প্রচ্ছদ / কুরআন ও হাদীসের ব্যাখ্যা / ভালো মেয়ের ভাগ্যে কেন খারাপ স্বামী জুটে?

ভালো মেয়ের ভাগ্যে কেন খারাপ স্বামী জুটে?

প্রশ্ন

আসসালামু আলাইকুম।

প্রথমেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি এত বড় লেখার জন্য।

আমি ডিভোর্স চাচ্ছি, কিন্তু কেন চাচ্ছি সেটা না লিখলে বুঝবেন না। তাই…

আমরা তিন বোন।আমি বড়।

আমার বিয়ে হয়েছে ২০১৮ তে।  পারিবারিকভাবে বিয়ে।সে আমার থেকে ১০ বছরের বড়। তার বয়স এখন ৩৭ চলে।

বিয়ের শুরুতেই অনেক ঝামেলা হয়েছিল। আমার বিয়ে হওয়ার পর শ্বশুর বাড়ির লোক + আমার স্বামী আমাদেরকে অনেক অপমান আর অপদস্ত করে। প্রতিটি ব্যাপারে তারা খুত ধরত।তাদের এটা দেওয়া হয় নি, ওটা দেয়া হয় নি, আরও অনেক কিছু।

আর বলতো ছোটোলোক। তারপরও আমার মা বাবা তাদের হাতে তুলে দেয়, কারন বিয়ে হয়ে গেছে।এখন আর ফিরে যাওয়ার উপায় নেই।

তাদের আচরণে এতটাই অবাক হয়েছি!! বিয়ে হয়েছে দুই দিন হতে না হতেই কি ব্যাবহার দেখালো তারা!!

তাদের প্রতিটি বিষয়ে সব সিদ্ধান্ত নেয় তার মা। তার মা যা বলবে তাই ই হবে। তাদের কথা মত সকল দায়দায়িত্ব পালন করার পরও অশান্তি। তারা নিজেদের স্বাথ ছাড়া আর কিছুই বোঝে না।

যাই হোক, তারপরও আমি সংসার করতে থাকলাম। বিয়ের দুই মাস যেতে না যেতেই স্বামী বল্লো,  আমি যেন তার কাছে কোনো টাকা না চাই। সে আমার খরচ দিবে না। এমনকি আমার অসুখ হলে ডাক্তার খরচ আমার ফ্যামিলি ই দিত। আমিও ক্ষোভে, দুঃখে তার কাছে কিছু চাইতাম না। তার কাছ থেকে ইদের কাপড় নেওয়া বন্ধ করে দি।শুধু বাজার পাতি লাগলে সেইগুলো বলতাম। কিন্তু তারপরও কথায় কথায় আমাদের কে ছোটলোক বলতো। সে যাতে সংসারে অশান্তি না করে এই জন্য আমার ফ্যামিলি থেকে তাকে ফানিচার, টিভি এসব ও দেয়া হয়েছিলো। তারপরও সাধারণ বিষয়কে অনেক বড় ইস্যু বানিয়ে আমার গায়ে হাত তুলতো। শবে বরাতের রাতে পর্যন্ত আমাকে নির্দয়ভাবে মারলো। এদিকে তার ফেসবুকে পেলাম অপরিচিত মেয়েদের সাথে ম্যাসেঞ্জারে যোগাযোগ,  যা কিনা বিয়ের আগে ছিল, এমনকি বিয়ের পরেও আছে!! সেই সব নিয়ে জিজ্ঞেস করলে একদম অস্বীকার করে, অথচ আমার কাছে প্রমাণও আছে। উল্টো আমাকে বলে, মেসেজ দিলে কি হয়!!

