প্রশ্ন
রমযান মাসে অনেক এলাকায় দেখা যায় সেহরীর ওয়াক্ত শেষ হওয়ার সাথে সাথে ফজরের আযান দিয়ে দেয় অর্থাৎ সেহরীর ওয়াক্ত যদি ৩:৩৫ মিনিটে শেষ হয় তবে ফজরের আযান ৩:৩৮ মিনিটেই দিয়ে দেয় অথচ নামায-রোজার চিরস্থায়ী ক্যালেন্ডারে ফজরের ওয়াক্ত শুরুর সময় ৩:৪৪ মিনিটে দেওয়া থাকে। এমতাবস্থায় কেউ যদি আযান শুনেই নামায আদায় করে নেয় অর্থাৎ নামায-রোজার চিরস্থায়ী ক্যালেন্ডারে বর্ণিত সময়ের পূর্বেই নামায আদায় করে নেয় তবে ঐ ব্যক্তির ফজরের নামায কি সহীহ হবে নাকি পুনরায় আদায় করতে হবে?
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
সেহরীর সময় শেষ হয় সুবহে সাদিক শুরু হলে। সুবহে সাদিক শুরু হওয়া মানেই সেহরীর সময় শেষ। আর সুবহে সাদিক শুরু হওয়া মানেই ফজরের সময় শুরু।
সেই হিসেবে সেহরীর সময় শেষ হবার সাথে সাথেই আজান দেয়া যাবে। ফজরের নামায আদায় করা যাবে।
কিন্তু এখানে যে বিষয়টি লক্ষ্যনীয়। সেটি হল, আপনারা রমজান উপলক্ষ্যে বের হওয়া ক্যালেন্ডারগুলোতে দেখবেন, লেখা আছে, সতর্কতা স্বরূপ তিন বা ৫ মিনিট হাতে রেখে সময় উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন যদি তিনটা পয়তাল্লিশে সুবহে সাদিক শুরু হয়, তাহলে ক্যালেন্ডারে লেখা হয়েছে সুবহে সাদিক শুরু তিনটা বিয়াল্লিশ বা চল্লিশে। মানে তিন বা পাঁচ মিনিট হাতে রেখে সময় উল্লেখ করা হয়েছে। সতর্কতা স্বরূপ আগেই সময় শেষ হয়েছে লেখা হয়, যেন কোন ব্যক্তি শেষ মুহুর্তে পানি খেলেও তার রোযাটা না ভাঙ্গে।
এসব ক্যালেন্ডারে সাধারণত উপরোক্ত সতর্কতামূলক তিন বা পাচ মিনিটের আজান দেয়া ও নামায পড়ার জন্য লিখা হয়ে থাকে।
এসব ক্ষেত্রে যদি সেহরীর সময় তিন বা পাঁচ মিনিট আগেই শেষ হয়েছে লিখা হয়, আর আজান সেই তিন মিনিট শেষ হবার আগেই দেয়া হয় এবং নামায পড়া হয়, তাহলে উক্ত ব্যক্তির আজানটি হয় এবং নামায হয়নি। কারণ সময় হবার আগেই আজান দেয়া হয়েছে এবং সময় হবার আগেই নামায পড়া হয়েছে।
যদি পরে পড়া হয়, তাহলে নামায হয়ে যাবে এবং আজানও শুদ্ধ হয়ে যাবে।
বাকি রইল আপনার স্থায়ী ক্যালেন্ডারের সময়সূচি।
মূলত চিরস্থায়ী কোন ক্যালেন্ডার হয় না। হবে দীর্ঘস্থায়ী ক্যালেন্ডার। কারণ সময় পরিবর্তনশীল। জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে। ঋতু কমে যাচ্ছে। আগের মত এখন আর বাংলাদেশসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রে ছয় ঋতুর দেখা মিলে না। যেহেতু সময় পরিবর্তনশীল। তাই চিরস্থায়ী ক্যালেন্ডার করা আসলে অসম্ভব। হতে পারে দীর্ঘস্থায়ী ক্যালেন্ডার।
তো যাইহোক, যেহেতু দীর্ঘস্থায়ী ক্যালেন্ডারগুলোতে অনেক পূর্বের সময়কেও লিখা হয়, তাই সবচে’ বেশি সতর্কতা অবলম্বন করা হয়। যেমন শুধু রমজানের ক্যালেন্ডারগুলোতে তিন বা পাচ মিনিটের সতর্কতা টাইম লিখা থাকে, তেমনি দীর্ঘস্থায়ী ক্যালেন্ডারগুলোত আরো বেশি সতর্কতামূলক সময় লেখা থাকে। যেমন অনেকগুলোতে প্রায় দশ মিনিট সতর্কতা স্বরূপ সময় লিখা হয়।
তাই রমজান মাসে দীর্ঘস্থায়ী ক্যালেন্ডার ফলো না করে রমজানের জন্য বের হওয়া বিশেষ ক্যালেন্ডারগুলো অনুসরণ করাই শ্রেয়।
আর ক্যালেন্ডারের বক্তব্যের উপর আজান ও নামায সহীহ হওয়া নির্ভরশীল নয়। বরং সময় হওয়া ও না হওয়ার উপর আজান ও নামায হওয়া না হওয়া নির্ভরশীল।
আশা করি পূর্ণ বিষয়টি পরিস্কার হয়েছে।
وَاشْرَبُوا حَتَّىٰ يَتَبَيَّنَ لَكُمُ الْخَيْطُ الْأَبْيَضُ مِنَ الْخَيْطِ الْأَسْوَدِ مِنَ الْفَجْرِ ۖ ثُمَّ أَتِمُّوا الصِّيَامَ إِلَى اللَّيْلِ ۚ [٢:١٨٧]
আর পানাহার কর যতক্ষণ না কাল রেখা থেকে ভোরের শুভ্র রেখা পরিষ্কার দেখা যায়। অতঃপর রোযা পূর্ণ কর রাত পর্যন্ত। {সূরা বাকারা-১৮৭}
عَنْ بِلَالٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَهُ: «لَا تُؤَذِّنْ حَتَّى يَسْتَبِينَ لَكَ الْفَجْرُ هَكَذَا» وَمَدَّ يَدَيْهِ عَرْضًا، (سنن ابى داود، رقم الحديث-1171)
إِنَّ الصَّلَاةَ كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ كِتَابًا مَّوْقُوتًا [٤:١٠٣
নিশ্চয় নামায মুসলমানদের উপর ফরয নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে। {সূরা নিসা-১০৩}
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।