প্রশ্ন
প্রশ্নকর্তা- জাকারিয়া
বিষয়ঃ আয়াতুল কুরসীর তাফসীর
দেশঃ সৌদি আরব
বক্তব্যঃ
আসসালামু আলাইকুম।
একজন লেখক তার লিখিত কিতাবে আয়াতুল কুরসির তিনটা স্টেপ আছে বলে উল্লেখ করেছেন। যথা-
১-আল্লাহু থেকে শুরু করে ওমা ফিল আরদ পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা গুণ।
২-মানজাল্লাজি থেকে বিমাশাআ পর্যন্ত মুহাম্মদ সাঃ এর গুণ।
৩-এখন বাকি আয়াত সবটুকুই আল্লাহর গুণ।
তাফসীরে রূহুল বয়ানের বরাতে লিখেছেন। ব্যাখ্যাটি সঠিক কি না? অন্যান্য তাফসীরে কি বলেছে? বিস্তারিত জানাবেন প্লিজ!
জবাব:
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
প্রথমেই আমরা আয়াতুল কুরসী তথা সূরা বাকারার ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদের দিকে খেয়াল করি।
اللَّهُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ لاَ تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلاَ نَوْمٌ لَّهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الأَرْضِ مَن ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلاَّ بِإِذْنِهِ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلاَ يُحِيطُونَ بِشَيْءٍ مِّنْ عِلْمِهِ إِلاَّ بِمَا شَاء وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضَ وَلاَ يَؤُودُهُ حِفْظُهُمَا وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيمُ (255
অনুবাদ-আল্লাহ তিনি, যিনি ছাড়া কোন মাবুদ নেই। যিনি চিরঞ্জীব, সমগ্র সৃষ্টির নিয়ন্ত্রক, যার কখনও তন্দ্রা পায় না, এবং নিদ্রা ও নয়, আকাশমন্ডলে যা কিছু আছে এবং যমিনে যা কিছু আছে সব তারই। কে আছে যে তাঁর সমীপে তাঁর অনুমতি ছাড়া সুপারিশ করবে? তিনি সকল বান্দার পূর্ব-পশ্চাৎ সকল অবস্থা সম্পর্কে সম্যক অবগত। তারা তাঁর জ্ঞানের কোন বিষয় নিজ আয়ত্বে নিতে পারে না। কেবল সেই বিষয় ছাড়া যা তিনি নিজে ইচ্ছা করেন। তাঁর কুরসী আকাশমন্ডল ও পৃথিবীকে পরিবেষ্টন করে রেখেছে। আর এ দু’টোর তত্ত্বাবধঅনে তাঁর বিন্দুমাত্র কষ্ট হয় না এবং তিনি অতি উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন ও মহিমাময়। {সূরা বাকারা-২৫৫}
## আয়াতের অনুবাদের দিকে লক্ষ করলেই বুঝতে পারা যায় যে, আয়াতের শুরু অংশে মহান আল্লাহর প্রশংসা করা হয়েছে। মাঝে আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কেউ সুপারিশ করতে পারবে না বলে আল্লাহ তায়ালারই প্রশংসা করা হয়েছে। আর {إِلا بِإِذْنِهِ}তথা তার অনুমতি ছাড়া শব্দ বলে রাসূল সাঃ যে আল্লাহ তায়ালার অনুমতি নিয়ে সুপারিশ করবেন হাশরের ময়দানে সে দিকে ইংগিত করা হয়েছে। সুতরাং নবীজী সাঃ হাশরের ময়দানে প্রথম সুপারিশকারী গুণে গুনান্বিত। তাই এটি নবীজী সাঃ এর গুণ বর্ণনা হল। আবার শেষাংষে আবার আল্লাহর প্রসংসা করা হয়েছে।
সুতরাং আপনি যে লেখকের কথা উদ্ধৃত করলেন, তিনি তাফসীরে রুহুল বয়ানের বরাত দিয়ে যে কথা বলেছেন তা সঠিক।
একথাটি শুধু তাফসীরে রুহুল বয়ানে নয়, ইবনে কাসীরসহ প্রায় সকল তাফসীরের কিতাবেই একথাটি মুটামুটিভাবে আলোচিত হয়েছে।
তাফসীরে রুহুল বয়ানের বর্ণনাটি দেখুন
مَن ذَا الَّذِى يَشْفَعُ عِندَه إِلا بِإِذْنِهِ
وفي “التأويلات النجمية” : هذا الاستثناء {إِلا بِإِذْنِهِ} راجع إلىلنبي عليه الصلاة والسلام لأن الله قد وعد له المقام المحمود وهو الشفاعة فالمعنى من ذا الذي يشفع عنده يوم القيامة إلا عبده محمد فإنه مأذون موعود (تفسير روح البيان، سورة البقرة)
অনুবাদ- {إِلا بِإِذْنِهِ} এ ইস্তিসনাটি ফিরেছে রাসূল সাঃ এর দিকে। কেননা আল্লাহ তায়ালা ওয়াদা করেছেন রাসূল সাঃ কে মাকামে মাহমুদ তথা প্রশংসিত স্থানে অধিষ্ঠিত করবেন। আর সেটিই হল শাফাআত। সুতরাং অর্থ দাঁড়ায় আয়াতের-কে আছে যে তাঁর সমীপে তাঁর অনুমতি ছাড়া সুপারিশ করবে নবীজী সাঃ ছাড়া? কেননা তিনি তিনি অনুমোদিত আর প্রতিশ্রুত। {তাফসীরে রূহুল বয়ান, সুরা বাকারা, আয়াত নং-২৫৫}
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।