প্রশ্ন
মুহাম্মদ আরমান মিয়া
আসসালামু আলাইকুম,
প্রশ্নঃ বিতর নামাজ যে ১ রাকাত নেই এবং বিতরের সঠিক সুন্নাহ অনুযায়ী নিয়মটা দলীল সহ বুঝিয়ে দিলে একটু ভালো হতো।
আর ১ রাকাত এর পক্ষে যারা হাদীস আছে বলে সেগুলো নিয়ে একটু বলবেন। জাযাকাল্লাহ।
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
বিতরের নামায তিন রাকাত। দুই রাকাত পড়ে বৈঠক করবে কিন্তু সালাম ফিরাবে না।
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: «كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا يُسَلِّمُ فِي الرَّكْعَتَيْنِ الْأُولَيَيْنِ مِنَ الْوِتْرِ» هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحٌ عَلَى شَرْطِ الشَّيْخَيْنِ، وَلَمْ يُخَرِّجَاهُ «وَلَهُ شَوَاهِدُ، (المستدرك على الصحيحين-1/414، رقم-1167)
عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ: «كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُوتِرُ بِثَلَاثٍ لَا يُسَلِّمُ إِلَّا فِي آخِرِهِنَّ» وَهَذَا وِتْرُ أَمِيرِ الْمُؤْمِنِينَ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ «وَعَنْهُ أَخَذَهُ أَهْلُ الْمَدِينَةِ» (المستدرك-1/414، رقم-1168)
আয়শা রাঃ থেকে বর্ণিত। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন:
وَكَانَ يَقُولُ فِي كُلِّ رَكْعَتَيْنِ التَّحِيَّةَ،
প্রতি দুই রাকাতের পর বৈঠক রয়েছে। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৪৯৮]
তারপর তৃতীয় রাকাতে সূরা ফাতিহা ও সূরা মিলিয়ে আল্লাহু আকবার বলে হাত উঠিয়ে আবার হাত বাঁধবে। তারপর দুআয়ে কুনুত পড়বে। তারপর রুকু সেজদা করে বৈঠক করে সালাম ফিরাবে। এভাবে বিতর নামায আদায় করা সুন্নাহ সম্মত।
كَانَ عَبْدُ اللهِ يَقْرَأُ فِي آخِرِ رَكْعَةٍ مِنَ الْوِتْرِ: قُلْ هُوَ اللهُ أَحَدٌ، ثُمَّ يَرْفَعُ يَدَيْهِ فَيَقْنُتُ قَبْلَ الرَّكْعَةِ “
হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসঈদ রাঃ বিতরের শেষ রাকাতে ‘কুল হুয়াল্লাহু আহাদ’ পড়তেন, তারপর দুই হাত উত্তোলন করতেন, তারপর রুকুর পূর্বে কুনূত পড়তেন। [আলমু’জামুল কাবীর লিততাবারনী-৯/২৮৩, হাদীস নং-৯৪২৫, জুযয়ে রফউল ইয়াদাইন, ইমাম বুখারীকৃত-২৮, মাযমাউজ যাওয়ায়েদ-২/২৪৪, হাদীস নং-৩৪৭১, মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-৪/৫৩১, হাদীস নং-৭০২৮]
এক রাকাতের জবাব কী?
আসলে নবীজী এক রাকাত বিতর পড়তেন না। বরং রাতের বেলা দুই দুই রাকাত পড়ে নামায পড়তেন। যাতে প্রতি দুই রাকাতে বৈঠক করতেন। যেমনটি সহীহ মুসলিমের হাদীসে পেলাম যে, নবীজী প্রতি দুই রাকাতের পর বৈঠক করতেন।
নবীজী যখনি বিতর পড়ে নামায শেষ করার ইচ্ছে করতেন, তখন তিনি সাথে এক রাকাত মিলাতেন।
এই যে, এক রাকাত মিলাতেন। অনেকে হাদীসের হাকীকত না বুঝে সেটিকে আলাদা নামায ধরেছেন। অথচ এটি আলাদা সালাত নয়, বরং আগের দুই রাকাত মিলিয়ে এটি সালাত।
আর বিতর নামে বেজোড়। যখন দুই রাকাতের সাথে এক রাকাত মিলানো হয়, তখনি সেটি বেজোড় হয়ে যায়। এ কারণে এই অতিরিক্ত মিলানো এক রাকাতকে বিতর বা বেজোড় বলা হয়।
শুধু এক রাকাত কোন সালাত হয় না।
যেমন এক বর্ণনায় আসছে যে,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «لَا تُوتِرُوا بِثَلَاثٍ، وَلَا تَشَبَّهُوا بِصَلَاةِ الْمَغْرِبِ، أَوْتِرُوا بِخَمْسٍ، أَوْ بِسَبْعٍ» هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحٌ عَلَى شَرْطِ الشَّيْخَيْنِ، وَلَمْ يُخَرِّجَاهُ “
হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমরা শুধুমাত্র তিন রাকাত বিতর পড়ো না মাগরিবের মত। বরং বিতর পড় পাঁচ বা সাত করে। [মুস্তাদরাক আলাস সহীহহাইন-১/৪১৪]
এর মানে আগে কিছু নফল করার প্রতি উৎসাহ প্রদান করেছেন। শুধু তিন রাকাত বিতর পড়তে অনুৎসাহিত করেছেন।
তিন রাকাত ছাড়া বাকি যে নামাযগুলো নফল হিসেবে নবীজী পড়তে বললেন, সেটি অনেকে মর্মার্থ না বুঝে বিতরে শামিল করে নিলেন।
এ বর্ণনা আবার এক রাকাতওয়ালাদের বিরুদ্ধেও দলীল হয়। যেখানে তিন রাকাতেই সীমাবদ্ধ থাকতে নিষেধ করা হল, সেখানে ওরা এক রাকাত কিভাবে পড়ে?
আশা করি জবাব পেয়েছেন।
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।
ইমেইল– ahlehaqmedia2014@gmail.com
খুব সুন্দর একটি পোষ্ট. মা শা আল্লাহ ।