প্রশ্ন
আসসালামুয়ালাইকুম হুজুর।
আমি আল্লাহর একজন পাপী বান্দী। আল্লাহর পথে চলার ও পাপ থেকে মুক্তি লাভের আশায় আপনার নিকট দ্বারস্থ হয়েছি। দয়া করে আমাকে আল্লাহর পথকে তার রাসূলের দেখানো নিয়মানুযায়ী চলার জন্য খুবি দ্রুততার সাথে আমার সমস্যাটার সমাধান দিবেন।
প্রশ্নঃ হুজুর আমি একজন সরকারি চাকুরীজীবী। আমি আমার নিজের পছন্দানুযায়ী কাজী অফিসে ২ জন পুরুষ স্বাক্ষীর উপস্থিতিতে বিবাহ করেছিলাম আমার ১ম স্বামীকে, আমার পরিবারের অনুমুতি ছাড়াই যদিও এটা আমি অনেক বড় অন্যায় করেছিলাম, কিন্তু পড়ে আমি আপনাদের ওয়েবসাইট থেকে জেনেছিলাম যে প্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েরা নিজেদের পছন্দানুযায়ী বিবাহ করতে পারবে এতে শরীয়া কোন সমস্যা নাই, কিন্তু অভিভাবক এর সম্মতি ছাড়া করাটা বড় গুনাহ।
যাই হোক বিয়ের পর থেকে আমার পরিবার আমাদের দুইজনের ব্যপারে আর কোন হস্তক্ষেপ করেনি।
আমার ১ম স্বামী শয়তানের ওয়াসওয়াসায় পরে আমাকে মোবাইলের মাধ্যমে তিন তালাক দিয়ে দেয়। তখন আমি এই বিষয়ে আপনাদের ওয়েবসাইট থেকে কিভাবে তালাকের পরে পূর্বের স্বামীর কাছে ফিরে আসা যায় সেই বিষয়ে মাসয়ালাগুলো দেখি এবং ১ম স্বামীকে ও দেখাই।এবং ১ম স্বামীর কাছে ফিরে আসার ইসলাম কতৃক প্রদর্শিত উপায় খুজতে থাকি।
তারপর আমার ৩ মাস ইদ্দত পালন হবার পরে আমি আবার ২য় স্বামী গ্রহন(বিবাহ) করি শুধু মাত্র ২জন পুরুষ স্বাক্ষীর সামনে। কিন্তু আমার মন্টা ১ম স্বামীর কাছে যেতে চাইত বারবার। যার দরুন আমার ১ম স্বামীর সাথে সব সময় যোগাযোগ হত মোবাইলে। সেও আমাকে তার কাছে ২য় স্বামীকে ছেড়ে দিয়ে চলে আসতে বলত। এমতাবস্থায় হঠাত কিছুদিন সংসারের মাথায় আমার ২য় স্বামীও আমাকে মোবাইলের মাধ্যমে ৩ তালাক দিয়ে দেয় কারন সে তার পরিবারকে আমার ব্যাপারে রাজী করাতে পারছিল না।
তারপর আমি তিন মাস ইদ্দত পালন করি। এবং আমার ১ম স্বামীকে আমাকে পুনরায় বিবাহ করার জন্য বলি। এখন সে (১ম স্বামী) আমার কাছে তার মনের একটা সন্দেহের কথা বলতেছে যেটার জন্য সে আমাকে বিবাহ করতে দ্বিধায় পরে গেছে এই ভেবে যে বিয়েটা সহীহ হবে কিনাঃ
সন্দেহ হচ্ছেঃ
১. যেহেতু আমার ২য় বিয়ে অবস্থায় তার (১ম স্বামীর)সাথে যোগাযোগ ছিল আমার তাই সে ক্ষেত্রে আমি তার কাছে যাবার জন্যে ২য় স্বামীর সাথে খারাপ ব্যবহার করেছি কিনা যাতে সে আমাকে দ্রুত তালাক দিয়ে দেয়।
যদিও আমি তাকে বলেছি যে আমার মন চাইত তোমার কাছে ফিরে আসার জন্যে তথাপি আমি আমার ২য় স্বামীকে জোড় করেনি সে নিজেই আমাকে ছেড়ে চলে গেছে।
এমতাবস্থায় আমি কি পুনরায় আমার ১ম স্বামীকে বিবাহ করতে পারব কি?
