প্রশ্ন
From: [নামটি গোপন রাখা হল]
বিষয়ঃ তালাক
প্রশ্নঃ
আসসালামু ‘আলাইকুম!
আপনাদের লেখা পরে বিশ্বাস এর জায়গা তৈরী হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ্! জাযাকাল্লাহ!
বেশ জটিল পরিস্থিতির একটা সুন্দর সমাধান পাবার(ইন শা আল্লাহ) জন্যই প্রশ্নটি করে!
প্রশ্ন: আমার বিয়ে হয়েছে! আমার এবং আমার স্বামীর ২জনের পরিবার ই ব্যাপারটি জানেন নাহ! আমি আমার পরিবারে ও আমার স্বামী তার পরিবারের সাথেই থাকি! আলহামদুলিল্লাহ্, আমার স্বামী খুবি ভালো মানুস! তার ব্যাপার এ প্রশংসা ছাড়া অভিযোগ এর কিছু নেই শুধু একটা ব্যাপার ছাড়া! আমি চাই আমার স্বামী দাড়ি রাখবে, যেহেতু দাড়ি কাটা হারাম, এবং, সুন্নাতি লিবাস এর অনুসারী হবে, তাবলীগ এর মেহনতের সাথে যুক্ত হবে! মোটকথা, শরিয়তি ব্যাপার এ কোনো কমতি আমি বরদাস্ত করতে পারি নাহ!
সেও করতে ইচ্ছুক, কিন্তু তার পরিবার থেকে তার উপর বিভিন্ন জুলুম আসছে! যেমন, দাড়ি পাঞ্জাবি পরতে চাইলে ঘর থেকে বের করে দেয়া হবে! তার পরিবারের দাবি নামায পরলেই হবে! এগুলোর কোনো প্রয়োজন নেই! আমার স্বামী তার মা কে ছাড়ার কথা চিন্তা করতে পারেন নাহ! তাই, তিনি আমাকে বলেছেন আমরা এক সাথে থাকার পর থেকে সে দাড়ি রাখবে এবং সুন্নাতি পোশাক পরবে, যেহেতু সে তার মা এর অবাধ্য হতে পারবে নাহ!
এখন, আমার ব্যাপার টা হলো, আমি আগে দ্বীনের ব্যাপারে পুরোপুরি অবাধ্য ছিলাম, আস্তাগফিরুল্লাহ! আল্লাহ্ রব্বুল ‘আলামিন আমাকে ভালোবেসে হেদায়েত দিয়েছেন, আমি এখন পরিপূর্ণ শরয়ি পর্দার চেস্টা করি এবং মাহরাম গায়ের মাহরাম মেনে চলি! এবং, একজন আলেমা হবার স্বপ্ন দেখি! আমার পক্ষে এমন স্বামীর সাথে কস্টকর যার দাড়ি নেই! এই কারণে কি আমি তার কাছে তালাক চাইতে পারি?
আমি তাকে খুবি বেশি ভালোবাসি! এবং তাকে নিয়েই জান্নাতে জেতে চাই!
আমি অস্থিরতায় পাগলপ্রায়! আমি এখন কি করবো? দয়া করে আমাকে জানান! আমি কি দোয়া অথবা আমল করলে আমার স্বামীর দ্বীনি বুঝ আরো জোরদার হবে জানান! একটু দ্রুত! আমি আমার স্বামীকে চাই, কিন্তু ঈমানের সাথে!
দ্রুত জানাবেন!
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
এ কারণে আপনার স্বামীর কাছে তালাক চাওয়া উচিত হবে না।
বাকি আপনার স্বামীর জন্য কর্তব্য হল, বাবা মায়ের কারণে শরীয়তের বিধান লঙ্ঘণ করা থেকে বিরত থাকা।
দাড়ি ইসলামের প্রতীক। মুসলমানিত্বের প্রতীক। পুরুষত্বের প্রতীক।
আল্লাহ ও নবীর আনুগত্বের বিপরীতে বাবা মায়ের আনুগত্ব করা জায়েজ নয়। সেই হিসেবে তার উচিত বাবা মা অসন্তুষ্ট হলেও দাড়ি রাখা। ইসলামী জীবন যাপন করা।
যদি সংসার করা দুস্কর হয়ে পড়ে, তাহলে তালাক চাওয়া যেতে পারে।
عَنْ ثَوْبَانَ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: أَيُّمَا امْرَأَةٍ سَأَلَتْ زَوْجَهَا طَلاَقًا مِنْ غَيْرِ بَأْسٍ فَحَرَامٌ عَلَيْهَا رَائِحَةُ الجَنَّةِ
হযরত সাওবান রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যদি কোন মহিলা তার উপর কোন কষ্ট না হবার পরও স্বামীর কাছে তালাক চায়, তাহলে তার জন্য জান্নাতের ঘ্রাণও হারাম। [সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-১১৮৭]
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، أَنَّ امْرَأَةَ ثَابِتِ بْنِ قَيْسٍ أَتَتِ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَتْ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، ثَابِتُ بْنُ قَيْسٍ، مَا أَعْتِبُ عَلَيْهِ فِي خُلُقٍ وَلاَ دِينٍ، وَلَكِنِّي أَكْرَهُ الكُفْرَ فِي الإِسْلاَمِ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَتَرُدِّينَ عَلَيْهِ حَدِيقَتَهُ؟» قَالَتْ: نَعَمْ، قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «اقْبَلِ الحَدِيقَةَ وَطَلِّقْهَا تَطْلِيقَةً
ইবনু ‘আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, সাবিত ইবনু কায়স এর স্ত্রী নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! চরিত্রগত বা দ্বীনী বিষয়ে সাবিত ইবনু কায়সের উপর আমি দোষারোপ করছি না। তবে আমি ইসলামের ভিতরে থেকে কুফরী করা অর্থাৎ স্বামীর সঙ্গে অমিল) পছন্দ করছি না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি কি তার বাগানটি ফিরিয়ে দেবে? সে বললঃ হ্যাঁ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি বাগানটি গ্রহণ কর এবং মহিলাকে এক তালাক দিয়ে দাও। [বুখারী, হাদীস নং-৫২৭৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৮১]
عن ابن عمر : عن النبي صلى الله عليه و سلم قال ( خالفوا المشركين وفروااللحى وأحفوا الشوارب . وكان ابن عمر إذا حج أو اعتمر قبض على لحيته فما فضل أخذه
হযরত ইবনে ওমর রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-তোমরা মুশরিকদের বিরোধীতা কর। দাড়ি লম্বা কর। আর গোঁফকে খাট কর।
আর ইবনে ওমর রাঃ যখন হজ্ব বা ওমরা করতেন, তখন তিনি তার দাড়িকে মুঠ করে ধরতেন, তারপর অতিরিক্ত অংশ কেটে ফেলতেন। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৫৫৫৩}
عَنْ عَلِيٍّ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ” لَا طَاعَةَ لِبَشَرٍ فِي مَعْصِيَةِ اللهِ
হযরত আলী রাঃ থেকে বর্নিত। রাসূ সাঃ ইরশাদ করেছেন, আল্লাহর নাফরমানীর করে কোন মানুষের আনুগত্ব করা জায়েজ নয়। {মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১০৬৫}
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক ও প্রধান মুফতী-তা’লীমুল ইসলাম ইনস্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
ইমেইল– [email protected]