প্রচ্ছদ / অপরাধ ও গোনাহ / স্কুল-কলেজ পরীক্ষার ছুটিতে কী করতে পারে ছাত্ররা? গোনাহের কাজে বাবা মায়ের আনুগত্য করা যাবে?

স্কুল-কলেজ পরীক্ষার ছুটিতে কী করতে পারে ছাত্ররা? গোনাহের কাজে বাবা মায়ের আনুগত্য করা যাবে?

প্রশ্ন

From: Sheikh Ahasan uddin
বিষয়ঃ বিনোদন

প্রশ্নঃ
আসসালামু আলাইকুম, আমার প্রশ্ন এই ব্যাপারে যে আজ শুক্রবার। গতকাল ১৭ নভেম্বর জেএসসি পরিক্ষা শেষ হয়েছে। আজ আমাকে দেরি করে জাগতে হয়েছে।আমার আব্বু ওই ঘরে মোবাইল এ youtube এ বাউল গান/লোকসংগীত ছেড়ে আমার উপর লাউডস্পিকারে বিরক্ত করেছে। তখন আমি  tv তে  makkah live বা কুরান তেলাওয়াত এর চ্যানেল ছাড়লাম। আবার সেই আরেক লোকসংগিত ছাড়ল। তা মোট দেখি দুটি।তা হল
১। ও সখিগো
২। পিরিতি শিখাইছে
তারপর আমি মুখ ধুলাম। তারপর আমআর আব্বু বলল makkah live বন্ধ করে ররবীন্দ্রনাথ এর গান ছাড়তে। পরে না ছেড়ে মুক্তিযুদ্ধ এর program ছাড়লাম। আববু আম্মু আমাকে গানে ভর্তি করতে বলল। কিন্তু প্রচলিত গান বাজনা হারাম ও শিরক বেদাতে ভরা।

তো গানবাজনা, নাচ এসবের চেয়ে আমি এই ছুটিতে বিকল্প কিছু করতে চাই। কী করব?

 

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة  الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

গান বাজনা দেখাও শেখা কোনটাই জায়েজ নেই।

বাবা মায়ের কথায় গান বাজনা শেখা ও দেখা কোনটাই জায়েজ নেই। গোনাহের কাজে বাবা মায়ের আনুগত্য করাও জায়েজ নেই।

তাই আপনার উচিত আপনার বাবা মায়ে যথাসাথ্য বুঝানো। যদি না বুঝে তাহলে নিজেকে গোনাহ থেকে মুক্ত রাখা।

ছুটিতে যা করতে পারেন:

দাওয়াত ও তাবলীগের মেহনতে যুক্ত হতে পারেন। চিল্লায় চলে যেতে পারেন।

বাড়িতে থাকা অবস্থায় নিকটস্থ কোন আলেম বা কারী সাহেবের কাছে শুদ্ধ করে কুরআন শরীফ শুদ্ধ করে পড়া শিখতে পারেন। আগে থেকে জানলে কিছু সূরা মুখস্ত করতে পারেন।

কিছু ইসলামী বই পড়তে পারেন।

যেমন-

ক) সীরাতে মুস্তাফা, ইদ্রিস কান্ধলবী।

খ) মুসলিমদের পতনে বিশ্ব কী হারাল? আবুল হাসান আলী নদবী।

গ) অমুসলিমদের ইসলাম গ্রহণের ঈমানজাগানিয়া সাক্ষাৎকার।

ঘ) ফাযায়েলে আমাল, ফাযায়েলে সাদাকাত। শায়েখ জাকারিয়া রহঃ।

ঙ) মাওলানা আশরাফ আলী থানবী রহঃ লিখিত গ্রন্থাবলী।

চ) ইমাম গাযালী রহঃ লিখিত গ্রন্থাবলী।

ছ) মাওলানা তাকী উসমানী লিখিত গ্রন্থাবলী।

জ) বেহেশতী জেওর। ইত্যাদি।

আরবী ভাষা ও উর্দু ভাষা শিখতে পারেন।

ইংরেজী ভাষায় দক্ষতা অর্জনে প্রশিক্ষণ নিতে পারেন।

এমন কিছু কল্যাণী কাজে সময়টা ব্যয় করতে পারেন।

আর এমনভাবে চলুন। যেন আপনার পিতা মাতা আপনার চালচলন ও ভদ্রতা দেখে নিজেরাই লজ্জা পেয়ে সঠিক পথে চলে আসে। তাদের সাথে দুর্ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। দ্বীনের বুঝ না থাকার কারণে তার এমনটি করছে। আপনার উচিত আপনার সুন্দর ব্যবহার ও আখলাক দিয়ে তাদের প্রভাবিত করে দ্বীনের প্রতি আগ্রহী করে তোলা।

আল্লাহ তাআলা আপনার দ্বীনের পথে চলাকে আসান করে দিন। আপনার পিতা মাতাকেও দ্বীনের সহীহ সমঝ দান করুন।

দলীল

وَمِنَ النَّاسِ مَن يَشْتَرِي لَهْوَ الْحَدِيثِ لِيُضِلَّ عَن سَبِيلِ اللَّهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ وَيَتَّخِذَهَا هُزُوًا ۚ أُولَٰئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ مُّهِينٌ [٣١:٦]

কতক মানুষ এমন, যারা অজ্ঞতাবশথ আল্লাহর পথ থেকে মানুষকে বিচ্যুত করার জন্য খরিদ করে, এমন সব কথা যা আল্লাহ সম্পর্কে উদাসীন করে দেয় এবং তারা আল্লাহর পথ নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রুপ করে। তাদের জন্য আছে লাঞ্ছনাকর শাস্তি। [সূরা লুকমান-৬]

وَوَصَّيْنَا الْإِنسَانَ بِوَالِدَيْهِ حُسْنًا ۖ وَإِن جَاهَدَاكَ لِتُشْرِكَ بِي مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ فَلَا تُطِعْهُمَا ۚ إِلَيَّ مَرْجِعُكُمْ فَأُنَبِّئُكُم بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ [٢٩:٨]

আমি মানুষকে পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করার জোর নির্দেশ দিয়েছি। যদি তারা তোমাকে আমার সাথে এমন কিছু শরীক করার জোর প্রচেষ্টা চালায়, যার সম্পর্কে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তবে তাদের আনুগত্য করো না। আমারই দিকে তোমাদের প্রত্যাবর্তন। অতঃপর আমি তোমাদেরকে বলে দেব যা কিছু তোমরা করতে। [সূরা আনকাবুত-৮]

وَإِن جَاهَدَاكَ عَلَىٰ أَن تُشْرِكَ بِي مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ فَلَا تُطِعْهُمَا ۖ وَصَاحِبْهُمَا فِي الدُّنْيَا مَعْرُوفًا ۖ وَاتَّبِعْ سَبِيلَ مَنْ أَنَابَ إِلَيَّ ۚ ثُمَّ إِلَيَّ مَرْجِعُكُمْ فَأُنَبِّئُكُم بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ [٣١:١٥]

পিতা-মাতা যদি তোমাকে আমার সাথে এমন বিষয়কে শরীক স্থির করতে পীড়াপীড়ি করে, যার জ্ঞান তোমার নেই; তবে তুমি তাদের কথা মানবে না এবং দুনিয়াতে তাদের সাথে সদ্ভাবে সহঅবস্থান করবে। যে আমার অভিমুখী হয়, তার পথ অনুসরণ করবে। অতঃপর তোমাদের প্রত্যাবর্তন আমারই দিকে এবং তোমরা যা করতে, আমি সে বিষয়ে তোমাদেরকে জ্ঞাত করবো। [সূরা লুকমান-১৫]

مُصْعَبُ بْنُ سَعْدٍ، عَنْ أَبِيهِ، أَنَّهُ نَزَلَتْ فِيهِ آيَاتٌ مِنَ الْقُرْآنِ قَالَ: حَلَفَتْ أُمُّ سَعْدٍ أَنْ لَا تُكَلِّمَهُ أَبَدًا حَتَّى يَكْفُرَ بِدِينِهِ، وَلَا تَأْكُلَ وَلَا تَشْرَبَ، قَالَتْ: زَعَمْتَ أَنَّ اللهَ وَصَّاكَ بِوَالِدَيْكَ، وَأَنَا أُمُّكَ، وَأَنَا آمُرُكَ بِهَذَا. قَالَ: مَكَثَتْ ثَلَاثًا حَتَّى غُشِيَ عَلَيْهَا مِنَ الْجَهْدِ، فَقَامَ ابْنٌ لَهَا يُقَالُ لَهُ عُمَارَةُ، فَسَقَاهَا، فَجَعَلَتْ تَدْعُو عَلَى سَعْدٍ، فَأَنْزَلَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ فِي الْقُرْآنِ هَذِهِ الْآيَةَ: {وَوَصَّيْنَا الْإِنْسَانَ بِوَالِدَيْهِ حُسْنًا وَإِنْ جَاهَدَاكَ عَلَى أَنْ تُشْرِكَ بِي}

মুসআব ইবনু সা’দ (রাঃ) তার পিতা থেকে বর্ণিত যে, তাঁর সম্পর্কে কুরআনের কিছু আয়াত অবতীর্ণ হলো। তিনি বলেন, তাঁর মা শপথ করে ফেলেছে যে, যতক্ষন তিনি ইসলামকে অস্বীকার না করবেন ততক্ষন তার সাথে কথা বলবে না খাবেও না, পানও করবে না। সে বললো, আল্লাহ তায়ালা তোকে আদেশ করেছেন, পিতামাতার কথা মানতে। আর আমি তোর মা। আমি তোকে এ আদেশ করছি। মা তিন দিন পর্যন্ত কিছু খেলেন না। কষ্টে সে বেহুশ হয়ে গেলে উমারাহ নামক তার এক ছেলে তাকে পানি পান করালো। মা সা’দর উপর বদদু’আ করতে লাগলো। তখন আল্লাহ তা’আলা কুরআন শরীফে এ আয়াত অবতীর্ণ করলেনঃ আমি মানুষকে নির্দেশ দিয়েছি তার পিতামাতার প্রতি সদ্ব্যব্যাবহার করতে। তবে ওরা যদি তোমার উপর বল প্রয়োগ করে, আমার সাথে এমন কিছু শরীক করতে যার সম্পর্কে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তুমি তাদের মেনো না।” (২৯ঃ ৮) আর পৃথিবীতে তাদের সাথে বসবাস করবে সদ্ভাবে।” (৩১ঃ ১৫) [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৭৪৮]

وفى البزازية: استمتاع صوت الملاهى كضرب قصب، ونحوه حرام لقوله عليه السلام: استماع الملاهى معصية، الجلوس عليها فسق، والتلذذ بها كفر، أى بالنعمة (رد المحتار، كتاب الحظر والاباحة-9/504، الفتاوى التاتارخانية-18/189، رقم-28466، مجمع الأنهر، كتاب الكراهية-4/222)

أَبُو عَامِرٍ أَوْ أَبُو مَالِكٍ الْأَشْعَرِيُّ، وَاللَّهِ مَا كَذَبَنِي: سَمِعَ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: ” لَيَكُونَنَّ مِنْ أُمَّتِي أَقْوَامٌ، يَسْتَحِلُّونَ الحِرَ وَالحَرِيرَ، وَالخَمْرَ وَالمَعَازِفَ،

আবূ আমির কিংবা আবূ মালিক আশ’আরী বর্ণনা করেছেন। আল্লাহর কসম! তিনি আমার কাছে মিথ্যে কথা বলেননি। তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেনঃ আমার উম্মাতের মধ্যে অবশ্যই এমন কতগুলো দলের সৃষ্টি হবে, যারা ব্যভিচার, রেশমী কাপড়, মদ ও বাদ্যযন্ত্রকে হালাল জ্ঞান করবে। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৫৫৯০]

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক -তা’লীমুল ইসলাম ইনস্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

ইমেইল[email protected]

0Shares

আরও জানুন

ইমামের সামনের সুতরা কি মাসবূক মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট?

প্রশ্ন ইমামের সুতরা মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট কি না? এবং ইমামের সুতরা মসবুক ব্যাক্তির জন্য যথেষ্ট …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *