প্রচ্ছদ / তালাক/ডিভোর্স/হুরমত / তালাকের সন্দেহের দ্বারা কি কোন তালাক পতিত হয়?

তালাকের সন্দেহের দ্বারা কি কোন তালাক পতিত হয়?

প্রশ্ন

‘তালাক’ শব্দটি বলেছে কি না- ভাবনার সময় ‘তালাক দিলাম’  উচ্চারণে কি তালাক হয়?

আসসালামু আলাইকুম,

নিচের সমস্যাটির কোরআন-হাদীসের আলোকে সমাধানে আপনাকে বিনীত অনুরোধ করছি।

এক ব্যক্তি শুক্রবার মসজিদে জুম্মার নামাজ পড়তে গেছেন। ইমাম তালাকের উপর মাসায়েল বর্ণনা করেন। এরপর থেকে তার মনে বিষয়টি ঢুকে পড়ে। নামাজ শেষে মনে জাগ্রত হয়, তাদের মধ্যে ( স¦ামী-স্ত্রী’র) মধ্যে সম্পর্ক নেই। তাদের মধ্যে ‘ছাড়াছাড়ি’ হয়ে গেছে।

মনে জাগ্রত বিষয়টি নিয়ে তার ব্যাপক টেনশন হয়। (যদিও তিনি  মাসায়েল শোনার আগে কখনো স্ত্রীকে তালাক দেওয়া তো দুরের কথা বিষয়টি নিয়ে চিন্তা-ভাবনাও করেননি।)

রাতে তিনি স্ত্রীর সঙ্গে মোবাইলে টেনশনের বিষয়টি নিয়ে শেয়ার করেন।  বলেন, তালাকের মাসায়েল শোনার পর নানান কু-চিন্তা মনে ঘুরপাক খাচ্ছে।

তার স্ত্রী তাকে বলেন,  তুমি কি আমাকে (স্ত্রী) তালাক দেবে ?

উত্তরে স্বামী বলেন- খবরদার, এ ধরণের কথা মুখেও আনবে না। জীবন থাকতে তোমাকে কখনোই  ওটা (তালাক ইঙ্গিত করে) দেব না।

তখন স্ত্রী বলেন, কেন হুজুর আর কিছু বলেন নাই… ( মোবাইলে স্ত্রীকে কিস দেওয়াকে ইঙ্গিত করে)।

এরপর অন্যান্য বিষয়ে কথা হয়। শেষে ফোন কেটে দেওয়ার আগ মুহুর্তে স্বামী নিজের অজান্তে মনে মনে ( ঠোট, জিহ্বা, দাত, মুখ না নাড়িয়ে) বলেন ‘ ঠিকাছে তোমাকে দিলাম’।  এরপর ফোনের সংযোগ কেটে দেন।

মোবাইলে কথা বলার কিছু সময় পর স্বামীর মনে সন্দেহ সৃষ্টি হয়। তিনি ভাবতে শুরু করেন- শেষে মনে মনে কি বলেছেন। ‘তোমাকে’; না ‘তালাক’ কোন শব্দ বলেছে। এ নিয়ে দ্বিধা-দ্ব›েদ্ধ পড়ে যান রীতি মতো। মনে মনে ভাবতে শুরু করেন-“ ‘ ঠিকাছে তোমাকে দিলাম’ না কি ‘ঠিকাছে তালাক দিলাম’ কোনটা বলেছে।  ঠিকাছে তোমাকে দিলাম- এটাই বলেছি। ঠিকাছে তালাক দিলাম- এটা বলেনি।”  এ বাক্যগুলো মনে মনে ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়েন।

সকালে ঘুম থেকে উঠার পর আবার বিষয়টি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা শুরু হয়। কখনো মনে মনে, আবার কখনো ( ঠোট, জিহ্বা, দাত, মুখ নাড়িয়ে) শব্দবিহীন ভাবে বাক্য দুটি জপতে থাকেন- “ ‘ ঠিকাছে তোমাকে দিলাম’ না কি ‘ঠিকাছে তালাক দিলাম’- কোনটা বলেছি।  ঠিকাছে তোমাকে দিলাম- এটাই বলেছি। ঠিকাছে তালাক দিলাম- এটা বলেনি।” ভাবনার সময় (কানে এমনি এমনি মোবাইল ধরে রাতে বাক্যটি মনে মনে বলার সময় কিভাবে বলেছেন সেটা ধিয়ানোর) এক পর্যায়ে  মুখে মিন মিন কন্ঠে একবার উচ্চারণ করে ফেলেন- “ ‘ ঠিকাছে ‘তো-মা-কে’ দিলাম’। ‘ঠিকাছে ‘তা-লা-ক’ দিলাম’।”

