প্রচ্ছদ / অপরাধ ও গোনাহ / সুদী ঋণে নির্মিত বাড়িতে থাকার হুকুম কী?

সুদী ঋণে নির্মিত বাড়িতে থাকার হুকুম কী?

প্রশ্ন

From: আজহারুল ইসলাম

বিষয়ঃ সুদের টাকায় ঘর

আসসালামু আলাইকুম ওয়ারহমাতুল্লাহি ওয়াবারকাতুহ

এক লোক ব্র্যাক ব্যাংক সুদ ছাড়া টাকা দেয়না জানা সত্ত্বেও ব্র্যাক থেকে কিস্তিততে লোন নিয়ে সেই টাকায় তার থাকার ঘর/বিল্ডিং করল।
এবং সে তার সব কিস্তি যথা সময়ে পরিশোধ করল।

কিন্তু লোকটা এখন বোঝতে পারছে সে যখন কিস্তি নিয়েছিল তখন তার মনে এতোটা আল্লাহ্‌ ভিরুতা না থাকার কারনে এমন জঘন্য কাজটা সে করে ফেলেছে।
এখন সে আলহামদুলিল্লাহ্‌ কোরআন সুন্নাহ অনুসারে জীবন জাপন করতে চেষ্টা করছে।
এবং সে তওবা করছে যে জিবনে আর কখনো সুদের সাথে জড়াবে না।

আমার প্রশ্ন হল সেই সুদের টাকায় করা ঘরে/বিল্ডিংয়ে তার থাকা জায়েজ হবে কি?
জাযাকাল্লাহ

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

সুদ দেয়া এবং নেয়া উভয়ই কবিরা গোনাহ। কুরআন ও হাদীসে এ বিষয়ে কঠোরসব ধমকি এসেছে। সেই সাথে ভয়াবহ শাস্তির কথাও উদ্ধৃত হয়েছে।

সুতরাং এহেন পাপের কাজ করার কারণে তার উচিত কায়মানোবাক্যে তওবা করা। অতীত পাপের জন্য অনুতপ্ত হওয়া। ভবিষ্যতে এমন কাজ না করার দৃঢ় সংকল্প করা। আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া।

যেটাকে প্রকৃত তওবা বলে তেমন তওবা করা।

বাকি সুদী ঋণ নিয়ে যে বাড়ী বানানো হয়েছে তার কাজটি গোনাহ ও পাপের হলেও বিল্ডিংটিতে থাকা নাজায়েজ ও হারাম হবে না।

কারণ, এখানে সুদ দেয়া হয়েছে। নেয়া হয়নি। তাই বাড়িটি নির্মাণে সুদের টাকা ব্যবহৃত হয়নি। বরং ঋণের টাকা ব্যবহৃত হয়েছে।

যেহেতু সুদ দেয়া এবং নেয়া দু’টিই গোনাহের কাজ। তাই কাজটি হারাম ও গোনাহের কাজ হলেও নির্মিত বাড়িটি হারাম ও নাজায়েজ হবে না।

فَإِن لَّمْ تَفْعَلُوا فَأْذَنُوا بِحَرْبٍ مِّنَ اللَّهِ وَرَسُولِهِ ۖ وَإِن تُبْتُمْ فَلَكُمْ رُءُوسُ أَمْوَالِكُمْ لَا تَظْلِمُونَ وَلَا تُظْلَمُونَ [٢:٢٧٩]

অতঃপর যদি তোমরা পরিত্যাগ না কর, তবে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের সাথে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত হয়ে যাও। কিন্তু যদি তোমরা তওবা কর, তবে তোমরা নিজের মূলধন পেয়ে যাবে। তোমরা কারও প্রতি অত্যাচার করো না এবং কেউ তোমাদের প্রতি অত্যাচার করবে না।  [সূরা বাকারা-২৭৯]

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَذَرُوا مَا بَقِيَ مِنَ الرِّبَا إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ [٢:٢٧٨]

হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সুদের যে সমস্ত বকেয়া আছে, তা পরিত্যাগ কর, যদি তোমরা ঈমানদার হয়ে থাক। [সূরা বাকারা-২৭৮]

الَّذِينَ يَأْكُلُونَ الرِّبَا لَا يَقُومُونَ إِلَّا كَمَا يَقُومُ الَّذِي يَتَخَبَّطُهُ الشَّيْطَانُ مِنَ الْمَسِّ ۚ ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمْ قَالُوا إِنَّمَا الْبَيْعُ مِثْلُ الرِّبَا ۗ وَأَحَلَّ اللَّهُ الْبَيْعَ وَحَرَّمَ الرِّبَا ۚ فَمَن جَاءَهُ مَوْعِظَةٌ مِّن رَّبِّهِ فَانتَهَىٰ فَلَهُ مَا سَلَفَ وَأَمْرُهُ إِلَى اللَّهِ ۖ وَمَنْ عَادَ فَأُولَٰئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ ۖ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ [٢:٢٧٥]

যারা সুদ খায়, তারা কিয়ামতে দন্ডায়মান হবে, যেভাবে দন্ডায়মান হয় ঐ ব্যক্তি, যাকে শয়তান আসর করে মোহাবিষ্ট করে দেয়। তাদের এ অবস্থার কারণ এই যে, তারা বলেছেঃ ক্রয়-বিক্রয় ও তো সুদ নেয়ারই মত! অথচ আল্লা’হ তা’আলা ক্রয়-বিক্রয় বৈধ করেছেন এবং সুদ হারাম করেছেন। অতঃপর যার কাছে তার পালনকর্তার পক্ষ থেকে উপদেশ এসেছে এবং সে বিরত হয়েছে, পূর্বে যা হয়ে গেছে, তা তার। তার ব্যাপার আল্লাহর উপর নির্ভরশীল। আর যারা পুনরায় সুদ নেয়, তারাই দোযখে যাবে। তারা সেখানে চিরকাল অবস্থান করবে।  [সূরা বাকারা-২৭৫]

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الرِّبَا سَبْعُونَ حُوبًا، أَيْسَرُهَا أَنْ يَنْكِحَ الرَّجُلُ أُمَّهُ»

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সুদের গুনাহর সত্তরটি স্তর রয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে ক্ষুদ্র স্তর হলো আপন মাকে বিবাহ (যেনা) করা। [সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-২২৭৪, শুয়াবুল ঈমান লিলবায়হাকী, হাদীস নং-৫১৩১, মুস্তাদরাক আলাস সহীহাইন, হাদীস নং-২২৫৯]

عَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ، قَالَ لَعَنَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم آكِلَ الرِّبَا وَمُوكِلَهُ وَشَاهِدَيْهِ وَكَاتِبَهُ

ইবনু মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -সূদখোর, সূদ দাতা সূদের সাক্ষীদ্বয় ও সূদের (চুক্তি বা হিসাব) লেখককে অভিসম্পাত করেছেন। [সুনানে তিরমিজী-১/২২৯ হাদীস নং-১২০৬, সহীহ মুসলিম-২/৭২, হাদীস নং-১৫৯৮]

لأن القرض إعارة ابتداء، حتى صح بلفظها معاوضة انتهاء، لأنه لا يمكن الانتفاع به إلا باستهلاك عينه، فيستلزم إيجاب المثلي في الذمة، وهذا لا يتأتى في غير المثلي قال في البحر: ولا يجوز في غير المثلي، لأنه لا يجب دينا في الذمة ويملكه المستقرض بالقبض كالصحيح (رد المحتار، كتاب البيوع، باب المرابحة والتولية، فصل فى القرض-7/388)

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তা’লীমুল ইসলাম ইনস্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

ইমেইল– ahlehaqmedia201[email protected]

0Shares

আরও জানুন

ইমামের সামনের সুতরা কি মাসবূক মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট?

প্রশ্ন ইমামের সুতরা মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট কি না? এবং ইমামের সুতরা মসবুক ব্যাক্তির জন্য যথেষ্ট …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *