প্রচ্ছদ / পর্দা/দুগ্ধপান/হুরমত / কোর্ট কাটিং বোরকা পরিধান করার হুকুম কি?

কোর্ট কাটিং বোরকা পরিধান করার হুকুম কি?

প্রশ্ন

রেহেনা ইয়াসমিন

ফটিকছড়ি চট্টগ্রাম

আসসালামুয়ালাইকুম

জনাব, কোর্ট কাটিং আর কালো ছাড়া অন্য কোনো রঙের বোরকা পরা জায়েজ হবে কি? শিগগিরই উত্তর দিয়ে বাধিত করবেন। আল্লাহ আপনাদের মঙ্গল করুন।

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

এ বিষয়ে মূলনীতি হল, এমন বড় চাদর পরিধান করা, যার দ্বারা শরীরের আকৃতি প্রকাশিত না হয়, সেই সাথে পোশাকটি পরপুরুষকে আকৃষ্ট না করে। এ কারণে কালো বোরকা পরিধান করাই যৌক্তিক। কোর্ট কাটিং এর যে বোরকা বর্তমানে বের হয়েছে, এর দ্বারা মূলত বোরকা পরিধানের মূল মাকসাদ অর্জিত হয় না। শুধু জামা পরিধান করলে যেমন শারীরিক সৌন্দর্য প্রকাশিত হয়। সেই সাথে পরপুরুষরা আকৃষ্ট হয়, তেমনি এসব কোর্ট কাটিং বোরকা দ্বারাও শারীরিক সৌন্দর্য প্রকাশিত হয়ে থাকে, সেই সাথে জামার কাটিং ও ডিজাইন পরপুরুষকে আকৃষ্ট করে থাকে। তাই এসব বোরকা পরিধান করা যাবে না।

কালো ছাড়া অন্য রংয়ের বোরকা পরিধান করার বিধান হল, যদি এর দ্বারা পরপুরুষের দৃষ্টি থেকে নিজেকে সংরক্ষিত রাখা যায়। সেই সাথে পর্দাবৃত বলে বুঝা যায়, তাহলে অন্য রংয়ের বোরকা পরিধান করতে কোন সমস্যা নেই। তবে যদি আকর্ষণীয় রংয়ের হয়ে থাকে, যার দ্বারা মানুষকে তার প্রতি আগ্রহী করে তোলে, মানুষের চোখে আকর্ষনীয় করে তোলে তাহলে এমন রংয়ের বোরকা পরিধান করা যাবে না।

আল্লামা আলুসী রহঃ তাফসীরে রূহুল মাআনীতে লিখেনঃ

ثم اعلم أن عندي مما يلحق بالزينة المنهي عن إبدائها ما يلبسه أكثر مترفات النساء في زماننا فوق ثيابهن ويتسترن به إذا خرجن من بيوتهن وهو غطاء منسوج من حرير ذي عدة ألوان وفيه من النقوش الذهبية أو الفضية ما يبهر العيون، وأرى أن تمكين أزواجهن ونحوهم لهن من الخروج بذلك ومشيهن به بين الأجانب من قلة الغيرة وقد عمت البلوى بذلك،

অনুবাদ- জেনে রাখুন! আমাদের নিকট মহিলাদের যে সৌন্দর্য প্রকাশে নিষেধ করা হয়েছে তাতে বর্তমান জমানার মহিলাগণ বাড়ির বাইরে বের হওয়ার সময় যেসব রঙ্গিন রেশমী বোরকা পরিধান করে থাকে তাও শামিল। যাতে স্বর্ণ বা রোপার কারুকার্য করা থাকে। যা দেখে লোকেরা আকর্ষিত হয়ে থাকে।

আর স্বামী বা অন্যান্য আত্মীয় স্বজন এসব পরিধান করে বাইরে বের হওয়ার অনুমতি প্রদান তাদের লজ্জাহীনতার পরিচায়ক ছাড়া কিছু নয়। [তাফসীরে রূহুল মাআনী, সূরা নূর, আয়াত নং-২৯-৩৩-১৮/১৬৪}

মোটকথা হল, এমন বোরকা পরিধান করা জায়েজ নয় যা মানুষকে আকর্ষণ করে থাকে। এমন বোরকা পরিধান করবে যা আলাদাভাবে আকর্ষনীয় কিছু নয়। আর বর্তমানেতো এমন সব বোরকা পরিধানের রেওয়াজ হয়েছে, যা বৃদ্ধকেও আকর্ষণীয় বলে মনে হয়। এসব বোরকা পরিধান করা কিছুতেই জায়েজ হবে না।

قال الذهبي: ومن الأفعال التي تلعن المرأة عليها إظهار زينتها كذهب أو لؤلؤ من تحت نقابها، وتطيبها بطيب كمسك إذا خرجت. وكذا لبسها عند خروجها كل ما يؤدي إلى التبهرج كمصوغ براق وإزار حرير وتوسعة كم وتطويله، فكل ذلك من التبهرج الذي يمقت الله عليه فاعله في الدنيا والآخرة، (الزواجر عن اقتراف الكبائر، باب اللباس، الكبيرة التاسعة والعاشرة بعد المائة طول الإزار أو الثوب خيلاء والتبختر في المشي-258-259)

মৌলিকভাবে পর্দা কেমন হওয়া উচিত? তা আমরা মহিলা সাহাবীগণের দিকে তাকলেই পরিস্কার বুঝতে পারবো। হাদীসে এসেছে-

হযরত উম্মে সালামা রাঃ বলেন, যখন কুরআনে কারীমের এ আয়াত يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِنْ جَلَابِيبِهِنَّ

তথা “তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। [মাথার দিক থেকে]” -সূরা আহযাব-৫৯} নাজিল হয়, তখন আনসারী মহিলারা স্বীয় ঘর থেকে এমনভাবে বের হতো যেন তাদের মাথায় কাক বসে আছে। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪১০১}

একদম বোরকা পরিধান না করার চেয়ে কোর্ট কাটিং পরিধান করা উত্তম। তবে এর দ্বারা সঠিক পর্দা অর্জিত হয় না। সঠিক পর্দার জন্য কালো বা অন্য যে কোন নর্মাল রংয়ের বোরকা যার দ্বারা মহিলদের শরীরের কোন অঙ্গই [চোখ ছাড়া] প্রকাশ না পায় সেসব বোরকার দ্বারা সঠিক পর্দা অর্জিত হয়।

আল্লাহ তাআলা আমাদের দ্বীনকে সঠিকভাবে বুঝে তার উপর আমল করার তৌফিক দান করুন।

والله اعلم بالصواب

উত্তর লিখনে

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

ইমেইল- ahlehaqmedia2014@gmail.com

lutforfarazi@yahoo.com

আরও জানুন

নাপাক লুঙ্গি পরিধান করে ফরজ গোসল করলে শরীর ও লুঙ্গি পবিত্র হবে কি?

প্রশ্ন নাপাক কাপড়ে কি ফরজ গোসল করলে পাক হওয়া যায়? উত্তর بسم الله الرحمن الرحيم …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আহলে হক্ব বাংলা মিডিয়া সার্ভিস