কিছু সময় নিয়ে পৃথক বাক্য দুটি উচ্চারণ করা শেষ হতেই তার স্ত্রী তাকে ফোন দেয়। ফলে এবার আর কোনটা বলেছে, কোনটা বলেনি উচ্চারণ করতে পারে না।  ফোনে কথা বলা শেষে আবার টেনশন শুরু হয়- কি বলেছেন। বিষয়টি নিয়ে বেচারা ব্যাপক মানসিক যন্ত্রণায় আছেন, এ কারণে যে   ‘তালাক’ শব্দটি উচ্চারণ করেছেন কি না- ভাবনার সময় মুখে ‘‘ ‘তালাক’ দিলাম” উচ্চারণ করার তার স্ত্রীর উপর কোন তালাক পতিত হয়েছে কি না?

প্রসঙ্গত, তিনি স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে কিম্বা তার নাম ধরেও কিংবা ইঙ্গিত করে শব্দ দুটি (তালাক দিলাম) বলেননি।  তার উদ্দেশ্য ছিল- কোন শব্দটি মনে মনে বলেছিলেন- ‘তোমাকে’; না ‘তালাক’ এটা নিশ্চিত হওয়া।

ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কোরআন-হাদীসের মাসায়েল কী?  জানালে খুবই উপকার হয়।

স্বামী ঢাকায়, আর স্ত্রী গ্রামের বাড়িতে থাকেন। প্রসঙ্গত: ব্যক্তিটি যখন একা একা থাকেন ( রুমে কেউ থাকে না), তখন যে কোন বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা মিন মিন্ কন্ঠে করেন ( একা একাই বিড়বিড় করে কথা  বলেন ( চিন্তার বিষয়ও)। এটা তার পুরাতন অভ্যাস। বিষয়টি নিয়ে তিনি কামিল মাদ্রাসার একজন অধ্যক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি জানিয়েছেন- স্পষ্ট করে না বললে তালাক হয় না। স্বাক্ষীরও দরকার হয়।  কিন্তু তার মন থেকে সন্দেহ  দুর হচ্ছে না তার। দিনে দিনে ওয়াসওয়াসাতে আক্রান্ত হচ্ছেন।  তিনি জানতেনও না- ‘তালাক’ উচ্চারণ করলেই তালাক হয় কি না। প্রশ্ন হলো-  ‘তালাক’ শব্দটি উচ্চারণ করেছে কি না- ভাবনার সময় ‘তালাক দিলাম’  উচ্চারণে কি তালাক হয়?

হুজুর  বিস্তারিত ব্যাখাসহ যত দ্রুত সম্ভব মেইলে উত্তর জানানোর জন্য বিনীত অনুরোধ করছি। বেচারা রাত-দিন এনিয়ে ব্যাপক টেনশন করছে।

নাম, ঠিকানা ও পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক।

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

উপরোক্ত বিবরণ অনুপাতে আপনার স্ত্রীর উপর কোন তালাক পতিত হয়নি। তাই এ নিয়ে অহেতুক পেরেশান হবার কিছু নেই।


منها شك هل طلق أم لا لم يقع (الأشباه-108، جديد-196)

عدم الشك من الزوج فى الطلاق وهو شرط الحكم بوقوع الطلاق حتى لو شك فيه لا يحكم بوقوعه (بدائعل الصنائع، كتاب الطلاق، فصل فى الرسالة-3\126، جديد-3\199)

يشترط بالاتفاق القصد فى الطلاق، وهو إرادة التلفظ به ولو لم ينو فلا يقع طلاق فقيه يكره ولا طلاق حاك عن نفسه أو غيره لأنه لام يقصد معناه، بل قصد التعليم والحكاية، (الفقه الاسلام وادلته، كتاب الطلاق، باب شروط الطلاق-7/368)

لو كرر مسائل الطلاق بحضرة زوجته ويقول: أنت طالق ولا ينوى طلاقا لا تطلق، (فتح القدير، كتاب الطلاق، باب ايقاع الطلاق-4/4)

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।

পরিচালক: শুকুন্দী ঝালখালী তা’লীমুস সুন্নাহ দারুল উলুম মাদরাসা, মনোহরদী নরসিংদী।

ইমেইল– ahlehaqmedia2014@gmail.com

আরও জানুন

বিছানায় লেগে থাকা শুকনো বীর্যে ভিজা হাত লাগলে কি হাত নাপাক হয়ে যায়?

প্রশ্ন আসসালামু আলাইকুম, বীর্য যদি শুকিয়ে যায় (বিছানায় পড়া) সেই জায়গায় ভিজা হাত লাগে আবার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আহলে হক্ব বাংলা মিডিয়া সার্ভিস