প্রচ্ছদ / আহলে হাদীস / ফজরের সুন্নাত বিষয়ে নবীজীর ‘দুই নামায এক সঙ্গে’ উক্তিটির ব্যাখ্যা কী?

ফজরের সুন্নাত বিষয়ে নবীজীর ‘দুই নামায এক সঙ্গে’ উক্তিটির ব্যাখ্যা কী?

প্রশ্ন

From: মুহাম্মাদ আবু আইউব আনছারী, চৌদ্দগ্রাম, কুমিল্লা
বিষয়ঃ ইকামত হয়ে গেলে সুন্নাত পড়া

প্রশ্নঃ
আসসালামু আলাইকুম। মুহতারাম!

মুয়াত্তা মালিকের باب ما جاء فى ركعتى الفجر এর  মধ্যে দেখলাম, “ফজরের ইকামাত শুরু হওয়ার পর সুন্নাত পড়া রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পছন্দ করতেন না “” এই হাদীসের ব্যাপারে আপনাদের বক্তব্য কি?

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

আলোচিত হাদীসটি আমরা প্রথমে দেখে নেই।

عَنْ أَبِي سَلَمَةَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمنِ؛ أَنَّهُ قَالَ: سَمِعَ قَوْمٌ الْإِقَامَةَ، فَقَامُوا يُصَلُّونَ. فَخَرَجَ عَلَيْهِمْ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم، فَقَالَ: «أَصَلاَتَانِ مَعاً؟ أَصَلاَتَانِ مَعاً؟» وَذلِكَ فِي صَلاَةِ الصُّبْحِ، فِي الرَّكْعَتَيْنِ اللَّتَيْنِ قَبْلَ الصُّبْحِ

হযরত আবূ সালমা বিন আব্দুর রহমান বিন আউফ  বলেন, এক সম্প্রদায় ইকামত শুনলেন। (শোনার পর) তারা (ফজরের সুন্নত) নামায পড়তে দাঁড়িয়ে গেলেন। এমন সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আগমন করেন। তিনি বললেন, দুই নামায একত্রে? দুই নামায এক সঙ্গে? এটা ফজরের নামাযের ঘটনা। ফজরের পূর্বের দুই রাকাআত সম্পর্কে এটা বলা হয়েছে। [মুয়াত্তা মালেক, বর্ণনা নং-৪২১, ইফাবা-৩১]

এখানে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ‘দুই নামায এক সঙ্গে’ বলে অপছন্দ প্রকাশ করার দ্বারা কোন বিষয়টি অপছন্দ করা উদ্দেশ্য?

ইকামত হলে ফজরের সুন্নাত পড়া নিষিদ্ধ এজন্য? নাকি এভাবে ফজরের সুন্নাত দেরী করে ফজরের ফরজের ইকামতের সময় একই সময়ে পড়াকে অপছন্দ করার কারণে?

আসলে ফজরের ফরজের ইকামত হয়ে গেলে এদিনের ফজরের সুন্নাত পড়া নিষিদ্ধ বা মাকরূহ হবার কারণে নবীজী এটাকে অপছন্দ করেননি। বরং একই সময়ে দুই নামাযকে গুলিয়ে ফেলার কারণে নবীজী এটাকে অপছন্দ করেছেন।

একদিকে ফজরের সুন্নাত, অপর দিকে ইকামত শুরু হওয়া ফজরের ফরজের নামায।

এ কারণেই অনেক প্রথম সারীর সাহাবাগণ রাঃ থেকে ফজরের ইকামত হবার পরও ফজরের সুন্নাত পড়া সহীহ সনদ বিশিষ্ট হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।

যদি ফজরের ইকামত হলে এ দিনের সুন্নাত পড়া নিষিদ্ধ বা মাকরূহ হতো, তাহলে সাহাবাগণ রাঃ কখনোই এ সময়ে সুন্নাত পড়তেন না।

(فخرج عليهم رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال: أصلاتان معا؟) لأن الإقامة من الصلاة، قاله الزرقانى، والمعنى: أن إحدى الصلاتين التى تصلى أنت، والثانية التى أقيمت لها تصليان معا،وهذا أوضح قرينة على أن الإنكار كان على الاشتراك والمخالطة، لا على التنفل عند إقامة المكتوبة، (اوجز المسالك-2/666، رقم الحديث-277)

نَافِعًا، يَقُولُ: «أَيْقَظْتُ ابْنَ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا لِصَلَاةِ الْفَجْرِ , وَقَدْ أُقِيمَتِ الصَّلَاةُ , فَقَامَ فَصَلَّى الرَّكْعَتَيْنِ

হযরত নাফে বলেন, আমি ফজর নামাযের ইকামত হয়ে যাওয়ার পর ফজরের নামাযের জন্য ইবনে উমর রাঃ কে (ঘুম থেকে) জাগিয়েছি। তিনি তখন উঠে দু’ রাক’আত (সুন্নাত) আদায় করলেন। [তাহাবী, শরীফ, হাদীস নং-২২০৩, ইফাবা-২০৪৮]

আল্লামা নিমাবী রহঃ বলেন, হাদীসটির সনদ সহীহ। [আসারুস সুনান-২/৩২, আওযাজুল মাসালিক-২/৬৬৮]


عن أبى مجلز قال : دخلت المسجد في صلاة الغداة مع بن عمر وابن عباس رضي الله عنهم والإمام يصلى فأما بن عمر رضي الله عنهما فدخل في الصف وأما بن عباس رضي الله عنهما فصلى ركعتين ثم دخل مع الإمام (رقم الحديث-3029

আবী মিজলাস থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি ফজরের নামাযে একদা ইবনে ওমর রাঃ, ইবনে আব্বাস রাঃ এর সাথে মসজিদে প্রবেশ করলাম এমতাবস্থায় যে, ইমাম সাহেব নামায পড়াচ্ছিল। তখন ইবনে ওমর রাঃ কাতারে শামিল হয়ে গেলেন। আর ইবনে আব্বাস রাঃ দুই রাকাত [সুন্নত] পড়লেন। তারপর ইমামের সাথে নামাযে শরীক হলেন। [শরহু মাআনিল আসার, হাদীস নং-৩০২৯]

এর সনদও সহীহ। [আওযাজুল মাসালিক-২/৬৬৯]

عَنِ ابْنِ عُمَرَ، رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا «أَنَّهُ جَاءَ وَالْإِمَامُ يُصَلِّي الصُّبْحَ , وَلَمْ يَكُنْ صَلَّى الرَّكْعَتَيْنِ قَبْلَ صَلَاةِ الصُّبْحِ , فَصَلَّاهُمَا فِي حُجْرَةِ حَفْصَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا , ثُمَّ إِنَّهُ صَلَّى مَعَ الْإِمَامِ» فَفِي هَذَا الْحَدِيثِ , عَنِ ابْنِ عُمَرَ أَنَّهُ صَلَّاهُمَا فِي الْمَسْجِدِ , لِأَنَّ حُجْرَةَ حَفْصَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا مِنَ الْمَسْجِدِ

হযরত ইবনে উমর রাঃ থেকে বর্ণিত যে, তিনি একবার ফজরের ফরজপূর্ব দু’ রাকআত (সুন্নাত) আদায় না করে এলেন। তখন ইমাম ফজরের নামায আদায় করছেন। ফলে তিনি সে দু’রাক’আত  হাফসা রাঃ এর হুজরায় আদায় করলেন। তারপর তিনি ইমামের সাথে (ফরজ) পড়লেন।

বস্তুত এ হাদীসে ব্যক্ত হয়েছে যে, ইবনে উমর রাঃ ফজরের দু’রাক’আত সুন্নাত মসজিদে পড়েছেন। কারণ, হাফসা রাঃ এর হুজরা মসজিদেরই অংশ। [তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-২২০৪, ইফাবা-২০৪৯]

এ হাদীসের প্রতিটি রাবী সিক্বা একমাত্র ইয়াহইয়া বিন আবী কাছীর ব্যতীত। তিনি মুদাল্লিছ ছিলেন। [আওযাজুল মাসালিক-২/৬৬৮]

عَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ أَنَّهُ كَانَ يَدْخُلُ الْمَسْجِدَ وَالنَّاسُ صُفُوفٌ فِي صَلَاةِ الْفَجْرِ , فَيُصَلِّي الرَّكْعَتَيْنِ فِي نَاحِيَةِ الْمَسْجِدِ , ثُمَّ يَدْخُلُ مَعَ الْقَوْمِ فِي الصَّلَاةِ

হযরত আবু দারদা রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি ফজরের সময় লোকজন কাতারে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানো অবস্থায় মসজিদে প্রবেশ করতেন। তারপর মসজিদের এক পাশে গিয়ে তিনি দু’ রাক’আত সুন্নাত আদায় করার পর লোকদের সাথে নামাযে (জামাআতে) অংশগ্রহণ করতেন। [শরহু মাআনিল আছার, হাদীস নং-২২০৫, ইফাবা-২০৫০]

এর সনদ হাসান। [আওযাজুল মাসালিক-২/৬৬৯]

এভাবে ফজরের ফরজ নামাযের ইকামত হবার পরও সুন্নাত পড়ার প্রমাণ অনেক সাহাবাগণ রাঃ থেকে বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত। সুতরাং বুঝা গেল, জামাত পড়ার সম্ভাবনা থাকা অবস্থায় ফজরের ফরজের ইকামত হয়ে গেলেও সুন্নাত পড়ে তারপর ফরজের জামাতে শরীক হবে।

আরো বিস্তারিত দলীলসহ জানতে হলে পড়ুন:

ফজরের জামাত  চলা অবস্থায় দুই রাকাত সুন্নাত পড়ার বিষয়ে দলীল জানতে চাই

ফজরের জামাত চলা অবস্থায় সুন্নাত পড়ার বিধান

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।

পরিচালক: শুকুন্দী ঝালখালী তা’লীমুস সুন্নাহ দারুল উলুম মাদরাসা, মনোহরদী, নরসিংদী।

ইমেইল[email protected]

0Shares

আরও জানুন

ইমামের সামনের সুতরা কি মাসবূক মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট?

প্রশ্ন ইমামের সুতরা মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট কি না? এবং ইমামের সুতরা মসবুক ব্যাক্তির জন্য যথেষ্ট …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *