প্রচ্ছদ / কুরআন ও হাদীসের ব্যাখ্যা / নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার পালকপুত্রের স্ত্রী জয়নবকে তালাক দিতে চাপ দিয়েছিলেন?

নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার পালকপুত্রের স্ত্রী জয়নবকে তালাক দিতে চাপ দিয়েছিলেন?

প্রশ্নঃ

নবীজি সাঃ তাঁর পালকপূত্র হজরত জায়েদ রাঃ এর স্ত্রী হজরত জয়নব রাঃ কে বিয়ে নিয়ে অনেক নাস্তিক অশ্লীলতা দেখানোর চেষ্টা করে,আরো অভিযোগ করে যে রাসুল সাঃ নাকি তার পালকপুত্রকে স্ত্রীকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য চাপ দিয়েছিলেন।

দয়া করে ব্যাপারটি কুরআন হাদীস এ কি আছে একটু জানাবেন?

উত্তর

بسم الله الرحمن الرحيم

নাস্তিকদের নিজেদের চরিত্র নোংরা হবার কারণে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মতো পূত পবিত্র ব্যক্তিত্বের মাঝেও অশ্লীলতা খুজে বেড়ায়।

জায়েদ রাঃ এর স্ত্রী হযরত যয়নব রাঃ এর স্ত্রীকে তালাক দেবার জন্য চাপ সৃষ্টির বিষয়টি সম্পূর্ণই ভিত্তিহীন ও মিথ্যাচার।

বরং আসল হাকীকত হলো:

যয়নব বিনতে জাহাশ রাঃ রাসূল সাঃ এর ফুপাতো বোন ছিলেন। রাসূল সাঃ তার আযাদকৃত গোলাম জায়েদ বিন হারেছা রাঃ এর সাথে যয়নবের বিবাহ দেন।

আরবে বংশ গৌরব খুবই প্রচলিত ছিল। সেখানে ভাল বংশের কোন মেয়েকে গোলাম বা আযাদকৃত গোলামের কাছে বিবাহ দেয়াকে খুবই অপছন্দ করা হতো।

এ কারণে প্রথমে যয়নব রাঃ ও তার পরিবার এ সম্বন্ধে রাজি ছিলেন না।

তখন আয়াত সূরা আহযাবের আলোচ্য আয়াতের আগের আয়াতঃ

وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَلَا مُؤْمِنَةٍ إِذَا قَضَى اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَمْرًا أَن يَكُونَ لَهُمُ الْخِيَرَةُ مِنْ أَمْرِهِمْ ۗ وَمَن يَعْصِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا مُّبِينًا [٣٣:٣٦]

আল্লাহ ও তাঁর রসূল কোন কাজের আদেশ করলে কোন ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীর সে বিষয়ে ভিন্ন ক্ষমতা নেই যে, আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আদেশ অমান্য করে সে প্রকাশ্য পথভ্রষ্ট তায় পতিত হয়। [সূরা আহযাব ৩৩: ৩৬]

এ আয়াত নাজিল হবার পর যয়নব রাঃ ও তার পরিবার আল্লাহর ভয়ে উক্ত বিয়েতে রাজি হয়ে যান।

কিন্তু পরিবারে মিল ছিল না। হযরত যায়েদের সাথে যয়নব রাঃ এর বিলকুল বনিবনা হচ্ছিল না। প্রায়ই কথা কাটাকাটিও বিবাদ হতো।

ফলে যায়েদ রাঃ রাসূল সাঃ এর কাছে তালাকের অনুমতি প্রদানের জন্য আবেদন করতেন।

কিন্তু আল্লাহর রাসূল সাঃ তালাক দিতে বারণ করেন। কারণ বিয়ের পর তালাক প্রদান করা অনুত্তম কাজ।

কিন্তু হযরত যায়েদের পক্ষে এ সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা অসম্ভব হয়ে পড়ে।

ইতোমধ্যে আল্লাহ তাআলা রাসূল সাঃ কে অহীর মাধ্যমে জানিয়ে দেন যে, যায়েদ এ বিবাহ বন্ধন টিকিয়ে রাখতে পারবে না। বরং সে তালাক দিবেই। আর এরপর যয়নবের মনকে খুশি করতে খোদ রাসূল সাঃ কেই তাকে বিবাহ করতে হবে।

এটাই আল্লাহর ফায়সালা। যা অহীর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা জানিয়ে দেন।

কিন্তু রাসূল সাঃ উক্ত বিষয়টিকে প্রকাশ করতে আরবের মুশরিকদের অপপ্রচার ও বিভ্রান্তির ভয় পাচ্ছিলেন। কারণ, আরবে পোষ্যপুত্রের তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীকে বিবাহ করাকে অবৈধ মনে করা হয়। খুবই অশোভন মনে করা হয়। অথচ এটি মোটেও অশোভন কিছু ছিল না।

লোক লজ্জার ভয়ে রাসূল সাঃ উক্ত বিষয়টিকে জনসম্মুকে বলতে ভয় পাচ্ছিলেন। তাই তা মনের মাঝেই গোপন করে রাখেন।

এরই মাঝে একদিন যায়েদ বিন হারেছা এসে জানান যে, তিনি স্ত্রীকে তালাক দিয়ে দিয়েছেন। তখন রাসূল সাঃ চুপ করে রইলেন।

যখন যয়নবের ইদ্দত সম্পন্ন হয়ে যায়, তখন রাসূল সাঃ হযরত যায়েদের মাধ্যমেই হযরত জয়নব রাঃ এর কাছে বিবাহের প্রস্তাব পাঠান।

সেসময় সুরা আহযাবের এ ৩৭ নং আয়াত নাজিল হয়।


وَإِذْ تَقُولُ لِلَّذِي أَنْعَمَ اللَّهُ عَلَيْهِ وَأَنْعَمْتَ عَلَيْهِ أَمْسِكْ عَلَيْكَ زَوْجَكَ وَاتَّقِ اللَّهَ وَتُخْفِي فِي نَفْسِكَ مَا اللَّهُ مُبْدِيهِ وَتَخْشَى النَّاسَ وَاللَّهُ أَحَقُّ أَن تَخْشَاهُ ۖ فَلَمَّا قَضَىٰ زَيْدٌ مِّنْهَا وَطَرًا زَوَّجْنَاكَهَا لِكَيْ لَا يَكُونَ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ حَرَجٌ فِي أَزْوَاجِ أَدْعِيَائِهِمْ إِذَا قَضَوْا مِنْهُنَّ وَطَرًا ۚ وَكَانَ أَمْرُ اللَّهِ مَفْعُولًا [٣٣:٣٧]

আল্লাহ যাকে অনুগ্রহ করেছেন;আপনিও যাকে অনুগ্রহ করেছেন;তাকে যখন আপনি বলেছিলেন,তোমার স্ত্রীকে তোমার কাছেই থাকতে দাও এবং আল্লাহকে ভয় কর। আপনি অন্তরে এমন বিষয় গোপন করছিলেন,যা আল্লাহ পাক প্রকাশ করে দেবেন আপনি লোকনিন্দার ভয় করেছিলেন অথচ আল্লাহকেই অধিক ভয় করা উচিত। অতঃপর যায়েদ যখন যয়নবের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করল,তখন আমি তাকে আপনার সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ করলাম যাতে মুমিনদের পোষ্যপুত্ররা তাদের স্ত্রীর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করলে সেসব স্ত্রীকে বিবাহ করার ব্যাপারে মুমিনদের কোন অসুবিধা না থাকে। আল্লাহর নির্দেশ কার্যে পরিণত হয়েই থাকে। [সূরা আহযাব ৩৩: ৩৭]

 

যাতে আল্লাহ তাআলা পরিস্কার ভাষায় জানিয়ে দিলেন যে, পোষ্যপুত্রের তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীকে বিবাহ করা এটি সম্পূর্ণই বৈধ। এতে দোষের কিছু নেই। আর যায়েদ জয়নবকে তালাক দিবে, পোষ্যপুত্রের তালাকপ্রাপ্তাকেই রাসূল সাঃ এর বিবাহ করতে হবে, একথা আল্লাহর বিধান হওয়ার পরও রাসূল সাঃ লোকলজ্জার ভয়ে তা প্রকাশ করতে দ্বিধাগ্রস্থ ছিলেন। অথচ আল্লাহ তাআলাই অধিক ভয় পাবার যোগ্য।

অবশেষে অহীর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা তা প্রকাশ করে দিলেন। সেই সাথে আল্লাহ তাআলা নিজেই রাসূল সাঃ ও যয়নব রাঃ এর বিবাহে আসমানে সম্পন্ন করে দিলেন। [ঈষৎ সংক্ষেপিত: সীরাতুল মুস্তাফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, উর্দু-৩/২৯৫-২৯৯, ইদ্রিস কান্ধলবী রহঃ কৃত]

তাহলে এ আয়াতে কি পেলাম?

পোষ্যপুত্রের তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীকে বিবাহ করার কুপ্রথা বিলুপ্তকরণের জন্য রাসূল সাঃ আল্লাহর নির্দেশে বিবাহ করলেন।

সুতরাং এমন ঘটনায় যারা নোংরামী খুঁজে বেড়ায় এদের চরিত্রই মূলত নোংরামীতে পূর্ণ।

এ লেখাটি পড়ুন:

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বহুবিবাহ সম্পর্কে নাস্তিকদের অভিযোগের জবাব

 

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।

পরিচালক: শুকুন্দী ঝালখালী তা’লীমুস সুন্নাহ দারুল উলুম মাদরাসা, মনোহরদী নরসিংদী।

ইমেইল[email protected]

0Shares

আরও জানুন

ইমামের সামনের সুতরা কি মাসবূক মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট?

প্রশ্ন ইমামের সুতরা মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট কি না? এবং ইমামের সুতরা মসবুক ব্যাক্তির জন্য যথেষ্ট …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *