প্রচ্ছদ / অপরাধ ও গোনাহ / অন্যায়ের প্রতিবাদ বা ন্যায্য দাবী আদায়ের জন্য প্রচলিত হরতাল ও বিক্ষোভ প্রদর্শন কতটুকু শরীয়তসম্মত?

অন্যায়ের প্রতিবাদ বা ন্যায্য দাবী আদায়ের জন্য প্রচলিত হরতাল ও বিক্ষোভ প্রদর্শন কতটুকু শরীয়তসম্মত?

প্রশ্ন

মুফতী সাহেবের কাছে আমার প্রশ্ন হল, ইসলামী বা রাষ্ট্রীয় কোন দাবী আদায়ের জন্য প্রচলিত পদ্ধতিতে হরতাল করা, বিক্ষোভ প্রদর্শন করা কতটুকু শরীয়তসম্মত?

দয়া করে জানাবেন।

উত্তর

بسم الله الرحمن الرحيم

অন্যায় ও জুলুমের প্রতিবাদ করা প্রতিটি ব্যক্তির সাধ্যানুপাতে দায়িত্ব।

যাদের সরাসরি বন্ধ করার ক্ষমতা আছে তারা সরাসরি তা বন্ধ করে দিবেন। যাদের সরাসরি বন্ধ করার ক্ষমতা নেই, তারা মুখে প্রতিবাদ করবে। আর যাদের তাও করার ক্ষমতা নেই তারা মন থেকে তা ঘৃণা করবে।

সুতরাং রাষ্ট্র পক্ষ হোক বা কারো পক্ষ থেকে কৃত কোন অন্যায়ের প্রতিবাদ করা সম্পূর্ণই শরীয়তসম্মত।

কিন্তু এর মাধ্যমে যদি নিরাপরাধ কারো কোন ক্ষতি হয়। জানমালের ক্ষতিসাধন হয়। জনসাধারণের, অসুস্থ্য রোগীদের ক্ষতি হয়, তাহলে তা বৈধ হবে না।

বর্তমানে হরতালের নামে যেভাবে সাধারণ মানুষের গাড়ি ভাঙ্গচুর, বিভিন্ন স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ, মারধর ইত্যাদি করা হয়, তা শরীয়তসম্মত নয়।

উপরোক্ত খারাপী ব্যতীত যদি ন্যায্য দাবীর জন্য প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয় তাহলে তা জায়েজ হবে।

لَّا يُحِبُّ اللَّهُ الْجَهْرَ بِالسُّوءِ مِنَ الْقَوْلِ إِلَّا مَن ظُلِمَ ۚ وَكَانَ اللَّهُ سَمِيعًا عَلِيمًا [٤:١٤٨]

আল্লাহ কোন মন্দ বিষয় প্রকাশ করা পছন্দ করেন না। তবে কারো প্রতি জুলুম হয়ে থাকলে সে কথা আলাদা। আল্লাহ শ্রবণকারী, বিজ্ঞ।  [সূরা নিসা-১৪৮]

হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রাঃ থেকে বর্ণিতঃ

رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «مَنْ رَأَى مِنْكُمْ مُنْكَرًا فَلْيُغَيِّرْهُ بِيَدِهِ، فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِلِسَانِهِ، فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِقَلْبِهِ، وَذَلِكَ أَضْعَفُ الْإِيمَانِ».

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি কোন মন্দ বিষয় দেখে তাহলে সক্ষম হলে হাত দ্বারা তা প্রতিহত করবে। আর যদি তাতে সক্ষম না হয় তাহলে মুখে বলে প্রতিবাদ করবে। আর যদি তাতেও সক্ষম না হয়, তাহলে অন্তর দিয়ে ঘৃণা করবে। আর এটা ঈমানের সর্বনিম্ন স্তর। [সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৪০১৪, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৪৯]

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَشْكُو جَارَهُ، فَقَالَ: «اذْهَبْ فَاصْبِرْ» فَأَتَاهُ مَرَّتَيْنِ أَوْ ثَلَاثًا، فَقَالَ: «اذْهَبْ فَاطْرَحْ مَتَاعَكَ فِي الطَّرِيقِ» فَطَرَحَ مَتَاعَهُ فِي الطَّرِيقِ، فَجَعَلَ النَّاسُ يَسْأَلُونَهُ فَيُخْبِرُهُمْ خَبَرَهُ، فَجَعَلَ النَّاسُ يَلْعَنُونَهُ: فَعَلَ اللَّهُ بِهِ، وَفَعَلَ، وَفَعَلَ، فَجَاءَ إِلَيْهِ جَارُهُ فَقَالَ لَهُ: ارْجِعْ لَا تَرَى مِنِّي شَيْئًا تَكْرَهُهُ

 আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে তার প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে তিনি বললেনঃ যাও ধৈর্য ধরো। অতঃপর সে দু’ বা তিনবার এভাবে এসে অভিযোগ করলে তিনি বললেনঃ তুমি গিয়ে তোমার জিনিসপত্র রাস্তায় ফেলে রাখো। অতঃপর সে তার জিনিসপত্র রাস্তায় ফেলে রাখলে লোকেরা তাকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করতে লাগলো এবং সে তাদেরকে তার প্রতিবেশীর খবর জানাতে থাকলো। লোকেরা তাকে অভিশাপ দিতে লাগলো, আল্লাহ তোমার প্রতি এরূপ এরূপ করুন। তার প্রতিবেশী তার নিকট এসে তাকে বললো, তুমি ফিরে যাও। ভবিষ্যতে তুমি আমার পক্ষ থেকে এরূপ কিছুর পুনরাবৃত্তি দেখবে না। [সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৫১৫৩, মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-৮৩৪৪, তাফসীরে ইবনে কাসীর-২/৩৯৩]

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক ও প্রধান মুফতী-তা’লীমুল ইসলাম ইনস্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

ইমেইল[email protected]

0Shares

আরও জানুন

ইমামের সামনের সুতরা কি মাসবূক মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট?

প্রশ্ন ইমামের সুতরা মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট কি না? এবং ইমামের সুতরা মসবুক ব্যাক্তির জন্য যথেষ্ট …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *