প্রশ্ন
আসসালামুআলাইকুম।
আল্লাহর রহমতে ভালোই আছেন।
আমি মঞ্জুরুল ইসলাম, ইমাম আবু হানিফার হানাফি মাযহাবের অনুসারি।
ছোট বেলা থেকেই আল্লাহর রহমতে ৫ ওয়াক্ক নামাজ এবং সাধারণ মুমিন হিসাবে যে সকল কিছু আমল তা করে আসতেছি।
আমার বাড়ী জামালপুর জেলা সরিষাবাড়ী থানা ভাটারা ইউনিয়নে অবস্থিত।
আমি একজন বিবিএ ৪র্থ বর্ষের ছাত্র। লেখাপড়ার পাশাপাশি আমি একটি কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টার এবং ছোটখাটো একটা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে আসতেছি।
কথা সেটা না কথা হলো আমার প্রতিষ্ঠানের পাশে এক গাইরে মাকাল্লিদের দোকান ছিল সে আমাকে বার বার এই সহি হাদিসের নামে আমাকে ওসওয়াসা দিত এক পর্যায়ে প্রায় আমি বিভ্রান্তই হয়ে যাই।
আমাদের সমাজের যে সকল ইমাম গণ আছেন তারা সাধারণ কিছু হুজুর মাত্র। তারাও তাদের প্রশ্নগুলোর সঠিক উত্তর বা ব্যখ্যা দিতে পারে না। সেখানে আমার মত সাধারণ ছেলে তো আরও বিপাকে পড়ে যায়।
তবে একদিন লুৎফর রহমান ফরাইজী হুজুরের সরিষাবাড়ী স্টেশনের পাশে একটি মাহফিল হয় সেই মাহফিলে আপনার মূল্যবান বয়ানে আমার ভিতরের জড়তা অনেক দূর হয়ে যায় এবং মেলান্দহ জামিয়া হুসাইনিয়া এর হুজুর আমানুল্লাহ কাসেমী সাহেবের মূল্যবান কথাগুলো শুনে আল্লাহর রহমতে অনেক ফয়দা আসে।
তার কিছু দিন পর আপনি আবার আসেন বাউসী পঞ্চপীর এক বাহাসের জন্য যেখানে আমিও ছিলাম শ্রোতা হিসাবে।
সেখান থেকে বাতিল ফেরকার পালায়ন করা এবং আপনার মূল্যবান বয়ান আমাকে আবার এক নতুন আলোর সন্ধান দেয়। সেই বাহাসের দিন হুজুর আপনার একটি বিষয় সবচেয়ে বেশি মনে জায়গা করে নিয়েছে। সেটি হল, আপনার শিষ্টাচার।
যখন জামালপুরের হুজুর আসলো সাথে সাথে আপনি আপনার বক্তব্য বন্ধ করে আসন ছেড়ে দিয়ে মাটিতে বসে যাচ্ছিলেন সত্যি কথা হুজুর এই দৃশ্য আমি আজও ভুলতে পারি না।
আপনার এই আদবই আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছে আমরা ইংশাআল্লাহ হকের পথের উপর আছি।
যাই হোক তার কয়েকদিন পর আমি ইউটিউবে আপনাদের দ্বারা পরিচালিত আহলেহক মিডিয়ার সন্ধান পাই যেহেতু আমি একটি ছোটখাটো কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টার পরিচালনা করি সেহেতু ইন্টারনেট ব্যবহার করতেই হয়।
সেই সুবাদে আপনার মুটামুটি সকল ভিডিও একের পর এক ডাউনলোড করা শুরু করি এবং মনোযোগ দিয়ে শুনা করি।
আমার গুলোর উপর আরও দরদ আসতে শুরু করে। আমার মনে হয় আপনাদের সকল ফেরকাগুলোর সমস্যার সমাধান দিয়েছেন এবং দিয়ে যাবেন।
কিন্তু ওদের আর একটি বড় ধোঁকা হলো কুরআনের আয়াত সংখ্যা ৬৬৬৬ টি নাকি ৬২৩৬টি। হুজুরদের সমীপে আকুল আবেদন কুরআনের আয়াত সংখ্যা নিয়ে একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করুন । তবে খুব কৃতজ্ঞ থাকবো। হুজুর আপনার সাথে সাথে তাহমীদুল মওলা ভাই,আবু রায়য়ান ভাই এবং এর সাথে সম্পৃক্ত সকলকে আবারো মোবারক বাদ জানাই। আবারও অনুরোধ করছি অতি সত্যর একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করুন এ্ই কুরআনের আয়াত সংখ্যা নিয়ে আমার মত সাধারণ মুসলমান খুব বিভ্রান্তির মধ্যে পরে আছে বা পড়ে যাচ্ছে।
হুজুর অনুগ্রহ করে যদি আপনার নাম্বার টি আমায় দিতেন তবে আমাদের সমাজে কিছু ফেতনা সৃষ্টিকারি দলের নতুন নতুন ফেরকাগুলো আপনাকে সরাসরি জানাইতে পারতাম এবং মাঝে মধ্যে আপনাদের খোজ খবর নিতে পারতাম।
দোয়া করি আল্লাহতায়ালা আপনাদের নেক হায়াত দান করুক আমিন। আসসালামুআলাইকুম।
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
গবেষণামূলক উচ্চতর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মারকাযুদ দাওয়াত আলইসলামিয়া ঢাকার মুখপত্র “মাসিক আলকাউসার” পত্রিকায় ২০১৬ ঈসাব্দ সনে “কুরআনুল কারীম সংখ্যা” নামে একটি বিশেষ সংখ্যা বের হয়েছিল।
২৭০ পৃষ্ঠা ব্যাপৃত বিশাল সংখ্যাটিতে কেবল পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সাজানো।
সেটিতে প্রখ্যাত হাদীস বিশারদ গবেষক আলেম আল্লামা আব্দুল মালেক সাহেব হাফিজাহুল্লাহ “কুরআনে মাজীদের আয়াত-সংখ্যাঃ একটি সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা” নামে একটি নাতিদীর্ঘ প্রবন্ধ প্রকাশ করেছেন।
যাতে তিনি পবিত্র কুরআনের পুরানো নুসখাসহ বিশ্বের বিভিন্ন মিউজিয়াম ও লাইব্রেরীতে সংরক্ষিত কুরআন এবং ঐতিহাসিক দলীলের ভিত্তিতে প্রমাণ করেছেন যে, পবিত্র কুরআনের আয়াত সংখ্যা সর্ব নিম্ন ৬২০৪ আর সর্বোচ্চ ৬২৩৬।
বিস্তারিত দেখতে হলে পড়ুনঃ আলকাউসার, কুরআনুল কারীম সংখ্যা-৮৭-১৬১ পৃষ্ঠা, প্রকাশকাল ২০১৬ ঈসাব্দ।
সেখান থেকে একটু অংশ তুলে দিচ্ছিঃ
মুতাওয়ারাছ ও মুতলাক্কা বিল কবুল তথা যুগ পরম্পরায় পতূর্বসূরিদের থেকে প্রাপ্ত এবং সর্বজনস্বীকৃত গণনা পদ্ধতিগুলোতে ৬২০৪ এর কম এবং ৬২৩৬ এর বেশি কোন সংখ্যা নেই। প্রথমটি বসরী গণনার আয়াত সংখ্যা আর দ্বিতীয়টি কুফী গণনার আয়াত সংখ্যা।
এ বিষয়টিকে ইবনুল জাওযী রহঃ পরিস্কার ভাষায় লিখেছেনঃ
فقد وقع إجماع العادين على أن القرآن ستة ألاف ومئتا أية، ثم اختلفوا فى الكسر الزائد على ذلك….
অর্থাৎ আয়াত গণনাকারীদের এ ব্যাপারে ইজমা হয়েছে যে, মোট আয়াত সংখ্যা ৬২০০ এর কিছু বেশি। কত বেশি তা নিয়ে তাদের মাঝে ইখতিলাফ হয়েছে।
এরপর ইবনুল জাওযী রহঃ দুইশো এর কত বেশি সে সম্পর্কে আয়াত সংখ্যা সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের মতামত উল্লেখ করেছেন। কিন্তু সেখানে ৬২০৪ এর কম এবং ৬২৩৬ এর বেশি কোন সংখ্যার কথা উল্লেখ করেননি।
আয়াত সংখ্যা সম্পর্কে লিখিত কিতাবসূমহ (যা প্রায় একশোর কাছাকাছি) যে কিতাবই অধ্যয়ন করা হোক ইবনুল জাওযী রহঃ এর উল্লেখকৃত ইজমার কথা স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হয়ে সামনে আসবে। [দ্রষ্টব্য-১০৭ পৃষ্ঠা]
উপরোক্ত আলোচনার আলোকে আশা করি পরিস্কার ধারণা হয়ে গেছে যে, কুরআনে কারীমের আয়াত সংখ্যা ৬২৩৬টি। এটাই বিশুদ্ধ। ৬৬৬৬ যে সংখ্যার কথা বলা হয়ে থাকে তা নিরেট গলদ মাশহুর বা ভুল প্রচলন।
শেষকথা
আমাদের সাইটের “প্রশ্ন করুন” অপশনের স্থানে আমাদের সাথে যোগাযোগের নাম্বার দেয়া আছে। সেই সাথে ফোন করার নীতিমালা দেয়া আছে। নীতিমালা ফলো করে সময়মত ফোন দিন। ইনশাআল্লাহ আমরা আমাদের সাধ্যানুপাতে সহযোগিতা করার চেষ্টা করবো।
আল্লাহ তাআলা আপনাকেও তার দ্বীনের খাদিম হিসেবে কবুল করুন। দুনিয়া ও আখেরাতে প্রভূত কল্যাণ দান করুন। আমীন।
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।
ইমেইল– [email protected]