প্রচ্ছদ / আধুনিক মাসায়েল / অমুস‌লিম দে‌শে মুস‌লিম‌দের নাগ‌রিকত্ব গ্রহ‌ণের হুকুম কী?

অমুস‌লিম দে‌শে মুস‌লিম‌দের নাগ‌রিকত্ব গ্রহ‌ণের হুকুম কী?

প্রশ্ন

আসসালামু আলাইকুম,
আমি বাংলাদেশ এর একটি মেডিকেল কলেজ এ ৫ম বর্ষে পড়ি।
আমি আমার উচ্চতর ডিগ্রি এবং ভাল জীবন যাপন এর জন্য আমেরিকা / ইংল্যান্ড / অস্ট্রেলিয়া এর মত অমুসলিম দেশ এ যেতে চাই সম্ভব হলে একেবারে থেকে যেতে চাই ।
আমার প্রশ্ন হল যে ইসলাম এই ব্যাপার এ কি বলে? ইসলাম এ কি অনুমতি আছে এই ব্যাপারে?

উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم

যদি নিজের ঈমান ও আমল বিনষ্ট না হবার দৃঢ় মনোবল থাকে। তাহলে ডাক্তারী পড়ার জন্য অমুসলিম দেশে যেতে কোন বাঁধা নেই।
তবে নাগরিক হবার ক্ষেত্রে আরো সতর্কতা কাম্য।
অমুসলিম দেশে নাগরিকত্ব নেবার আগে কয়েকটি

বিষয় অবশ্যই খেয়াল রাখা জরুরীঃ

মুসলিম রাষ্ট্রে স্বাধীনভাবে জীবন যাপন সম্ভব না হলে বাধ্য হলে বা প্রয়োজন হ‌লে অমুসলিম দেশে বসবাসের জন্য নাগরিক হতে পারবে।

মুসলিম দেশের তুলনায় অমুসলিম দেশকে শ্রেষ্ঠ ও উত্তম মনে করতে পারবে না।

নিজেই ঈমান ও আমল সঠিক ও যথার্থভাবে পূর্ণ করতে পারার নিশ্চয়তা থাকতে হবে।

নিজের আখলাক ও আমল জিন্দেগীর মাধ্যমে ইসলামের সৌন্দর্যতা ও শ্রেষ্ঠত্বের দিকে আমলী আহবানের মত মনোবৃত্তি থাকতে হবে।

ইসলাম ও মুসলমানদের ক্ষতি হবে এমন কোন কাজে জড়িত হতে বাধ্য না হবার নিশ্চয়তা থাকতে হবে।
উপরোক্ত শর্ত পাওয়া গেলে অমুসলিম দেশে নাগরিকত্ব নিয়ে বসবাস করা জায়েজ আছে।
তবে অমুসলিমদের ইসলামের প্রতি দাওয়াত দেবার মানসিকতা থাকলে শুধু জায়েজই নয়, বরং সওয়াবেরও অংশীদার হবে।
এক্ষেত্রেও যেখানে মুসলমান বেশি থাকে, সেসব এলাকায় বসবাস করাটাই নিজের ঈমান ও আমলের জন্য অধিক নিরাপদ।
তবে শুধুমাত্র নিজের আয়েশ ও আরামের জন্য। অন্যদের উপর নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ ও গর্ব করার মনোবৃত্তিতে এমনিতে অমুসলিম দেশে নাগরিকত্ব গ্রহণ করা জায়েজ হবে না।

إن اضطر إليه مسلم بسبب أنه أوذي في وطنه، أو اضطهد بالسجن، أو مصادرة أمواله لغير ما ذنب أو جريمة، ولم يجد لنفسه مأمنا إلا في مثل هذه البلاد، فإنه يجوز له التجنس بهذه الجنسيات دون أي كراهة، بشرط أن يعزم على نفسه المحافظة على دينه في حياته العملية، والابتعاد عن المنكرات الشائعة هناك……….... ثم من حقوق النفس أن يصونها المرء من كل نوع من أنواع الظلم، فإذا لم يجد الإنسان مأمنا لنفسه إلا في بلاد الكفار، فلا مانع من هجرته إليها، ما دام يحتفظ بفرائضه الدينية، والابتعاد عن المنكرات المحرمة.
وكذلك إن اضطر إليه مسلم بسب أنه لم تتيسر له في بلده وسائل المعاش الضرورية التي لا بد له منها، ولم يجدها إلا في مثل هذه البلاد، فإنه يجوز له ذلك أيضا بالشرط المذكور،…….
ولو تجنس مسلم بهذه الجنسية لدعوة أهلها إلى الإسلام، أو لتبليغ الأحكام الشرعية إلى المسلمين المقيمين بها، فإنه يثاب على ذلك، فضلا عن كونه جائزا، فكم من الصحابة والتابعين رضي الله عنهم توطنوا بلاد الكفار لهذا الغرض المحمود وعد ذلك من مناقبهم وفضائلهم.
أما إذا كان الرجل تتيسر له وسائل المعاش في بلده المسلم على مستوى أهل بلده، ولكنه هاجر إلى بلاد الكفار للاستزادة منها، والحصول على محض الترفه والتنعم، فإن ذلك لا يخلو من كراهة، لما فيه من عرض النفس على المنكرات الشائعة هناك، وتحمل خطر الانهيار الخلقي والديني من غير ضرورة داعية لذلك،……….
أما إذا كان التجنس بالجنسيات الأجنبية اعتزازا بها، وافتخارا، أو لتفضيلها على الجنسيات المسلمة، أو للتشبه بأهلها في الحياة العملية، فإن ذلك حرام مطلقا، ولا حاجة إلى التدليل على ذلك……. وأما في الظروف التي يجوز فيها التجنس بدون كراهة، فإنها مواضع ضرورة، أو حاجة، فيجب على المبتلي به في مثل هذه المواضع، أن يعنى بتربية أولاده عناية خاصة، ويجب على المسلمين المقيمين في تلك البلاد أن يحدثوا من أجل ذلك جوا تربويا فيه الناشئة المسلمة محافظة على عقائدها، وأعمالها، وأخلاقها الدينية (بحوث فى قضايا فقهية معاصرة-1/329-331)
لَّا يَنْهَاكُمُ اللَّهُ عَنِ الَّذِينَ لَمْ يُقَاتِلُوكُمْ فِي الدِّينِ وَلَمْ يُخْرِجُوكُم مِّن دِيَارِكُمْ أَن تَبَرُّوهُمْ وَتُقْسِطُوا إِلَيْهِمْ ۚ إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُقْسِطِينَ [٦٠:٨]

ধর্মের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেনি এবং তোমাদেরকে দেশ থেকে বহিস্কৃত করেনি, তাদের প্রতি সদাচরণ ও ইনসাফ করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করেন না। নিশ্চয় আল্লাহ ইনসাফকারীদেরকে ভালবাসেন। [সূরা মুমতাহিনা-৮]

عَنْ سَمُرَةَ بْنِ جُنْدُبٍ، أَمَّا بَعْدُ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ جَامَعَ الْمُشْرِكَ وَسَكَنَ مَعَهُ فَإِنَّهُ مِثْلُهُ»

হযরত সামুরা বিন জুনদুব রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন: কেউ কোনো মুশরিকের সাহচর্যে থাকলে এবং তাদের সাথে বসবাস করলে সে তাদেরই মতো। [সুনানে আবূ দাউদ, হাদীস নং-২৭৮৭]

হযরত জারীর বিন আব্দুল্লাহ রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন:

«أَنَا بَرِيءٌ مِنْ كُلِّ مُسْلِمٍ يُقِيمُ بَيْنَ أَظْهُرِ الْمُشْرِكِينَ». قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ لِمَ؟ قَالَ: «لَا تَرَاءَى نَارَاهُمَا»

আমি ঐ মুসলিম থেকে দায়মুক্ত যারা মুশরিকদের মধ্যে বসবাস করে। লোকেরা জিজ্ঞেস করলো, হে আল্লাহর রাসূল! অর্ধেক রহিত হওয়ার কারণ কি? তিনি বললেন, দু’ অঞ্চলের [মুসলিম ও অমুসলিম অঞ্চল] আগুনকে এক দৃষ্টিতে দেখা যাবে না। [সুনানে আবূ দাউদ, হাদীস নং-২৬৪৫]

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তা’লীমুল ইসলাম ইনস্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

ইমেইল– ahlehaqmedia2014@gmail.com

আরও জানুন

নাপাক লুঙ্গি পরিধান করে ফরজ গোসল করলে শরীর ও লুঙ্গি পবিত্র হবে কি?

প্রশ্ন নাপাক কাপড়ে কি ফরজ গোসল করলে পাক হওয়া যায়? উত্তর بسم الله الرحمن الرحيم …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আহলে হক্ব বাংলা মিডিয়া সার্ভিস