প্রশ্ন
আসসালামু আলাইকুম,
শ্রদ্ধেয় মুফতি সাহেব,
আমাদের এলাকার মসজিদে জনৈক ব্যাক্তি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বয়স্ক পূরুষদেরকে কোরআন শিক্ষা দিচ্ছেন আলহামদুলিল্লাহ। অনেকেই আগ্রহ সহকারে কোরআন শিখছেন । কিন্তু ২/৩ মাস পরেই জানতে পারলাম তিনি গ্রামের ৩/৪ টা পয়েন্টে মহিলাদেরকে একত্রিত করে কোরআন শিখাচ্ছেন। প্রতিটা পয়েন্টে কম করে হলেও ৪০ থেকে ৫০ জন মহিলা জমা হয়ে কোরআন শিখছেন । যিনি শিখাচ্ছেন তিনি একজন অবিবাহিত যুবক(বয়স ২৫/২৬) । আর যারা শিখছেন তাদের মদ্ধ্যে যুবতি থেকে শুরু করে বয়স্ক নারীরাও রয়েছেন । অধিকাংশ নারীরাই শরয়ী পর্দা রক্ষা ছাড়াই সেখানে আসছেন। মহিলারা উচ্চস্বরে শব্দের উচ্চারণ করেন যা বেশ দূর থেকেই শোনা যাচ্ছে । বিশেষভাবে পর্যবেক্ষন করে জানা গিয়েছে যে, যদিও শিক্ষক এবং ছাত্রিদের মাঝে একটা কাপড় টানানো থাকে তথাপি তারা উভয়েই উভয়কে দেখতে পান । এমতবস্থায় উক্ত নিয়মে কোরআন শিক্ষা কতটুকু শরীয়ত সম্মত? দয়া করে দলিল প্রমান সহকারে জানিয়ে বাধীত করবেন ।
নিবেদক
এলাকাবাসির পক্ষে
আবু মুহাম্মাদ
সরিকল, গৌরনদী, বরিশাল ।
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
পর্দা একটি ফরজ বিধান। নামায-রোযা, হজ্ব যাকাত যেমন ফরজ বিধান। নারী-পুরুষের পর্দা রক্ষা করাও ফরজ বিধান। এর লঙ্ঘণকারী ফাসিক। পুরুষদের জন্য উক্ত ব্যক্তির কাছ থেকে সহী-শুদ্ধভাবে কুরআন শিখতে কোন সমস্যা নেই। যদিও মুত্তাকী পরহেযগার ব্যক্তির কাছ থেকে দ্বীন শিখাই সর্বোত্তম ও নিরাপদ। কিন্তু মুত্তাকী পরহেযগার ক্বারী না থাকা অবস্থায় এমন ফাসিক ব্যক্তির কাছ থেকেও কুরআন শিখার সুযোগ রয়েছে।
তবে নারীদের জন্য পর্দাহীনভাবে কুরআন শিক্ষা করা কিছুতেই জায়েজ নয়। পর্দার বিধান লঙ্ঘণ করে যে শিক্ষক পড়াচ্ছে সেও গোনাহগার হচ্ছে, যারা শিখছে তারাও গোনাহগার হচ্ছে।
তবে যদি শিক্ষক ও শিক্ষার্থী নারীদের মাঝে এত মোটা চাদর থাকে যে, এক পাশ থেকে অপর পাশের ব্যক্তিদের চেহারা বুঝা যায় না। তাহলে কুরআন শিখতে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু যদি এক পাশ থেকে অপর পাশের অবয়ব বুঝা যায়, তাহলে শরয়ী পর্দার লঙ্ঘণ হচ্ছে। এ কারণে এভাবে নারীদের কুরআন শিক্ষা জায়েজ হবে না।
قُلْ لِلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ۚ ذَٰلِكَ أَزْكَىٰ لَهُمْ ۗ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا يَصْنَعُونَ [٢٤:٣٠
وَقُلْ لِلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا ۖ وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَىٰ جُيُوبِهِنَّ ۖ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوْ آبَائِهِنَّ أَوْ آبَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ أَبْنَائِهِنَّ أَوْ أَبْنَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي أَخَوَاتِهِنَّ أَوْ نِسَائِهِنَّ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُنَّ أَوِ التَّابِعِينَ غَيْرِ أُولِي الْإِرْبَةِ مِنَ الرِّجَالِ أَوِ الطِّفْلِ الَّذِينَ لَمْ يَظْهَرُوا عَلَىٰ عَوْرَاتِ النِّسَاءِ ۖ وَلَا يَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِنْ زِينَتِهِنَّ ۚ وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ [٢٤:٣١
মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গর হেফাযত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন।
ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো আছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। {সূরা নূর-৩০-৩১}
يَا نِسَاءَ النَّبِيِّ لَسْتُنَّ كَأَحَدٍ مِنَ النِّسَاءِ إِنِ اتَّقَيْتُنَّ فَلَا تَخْضَعْنَ بِالْقَوْلِ فَيَطْمَعَ الَّذِي فِي قَلْبِهِ مَرَضٌ وَقُلْنَ قَوْلًا مَعْرُوفًا (32) وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى
হে নবীর স্ত্রীগণ! তোমরা অন্য নারীদের মত নও [ইহুদী খৃষ্টান)। তোমরা যদি আল্লাহকে ভয় পাও তবে আকর্ষণধর্মী ভঙ্গিতে কথা বলনা, যাতে যাদের মাঝে যৌনলিপ্সা আছে তারা তোমাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়। বরং তোমরা স্বাভাবিক কথা বল। এবং তোমরা অবস্থান কর স্বীয় বসবাসের গৃহে, জাহেলী যুগের মেয়েদের মত নিজেদের প্রকাশ করো না। {সূরা আহযাব-৩২}
وَإِذَا سَأَلْتُمُوهُنَّ مَتَاعًا فَاسْأَلُوهُنَّ مِنْ وَرَاءِ حِجَابٍ ذَلِكُمْ أَطْهَرُ لِقُلُوبِكُمْ وَقُلُوبِهِنَّ وَمَا كَانَ لَكُمْ أَنْ تُؤْذُوا رَسُولَ اللَّهِ وَلَا أَنْ تَنْكِحُوا أَزْوَاجَهُ مِنْ بَعْدِهِ أَبَدًا إِنَّ ذَلِكُمْ كَانَ عِنْدَ اللَّهِ عَظِيمًا
অর্থ : আর তোমরা তাঁর (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর স্ত্রীগণের কাছে কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এটা তোমাদের অন্তরের জন্য এবং তাঁদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ। {সূরা আহযাব-৫৩}
বিখ্যাত তাফসীরবিদ ইমাম কুরতুবী রাহ. উক্ত আয়াতের আলোচনায় বলেন, উক্ত আয়াতে আল্লাহ তাআলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রীদের কাছে কোনো প্রয়োজনে পর্দার আড়াল থেকে কিছু চাওয়া বা কোনো মাসআলা জিজ্ঞাসা করার অনুমতি দিয়েছেন। সাধারণ নারীরাও উপরোক্ত হুকুমের অন্তর্ভুক্ত। (তাফসীরে কুরতুবী ১৪/১৪৬)
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রীগণ হলেন সকল মুমিনের মা। অথচ তাঁদের সাথেই লেনদেন বা কথা-বার্তা বলতে হলে পর্দার আড়াল থেকে করতে বলা হয়েছে। তাহলে অন্যান্য সাধারণ বেগানা নারীদের ক্ষেত্রে হুকুমটি কত গুরুত্বপূর্ণ হওয়া উচিত তা তো সহজেই অনুমেয়।
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।