প্রশ্ন
From: আসলাম হুসাঈন
বিষয়ঃ হালাল-হারাম
প্রশ্নঃ
আসসালামু আলাইকুম, সম্মানিত মুফতী সাহেব!
১
বর্তমানে চরম অশ্লীলতার যুগে ধর্মভীরু মানুষের জন্য ইজ্জত-আব্রু রক্ষা করে ধর্ম পালন করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে! আলেমদের মুখে শুনি বা কিতাবাদীতে পড়ি যে, কোন পুরুষের সাথে তাঁর শাশুড়ীর বা পুত্রবধুর সাথে তাঁর শ্বশুরের মাঝে শারীরিক সম্পর্ক হলে (হোক দুজনের ইচ্ছায় বা একজনের ইচ্ছায় ও অন্যজনের অনিচ্ছায়) স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার সম্পর্ক চিরদিনের জন্য হারাম হয়ে যায়। আবার অনেকেই বলেন যে, (আল্লহ্ আমাদের হিফাযাত করুন!) কোন পিতা তাঁর মেয়ের সাথে বা মা তাঁর ছেলের সাথে কুকর্ম করলেও স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার সম্পর্ক চিরদিনের জন্য হারাম হয়ে যায়। এখন আমার প্রশ্ন হলো যে, স্বামী-স্ত্রী’র আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে কার কার সাথে কু সম্পর্কের দরূণ হুরমাতে মুসাহারা সংঘঠিত হয়? কেননা,
২
স্বামী-স্ত্রী’র কোনরূপ সংশ্লিষ্ঠতা ছাড়াই অন্যের কারণে যেমন শ্বশুর কর্তৃক পুত্রবধু ধর্ষিতা হলে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার সম্পর্ক চিরদিনের জন্য হারাম হয়ে যায় কেন? কারণ তাঁরাতো এক্ষেত্রে নির্দোষ!
উপরোক্ত দু’টি প্রশ্নের উত্তর দলীলসহ বিস্তারিত আলোচনা করবেন। মহান আল্লহ্ আপনাদের এ খিদমাহ্’র উত্তম প্রতিদান দান করুন। আমীন!
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبكاته
بسم الله الرحمن الرحيم
১ নং এর উত্তর
স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কের কারণে পুরুষ ও নারীর দুই প্রকারের আত্মীয়দের মাঝে বিয়ে করা হারাম সাব্যস্ত হয়। যথা-
ক) মহিলার জন্য পুরুষের উপরের আত্মীয় যথা বাবা, দাদা প্রমূখদের বিয়ে করা হারাম হয়। এবং পুরুষের জন্য নারীর উপরের আত্মীয় তথা মা, নানী প্রমূখদের বিয়ে করা হারাম হয়।
খ) মহিলার জন্য পুরুষের নিচের আত্মীয় যথা ছেলে, নাতি প্রমূখদের বিয়ে করা হারাম হয়। তেমনি পুরুষের জন্য নারীর নিচের তথা মেয়ে, তার নাতি প্রমূখদের বিয়ে করা হারাম হয়।
যার সাথে যৌন সম্পর্ক চাই বৈধ হোক বা অবৈধ, ইচ্ছেকৃত হোক বা জোরপূর্বক। সর্বাবস্থায় যৌন সম্পর্কের কারণে এটাকে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক হিসেবে বিধানগতভাবে ধরা হয়।
এ কারণে স্বামী এবং স্ত্রীর সম্পর্কের কারণে যাদের সাথে বিয়ে করা হারাম। এ যৌন সম্পর্কের কারণেও সেই সম্পর্কগুলো হারামে পরিণত হয়।
সুতরাং বুঝা গেল যে, স্বামীর স্ত্রীর পরস্পর আত্মীয়দের মাঝে যৌন সম্পর্কের কারণে যার সাথে যৌন সম্পর্ক করল, তার উপরের এবং নিচের আত্মীয়দের সাথে হুরমতে মুসাহারাত সাব্যস্ত হয়।
তথা মহিলার জন্য পুরুষের পিতা, দাদা প্রমূখ এবং ছেলে, নাতি প্রমূখ।
আর পুরুষের জন্য মহিলার মা, নানী প্রমূখ এবং মেয়ে, নাতি প্রমূখ।
এই দুই প্রকার আত্মীয়দের সাথে বিবাহ বন্ধন চিরতরে হারাম হয়।
وحرم أيضا بالصهرية….. أصل ممسوته بشهوة… وفروعهن مطلقا…. ولا فرق بين عمد ونسيان، وخطأ وإكراه (الدر المختار مع رد المحتار-4\107-112)
مَا يحرم بالصهرية
وَأما الصهر فهم أَرْبَعَة اصناف
أحدهم ابو الزَّوْج والجدود من قبل ابويه وان علوا يحرمُونَ على الْمَرْأَة وَتحرم هِيَ عَلَيْهِم دخل بهَا أَو لم يدْخل بهَا لقَوْله تَعَالَى {وحلائل أَبْنَائِكُم الَّذين من أصلابكم}
وَالثَّانِي ام الْمَرْأَة وجداتها من قبل ابويها وان علون يحرمن على الرجل وَيحرم هُوَ عَلَيْهِنَّ دخل بهَا اَوْ لم يدْخل لقَوْله تَعَالَى {وَأُمَّهَات نِسَائِكُم}
وَالثَّالِث ابناء الزَّوْج وَبَنُو اولاده وان سفلوا يحرمُونَ على امْرَأَته وَتحرم هِيَ عَلَيْهِم دخل بهَا اَوْ لم يدْخل لقَوْله تَعَالَى {وَلَا تنْكِحُوا مَا نكح آباؤكم من النِّسَاء}
وَالرَّابِع بَنَات الْمَرْأَة وَبَنَات أَوْلَادهَا وان سفلن يحرمن على الزَّوْج وَيحرم هُوَ عَلَيْهِنَّ ان كَانَ بَينهمَا أَي بَين الزَّوْجَيْنِ اُحْدُ السَّبْعَة وَهِي الْجِمَاع فِي الْفرج وَالْجِمَاع فِيمَا دون الْفرج والمباشرة بِشَهْوَة اَوْ المعانقة بِشَهْوَة اَوْ اللَّمْس بِشَهْوَة والتقبيل بِشَهْوَة وَالنَّظَر الى الْفرج بِشَهْوَة (النتف فى الفتاوى-254-255)
لو زنا بامرأة حرمت عليه أصولها وفروعها، وحرمت المزنية على أصوله وفروعه (مجمع الأنهر-1\481)
(قَوْلُهُ: وَحَرُمَ أَيْضًا بِالصِّهْرِيَّةِ أَصْلُ مَزْنِيَّتِهِ) قَالَ فِي الْبَحْرِ: أَرَادَ بِحُرْمَةِ الْمُصَاهَرَةِ الْحُرُمَاتِ الْأَرْبَعَ حُرْمَةَ الْمَرْأَةِ عَلَى أُصُولِ الزَّانِي وَفُرُوعِهِ نَسَبًا وَرَضَاعًا وَحُرْمَةَ أُصُولِهَا وَفُرُوعِهَا عَلَى الزَّانِي نَسَبًا وَرَضَاعًا كَمَا فِي الْوَطْءِ الْحَلَالِ (رد المحتار-4\107)
فمن زنى بامرأة حرمت عليه أمها وإن علت، وابنتها وإن سفلت، وكذا تحرم المزنى بها على اباء الزانى وأجداده وإن علوا، وأبنائه وإن سفلوا (الفتاوى الهندية-1\274)
وأراد بحرمة المصاهرة الأربع: حرمة المرأة على أصل الزانى وفروعه نسبا ورضاعا (البحر الرائق-3\179)
২ নং এর উত্তর
নিজেদের সমঝ ও যুক্তি দিয়ে আমরা শরীয়তের বিধান বুঝি না। আমাদের বুঝাও সম্ভব নয়। যদি আমাদের আকল দ্বারাই শরীয়তের বিধান হেকমত বুঝে আসতো, তাহলে কুরআন ও হাদীসের আসলে কোন প্রয়োজন ছিল না। আমরা নিজেদের আকল দিয়েই বিধিবিধান বুঝে যেতাম।
আমাদের আকল যেসব বিষয় বুঝতে অক্ষম, সেসব বিষয়ই আল্লাহ তাআলা কুরআনে বিধান আকারে, এবং নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদীসের আকারে আমাদেরকে জানিয়েছেন।
আর পিতা যার সাথে যৌন সম্পর্কে করে, তার সাথে বিবাহ বন্ধনে থাকা সন্তানের জন্য বৈধ নয় বলে আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলে দিয়েছেন। সুতরাং এক্ষেত্রে আমাদের মানা ছাড়া কোন গত্যান্তর নেই।
কে নির্দোষ আর কে দোষী, এর ফলাফল আখেরাতে প্রকাশ হবে। এবং এর যথাযথ শাস্তিও পাবে। কোন সন্দেহ নেই।
قَوْله تَعَالَى وَلا تَنْكِحُوا مَا نَكَحَ آباؤُكُمْ مِنَ النِّساءِ قَدْ أَوْجَبَ تَحْرِيمَ نِكَاحِ امْرَأَةٍ قَدْ وَطِئَهَا أَبُوهُ بِزِنًا أَوْ غَيْرِهِ إذْ كَانَ الِاسْمُ يَتَنَاوَلُهُ حَقِيقَةً فَوَجَبَ حَمْلُهُ عَلَيْهَا
অনুবাদ- আল্লাহ তাআলার বাণী “যে নারীকে তোমাদের পিতা-পিতামহ নিকাহ করেছে তোমরা তাদের নিকাহ করো না” আয়াতটি হারাম হওয়াকে আবশ্যক করছে ঐ মহিলাকে নিকাহ করা, যার সাথে তার পিতা সহবাস করেছে জিনার মাধ্যমে বা অন্যকোনভাবে। যেহেতু নিকাহ শব্দটির আসল অর্থ সহবাস। তাই আসল অর্থে এটিকে নিহিত করাই আবশ্যক। {আহকামুল কুরআন লিররাজী-২/১৩৬, সূরা নিসা-২২}
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।
ইমেইল– ahlehaqmedia2014@gmail.com