আর তার ভাই বলে, ছেলে মানুষের এমন একটু থাকতেই পারে। আপনার মেয়ের খুজলে ১০ টা পাওয়া যাবে। এই রকম আরো অনেক অশান্তির জন্য তার আর আমার একসাথে থাকা বলতে যা বোঝায় তা হয়নি। আমি আমার বাপের বাড়ি চলে গেলে তারা খোজ নিত না, এমনকি তাদেরকে ডিভোর্স এর কথা বললেও চুপ থাকতো আর বলতো, তোমারা ডিভোর্স এর কাগজ পাঠাও, আমরা দিব না৷

তো, এই রকম আসা যাওয়া অশান্তির জন্য সব মিলিয়ে তার সাথে আমার প্রায় এক বছর এক ছাদের নিচে থাকা হয় নি।  কখনো হয়তো ৪ মাস, আবার কখনো ৭ মাস আলাদা ছিলাম। ফ্যামিলি থেকে মীমাংসার জন্য বসা হলেও, তারা তাদের সকল দোষ অস্বীকার করতো।  শেষ পর্যন্ত যা হতো,তা হলো আমাদেরকেই সব মেনে নিতে হতো। শুধুমাত্র সমাজ, সংসার, সম্মান এই সব চিন্তা করে আমি আবার ফিরে যেতাম।

করোনার মধ্যে তার চাকরি চলে গেলে তাকে এনে আমাদের বাসায় আব্বুর দেয়া ফ্ল্যাটে উঠালাম। কিন্তু তার চাকরি খোজার কোনো আগ্রহ দেখি না।সারাদিন ফোনে বন্ধুদের সাথে গল্প আর ফেসবুক।

শুধু বলে টাকা নেই, টাকা নেই অথচ, তার এক  ভাইয়ের ই বউয়ের কাছে শুনলাম তারা ভাইয়েরা মিলে জমি কিনতেছে, যা কিনা আমি কিছুই জানি না। এমনকি আমার স্বামীর কত টাকা আছে, কোনো কিছুই আমি জানি না। কখনোই আমাকে কিছু বলেনি।

আর সে কখনোই আমার কাছে সত্য কথা বলে না, অনেক মিথ্যা বলে। তার কথা বিশ্বাস করি কিন্তু অনেক পরে যেয়ে প্রমাণ সহ পাই যে সে মিথ্যা কথা বলেছে। সে আর তার ফ্যামিলি মেম্বার প্রচুর মিথ্যা কথা বলে যা সহ্য করার মত না।

তাদের ছেলে পরকীয়া করলেও যায়েজ, বউ পিটালেও জায়েজ।তাদের সব কিছুই নাকি জায়েজ!!

বাচ্চা কাচ্চা নেওয়ার কথা বল্লে বলে, টাকা নেই তাই বাচ্চা নিবে না। অথচ সে তার বাবার অসুখের কথা বলে গ্রামে যেয়ে বসে আছে। এবং প্রমান সহ পরে জানতে পারলাম যে, সব মিথ্যা। সে তাদের ঘর বাড়ি রঙ করাচ্ছে। বার বার শুধু মিথ্যা আর মিথ্যা।

তার নাকি টাকা নেই, তাই সে সংসারের জন্য ব্যায় ও করছে না, বাচ্চাও নিচ্ছেনা। আবার তাদের গ্রামের বাড়িতে সবই হচ্ছে কিন্তু আমাকে না জানিয়ে।এবং বার বার মিথ্যা বলা হচ্ছে।

কিছু দিন আগে তার ফোনে আবারো দেখি কোন না কোন মেয়ের ছবি আর জিজ্ঞেস করলে চুপ করে থাকে।

ব্যাপারটা এমন হয়ে গেছে যে আমিই শুধু সমাজ, সংসার আর মান সম্মানের দিয়ে চেয়ে দুই বছর ধরে শুধু সবকিছু সহ্য করছি। মাঝে মাঝে মনে হয় আত্মহত্যা করি। সব ঝামেলা একেবারে শেষ।

মানসিক ভাবে এত অসুস্থ হয়ে গেছি আমি যে, আল্লাহর কাছে নিজের মৃত্যু কামনা করি।

আমি একটু শান্তিতে থাকতে চাই, বাচতে চাই।

তাই আমি ডিভোর্স চাই।

তাদেরকে ডিভোর্স এর কথা বললে তারা মাসের পর মাস চুপ করে থাকে। তাই আমি ই চাচ্ছি ডিভোর্স দিতে। আরেকটা কথা বলে রাখি, কাবিন নামায় তালাক দেয়ার কোনো রাইট আমাকে দেয়া হয় নি, অথচ তারা আমাদেরকে বলে ডিভোর্স লেটার দিতে।

এ ব্যাপারে ইসলাম কি বলে??

আমি কাবিন হয়েছিলো ৫ লাখ।

একবার মনে হয় কাবিনের একটা টাকাও নিবো না, খুব ঘেন্না হয়।

আবার মনে হয়, কেন কাবিনের টাকা নিব না!! এটা আমার প্রাপ্য।  আমার জীবনটা নিয়ে এই ভাবে জুলুম করার ক্ষতি পুরণ কি তারা দিবে না!!

আর একটা প্রশ্ন ছিলো???  আমি কখনো কোনো প্রেম করি নি, আর পরকীয়া তো দুরের বিষয়। সব সময় সৎ থাকতে চেষ্টা করেছি। তারপরও কেনো আমার সাথে এমন হলো!! কি দোষ আমার!!??

যে যেমন সে নাকি তেমন সংগী পায়!! তাহলে কেনো এমন হলো আমার সাথে!!!?????

দয়া করে আমার প্রশ্নের উত্তর দিবেন।

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

ভালো মানুষের স্ত্রী বা স্বামী কখনো কখনো খারাপ হয়। ফেরাউনের মত নিকৃষ্ট কাফের ও জালেমের স্ত্রী ছিলেন হযরতে আছিয়া।

হযরত নূহ আলাইহিস সালামের স্ত্রী ছিল কাফের।

সুতরাং এ মূলনীতি সর্বত্রই প্রযোজ্য হয় না যে, ভালো মানুষের সঙ্গী শুধু ভালো মানুষই হয়। আল্লাহ তাআলা কখনো কখনো পরীক্ষা হিসেবে ভালো সঙ্গী খারাপকে আর কখনো খারাপের সঙ্গী ভালো ব্যক্তিকে করান।

যেটা উক্ত ব্যক্তির জন্য একটি পরীক্ষা।

খারাপ ব্যক্তির জন্য পরীক্ষা হল, ভালোর কদর করা না করার পরীক্ষা।

আর ভালো ব্যক্তির পরীক্ষা হল, খারাপ ব্যক্তিকে সহ্য করার পরীক্ষা।

যেহেতু পারিবারিকভাবেও কোন সমাধান করা যাচ্ছে না। তাই আপনার সর্বশেষ করণীয় হল, আপনি উক্ত ব্যক্তির নামে নারী নির্যাতন আইনে মামলা করে দিন।

আপনার কাবিনসহ সবই ফেরত দিতে বাধ্য হবে ইনশাআল্লাহ।

তাছাড়া তালাকের অধিকার দিতেও বাধ্য হবে।

এখানে প্রসঙ্গক্রমে জেনে রাখা উচিত যে, বিবাহের পূর্ণ অধিকার কন্যার। কন্যার অনুমতি ছাড়া কোন বিয়েই সংঘটিত হয় না।

কিন্তু তালাকের অধিকার মূলত স্বামীর। তার অনুমতি ছাড়া কোন তালাকই সংঘটিত হয় না।

যদি সে তালাক দেয় বা অনুমতি প্রদান করে, তাহলে নিজের উপর তালাক পতিত করার দ্বারা তালাক হবে।

যেহেতু লোকটি কোনভাবেই স্বাভাবিক হচ্ছে না, তাই আপনার উচিত আদালতের মাধ্যমেই নিজের হককে আদায় করা।

আপনার জন্য দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ কামনা।

ومحله المنكوحة واهله زوج عاقل بالغ مستيقظ (الدر المختار مع رد المحتار-4/431، مجمع الانهر-2/4، النهر الفائق-2/310

وفي رد المحتار- وأنواعه ثلاثة : تفويض ، وتوكيل ، ورسالة وألفاظ التفويض ثلاثة : تخيير وأمر بيد ، ومشيئة . (رد المحتار-كتاب الطلاق، باب تفويض الطلاق-4/452

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক ও প্রধান মুফতী-তা’লীমুল ইসলাম ইনস্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

ইমেইল[email protected]

0Shares

আরও জানুন

ইমামের সামনের সুতরা কি মাসবূক মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট?

প্রশ্ন ইমামের সুতরা মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট কি না? এবং ইমামের সুতরা মসবুক ব্যাক্তির জন্য যথেষ্ট …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *