প্রশ্ন
From: shayesta khan
বিষয়ঃ উচিলা ধরে দোয়া করা
প্রশ্নঃ
মৃত ব্যক্তির উচিলা ধরে দোয়া করা যাবে?
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
মৃত আল্লাহর নবী ও মৃত আল্লাহর ওলীদের উসিলা দিয়ে দুআ করা শরীয়তসম্মত। এতে কোন সমস্যা নেই।
وَلَمَّا جَاءَهُمْ كِتَابٌ مِّنْ عِندِ اللَّهِ مُصَدِّقٌ لِّمَا مَعَهُمْ وَكَانُوا مِن قَبْلُ يَسْتَفْتِحُونَ عَلَى الَّذِينَ كَفَرُوا ﴿البقرة: ٨٩
যখন তাদের কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে কিতাব এসে পৌঁছাল, যা সে বিষয়ের সত্যায়ন করে, যা তাদের কাছে রয়েছে এবং যা দিয়ে তারা ইতোপূর্বে কাফেরদের উপর বিজয় কামনা করতো। {সূরা বাকারা-৮৯}
আল্লামা সাইয়্যেদ মাহমুদ আলুসী রহঃ বলেনঃ
نزلت في بني قريظة والنضير كانوا يستفتحون على الأوس والخزرج برسول الله صلى الله عليه وسلم قبل مبعثه قاله ابن عباس رضي الله تعالى عنهما وقتادة والمعنى يطلبون من الله تعالى أن ينصرهم به على المشركين ، كما روى السدي أنهم كانوا إذا اشتد الحرب بينهم وبين المشركين أخرجوا التوراة ووضعوا أيديهم على موضع ذكر النبي صلى الله عليه وسلم وقالوا : اللهم إنا نسألك بحق نبيك الذي وعدتنا أن تبعثه في آخر الزمان أن تنصرنا اليوم على عدوّنا فينصرون
এ আয়াত নাজীল হয়েছে বনী কুরাইজা ও বনী নজীরের ব্যাপারে। রাসূল সাঃ এর আগমণের পূর্বে যারা আওস ও খাজরাজের বিরুদ্ধে রাসূল সাঃ এর ওসীলা দিয়ে দুআ করতো। এ বক্তব্যটি ইবনে আব্বাস রাঃ এবং কাতাদা এর।
আল্লাহ তাআলার কাছে চাওয়ার মানে হল, তারা এর দ্বারা মুশরিকদের বিরুদ্ধে আল্লাহ তাআলার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করতো। যেমন সিদ্দী বর্ণনা করেন যে, যখন তাদের ও মুশরিকদের মাঝে ভয়াবহ যুদ্ধ লেগে যেত, তখন তারা তাওরাত কিতাব বের করত, এবং তাদের হাত যেখানে রাসূল সাঃ এর নাম আছে তার উপর রাখতো, আর বলতো-“হে আল্লাহ! আমরা আজকে আপনার সাহায্য কামনা করছি আমাদের শত্র“দের বিরুদ্ধে ঐ সত্য নবীর ওসীলায় শেষ জমানায় যার আগমনের ওয়াদা আপনি করেছেন। তারপর তাদের সাহায্য করা হতো। {তাফসীরে রুহুল মাআনী-১/৩২০}
আল্লামা মহল্লী রহঃ উক্ত আয়াতের তাফসীরে বলেনঃ
রাসূল সাঃ এর আগমনের পূর্বে ইহুদীরা কাফেরদের বিরুদ্ধে আল্লাহ তাআলার কাছে সাহায্য পার্থনা করে বলতো- اللهم انصرنا عليهم باالنبى المبعوث آخر الزمان তথা হে আল্লাহ! শেষ জমানায় আগমনকারী নবীর ওসীলায় আমাদের সাহায্য করুন। {তাফসীরে জালালাইন-১/১২}
একই তাফসীর নিম্ন বর্ণিত তাফসীর গ্রন্থে বর্ণিত। যেমন-
১- তাফসীরে কাবীর-৩/১৮০।
২- তাফসীরে ইবনে জারীর তাবারী-১/৪৫৫।
৩- তাফসীরে বগবী-১/৫৮।
৪- তাফসীরে কুরতুবী-২/২৭।
৫- তাফসীরে আলবাহরুল মুহীত-১/৩০৩।
৬- তাফসীরে ইবনে কাসীর-১/১২৪।
৭- তাফসীরে আবীস সউদ-১/১২৮।
৮- তাফসীরে মাজহারী-১/৯৪।
৯- তাফসীরে রূহুল মাআনী-১/৩১৯।
১০- তাফসীরে ইবনে আব্বাস রাঃ-১৩।
১১- তাফসীরে খাজেন-১/৬৪।
১২- তাফসীরে মাদারেক-১/৩২।
১৩- তাফসীরে দুররে মানসূর-১/৮৮।
১৪- তাফসীরে তাবসীরুর রহমান আরবী-১/৫২।
১৫- সফওয়াতুত তাফাসীর-১/৭৭।
১৬- তাফসীরে আজীজী-৩২৯।
১৭- তাফসীরে মাওজাউল কুরআন-১৫।
১৮- তাফসীরে মাআরেফুর কুরআন [মাওলানা মুহাম্মদ ইদ্রিস কান্ধলবী রহঃ]- ১/১৭৭।
১৯- তাফসীরে জাওয়াহেরুল কুরআন- ৪৯।
২০- বাদায়েউল ফাওয়ায়েদ লিইবনে কায়্যিম হাম্বলী-৪/১৪৫।
২১- আলমিনহাতুল ওহাবিয়া লিআল্লামা দাউদ বিন সুলাইমান আলবাগদাদী হানাফী রহঃ-৩১।
বিশেষ কথা
উসুলে ফিক্বহ এ লিখা আছে যে, আল্লাহ তাআলা ও জনাবে রাসূল সাঃ যদি পর্ববর্তীদের শরীয়ত সমালোচনা বা নিষেধ করা ছাড়া বর্ণনা করে থাকেন, তাহলে সেটি আমাদের উপরও লাযেম হয়ে যায়। {নূরুল আনওয়ার-২১৬, তাসকীনুল কুলুব-৭৬, নেদায়ে হক্ব-১০১}
নোট
রাসূল সাঃ দুনিয়াতে বিদ্যমান ছিলেন না। সে সময় ইহুদীরা রাসূল সাঃ এর ওসীলা দিয়ে আল্লাহ তাআলার কাছে দুআ করতো। আর এ বিষয়কে আল্লাহ তাআলা সমালোচনাহীনভাবে উদ্ধৃতি করেছেন। রাসূল সাঃ থেকেও এ ওসীলার কোন বিরোধীতা বর্ণিত নেই। তাই রাসূল সাঃ এখনো দুনিয়াতে নেই। তাই এ আয়াত অনুপাতে রাসূল সাঃ ওসীলা গ্রহণ এখনো জায়েজ আছে।
হযরত উসমান বিন হানীফ রাঃ থেকে ওসীলা জায়েজের প্রমাণ
أن رجلا كان يختلف إلى عثمان بن عفان رضي الله عنه في حاجة له فكان عثمان لا يلتفت إليه ولا ينظر في حاجته فلقي عثمان بن حنيف فشكا ذلك إليه فقال له عثمان بن حنيف ائت الميضأة فتوضأ ثم ائت المسجد فصلي فيه ركعتين ثم قل اللهم إني أسألك وأتوجه إليك بنبينا محمد صلى الله عليه و سلم نبي الرحمة
এক ব্যক্তি হযরত উসমান বিন আফফান রাঃ এর কাছে একটি জরুরী কাজে আসা যাওয়া করত। হযরত উসমান রাঃ [ব্যস্ততার কারণে] না তার দিকে তাকাতেন, না তার প্রয়োজন পূর্ণ করতেন। সে লোক হযরত উসমান বিন হানীফ রাঃ এর কাছে গিয়ে এ ব্যাপারে অভিযোগ করল। তখন তিনি বললেনঃ তুমি ওজু করার স্থানে গিয়ে ওজু কর। তারপর মসজিদে গিয়ে দুই রাকাত নামায পড়। তারপর বল, হে আল্লাহ! তোমার কাছে প্রার্থনা করছি। রহমাতের নবী মুহাম্মদ সাঃ এর ওসীলায় তোমার দিকে মনোনিবেশ করছি। {আল মুজামে সগীর, হাদীস নং-৫০৮, আল মুজামুল কাবীর, হাদীস নং-৮৩১১, আত তারগীব ওয়াত তারহীব, হাদীস নং-১০১৮}
এ হাদীসের শেষে স্পষ্ট রয়েছে যে, লোকটি তা’ই করেছিল। তার দুই কবুলও হয়েছিল। ফলে হযরত উসমান রাঃ তাকে সম্মান দেখিয়ে তার প্রয়োজনও পূর্ণ করে দিয়েছিলেন।
হাদীসটির সনদ প্রসঙ্গে
# উক্ত হাদীসটির ক্ষেত্রে ইমাম তাবরানী বলেনঃ والحديث صحيح তথা এ হাদীসটি সহীহ। {আল মুজামে সগীর-১০৪}
# আল্লামা মুনজিরী রহঃ ও একথার পক্ষাবলম্বন করেছেন। {আত তারগীব ওয়াত তারহীব-১/২৪২}
# আল্লামা ইবনে হাজার মক্কী রহঃ বলেনঃ رواه التبرانى بسند جيد তথা তাবারানী রহঃ এটাকে উত্তম সনদে তা বর্ণনা করেছেন। {হাশীয়ায়ে ইবনে হাজার মক্কী আলাল ঈজাহ ফি মানাসিকিল হজ্ব লিননববী-৫০০, মিশর}
সুতরাং বুঝা গেল যে, মৃত আল্লাহর ওলীদের উসিলায় দুআ করা সম্পূর্ণরূপে জায়েজ। এতে সন্দেহ করার কিছু নেই।
আরো পড়তে পারেন:
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।