প্রচ্ছদ / জায়েজ নাজায়েজ / ধোঁকা দিয়ে সুবিধা নেয়ার হুকুম কি?

ধোঁকা দিয়ে সুবিধা নেয়ার হুকুম কি?

প্রশ্ন:

From: Md Abdullah
Subject: fiqh
Country : France
Mobile :
Message Body:
আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ্।

বিষয় : ১৯৫২ সালের জেনভা চুক্তির আওতায় রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থীদেরকে প্রদানকৃত অর্থ প্রসঙ্গে।

জনাব,
যথাবিহীত সম্মানপূর্বক বিনীত নিবেদন এই যে, ১৯৫২ সালে সুইজারল্যান্ডের জেনেভা শহরে জাতিসংঘের সদস্যভুক্ত দেশগুলোর সম্মতিক্রমে একটি চুক্তি সাক্ষরিত হয়।চুক্তিটি হলো,বিশ্বের রাজনৈতিক অস্হিরতা প্রবন দেশগুলোর কোন নাগরিক যদি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার  অথবা মানবতা বিপনাপন্ন হয়ে কোনো দেশে আশ্রয় প্রার্থনা করে তবে তাকে আশ্রয় প্রদান করবে।প্রায় দেশেই প্রাথমিকভাবে তার আবেদনটি গ্রহণ করা হয়।ব্যাক্তিটি সত্যিকারার্থে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার কিনা তা প্রমাণিত করার জন্য তদন্ত করার সুযোগ রয়েছে।অনেক ক্ষেত্রে বিশ্বাসযোগ্য হওয়াটাই মূখ্য।যাই হোক,তদন্ত অথবা বিশ্বাসযোগ্য এই দু’টো বিষয়ের উপর নির্ভর করে তার আশ্রয়প্রার্থীতা।আবেদন গ্রহণ করার পর হতে বিষয়টির সমাধানে আসা পর্যন্ত মধ্যবর্তী সময়ে আশ্রয়প্রার্থীকে তার চলাফেরা, থাকা-খাওয়ার জন্য একটি ভাতা প্রদান করা হয়।এই ভাতাটি দিয়ে থাকে জাতিসংঘ।এবং জাতিসংঘভুক্ত দেশগুলো এই খরচ বাবদ জাতিসংঘকে চাঁদা প্রদান করে থাকে।জাতিসংঘে প্রদেয় চাঁদা হতেই ভাতা প্রদান করা হয়।উল্লেখযোগ্য, আশ্রয়প্রার্থীদের বর্ণনা অনেক ক্ষেত্রে মিথ্যা হয়ে থাকে।অনেক ক্ষেত্রে সত্য হয়ে থাকে।এবং অনেক ক্ষেত্রে সত্য ও মিথ্যার সংমিশ্রণে একটি কাল্পনিক গল্প হয়ে থাকে।আবার অনেকের বর্ণনায় ধর্মান্তরিত হওয়ার বর্ণনা থাকে।অর্থাৎ, “আমি মুসলমান থেকে হিন্দু হয়েছি তাই আমার উপর নির্যাতন করা হয়েছে” নাউজুবিল্লাহ্। অনেকে নিজেকে কাদিয়ানি/আহমাদিয়্যা জামাতের অনুসারী বলে আশ্রয় প্রার্থনা করেন।জনাবের নিকট জানতে চাচ্ছি যে,এই পরিস্হিতিতে প্রদেয় ভাতা ব্যবহার করা কি বৈধ হবে? যদি অবৈধ হয় তবে পূর্বে যারা ব্যবহার করেছেন তাদের ব্যাপারে বিধান কী হবে? অনুগ্রহ করে কোরআন হাদীসের আলোকে সমাধান দিয়ে উপকৃত করবেন।
নিবেদক
মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ
প্যারিস,ফ্রান্স।

জবাব:

بسم الله الرحمن الرحيم

ধোঁকা দিয়ে সুবিধা নেয়ার পদ্ধতিটি ইসলাম সাপোর্ট করে না। কারণ ধরা খেলে আইন ভঙ্গ করার কারণে তার উপর শাস্তি নিপতিত হবে।

عن حذيفة قال : قال رسول الله صلى الله عليه و سلم لا ينبغي للمؤمن أن يذل نفسه قالوا وكيف يذل نفسه ؟ قال يتعرض من البلاء لما لا يطيق (سنن الترمذى، كتاب الفتن، باب ما جاء في لانهي عن سب الرياح، باب منه، رقم الحديث-2254

হযরত হুযায়ফা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, কোন মুমিনের জন্য উচিত নয় নিজেকে অপমানিত করা। সাহাবারা বললেন-কিভাবে ব্যক্তি নিজেকে অপমানিত করে? তিনি বললেন-অনুচিত বিপদে নিজেকে জড়িয়ে ফেলার মাধ্যমে। {সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-২২৫৪, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৪০১৬, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২৩৪৪৪, মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-২৭৯০, মুসনাদে আবী ইয়ালা, হাদীস নং-১৪১১, শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-১০৩৩০, মুসনাদুশ শিহাব, হাদীস নং-৮৬৭}

যেই সকল লোক মিথ্যা কথা বলে আশ্রয় গ্রহণ করে, তাদের প্রাথমিকভাবে কোন কাজের বিনিময় ছাড়া যে ভাতা দেয়া হয়, তা গ্রহণ করা জায়েজ নয়। কারণ হারাম পন্থায় তা অর্জন করা হয়েছে। কেননা মিথ্যা বলা জায়েজ নয়, কাউকে ধোঁকা দেয়া জায়েজ নয়। সুতরাং এগুলোর মাধ্যমে অর্জিত অর্থও জায়েজ নয়।

আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন-يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ لاَ تَأْكُلُواْ أَمْوَالَكُمْ بَيْنَكُمْ بِالْبَاطِلِ إِلاَّ أَن تَكُونَ تِجَارَةً عَن تَرَاضٍ مِّنكُمْ [سورة النساء-29]অর্থাৎ হে মুমিনরা! তোমরা পরস্পরের মালকে অন্যায়ভাবে গ্রাস করনা, তবে ব্যবসায়িক পদ্ধতিতে পারস্পরিক সন্তুষ্টচিত্তে হল ভিন্ন কথা। {সূরা নিসা-২৯}

قوله تعالى- فَاجْتَنِبُواْ الرِّجْسَ مِنَ الأَوْثَانِ وَاجْتَنِبُواْ قَوْلَ الزُّورِ  [الحج-30

 

তোমরা মুর্তিপূজার নোংরামী থেকে বাঁচো, এবং মিথ্যা কথা থেকে বাঁচো। {সূরা হজ্জ্ব-৩০}

عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- قَالَ « مَنْ حَمَلَ عَلَيْنَا السِّلاَحَ فَلَيْسَ مِنَّا وَمَنْ غَشَّنَا فَلَيْسَ مِنَّا (صحيح مسلم، كتاب الايمان، باب قَوْلِ النَّبِىِّ – صلى الله تعالى عليه وسلم – « مَنْ غَشَّنَا فَلَيْسَ مِنَّا، رقم الحديث-294)

হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-যে আমার উম্মতের উপর অস্ত্র উঁচু করে সে আমার উম্মতভূক্ত নয়, আর যে আমাদের সাথে ধোঁকাবাজী করে, সেও আমার উম্মতভূক্ত নয়। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-২৯৪, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৫৫৫৯, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-২২২৫, সুনানে দারেমী, হাদীস নং-২৫৪১, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৫৮৩৩, মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-৩৭৯৭, মুসনাদে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-৭২১}

কিন্তু পরবর্তীতে যদি তাদের কোন হালাল কাজের দায়িত্ব দেয়া হয় আর সে কাজের বিনিময়ে তাদের বেতন দেয়া হয়, তাহলে উক্ত কাজের মজুরী হিসেবে পারিশ্রমিক নেয়া জায়েজ হবে, যদিও চাকরীতে জয়েন্ট করার পদ্ধতিটি জায়েজ ছিল না। {ফাতওয়ায়ে শামী-৭/৩০০, ফাতওয়ায়ে মাহমুদিয়া-২৮/৩৭৫}

প্রাথমিক সময়ে কর্মহীন থাকা অবস্থায় যেই ভাতা দেয়া হত সেই ভাতা যেহেতু না জায়েজ ছিল, তাই সে টাকা মূল অফিসে ফিরিয়ে দেয়াই বাঞ্ছনীয়। কিন্তু ফিরিয়ে দিতে গেলে যদি কোন মারাত্মক ঝামেলায় পতিত হবার সম্ভাবনা থাকে, তাহলে উক্ত পরিমাণ টাকা কোন গরীবকে দান করে দিবে সওয়াবের নিয়ত ছাড়া। আর ধোঁকাবাজীর পদ্ধতি অবলম্বন করার কারণে আল্লাহ তায়ালার কাছে ক্ষমা চাইবে, এবং তওবা করবে।

والله اعلم بالصواب

উত্তর লিখনে

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

ইমেইল- [email protected]

[email protected]

0Shares

আরও জানুন

ইমামের সামনের সুতরা কি মাসবূক মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট?

প্রশ্ন ইমামের সুতরা মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট কি না? এবং ইমামের সুতরা মসবুক ব্যাক্তির জন্য যথেষ্ট …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *