প্রশ্ন
প্রশ্নকর্তা: মোহাম্মদ আব্দুল হাই
বিষয়: নবীজির কাছে আমল পেশ সম্পর্কিত বিধান।
বক্তব্যঃ
আস সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ!
মুহতারাম,
প্রথমেই ধন্যবাদ জানাচ্ছি এমন একটি সুন্দর ব্যবস্থা করার জন্য,যেখানে ইসলাম বিষয়ক যে কোন মাসয়ালা বা বিষয় জিজ্ঞাসা করা যায়।
বলা হয়ে থাকে প্রত্যেক বৃহস্পতিবার হুজুর (সাঃ) এর কাছে আমল পেশ করা হয়ে থাকে এবং যে উম্মতের আমল ভালো হয় তা দেখে হুজুর (সাঃ) খুশি হন এবং যে উম্মতের আমল খারাপ হয় তা দেখে নবীজি (সাঃ) কষ্ট পান। ইসলামী শরীয়তে নবীজির কাছে আমল পেশ সম্পর্কিত বিধান কি?
জবাব দিয়ে বাধিত করবেন।
জবাব:
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
“প্রত্যেক বৃহস্পতিবারে নবীজী সা. এর কাছে তার উম্মতের আমল পেশ করা হয় আর নবীজী সা. উম্মতের নেক আমল দেখে খুশি হন। আর বদ আমল দেখে অসন্তুষ্ট হন”। এই মর্মে কোন সহীহ বর্ণনা পাওয়া যায়না।
তবে জুমআর রাতে সকল নবী ও আম্বিয়াদের কাছে তাদের জাতির। এবং পিতা-মাতার কবরে তাদের সন্তানদের আমল দেখানো হয় মর্মে হাকিম তিরমিযী রহ. তার রচিত নাওয়াদিরুল উসূল নামক কিতাবের ২১৩ নং পৃষ্ঠায় একটি বর্ণনা এনেছেন। একই বর্ণনা আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহ. তার কিতাব শরহুস সুদুর মিসরী নামক কিতাবে ২৭৫/১৭৮ নং পৃষ্ঠায় এনেছেন। তাছাড়া কানযুল উম্মাল ফি সুনানিল আক্বওয়াল নামক হাদিসের কিতাবেও এই মর্মে হাদিস বিদ্যমান রয়েছে। হাদিস নং-৪৫৪৯৩।
এই বর্ণনাগুলি এতটা শক্তিশালী নয়। যার উপর এই আক্বিদা পোষণ করা যায় যে, নবীজী সা. ও আম্বিয়াদের কাছে সত্যিই আমল উপস্থাপন করা হয়। তাছাড়া এসব বর্ণনাতে নবীজী সা. এর সাথে আম্বিয়ায়ে কিরাম এবং মাতা-পিতার কথাও এসেছে।
যেহেতো সহীহ বর্ণনা দ্বারা এর প্রমাণ নেই তাই এটি বিশ্বাস করা জরুরী নয়। অস্বিকার করারও কোন প্রয়োজন নেই। কারণ এর উপর ঈমানের কোন বিষয় জড়িত নয়। এসব বিষয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করা উচিত নয়।
প্রতি বৃহস্পতিবারে আল্লাহ তায়ালার সামনে বান্দাদের নেক ও বদ আমল দায়িত্বশীল ফেরেস্তারা পেশ করে থাকেন মর্মে সহীহ হাদিসে এসেছে। এইজন্যই নবীজী সা. বৃহস্পতিবার রোযা রাখতেন। নবীজী সা. ইরশাদ করেছেন যে,
حدثنا محمد بن يحيى حدثنا أبو عاصم عن محمد بن رفاعة عن سهيل بن أبي صالح عن أبيه عن أبي هريرة : أن رسول الله صلى الله عليه و سلم قال تعرض الأعمال يوم الإثنين والخميس فأحب أن يعرض عملي وأنا صائم (سنن الترمذى-كتاب الصوم، باب ما جاء في صوم يوم الإثنين والخميس، رقم الحديث-747
অর্থাৎ হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত। নবীজী সা. ইরশাদ করেছেন যে, সোম ও বৃহস্পতিবার আমল উপস্থাপন করা হয়। আমি এটা পছন্দ করি যে, যখন আমার আমল এমন অবস্থায় উপস্থাপিত হোক যখন আমি রোযাদার। (সুনানে তিরমিযী, হাদিস নং-৭৪৭)
এই হাদিসে নবীজী সা. এর কাছে উপস্থাপনের কথা বলা হয়নি। নবীর আমল তার নিজের কাছে উপস্থাপন করার কোন অর্থ হয়না। মানে হল আল্লাহর কাছে উপস্থাপন করা হয়। এই ব্যাখ্যাটির পক্ষে অর্থাৎ আল্লাহর কাছে আমল উপস্থাপন করা হয় এই মর্মে স্পষ্ট বর্ণনা এসেছে আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মীরী রহ. এর তিরমিযী শরীফের তাক্বরীর আল আরফুস শাজী নামক ব্যাখ্যগ্রন্থে। যার ভাষ্য হল-واما وجه الصوم يوم الاثنين ففى رواية عن ابن عباس بسند قوى …….لان يوم الأثنين والخميس ترفع الاعمال الى الله تعالى অর্থাৎ সোম ও বৃহস্পতিবার রোযা রাখার কারণ হল, হযরত ইবনে আব্বাস রা. থেকে সহীহ বর্ণনায় এসেছে যে, এই দু’দিন আল্লাহ তায়ালার কাছে আমল উপস্থাপন করা হয়। (আল আরফুস শাজী-রোযা অধ্যায়, সোমও বৃহস্পতিবার রোযা প্রসঙ্গে, পৃষ্ঠা নং-২৯৬)
বি:দ্র: এই বিষয়টির উপর বিশ্বাস বা না বিশ্বাসের উপর ঈমান নির্ভরশীল নয়। তাই এটি নিয়ে বাড়াবাড়ি কিছুতেই কাম্য নয়।আল্লাহ তায়ালা আমাদের দ্বীনের ক্ষেত্রে সহীহ বুঝ দান করুন।
বিস্তারিত পড়তে দেখুন-ফাতওয়ায়ে মাহমুদিয়া-৭/৩৭২-৩৭৪
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
হযরত,
আসসালামু আলাইকুম; গত ১৯শে আগস্ট ফাজায়েলে হজ্জের একটি ঘটনা সম্পর্কে আপনার মতামতের জন্য ই-মেইল করা হয়েছে। অনুগ্রহ করে এই সম্পর্কে আপনার মতামত জানিয়ে বাধিত করবেন।
ওয়াআলাইকুম আসসালাম।
ভাইজান!
আপনার প্রশ্নটি আমাদের কাছে এসেছে। কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। ইনশাআল্লাহ অচিরেই আপনার প্রশ্নের উত্তরটি প্রকাশিত হবে।
জাযাকাল্লাহ।