প্রচ্ছদ / ওয়াকফ/মসজিদ/ঈদগাহ / কবরের উপর মসজিদ নির্মাণ করলে সেই মসজিদে নামায পড়ার হুকুম কী?

কবরের উপর মসজিদ নির্মাণ করলে সেই মসজিদে নামায পড়ার হুকুম কী?

প্রশ্ন

জনাব,
নিম্মোক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে কুরআন সুন্নাহ দ্বারা ফতোয়া প্রধানে আবেদন করছি।

কুমিল্লা জেলার বরুড়া থানার অলিতলা গ্রামে এ ঘটনাটি ঘটে। যে জায়গায় মসজিদ করা হয় সে জায়গাটি মূলত মসজিদের নামে ওয়াকফ করা। তবে বহুকাল ধরে উক্ত জায়গায় মৃত মানুষকে দাফন করা হয়। তাতে কেউ বাঁধা প্রধান করে নি। তিন, চার বছর আগেও সেই কবরে একটি লাশ দাফন করা হয়।
সম্প্রতি, কিছু কমিটির উদ্দ্যেগে সেই মসজিদটিকে বড় করেছে। নির্মাণ কালে অনেক হাড়গোর পাওয়া গেছে তার পরও এগুলো সরানো হয় নি। এমনকি যে জায়গায় পিলার গাড়ার জন্যে মাটি খনন করা হয়,  তখন একটি জলজেন্ত তাজা লাশ দেখা যায়।  যার কাপনে কোন ময়লা ছিল না। তারা এটাকে মাটি চাঁপা দিয়ে দেয়। এবং সেখানে একটি বিশাল মসজিদ তৈয়ার করা হয়।
এখন প্রশ্ন হল,,
১/ মসজিদের জায়গায় কবরস্থান হিসেবে চলে আসাকে হটাৎ করে বন্ধ না করে, হাড়গোড় না সরিয়ে মসজিদ তৈয়ার করা কতটা সঠিক?
২/ সেই মসজিদে নামাজ পড়ার বিধান কি?

উক্ত বিষয়ের আলোকে কুরআন সুন্নাহর বিধার কি? তা বর্ণনা করতে,  জনাবের কৃপা দৃ্ষ্টি কামনা করছি।

এলাকা বাসীর পক্ষে
মোহাম্মদ একরামুল ইসলাম
বরুড়া, কুমিল্লা।

উত্তর

بسم الله الرحمن الرحيم

মসজিদের জন্য ওয়াকফ করা জায়গায় কবর দেয়া জায়েজ হয়নি।

তবে মসজিদ বর্ধিত আকারে নির্মাণের সময় কবরস্থানে থাকা লাশ ও লাশের হারগোড় অন্যত্র দাফন করা উচিত ছিল। এমনটি না করে এর উপরই মসজিদ নির্মাণ করা লাশের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন হয়েছে। এ কাজ করা উচিত হয়নি।

তবে এক্ষেত্রে মসজিদটিতে নামায পড়ার ক্ষেত্রে কোন ব্যত্যয় হবে না। উক্ত নামায পড়া কোন প্রকার কারাহাত ছাড়াই জায়েজ হবে।


فَقَالَ أَنَسٌ فَكَانَ فِيهِ مَا أَقُولُ لَكُمْ قُبُورُ الْمُشْرِكِينَ وَفِيهِ خَرِبٌ وَفِيهِ نَخْلٌ فَأَمَرَ النَّبِيُّ بِقُبُورِ الْمُشْرِكِينَ فَنُبِشَتْ ثُمَّ بِالْخَرِبِ فَسُوِّيَتْ وَبِالنَّخْلِ فَقُطِعَ فَصَفُّوا النَّخْلَ قِبْلَةَ الْمَسْجِدِ وَجَعَلُوا عِضَادَتَيْهِ الْحِجَارَةَ

আনাস (রাযি.) বলেনঃ আমি তোমাদের বলছি, এখানে মুশরিকদের কবর এবং ভগ্নাবশেষ ছিল। আর ছিল খেজুর গাছ। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নির্দেশে মুশরিকদের কবর খুঁড়ে ফেলা হলো, অতঃপর ভগ্নাবশেষ সমতল করে দেয়া হলো, খেজুর গাছগুলো কেটে ফেলা হলো অতঃপর মসজিদের কিবলায় সারিবদ্ধ করে রাখা হলো এবং তার দুই পাশে পাথর বসানো হলো। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৪২৮]

لو أن مقبرة من مقابر المسلمين عفت فبنى قوم عليها مسجدا لم أر بذلك بأسا (إلى قوله) فإذا درست واستفنى عن الدفن فيها جاز صرفها إلى المسجد (عمد القارى، كتاب الصلاة، باب هل تنبش قبور مشركى الجاهلية وتيخذ مكانها مساجدا، دار إحياء التراث-4\179، زكريا-3\435، رقم-427)

لو بلى الميت وصار ترابا جاز دفن غيره فى قبره وزرعه والبناء عليه (تبيين الحقائق، كتاب الصلاة، باب الجنائز، قبيل فصل فى التعزير، زكريا-1\589، مكتبه امدادية ملتان-1\246، رد المحتار-3\145، البحر الرائق-2\341)

لو أن مقبرة من مقابر المسلمين عفت فبنى قوم فيها مسجدا لم أر بذلك بأسا، لأن المقابر وقف من أوقاف المسلمين لدفن موتاهم، لا يجوز لأحد أن يملكها فإذا درست واستغنى عن الدفن فيها جاز صرفها إلى المسجد، لأن المسجد أيضا وقف من أوقاف المسلمين، لا يجوز تمليكه لأحد، فمعناهما واحد (عمدة القارى شرح صحيح البخارى، باب هل تنبش قبور مشركى الجاهلية ويتخذ مكانها مسجدا الخ-4/179 دمشق، 3/435 تحت رقم-428 دار الفكر بيروت

وَإِنْ بَقِيَ مِنْ عِظَامِهِمْ شَيْءٌ تُنْبَشُ وَتُرْفَعُ الْآثَارُ وَتُتَّخَذُ مَسْجِدًا، لِمَا رُوِيَ «أَنَّ مَسْجِدَ النَّبِيِّ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – كَانَ قَبْلُ مَقْبَرَةَ الْمُشْرِكِينَ فَنُبِشَتْ» كَذَا فِي الْوَاقِعَاتِ (رد المحتار-2\145-146)

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।

পরিচালক: শুকুন্দী ঝালখালী তা’লীমুস সুন্নাহ দারুল উলুম মাদরাসা, মনোহরদী নরসিংদী।

ইমেইল– ahlehaqmedia2014@gmail.com

আরও জানুন

নামাযে মধ্যে ‘আল্লাহু আকবার’ বলার সময় যদি ‘আকবার’ এর ‘বা’ উচ্চারণের সময় টেনে পড়ে, তাহলে নামায হবে কি?

প্রশ্ন নামাযে মধ্যে ‘আল্লাহু আকবার’ বলার সময় যদি ‘আকবার’ এর ‘বা’ উচ্চারণের সময় টেনে পড়ে, …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আহলে হক্ব বাংলা মিডিয়া সার্ভিস