হুজুর ইসলামের পথে সঠিকভাবে চলার জন্য আপনার উত্তরটা জানা আমার জন্য অতীব জরুরি হয়ে পড়েছে।আল্লাহর এই পাপীবান্দী ইসলামের ছায়ায় আসার জন্য আপনার উত্তরের অপেক্ষায় আছে। দয়া করে একটু দ্রত উত্তর দিলে ইসলামের পথে সহীহভাবে চলতে পারব ইনশাআল্লাহ।
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
হ্যাঁ, আপনি প্রথম স্বামীকে নির্দ্ধিধায় বিয়ে করতে পারেন।
যদিও তালাক হয়ে যাবার পর প্রথম স্বামীর সাথে কথোপথন ও যোগাযোগ রক্ষা করা গোনাহের কাজ হয়েছে। এ কারণে বিবাহে কোন প্রভাব পড়বে না।
এ কারণে তওবা করে নিন।
فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا تَحِلُّ لَهُ مِن بَعْدُ حَتَّىٰ تَنكِحَ زَوْجًا غَيْرَهُ ۗ فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا أَن يَتَرَاجَعَا إِن ظَنَّا أَن يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ ۗ وَتِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ يُبَيِّنُهَا لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ [٢:٢٣٠]
তারপর যদি সে স্ত্রীকে (তৃতীয়বার) তালাক দেয়,তবে সে স্ত্রী যে পর্যন্ত তাকে ছাড়া অপর কোন স্বামীর সাথে বিয়ে করে না নেবে,তার জন্য হালাল নয়। অতঃপর যদি দ্বিতীয় স্বামী তালাক দিয়ে দেয়,তাহলে তাদের উভয়ের জন্যই পরস্পরকে পুনরায় বিয়ে করাতে কোন পাপ নেই। যদি আল্লাহর হুকুম বজায় রাখার ইচ্ছা থাকে। আর এই হলো আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা; যারা উপলব্ধি করে তাদের জন্য এসব বর্ণনা করা হয়। {সূরা বাকারা-২৩০}
وقال الليث عن نافع كان ابن عمر إذا سئل عمن طلق ثلاثا قال لو طلقت مرة أو مرتين فأن النبي صلى الله عليه و سلم أمرني بهذا فإن طلقتها ثلاثا حرمت حتى تنكح زوجا غيرك
হযরত নাফে রহ. বলেন,যখন হযরত ইবনে উমর রাঃ এর কাছে ‘এক সাথে তিন তালাক দিলে তিন তালাক পতিত হওয়া না হওয়া’ (রুজু‘করা যাবে কিনা) বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলো,তখন তিনি বলেন-“যদি তুমি এক বা দুই তালাক দিয়ে থাকো তাহলে ‘রুজু’ [তথা স্ত্রীকে বিবাহ করা ছাড়াই ফিরিয়ে আনা] করতে পার। কারণ,রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে এরকম অবস্থায় ‘রুজু’ করার আদেশ দিয়েছিলেন। যদি তিন তালাক দিয়ে দাও তাহলে স্ত্রী হারাম হয়ে যাবে, সে তোমাকে ছাড়া অন্য স্বামী গ্রহণ করা পর্যন্ত। {সহীহ বুখারী-২/৭৯২, ২/৮০৩}
হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত।
فَالْعَيْنَانِ زِنَاهُمَا النَّظَرُ، وَالْأُذُنَانِ زِنَاهُمَا الِاسْتِمَاعُ، وَاللِّسَانُ زِنَاهُ الْكَلَامُ، وَالْيَدُزِنَاهَا الْبَطْشُ، وَالرِّجْلُ زِنَاهَا الْخُطَا، وَالْقَلْبُ يَهْوَى وَيَتَمَنَّى، وَيُصَدِّقُ ذَلِكَ الْفَرْجُ وَيُكَذِّبُهُ
রাসূল সাঃ ইরশাদ করেন, চোখের জিনা হল [হারাম] দৃষ্টিপাত। কর্ণদ্বয়ের জিনা হল, [গায়রে মাহরামের যৌন উদ্দীপক] কথাবার্তা মনযোগ দিয়ে শোনা। জিহবার জিনা হল, [গায়রে মাহরামের সাথে সুড়সুড়িমূলক] কথোপকথন। হাতের জিনা হল, [গায়রে মাহরামকে] ধরা বা স্পর্শকরণ। পায়ের জিনা হল, [খারাপ উদ্দেশ্যে] চলা। অন্তর চায় এবং কামনা করে আর লজ্জাস্থান তাকে বাস্তবে রূপ দেয় [যদি জিনা করে] এবং মিথ্যা পরিণত করে [যদি অন্তরের চাওয়া অনুপাতে জিনা না করে]। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-২৬৫৭, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৮৯৩২}
إِنَّمَا التَّوْبَةُ عَلَى اللَّهِ لِلَّذِينَ يَعْمَلُونَ السُّوءَ بِجَهَالَةٍ ثُمَّ يَتُوبُونَ مِنْ قَرِيبٍ فَأُولَٰئِكَ يَتُوبُ اللَّهُ عَلَيْهِمْ ۗ وَكَانَ اللَّهُ عَلِيمًا حَكِيمًا [٤:١٧]
অবশ্যই আল্লাহ তাদের তওবা কবুল করবেন,যারা ভূলবশতঃ মন্দ কাজ করে,অতঃপর অনতিবিলম্বে তওবা করে; এরাই হল সেসব লোক যাদেরকে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। আল্লাহ মহাজ্ঞানী,রহস্যবিদ। {সূরা নিসা-১৭ }
وَإِنِّي لَغَفَّارٌ لِّمَن تَابَ وَآمَنَ وَعَمِلَ صَالِحًا ثُمَّ اهْتَدَىٰ [٢٠:٨٢]
আর যে তওবা করে,ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে অতঃপর সৎপথে অটল থাকে,আমি তার প্রতি অবশ্যই ক্ষমাশীল। [সূরা ত্বহা-৮২]
وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ [٢٤:٣١]
মুমিনগণ,তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর,যাতে তোমরা সফলকাম হও। [সূরা নূর-৩১]
إِلَّا مَن تَابَ وَآمَنَ وَعَمِلَ عَمَلًا صَالِحًا فَأُولَٰئِكَ يُبَدِّلُ اللَّهُ سَيِّئَاتِهِمْ حَسَنَاتٍ ۗ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَّحِيمًا [٢٥:٧٠]
কিন্তু যারা তওবা করে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদের গোনাহকে পুন্য দ্বারা পরিবর্তত করে এবং দেবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। [সূরা ফুরকান-৭০]
হযরত উবাদা বিন আব্দুল্লাহ তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন,রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ
التَّائِبُ مِنَ الذَّنْبِ، كَمَنْ لَا ذَنْبَ لَهُ
গোনাহ থেকে তওবাকারী এমন,যেন সে গোনাহ করেইনি। [সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৪২৫০]
হযরত আয়শা রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,
فَإِنَّ العَبْدَ إِذَا اعْتَرَفَ ثُمَّ تَابَ، تَابَ اللَّهُ عَلَيْهِ
বান্দা গোনাহ স্বীকার করে মাফ চাইলে আল্লাহ পাক তা কবুল করেন। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৪১৪১]
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।
ইমেইল– [email protected]