প্রশ্ন
ভাই আমি আমার নাম টা বলতে চাইতেছি না…আমার প্রশ্ন টা হলো..
আমি কিছু মেয়ের সাথে প্রেম ভালোবাসার সম্পরকে জরিয়ে গিয়েছিলাম, তার মদ্ধে একটি মেয়ের সাথে পুরোপুরি ভাবে দুই রাত্রি যাপন করেছিলাম, তার মানে জিনা করেছি..তাছাড়া অন্যান্য মেয়েদের সাথে পুরোপুরি রাত্রি যাপন না করলেও হালকা জিনা, অর্থাৎ হাত ধরা, জরিয়ে ধরা, আর চুম্মন করেছিলাম, এখন এই মেয়েগুলোর সাথে relation breakup হয়ে গেছে.. breakup হওয়ার সময় অনেক ঝগরা হইছে, মাফ চাওয়ার ও কনো সুজগ নাই।
আর যে মেয়েটার সাথে পুরোপুরি দুই রাত্রি যাপন করেছি ওই মেয়েটাকে এখন আমার আর ভালো লাগে না… তবে ওই মেয়েটা আমাকে অনেক ভালোবাসে, ও আমাকে বিয়ে করতে চায়.. but আমি ওরে নিজের বউ হিসেবে একদম ই মানতে পারি না। ওরে আমি অনেক বকা ঝকা করছিলাম, তারপর ও মেয়েটা আমাকে চায়।
দুই তিন মাস আগে আমি তাব্লিগ এ চিল্লা লাগায়া আসলাম, আসার পর আমি আমার ভুল বুঝতে পারলাম, এখন নামায আর পুরপুরি সুন্নাত এর উপর আসার চেষ্টায় আছি, গালে দারি রাইখা দিসি, ভাবসিলাম মেয়ে টা আমাকে আর পছন্দ করবে না, but তা আর হলো না, এখন অ মেয়েটা আমাকে চায়। কিন্তু তাব্লিগ থেকে আসার পর আমি সিধান্ত নিছি যে পর্দাশিন নামাযি মেয়ে বিয়ে করবো…। এখন ওই মেয়েটা তো পর্দা করে না, নামায পরে নাকি তা তো যানি না,। এখন আমি আমার সব ভুলের জন্য ওর কাছে অনেক মাফ চাইছি,। কিন্তু ও আমারে বলতেসে বিয়ে না করলে মাফ করবে না,। আমি অনেক বলছি আমারে মাফ করে দাও আল্লাহ তোমাকে মাফ করে দিবেন, but তা ও করতেছে না… এখন কথা হলো ওরে আমার ভালো ও লাগে না, আর ও পর্দা ও করে না, বিয়ের পর বউ পর্দা না করলে ওর পাপের ভাগ মনে হয় জামাই এর ও নিতে হবে, এই চিন্তা করে তো বিয়ে ও করতে পারি না।
আমি ওকে বিয়ে করতে চাইতেছি না, আমি ওর কাছে অনেক অনেক মাফ চাইছি, আর আল্লাহর কাছে ও চাইছি।
so এখন আমাকে বলেন আমি কি করবো?
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
যিনা করা মারাত্মক গোনাহের কাজ। সাচ্চা দিলে তওবা করা ছাড়া এ গোনাহ মাফ হয় না।
তওবার জন্য শর্ত হলো:
১ উক্ত গোনাহ ছেড়ে দেয়া।
২ কখনোই উক্ত গোনাহ আর না করার দৃঢ় সংকল্প করা।
৩ উক্ত গোনাহের জন্য লজ্জিত ও কায়মানোবাক্যে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া।
যদি আপনি সাচ্চা দিলে তওবা করে থাকেন, তাহলে আশা করা যায় আল্লাহ তাআলা আপনার অতীত গোনাহের জন্য ক্ষমা করে দিবেন।
যদি উক্ত মেয়ে আপনাদের পারিবারিকভাবে গ্রহণ করাতে কোন সমস্যা না থাকে, এবং বিয়ের পর শরয়ী বিধানাবলী পালনে সচেষ্ট থাকার প্রবল ধারণা হয়, তাহলে তাকে বিয়ে করা জায়েজ হবে।
অন্যথায় অন্যত্র বিয়ে করতে পারেন।
সেই সাথে উক্ত মেয়ের সাথে আর কোন প্রকার যোগাযোগ ও ক্ষমা চাওয়ার জন্যও কথোপকথন করা জায়েজ হবে না।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَا يَزْنِي الزَّانِي حِينَ يَزْنِي وَهُوَ مُؤْمِنٌ، وَلَا يَشْرَبُ الْخَمْرَ حِينَ يَشْرَبُ وَهُوَ مُؤْمِنٌ، وَلَا يَسْرِقُ حِينَ يَسْرِقُ وَهُوَ مُؤْمِنٌ، وَلَا يَنْتَهِبُ نُهْبَةً، يَرْفَعُ النَّاسُ إِلَيْهِ فِيهَا أَبْصَارَهُمْ، حِينَ يَنْتَهِبُهَا وَهُوَ مُؤْمِنٌ
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোন ব্যভিচারী মু’মিন অবস্থায় ব্যভিচার করে না এবং কোন মদ্যপায়ী মু’মিন অবস্থায় মদ পান করে না। কোন চোর মু’মিন অবস্থায় চুরি করে না। কোন লুটতরাজকারী মু’মিন অবস্থায় এরূপ লুটতরাজ করে না যে, যখন সে লুটতরাজ করে তখন তার প্রতি লোকজন চোখ তুলে তাকিয়ে থাকে। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং-২৪৭৫]
إِنَّمَا التَّوْبَةُ عَلَى اللَّهِ لِلَّذِينَ يَعْمَلُونَ السُّوءَ بِجَهَالَةٍ ثُمَّ يَتُوبُونَ مِنْ قَرِيبٍ فَأُولَٰئِكَ يَتُوبُ اللَّهُ عَلَيْهِمْ ۗ وَكَانَ اللَّهُ عَلِيمًا حَكِيمًا [٤:١٧]
অবশ্যই আল্লাহ তাদের তওবা কবুল করবেন,যারা ভূলবশতঃ মন্দ কাজ করে,অতঃপর অনতিবিলম্বে তওবা করে; এরাই হল সেসব লোক যাদেরকে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। আল্লাহ মহাজ্ঞানী,রহস্যবিদ। {সূরা নিসা-১৭ }
وَإِنِّي لَغَفَّارٌ لِّمَن تَابَ وَآمَنَ وَعَمِلَ صَالِحًا ثُمَّ اهْتَدَىٰ [٢٠:٨٢]
আর যে তওবা করে,ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে অতঃপর সৎপথে অটল থাকে,আমি তার প্রতি অবশ্যই ক্ষমাশীল। [সূরা ত্বহা-৮২]
হযরত আয়শা রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,
فَإِنَّ العَبْدَ إِذَا اعْتَرَفَ ثُمَّ تَابَ، تَابَ اللَّهُ عَلَيْهِ
বান্দা গোনাহ স্বীকার করে মাফ চাইলে আল্লাহ পাক তা কবুল করেন। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৪১৪১]
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ: مَا رَأَيْتُ شَيْئًا أَشْبَهَ بِاللَّمَمِ مِمَّا قَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ اللَّهَ كَتَبَ عَلَى ابْنِ آدَمَ حَظَّهُ مِنَ الزِّنَا، أَدْرَكَ ذَلِكَ لَا مَحَالَةَ، فَزِنَا الْعَيْنَيْنِ النَّظَرُ، وَزِنَا اللِّسَانِ الْمَنْطِقُ، وَالنَّفْسُ تَمَنَّى وَتَشْتَهِي، وَالْفَرْجُ يُصَدِّقُ ذَلِكَ وَيُكَذِّبُهُ
ইবন আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত (হাদীসের চাইতে) অধিক সগীরা গুনাহ্ সম্পর্কিত হাদীস নাই। তিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেছেন যে, আল্লাহ্ তা‘আলা আদম সন্তানের জন্য যিনার একটি অংশ নির্ধারণ করেছেন, আর সে তা অবশ্যই করবে। আর চক্ষুর যিনা হল দৃষ্টিপাত করা, মুখের যিনা হল অশোভন উক্তি, আর নফসের যিনা হল (যিনার) ইচ্ছা ও আকাঙ্ক্ষা করা। আর সবশেষে গুপ্তাঙ্গ তা সত্য বা মিথ্যায় পরিণত করে। [সুনানে আবূ দাউদ, হাদীস নং-২১৫২, ইফাবা-২১৪৯, সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৬৬১২]
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।
ইমেইল– ahlehaqmedia2014@gmail.com