প্রশ্ন
২০১২ সালের মাঝামাঝি সময়ে (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) এক ছেলেকে (ছেলের পরিবারের অসম্মতি) অনিচ্ছা সত্বেও জোর (ভয় প্রদর্শন) পুর্বক ৩ লক্ষ টাকা কাবিন ধার্য করে বিবাহ দেওয়া হয়। তাদের ধারনা ছিল ছেলে পালিয়ে বা তালাক দিয়ে দিলেও কাবিনের টাকা পাওয়া যাবে। এভাবে পাঁচ মাসের মত সংসার (মেলামেসা) করার পর ছেলে আত্মগোপন করে। তার কিছুদিন পর ছেলে ও মেয়ের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ হয়। মেয়েকে ছেলে জানিয়ে দেয় তার সাথে কোন ভাবেই সংসার করবে না। তখন মেয়ের কাছে ডিভোর্স চাওয়া হয়। কারন প্রথমত, ছেলেকে জোর করে বিয়ে দেওয়া হয়েছিল। দ্বিতীয়ত, ছেলের এত টাকা দেওয়ার সামর্থ ছিল না। কিন্তু মেয়ে ডিভোর্স দিতে অস্বীকার করে। পরে আলোচনা সাপেক্ষে ১ লক্ষ টাকায় সম্মত হয়। ছেলে পক্ষ টাকা সংগ্রহ করার জন্য কিছুদিন সময় নেয়। এর মধ্যে ঐ মেয়ে অন্য ছেলের সাথে গোপনে বিবাহ করেছিল। তারপর কিছু দিন অতিবাহিত হওয়ার পর মেয়ে সহ তার পক্ষের কোন ব্যাক্তির সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা সম্ভম হয় নি। আজ ৫ বছর অতিবাহিত হয়ে গেছে এখনো মোবাইলে যোগাযোগ করা যায় নি। তাদের এলাকায় যাওয়া বিপদ জনক। জীবন নাশের সম্ভাবনা আছে। ছেলে এখনো বিয়ে করে নাই। তবে সামনে কিছু দিনের মধ্যে বিবাহ করার মনস্থ করেছে।
এখন ছেলের উপর শরীয়তের হুকুম কি? আগের স্ত্রী কি তালাক হয়ে গেছে? তালাক না হয়ে থাকলে এখন কি করণীয়?
নতুন বিবাহ করার জন্য শরীয়ত ছেলেকে কি হুকুম দেয় ?
নিবেদক
কামরুল ইসলাম
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
ছেলেটির উচিত তার প্রথম স্ত্রীকে তালাক দিয়ে দেয়া এবং অন্যত্র বিয়ে করা। পূর্বের স্ত্রী থাকা না থাকা ছেলেদের দ্বিতীয় বিয়ের প্রতিবন্ধক নয়। তাই প্রথম স্ত্রীকে তালাক প্রদান করুক বা না করুক সর্বাবস্থায়ই দ্বিতীয় বিয়ে ছেলে করতে পারে।
যেহেতু প্রথম স্ত্রী প্রথম স্বামীর সাথে থাকবেই না, তাই তাকে তালাক দিয়ে দেয়া উচিত। যাতে করে সে অন্যত্র বিয়ে করে নিতে পারে।
فَانكِحُوا مَا طَابَ لَكُم مِّنَ النِّسَاءِ مَثْنَىٰ وَثُلَاثَ وَرُبَاعَ ۖ فَإِنْ خِفْتُمْ أَلَّا تَعْدِلُوا فَوَاحِدَةً [٤:٣]
সেসব মেয়েদের মধ্যে থেকে যাদের ভাল লাগে তাদের বিয়ে করে নাও দুই, তিন,কিংবা চারটি পর্যন্ত। আর যদি এরূপ আশঙ্কা কর যে,তাদের মধ্যে ন্যায় সঙ্গত আচরণ বজায় রাখতে পারবে না,তবে,একটিই [সূরা নিসা-৩]
মহিলাদের জন্য প্রথম স্বামীর কাছ থেকে তালাকপ্রাপ্তা হয়ে ইদ্দত পালন ছাড়া অন্যত্র বিয়ে করা বৈধ নয়। বিয়ে করলে সেই বিয়ে বিশুদ্ধ হয় না।
তাই উপরোক্ত মহিলার উচিত তার দ্বিতীয় স্বামী থেকে আলাদা হয়ে যাওয়া। প্রথম স্বামীর তালাকের পর, ইদ্দত শেষে বিয়ে করা।
فى الفتاوى الهندية– لَا يَجُوزُ لِلرَّجُلِ أَنْ يَتَزَوَّجَ زَوْجَةَ غَيْرِهِ وَكَذَلِكَ الْمُعْتَدَّةُ، كَذَا فِي السِّرَاجِ الْوَهَّاجِ. (الفتاوى الهندية، كِتَابُ النِّكَاحِ وَفِيهِ أَحَدَ عَشَرَ بَابًا، الْبَابُ الثَّالِثُ فِي بَيَانِ الْمُحَرَّمَاتِ وَهِيَ تِسْعَةُ أَقْسَامٍ، الْقِسْمُ السَّادِسُ الْمُحَرَّمَاتُ الَّتِي يَتَعَلَّقُ بِهَا حَقُّ الْغَيْرِ-1/280، بدائع الصنائع، كتاب النكاح عدم جواز منكوحة الغير-2/547، زكريا، البحر الرائق، كتاب النكاح، فصل فى المحرمات-3/108(
وفى رد المحتار- اما نكاح منكوحة الغير ومعتدة لم يقل احد بجوازه فلم ينعقد اصلا (رد المحتار، كتاب النكاح، باب العدة، مطلب فى النكاح الفاسد والباطل-5/197، 4/274، قاضى خان على الهندية-1/366
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা– কাসিমুল উলুম আলইসলামিয়া, আমীনবাজার ঢাকা।
ইমেইল– [email protected]