোটা পেশাব নালি থেকে বের হয়ে পড়ে।
এটা সবার জন্য আবশ্যকীয় কোন বিষয় নয়। তবে পেশাবের ফোটা থেকে পবিত্র থাকা আবশ্যক। কারণ, পেশাবের ফোটা বিষয়ে হাদীসে কঠিন হুশিয়ারী আসছে। যেমন:
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ: مَرَّ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِقَبْرَيْنِ، فَقَالَ: ” إِنَّهُمَا لَيُعَذَّبَانِ، وَمَا يُعَذَّبَانِ فِي كَبِيرٍ، أَمَّا أَحَدُهُمَا: فَكَانَ لَا يَسْتَنْزِهُ مِنَ البَوْلِ – قَالَ وَكِيعٌ: مِنْ بَوْلِهِ – وَأَمَّا الْآخَرُ: فَكَانَ يَمْشِي بِالنَّمِيمَةِ “.
হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূল সাঃ দু’টি কবরের পাশ দিয়ে অতিক্রম হচ্ছিলেন। বললেন, এ দু’টি কবরে আযাব হচ্ছে। কোন বড় কারণে আজাব হচ্ছে না। একজনের কবরে আজাব হচ্ছে সে পেশাব থেকে ভাল করে ইস্তিঞ্জা করতো না। আরেকজন চোগোলখুরী করতো। {মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৯৮০, বুখারী, হাদীস নং-১৩৬১}
عَنْ عِيسَى بْنِ يَزْدَادَ الْيَمَانِيِّ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا بَالَ أَحَدُكُمْ فَلْيَنْتُرْ ذَكَرَهُ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ
হযরত ঈসাব বিন ইয়াযদাদ আলইয়ামানী তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, যখন তোমাদের কেউ পেশাব করে, তখন সে যেন তার লজ্জাস্থানকে তিনবার ঝেড়ে নেয় বা পবিত্র করে নেয়। {সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৩২৬}
বয়স বাড়ার সাথে সাথে পেশাব শুধুমাত্র বসে করার দ্বারাই সম্পূর্ণ হয়ে যায় না। বরং কিছু পেশাব ফোটা ফোটায় পেশাবের রাস্তায় থেকে যায়। যা দাঁড়ালে বা এক হেলে গেলে বেরিয়ে আসে।
আর পেশাবের ছিটা থেকে ও ফোটা থেকে নিজেকে আত্মরক্ষা না করলে অধিকাংশ মানুষের কবরে আজাব হয়ে থাকে। এ কারণে পেশাব শেষে ঢিলা নিয়ে একটু দাঁড়ানো এবং একটু হাটাহাটি করা হয়ে থাকে।
পায়খানা করার সময় যেহেতু দীর্ঘ সময় বসে থাকা হয়, তাই সাধারণত পেশাবের ফোটা পরিপূর্ণ বেরিয়ে আসার সুযোগ পায়। যদি কারো পায়খানায় বসে থাকার পরও পেশাবের ফোটা বন্ধ না হয়, তাহলে তার উচিত পেশাবের স্থানে তিনবার পানি ছিটিয়ে নেয়া। যদিও এরপরও কারো পেশাব ঝরে, তাহলে তার উচিত তখনো ঢিলা ব্যবহার করে পেশাবের ফোটা বন্ধ করা।
আশা করি বিষয়টি পরিস্কার বুঝতে পেরেছেন।
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ: نَزَلَتْ هَذِهِ الآيَةُ فِي أَهْلِ قُبَاءَ: {فِيهِ رِجَالٌ يُحِبُّونَ أَنْ يَتَطَهَّرُوا وَاللَّهُ يُحِبُّ الْمُطَّهِّرِينَ} [التوبة: 108] ، فَسَأَلَهُمْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالُوا: إِنَّا نُتْبِعُ الْحِجَارَةَ الْمَاءَ.
হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কুবাবাসীর শানে এ আয়াতে কারীমা যখন নাজিল হল,সেখানে রয়েছে এমন লোক,যারা পবিত্রতাকে ভালবাসে। আর আল্লাহ পবিত্র লোকদের ভালবাসেন। [সূরা তাওবা-১০৮] তখন রাসূল সাঃ তাদের [এ মর্তবা পাবার কারণ] জিজ্ঞাসা করলেন, তখন তারা বললেন, আমরা ঢিলার সাথে সাথে পানি ব্যবহার করি। [মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-২৪৭]
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।
পরিচালক: শুকুন্দী ঝালখালী তা’লীমুস সুন্নাহ দারুল উলুম মাদরাসা, মনোহরদী নরসিংদী।
ইমেইল– ahlehaqmedia2014@gmail.com