প্রচ্ছদ / আকিদা-বিশ্বাস / মনে মনে কুফরী কথার ওয়াসওয়াসা আসলে কি ব্যক্তি কাফের হয়ে যায়?

মনে মনে কুফরী কথার ওয়াসওয়াসা আসলে কি ব্যক্তি কাফের হয়ে যায়?

প্রশ্ন

From: মোঃ আবদুল্লাহ
বিষয়ঃ আকিদা-বিশ্বাস

প্রশ্নঃ
নাম ও ইমেইল প্রকাশে অনিচ্ছুক।
সম্মানিত মুফতি সাহেব, আস-সালামু-আলাইকুম। আশাকরি মহান আল্লাহর রহমতে ভালো আছেন। আসলে আমি বেশ অনেক দিন ধরেই একটা সমস্যায় মধ্যে আছি। আমরা জানি যে, মুসলিম হিসাবে আমাদেরকে ৭টি বিষয়ে দৃঢ় বিশ্বাস রাখতে হয়। কিন্তু আমার মনে উক্ত বিষয়ে গুলোর ব্যাপারে বিভিন্ন আজগুবি চিন্তা/প্রশ্ন উদয় হয়। আমি জানিনা কেন এমন হয়। এসব বাজে চিন্তা/প্রশ্ন মন থেকে সরানোও যায়না। এখন আমার প্রশ্ন হলো, আমার কি ঈমান নেই বা আমি কাফের হয়ে গেছি? এক্ষেত্রে আমার করনীয় কি?
বিষয়টা নিয়ে বেশ মানসিক কষ্টের মধ্যে আছি। কারো সাথে বিষয়গুলো শেয়ারও করা যায়না। আপনাদের ওয়েবসাইটে ধর্মীয় বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেয়া হয়, দেখার পর প্রশ্ন করলাম। দয়াকরে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিলে খুবই উপকৃত হব। ধন্যবাদ

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

অহেতুক প্রশ্ন ও সন্দেহ আসলে সাথে সাথেই তওবা করুন। বেশি বেশি ইস্তিগফার করুন। আল্লাহর কাছে হেদায়েতের উপর অটল থাকার জন্য দুআ করুন।

মনের মাঝে শুধুমাত্র বাজে চিন্তা বা কুফরী চিন্তা আসলেই ব্যক্তি কাফের হয়ে যায় না।

বরং দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে মুখ দিয়ে কুফরী কথা উচ্চারণ করলেই কেবল ব্যক্তি কাফের হবে।

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ جَاءَ نَاسٌ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَسَأَلُوهُ إِنَّا نَجِدُ فِي أَنْفُسِنَا مَا يَتَعَاظَمُ أَحَدُنَا أَنْ يَتَكَلَّمَ بِهِ ‏.‏ قَالَ ‏”‏ وَقَدْ وَجَدْتُمُوهُ ‏”‏ ‏.‏ قَالُوا نَعَمْ ‏.‏ قَالَ ‏”‏ ذَاكَ صَرِيحُ الإِيمَانِ ‏”‏

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কতিপয় সাহাবী তাঁর সমীপে এসে বললেন, আমাদের অন্তরে এমন কিছু সংশয়ের উদয় হয়, যা আমাদের কেউ মুখে উচ্চারণ করতেও মারাত্মক মনে করে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তরে বললেনঃ সত্যই তোমাদের তা হয়? তারা জবাব দিলেন, জ্বী, হ্যাঁ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এটই স্পষ্ট ঈমান। (কারণ ঈমান আছে বলেই সে সম্পর্কে ওয়াসওয়াসা ও সংশয়কে মারাত্মক মনে করা হয়।) [সহীহ মুসলিম-১/৭৯, হাদীস নং-১৩২, ইফাবা, হাদীস নং-২৪০]

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم إِنَّ اللهَ تَجَاوَزَ لِي عَنْ أُمَّتِي مَا وَسْوَسَتْ بِهِ صُدُورُهَا مَا لَمْ تَعْمَلْ أَوْ تَكَلَّمْ

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, (আমার বরকতে) আল্লাহ আমার উম্মতের অন্তরে উদিত ওয়াসওয়াসা (পাপের ভাব ও চেতনা) মাফ করে দিয়েছেন। যতক্ষণ পর্যন্ত না সে তা কাজে পরিণত করে অথবা মুখে বলে। [সহীহ বুখারী-১/৩৪৩, হাদীস নং-২৫২৮, ইফাবা, হাদীস নং-২৩৬১]

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ “‏ قَالَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ إِذَا هَمَّ عَبْدِي بِحَسَنَةٍ وَلَمْ يَعْمَلْهَا كَتَبْتُهَا لَهُ حَسَنَةً فَإِنْ عَمِلَهَا كَتَبْتُهَا عَشْرَ حَسَنَاتٍ إِلَى سَبْعِمِائَةِ ضِعْفٍ وَإِذَا هَمَّ بِسَيِّئَةٍ وَلَمْ يَعْمَلْهَا لَمْ أَكْتُبْهَا عَلَيْهِ فَإِنْ عَمِلَهَا كَتَبْتُهَا سَيِّئَةً وَاحِدَةً ‏”‏

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ আল্লাহ তা’আলা বলেছেনঃ আমার বান্দা যখন কোন সৎকর্মের সংকল্প গ্রহণ করে অথচ এখনও তা সম্পাদন করে নি তখন আমি তার জন্য একটি সাওয়াব লিখি; আর যদি কার্যত সম্পাদন করে তবে দশ থেকে সাতশ- গুন পর্যন্ত সাওয়াব লিখি। পক্ষান্তরে যদি অসৎ কর্মের ইচ্ছা করে অথচ এখনো সম্পাদন করে নি তবে এর জন্য কিছুই লিখি না। আর তা কার্যে পরিণত করলে একটি মাত্র পাপ লিখি। [সহীহ মুসলিম-১/৭৮, হাদীস নং-১২৮, ইফাবা, হাদীস নং-২৩৫]

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।

ইমেইল– ahlehaqmedia2014@gmail.com

আরও জানুন

তালাকের সন্দেহের দ্বারা কি কোন তালাক পতিত হয়?

প্রশ্ন ‘তালাক’ শব্দটি বলেছে কি না- ভাবনার সময় ‘তালাক দিলাম’  উচ্চারণে কি তালাক হয়? আসসালামু …

Leave a Reply

Your email address will not be published.

আহলে হক্ব বাংলা মিডিয়া সার্ভিস