প্রচ্ছদ / অপরাধ ও গোনাহ / শিরক ও পাপাচারে লিপ্ত পিতা মাতার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা যাবে?

শিরক ও পাপাচারে লিপ্ত পিতা মাতার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা যাবে?

প্রশ্ন

আসসালামু আলাইকুম মুহতারাম,

বাবা মার কথা শোনা ওয়াজিব!

আচ্ছা, যদি তারা কাফির হয় বা নামে মুসলিম কিন্তু ইসলামী শরীয়তের কোনো তোয়াক্কা করেন না, তার ছেলে ইসলামকে পরিপূর্ণভাবে ফলো করলে নিচু চোখে দেখে, বা আল্লাহর হারামকে হালাল বানিয়ে ফেলে, হারামের কথা স্মরণ করিয়ে দিলে এসব আইনকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে!

আবার এমন কোনো বাবা মা আছেন, যারা কবর পূজারী মুখে সব সময় তাদের ভন্ড বাবাদের জিকির থাকে!

প্রশ্ন ১: এসব করলেও তাদের কথা শুনা ওয়াজিব?

প্রশ্ন ২: বাবা ইসলাম পালন করতে বাধা দেয়, যেমন নামাজ, রোজা, পর্দা করতে বাধা দেয়, শিরক করতে বাধ্য করে, খারাপ ব্যাবহার করে!

এমতাবস্থায় সম্পর্ক ছিন্ন করা জায়েজ হবে?

সম্পূরক প্রশ্ন: বাবা যদি হারাম আয় করে, তাহলে আমি হালাল আয়ের পথ খুঁজে আব্বার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে পারবো?

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

বাবা ও মা কাফের হলেও তাদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা আবশ্যক। সম্পর্ক ছিন্ন করা জায়েজ নয়।

তাদের শরীয়ত বিরোধী কাজ মানা যাবে না। আমল করা যাবে না। কিন্তু অন্যান্য বিষয়ে তাদের কথা মানতে হবে। তাদের অনুসরণ করা ও তাদের কষ্ট দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। ভালো ও উত্তম আচরণ করতে হবে। বেশি বেশি দুআ করতে হবে যেন তারা খারাপ পথ থেকে ফিরে আসেন। গোনাহের পথ ছেড়ে দেন।

হালাল রুজি কামাইয়ের জন্য নিজের চেষ্টা করা আবশ্যক। এ কারণে বাবা ও মায়ের সাথে সম্পর্ক শেষ করা যাবে না। যোগাযোগ রক্ষা করতে হবে। তাদের সাথে নরম ও কোমল আচরণ অব্যাহত রাখতে হবে।

যদিও তাদের শরীয়ত বিরোধী কাজ সাপোর্ট করাও যাবে না। আবার তাদের হারাম বিষয়ের আদেশ মান্যও করা যাবে না।

খুবই সতর্কতার সাথে বিষয়টি ম্যানেজ করতে হবে।

وَوَصَّيْنَا الْإِنسَانَ بِوَالِدَيْهِ حُسْنًا ۖ وَإِن جَاهَدَاكَ لِتُشْرِكَ بِي مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ فَلَا تُطِعْهُمَا ۚ إِلَيَّ مَرْجِعُكُمْ فَأُنَبِّئُكُم بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ [٢٩:٨]

আমি মানুষকে পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করার জোর নির্দেশ দিয়েছি। যদি তারা তোমাকে আমার সাথে এমন কিছু শরীক করার জোর প্রচেষ্টা চালায়, যার সম্পর্কে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তবে তাদের আনুগত্য করো না। আমারই দিকে তোমাদের প্রত্যাবর্তন। অতঃপর আমি তোমাদেরকে বলে দেব যা কিছু তোমরা করতে। [সূরা আনকাবুত-৮]

وَإِن جَاهَدَاكَ عَلَىٰ أَن تُشْرِكَ بِي مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ فَلَا تُطِعْهُمَا ۖ وَصَاحِبْهُمَا فِي الدُّنْيَا مَعْرُوفًا ۖ وَاتَّبِعْ سَبِيلَ مَنْ أَنَابَ إِلَيَّ ۚ ثُمَّ إِلَيَّ مَرْجِعُكُمْ فَأُنَبِّئُكُم بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ [٣١:١٥]

পিতা-মাতা যদি তোমাকে আমার সাথে এমন বিষয়কে শরীক স্থির করতে পীড়াপীড়ি করে, যার জ্ঞান তোমার নেই; তবে তুমি তাদের কথা মানবে না এবং দুনিয়াতে তাদের সাথে সদ্ভাবে সহাবস্থান করবে। যে আমার অভিমুখী হয়, তার পথ অনুসরণ করবে। অতঃপর তোমাদের প্রত্যাবর্তন আমারই দিকে এবং তোমরা যা করতে, আমি সে বিষয়ে তোমাদেরকে জ্ঞাত করবো। [সূরা লুকমান-১৫]

عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: السَّمْعُ وَالطَّاعَةُ عَلَى الْمَرْءِ الْمُسْلِمِ فِيمَا أَحَبَّ وَكَرِهَ مَا لَمْ يُؤْمَرْ بِمَعْصِيَةٍ، فَإِنْ أُمِرَ بِمَعْصِيَةٍ فَلاَ سَمْعَ عَلَيْهِ وَلاَ طَاعَةَ

ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সকল মুসলমানেরই নেতার কথা শোনা ও আনুগত্য করা অবশ্য কর্তব্য, তা হোক তার পছন্দের বা অপছন্দের, তাকে যে পর্যন্ত গুনাহের কাজের নির্দেশ না দেওয়া হবে। যদি তাকে গুনাহের কাজের নির্দেশ দেওয়া হয় তাহলে তা না শুনা এবং না মানাই তার কর্তব্য। [সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-১৭০৭]

عَنْ عَلِيٍّ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: ” لَا طَاعَةَ لِمَخْلُوقٍ فِي مَعْصِيَةِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ

হযরত আলী রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আল্লাহর অবাধ্যতায় কোন মাখলূকের আনুগত্য করা জায়েজ নেই। [মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১০৯৫]

مُصْعَبُ بْنُ سَعْدٍ، عَنْ أَبِيهِ، أَنَّهُ نَزَلَتْ فِيهِ آيَاتٌ مِنَ الْقُرْآنِ قَالَ: حَلَفَتْ أُمُّ سَعْدٍ أَنْ لَا تُكَلِّمَهُ أَبَدًا حَتَّى يَكْفُرَ بِدِينِهِ، وَلَا تَأْكُلَ وَلَا تَشْرَبَ، قَالَتْ: زَعَمْتَ أَنَّ اللهَ وَصَّاكَ بِوَالِدَيْكَ، وَأَنَا أُمُّكَ، وَأَنَا آمُرُكَ بِهَذَا. قَالَ: مَكَثَتْ ثَلَاثًا حَتَّى غُشِيَ عَلَيْهَا مِنَ الْجَهْدِ، فَقَامَ ابْنٌ لَهَا يُقَالُ لَهُ عُمَارَةُ، فَسَقَاهَا، فَجَعَلَتْ تَدْعُو عَلَى سَعْدٍ، فَأَنْزَلَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ فِي الْقُرْآنِ هَذِهِ الْآيَةَ: {وَوَصَّيْنَا الْإِنْسَانَ بِوَالِدَيْهِ حُسْنًا وَإِنْ جَاهَدَاكَ عَلَى أَنْ تُشْرِكَ بِي}

মুসআব ইবনু সা’দ (রাঃ) তার পিতা থেকে বর্ণিত যে, তাঁর সম্পর্কে কুরআনের কিছু আয়াত অবতীর্ণ হলো। তিনি বলেন, তাঁর মা শপথ করে ফেলেছে যে, যতক্ষন তিনি ইসলামকে অস্বীকার না করবেন ততক্ষন তার সাথে কথা বলবে না খাবেও না, পানও করবে না। সে বললো, আল্লাহ তায়ালা তোকে আদেশ করেছেন, পিতামাতার কথা মানতে। আর আমি তোর মা। আমি তোকে এ আদেশ করছি। মা তিন দিন পর্যন্ত কিছু খেলেন না। কষ্টে সে বেহুশ হয়ে গেলে উমারাহ নামক তার এক ছেলে তাকে পানি পান করালো। মা সা’দর উপর বদদু’আ করতে লাগলো। তখন আল্লাহ তা’আলা কুরআন শরীফে এ আয়াত অবতীর্ণ করলেনঃ আমি মানুষকে নির্দেশ দিয়েছি তার পিতামাতার প্রতি সদ্ব্যব্যাবহার করতে। তবে ওরা যদি তোমার উপর বল প্রয়োগ করে, আমার সাথে এমন কিছু শরীক করতে যার সম্পর্কে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তুমি তাদের মেনো না।” (২৯ঃ ৮) আর পৃথিবীতে তাদের সাথে বসবাস করবে সদ্ভাবে।” (৩১ঃ ১৫) [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৭৪৮]

عَنْ أَسْمَاءَ بِنْتِ أَبِي بَكْرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَتْ: قَدِمَتْ عَلَيَّ أُمِّي وَهِيَ مُشْرِكَةٌ فِي عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَاسْتَفْتَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قُلْتُ: وَهِيَ رَاغِبَةٌ، أَفَأَصِلُ أُمِّي؟ قَالَ: «نَعَمْ صِلِي أُمَّكِ

আসমা বিনতে আবূ বাকর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর যুগে আমার আম্মা মুশরিক অবস্থায় আমার নিকট এলেন। আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট ফাতওয়া চেয়ে বললাম, তিনি আমার প্রতি খুবই আকৃষ্ট, এমতাবস্থায় আমি কি তার সঙ্গে সদাচরণ করব? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তুমি তোমার মায়ের সঙ্গে সদাচরণ কর। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং-২৬২০]

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।

ইমেইল[email protected]

0Shares

আরও জানুন

ইমামের সামনের সুতরা কি মাসবূক মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট?

প্রশ্ন ইমামের সুতরা মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট কি না? এবং ইমামের সুতরা মসবুক ব্যাক্তির জন্য যথেষ্ট …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *