প্রচ্ছদ / অপরাধ ও গোনাহ / “কারো মন জোড়া লাগাইলে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে” এটা কি কোন হাদীস?

“কারো মন জোড়া লাগাইলে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে” এটা কি কোন হাদীস?

প্রশ্ন

From: Amin Uddin
বিষয়ঃ “কারো মন জোড়া লাগাইলে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে” এটা কি কোন হাদিস?

প্রশ্নঃ
প্রিয়নবি হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদিন উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে ডাকলেন। বললেন, ‘কোনো কারণে আজ আমি অনেক বেশি আনন্দিত৷ এ উপলক্ষ্যে তুমি আমার কাছে যা চাইবে, তা-ই দেব। বল, কী চাও তুমি?

হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা ভাবনায় পড়ে গেলেন। হঠাৎ করে এমন কী চাইবেন! তাছাড়া মনে যা-ই আসে, তা তো আর চাইতে পারেন না তিনি! যদি কোনো ভুল আবদার করে বসেন! ভয় হয় তার। প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যদি ভুল আবদারে কষ্ট পেয়ে যান? এমন অনেক প্রশ্নই তাঁর মনে জাগতে লাগলো।

বহু সময় পর হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বললেন, ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি কী আব্বুর কাছ থেকে একটা পরামর্শ নিতে পারি?’ প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনুমতি দিলেন। বললেন, ‘ঠিক আছে, তুমি তোমার আব্বুর পরামর্শ নিয়েই আমার কাছে চাও।’

হজরত আয়েশা রাদিল্লাহু আনহা তার পিতা হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুর কাছে গেলেন। কুশলাদি বিনিময়ের পর বিশ্বনবির পুরো ঘটনাটি তাঁকে বললেন। অতঃপর পরামর্শ চাইলেন।

হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ‘নবীজির কাছে যখন কিছু চাইবেই, তখন মিরাজের রাতে আল্লাহ তাআলার সঙ্গে তাঁর যেসব গোপন কথা হয়েছিলো, সেসব জানতে চাইতে পারো। তবে আমায় কথা দাও, প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা বলবেন, তা সর্বপ্রথম আমাকেই জানাবে।’

পরামর্শ পেয়ে হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা উৎফুল্ল হলেন। বাবাকে কথা দিলেন সবার আগে বিষয়টি তাঁকেই জানাবেন। হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসলেন। অতঃপর মিরাজের রাতের এমন একটি গোপন কথা জানতে চাইলেন, যা প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এখনও কাউকে বলেননি।

প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুচকি হাসলেন। সহধর্মিনীর এমন আবদারে অবাক হলেন। বললেন, ‘সেইসব কথা বলে দিলে আর গোপন থাকে কী করে! একমাত্র আবু বকরই পারেন এমন বিচক্ষণ প্রশ্ন করতে।`

এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘আয়েশা! আল্লাহ আমাকে মিরাজের রাতে বলেছেন, হে মুহাম্মদ! তোমার উম্মতের মাঝে যদি কেউ কারো ভেঙে যাওয়া মন জোড়া লাগিয়ে দেয়, তাহলে আমি তাকে বিনা হিসেবেই জান্নাত দান করব। (সুবহানাল্লাহ!)

প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা তার পিতা হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুর কাছে এসে সালাম দিয়ে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মুখে শোনা কথাগুলো শোনালেন।

হজরত আবুবকর রাদিয়াল্লাহু আনহু তো কথাগুলো শুনতেই কাঁদতে আরম্ভ করলেন৷ হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বাবার এমন (কান্নার) আচরণে বেশ অবাক হলেন! বললেন, ‘আব্বু! আপনি তো শত শত ভাঙা মন জোড়া লাগিয়েছেন৷ আপনার জন্য তো সরাসরি জান্নাতে যাওয়ার সুসংবাদ এটি, তবে কাঁদছেন কেন?

হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ‘হে আয়েশা! কথাটির উল্টো দিক নিয়ে খানিকটা চিন্তা কর। কারো ভাঙা মন জোড়া লাগালে যেমন আল্লাহ তাআলা জান্নাত দান করবেন, তেমনি কারো মন ভাঙলে আল্লাহ যদি সোজা জাহান্নামে দিয়ে দেন? নিজের অজান্তেই না জানি কত জনের মন ভেঙেছি আমি। আল্লাহ যদি আমাকে জাহান্নামে দিয়ে দেন, সেই চিন্তায় আমি কান্নায় ভেঙে পড়ছি।

উত্তর

بسم الله الرحمن الرحيم

উপরোক্ত ঘটনা সম্বলিত কোন হাদীসের অস্তিত্ব আমরা অনেক তথ্য তালাশ করেও খুঁজে পাইনি।

তাই এটাকে হাদীস হিসেবে প্রচার করার কোন সুযোগ নেই। হাদীস হিসেবে প্রচার করা থেকে বিরত থাকা উচিত।

তবে একথা ঠিক যে, অন্যায়ভাবে কারো মন ভাঙ্গা, কষ্ট দেয়া হারাম ও মারাত্মক গোনাহের কাজ। এতে কোন সন্দেহ নেই।


وَالَّذِينَ يُؤْذُونَ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ بِغَيْرِ مَا اكْتَسَبُوا فَقَدِ احْتَمَلُوا بُهْتَانًا وَإِثْمًا مُّبِينًا

“যারা বিনা অপরাধে মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদেরকে কষ্ট দেয়, তারা মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ্য পাপের বোঝা বহন করে।” (সূরা আহযাব: ৮৫)

আব্দুল্লাহ বিন উমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বারে উঠে উচ্চ স্বরে বলেন:

يَا مَعْشَرَ مَنْ أَسْلَمَ بِلِسَانِهِ، وَلَمْ يُفْضِ الْإِيْمَانُ إِلَى قَلْبِهِ! لَا تُؤْذُوْا الْـمُسْلِمِيْنَ، وَلَا تُعَيِّرُوْهُمْ وَلَا تَتَّبِعُوْا عَوْرَاتِهِمْ ؛ فَإِنَّهُ مَنْ تَتَبَّعَ عَوْرَةَ أَخِيْهِ الْـمُسْلِمِ تَتَبَّعَ اللهُ عَوْرَتَهُ، وَمَنْ تَتَبَّعَ اللهُ عَوْرَتَهُ يَفْضَحْهُ وَلَوْ فِيْ جَوْفِ رَحْلِهِ

‘‘হে লোক সকল! তোমরা যারা মুখে ইসলাম গ্রহণ করেছো; অথচ ঈমান তোমাদের অন্তরে ঢুকেনি,
– তোমরা মুসলিমদেরকে কষ্ট দিও না।
– তাদেরকে লজ্জা দিও না।
– তাদের দোষ অনুসন্ধান করো না।
কারণ, যে ব্যক্তি তার কোন মুসলিম ভাইয়ের দোষ অনুসন্ধান করলো আল্লাহ্ তা‘আলাও তার দোষ অনুসন্ধান করবেন। আর যার দোষ আল্লাহ্ তা‘আলা অনুসন্ধান করবেন তাকে অবশ্যই তিনি লাঞ্ছিত করে ছাড়বেন যদিও সে নিজ ঘরের অভ্যন্তরেই অবস্থান করুক না কেন’’। [সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং- ২০৩২]

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেনঃ

لاَ يَتَنَاجَى اثْنَانِ دُونَ وَاحِدٍ فَإِنَّ ذَلِكَ يُؤْذِي الْمُؤْمِنَ وَاللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ يَكْرَهُ أَذَى الْمُؤْمِنِ

“একজনকে বাদ দিয়ে দু’জনে কানাকানি করবে না। কেননা ইহা মুমিনের কষ্ট দেয়। আর আল্লাহ তা’আলা তো মুমিনকে কষ্ট দেয়া অপছন্দ করেন”। [সূনান আত তিরমিজী, হাদীস নং-28250]

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «أَتَدْرُونَ مَا الْمُفْلِسُ؟» قَالُوا: الْمُفْلِسُ فِينَا مَنْ لَا دِرْهَمَ لَهُ وَلَا مَتَاعَ، فَقَالَ: «إِنَّ الْمُفْلِسَ مِنْ أُمَّتِي يَأْتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِصَلَاةٍ، وَصِيَامٍ، وَزَكَاةٍ، وَيَأْتِي قَدْ شَتَمَ هَذَا، وَقَذَفَ هَذَا، وَأَكَلَ مَالَ هَذَا، وَسَفَكَ دَمَ هَذَا، وَضَرَبَ هَذَا، فَيُعْطَى هَذَا مِنْ حَسَنَاتِهِ، وَهَذَا مِنْ حَسَنَاتِهِ، فَإِنْ فَنِيَتْ حَسَنَاتُهُ قَبْلَ أَنْ يُقْضَى مَا عَلَيْهِ أُخِذَ مِنْ خَطَايَاهُمْ فَطُرِحَتْ عَلَيْهِ، ثُمَّ طُرِحَ فِي النَّارِ

হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লা জিজ্ঞেস করলেন:
“তোমরা কি জান নি:স্ব কে?”

সাহাবায়ে কেরাম বললেন: “আমাদের মধ্যে নি:স্ব তো সে যার কোন দিনার-দিরহাম বা অর্থ-সম্পদ নেই।”

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: “আমার উম্মতের মধ্যে সত্যিকার নি:স্ব হলো সেই ব্যক্তি যে কেয়ামতের দিন নামায, সিয়াম ও যাকাতসহ অনেক ভাল কাজ নিয়ে উপস্থিত হবে অথচ দুনিয়াতে সে কাউকে গালি দিয়েছিল, কারো প্রতি অপবাদ দিয়েছিল, করো সম্পদ আত্নসাত করেছিল, কারো রক্তপাত ঘটিয়েছিল, কাউকে মারধোর করেছিল। ফলে তার থেকে নেক আমলগুলো নিয়ে তার দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পাওনা আদায় করা হবে।
এভাবে যখন তার নেক আমলগুলো শেষ হয়ে যাবে ক্ষতিগ্রস্তদের দেয়ার জন্য আর কিছু থাকবে না তখন তাদের পাপগুলো তাকে দেয়া হবে। ফলে সে ( নিঃস্ব অবস্থায়) জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে।” (সহিহ মুসলিম- হাদীস নং-২৫৮১)

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।

পরিচালক: শুকুন্দী ঝালখালী তা’লীমুস সুন্নাহ দারুল উলুম মাদরাসা, মনোহরদী, নরসিংদী।

ইমেইল[email protected]

0Shares

আরও জানুন

ইমামের সামনের সুতরা কি মাসবূক মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট?

প্রশ্ন ইমামের সুতরা মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট কি না? এবং ইমামের সুতরা মসবুক ব্যাক্তির জন্য যথেষ্ট …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *