প্রচ্ছদ / ইতিহাস ও ঐতিহ্য / জঙ্গে জামাল ও নারী নেতৃত্ব প্রসঙ্গে

জঙ্গে জামাল ও নারী নেতৃত্ব প্রসঙ্গে

প্রশ্ন

From: ফয়সাল আহমেদ
Subject: আয়েশা (রা:) নেতৃত্ব কোন যুদ্ব্বে নেতৃত্ব দিয়েছে কি?
Country : বাসাবো, ঢাকা, বাংলাদেশ
Mobile : 01914390831
Message Body:
আসসালামু আলাইকুম ওয়ারহমাতুল্লাহ

ভাই আমি আপনাদের একটা প্রশ্নের উত্তর নারী নেতৃত্ব জায়েজ কি না? এটি ফেইসবুকে দিয়েছি । পরে একজন বলল আয়েশা (রা:) উটের যুদ্বের নেতৃত্ব দিয়েছে,তাহলে জামাত ইসলাম নারী নেতৃত্বের সাথে কাজ করলে কি সমস্যা?
প্রশ্ন: 1. উটের যুদ্বের ব্যাপারে মূল কাহিনী কি?
2. আয়েশা (রা:)অথবা অন্য কোন নারী  কি কোন যুদ্বে নেতৃত্ব দিয়েছেন?

আল্লাহ হাফেজ

জবাব

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

প্রথম প্রশ্নের উত্তর

উটের যুদ্ধ বলতে বুঝানো হচ্ছে জঙ্গে জামালকে। ইসলামী ইতিহাসের একটি দুঃখজনক যুদ্ধের নাম জঙ্গে জামাল।

যা হযরত আয়শা রাঃ, হযরত তালহা রাঃ , জুবাইর রাঃ এর মতামতের অনুসারী এবং হযরত আলী রাঃ এর বাহিনীর মাঝে সাবায়ীদের ঘৃণ্য চক্রান্তের কারণে সংঘটিত হয়েছিল।

সাবায়ী চক্র হযরত উসমান রাঃ কে নির্মমভাবে হত্যা করলে মুসলমানদের ঐক্যমত্বে হযরত আলী রাঃ কে খলীফা নিযুক্ত করা হয়। সে সময় হযরত উসমান রাঃ এর হত্যাকারীদের আগে হত্যা করা হবে? না প্রথমে সাবায়ী চক্রান্তের জালে আটকে যাওয়া ইসলামী খিলাফতকে প্রথমে শক্তিশালী করা হবে, তারপর অপরাধীদের শাস্তি দেয়া হবে?

এ বিষয়টি নিয়ে তৎকালীন সাহাবীদের মাঝে দুটি দল হয়ে যায়। হযরত আয়শা রাঃ, হযরত মুয়াবিয়া রাঃ, হযরত তালহা রাঃ, হযরত জুবায়ের রাঃ এর মত ছিল আগে হযরত উসমান রাঃ এর হত্যাকারীদের শাস্তি দেয়া হবে। আর হযরত আলী রাঃ এবং তার অনুসারীদের মত ছিল আগে ষড়যন্ত্রের জালে ভগ্নপ্রায় ইসলামী খিলাফতকে প্রথমে শক্তিশালী করা হোক, তারপর অবশ্যই হত্যাকারী অপরাধীদের শাস্তি দেয়া হবে।

এ মতবিরোধ হওয়ার পর উভয় দল বসরার পথে এক স্থানে মুখোমুখি অবস্থান করে সন্ধিতে আসেন। শান্তিময় সন্ধিচুক্তিতে সাবায়ী চক্র প্রমাদ গুনে।

উভয় পক্ষই ছিলেন দ্বীনের পক্ষে। হকের পক্ষে। কোন দলই যুদ্ধ কামনা করেন নি। কিন্তু রাতের গভীরে নির্দিষ্ট দূরত্বে অবস্থানকারী দুই বাহিনীর উপরই এক সাথে হামলা করে বসে সাবায়ী চক্র। ফলে সৃষ্ট হয় বিভ্রান্তির। হযরত তালহা, হযরত জুবায়ের ও হযরত আয়শা রাঃ এর বাহিনী মনে করেন হযরত আলী রাঃ এর বাহিনী হামলা করেছে, আর হযরত আলী রাঃ এর বাহিনী মনে করেন অপরপক্ষ হামলা করেছে।

এ ভুল বুঝাবুঝির কারণে শুরু হয় এ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। ইতিহাসের এক মর্মান্তিক ট্র্যাজেডীর জন্ম দেয় কুখ্যাত সাবায়ী চক্র। রাতের গভীরে সংঘটিত হওয়া এ দুঃখজনক ভুল বুঝাবুঝির যুদ্ধটিই ইতিহাসে জঙ্গে জামাল বা উটের যুদ্ধ নামে প্রসিদ্ধ। আব্দুল্লাহ বিন সাবার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে ইতিহাসের পাতায় লেখা হয় এক মর্মান্তিক ইতিহাস। নির্দোষ ১০ হাজার মুসলমান শহীদ হন সে যুদ্ধে। (তারীখে তাবারী-৩/৫৪)

বিস্তারিত জানতে পড়ুন-তারীখে তাবারী, মুফতী মনসুরুল হক রচিত ইসলামী খিলাফত ধ্বংসের প্রকৃত ইতিহাস)

মুসলমানদের মাঝে পারস্পরিক বিবাদ লাগিয়ে ফায়দা হাসিল করার এ ষড়যন্ত্র এখনো করে যাচ্ছে সাবায়ী চক্রের উত্তরসূরী ইহুদী খৃষ্টান শক্তি।

ধর্মীয় কোন্দল, ধর্ম নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি। হাজার বছর ধরে আমল করা কুরআন সুন্নাহের সঠিক ব্যাখ্যার বিপরীত ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়ে আজ মসজিদে মসজিদে বিবাদ লাগিয়ে দিয়েছে ইহুদী খৃষ্ট শক্তি  কথিত আহলে হাদীস গ্রুপ এবং আহমাদ রেজাখাঁ বেরেলভী গ্রুপ তথা বেদআতিদের মাধ্যমে। আল্লাহ তাআলা সাধারণ মুসলমানদের এ ভয়াবহ ইহুদী খৃষ্ট ষড়যন্ত্র থেকে সাধারণ মুসলমানদের হিফাযত করুন। সঠিক বিষয় বুঝার তৌফিক দান করুন। আমীন, ছুম্মা আমীন।

দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর

ইসলামের ইতিহাসে শুধু আয়শা রাঃ নয়, কোন মুসলিম নারীই প্রধান নেত্রী হয়ে যুদ্ধ করেন নি। বরং সহযোগী ছিলেন হযরত আয়শা রাঃ জঙ্গে জামালে। তিনিই মূল নেত্রী ছিলেন না। মূল ছিলেন হযরত জুবাইর রাঃ এবং তালহাসহ অন্য সাহাবীরা।

সবচে’ বড় কথা হল-জঙ্গে জামালে হযরত আয়শা রাঃ যুদ্ধ করার জন্য আসেনইনি, যুদ্ধ করার কোন ইচ্ছাই ছিল না। ঘটনাক্রমে চক্রান্তের শিকার উভয় মুসলিম বাহিনী। গভীর রাতে ভুল বুঝাবুঝির কারণে সৃষ্ট বিশৃংখল যুদ্ধের নেতৃত্ব হযরত আয়শা রাঃ করেছেন একথা একটি বোকামীসূলভ মন্তব্য। তিনি হযরত জুবাইর রাঃ এবং হযরত তালহা রাঃ এর সাথে সে ময়দানে উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত থাকলেই নেতৃত্ব হয়ে যায় এমন কথা বলাটা অযৌক্তিক।

আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে সঠিক পথে পরিচালিত করুন। আমীন। ছুম্মা আমীন।

والله اعلم بالصواب

উত্তর লিখনে

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

ইমেইল- [email protected]

[email protected]

0Shares

আরও জানুন

ইমামের সামনের সুতরা কি মাসবূক মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট?

প্রশ্ন ইমামের সুতরা মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট কি না? এবং ইমামের সুতরা মসবুক ব্যাক্তির জন্য যথেষ্ট …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *