প্রচ্ছদ / আকিদা-বিশ্বাস / মাযহাবে হানাফী সত্বেও আমরা নিজেদের আক্বীদায় আশআরী ও মাতুরিদী পরিচয় দেই কেন?

মাযহাবে হানাফী সত্বেও আমরা নিজেদের আক্বীদায় আশআরী ও মাতুরিদী পরিচয় দেই কেন?

প্রশ্ন

আসসালামু আলাইকুম হুজুর,কেমন আছেন?

ইমাম আবু হানিফা রহ. কি আকিদা সম্পূর্ণ করে যান নি? যদি আকিদা সম্পূর্ণ করে যান তাহলে বর্তমানে হানাফি মাযহাব অনুসরণ করলে আকিদার ক্ষেত্রে আশারী ও মাতুরিদি আকিদা কেন গ্রহণ করা হয়? নাকি তার আকিদা খারাপ ছিলো বলেই আশারী ও মাতুরিদি আকিদা গ্রহণ করতে হচ্ছে?

দয়া করে জানাবেন, আমাকে ইমেইল করলে উপকৃত হতাম।

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

আমরা প্রথমে মুসলমান। তারপর আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআত। তারপর মাযহাব হিসেবে হানাফী মাযহাবের অনুসারী। তারপর এ উপমহাদেশের অবস্থান হিসেবে আমরা দেওবন্দী। আর আকিদাগত আমরা আশআরী ও মাতুরিদী।

উদাহরণ দিলে বিষয়টি আরো পরিস্কার হবে।

আমি প্রথমে বাংলাদেশী। তারপর ঢাকাবাসী। তারপর রামপুরা থানার অধিবাসী। তারপর জামতলার অধিবাসী।

এতগুলো পরিচয় কেন?

আমি পাশের এলাকা মৌলভীর টেকের বিপরীতে জামতলার অধিবাসী। অন্য থানার বিপরীতে রামপুরা থানার অধিবাসী। অন্য শহরের বিপরীতে ঢাকার অধিবাসী। অন্য দেশের বিপরীতে আমি বাংলাদেশী।

মৌলভীর টেকের অধিবাসী বলা মানে আমি রামপুরার অধিবাসী থেকে বেরিয়ে যাই না। ঢাকার অধিবাসী বলায় আমি বাংলাদেশের অধিবাসী থেকে বেরিয়ে যাই না। বরং অন্যদের থেকে আমাকে আলাদা করে পরিচয় দিতেই এ নামগুলো বলা।

উপরোক্ত বাস্তব উদাহরণ বুঝলে উপরোক্ত কথাটিও বুঝতে পারবেন।

আমরা অন্য ধর্মের বিপরীতে মুসলিম।

শিয়া রাফেজীদের বিপরীতে আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআত।

মুতাজিলা, জাহমিয়া, মুজাসসিমা ইত্যাদি ফিরক্বার বিপরীতে আমরা আশআরী ও মাতুরিদী।

অন্য মাযহাবের বিপরীতে আমরা হানাফী।

বিদআতিদের বিপরীতে আমরা দেওবন্দী।

আমি নিজেকে দেওবন্দী বলা মানে আমি মুসলিম থেকে বেরিয়ে যাই না।

আমি নিজেকে হানাফী বলা মানেই আমি আহলে সুন্নত থেকে বেরিয়ে যাই না।

আমি নিজেকে মাতুরিদী আশায়েরী বলার দ্বারা হানাফী থেকে বেরিয়ে যাই না।

এসবই অন্য আরেক দলের বিপরীতে আমার নিজের পরিচয় ফুটিয়ে তোলা।

যদি আর কোন ফিরক্বা না থাকতো, তাহলে আমাদের আলাদা করে নিজেদের আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতের অনুসারী বলার প্রয়োজন ছিল না।

যদি মুতাজিলা, জাহমিয়া, মুজাসসিমারা না থাকতো, তাহলে আমাদের আশায়েরী মাতুরিদী বলার দরকার ছিল না।

যদি অন্য মাযহাব না থাকতো, তাহলে আমাদের নিজেদের হানাফী বলার দরকার ছিল না।

যদি উপমহাদেশে রেজাখানী ও আহলে হাদীস ফিরক্বা না থাকতো, তাহলে আমাদের নিজেদের দেওবন্দী বলার কোন দরকার ছিল না।

এসবই বলা হয়, কাছাকাছি  অন্য ফিরক্বা থেকে নিজেকে আলাদা করার জন্য। শুধুই পরিচয় প্রকাশক। আর কিছু নয়।

সুতরাং আমরা হানাফী একথা যেমন সত্য। আবার মাতুরিদী আশআরীও সত্য। একাধিক পরিচয় ভিন্ন হবার পরিচায়ক নয়। যারাই হানাফী, তারাই মাতুরিদী। আমরা যারা মাতুরিদী তারাই হানাফী। হানাফী হলাম শাফেয়ী, হাম্বলী ও মালেকী মাযহাবের বিপরীতে। আর মাতুরিদী হলাম মুতাজিলাদের বিপরীতে।

এ সহজ কথাটি না বুঝার কারণে উপরোক্ত প্রশ্ন উত্থাপিত করছেন কতিপয় ভাইরা।

এক সময় মুতাজিলা, জাহমিয়া ও মুজাসসিমা ফিরক্বার লোকেরা আকিদা বিষয়ে প্রচণ্ড ভ্রান্তিতা ছড়াতে শুরু করে। তখন আবুল হাসান আশআরী রহঃ এবং আবু মানসূর মাতুরিদী রহঃ মু’তাজিলী ফিরক্বার দাঁতভাঙ্গা জবাব প্রদান করেন। বিশুদ্ধ আকিদা ব্যাখ্যা করেন ও প্রচার করেন।

তো আমরা নিজেদের মু’তাজিলীদের ভ্রান্ত আকিদা থেকে নিজেকে মুক্ত করে আলাদা পরিচয় দিতেই ইমাম মাতুরিদী ও ইমাম আশআরী রহঃ এর ব্যাখ্যাকে সাপোর্ট করে নিজেদের মাতুরিদী ও আশআরী পরিচয় দিয়ে থাকি। হানাফী মাযহাবে বা ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর আকিদা ঠিক নেই, বা পূর্ণাঙ্গ নেই এ কারণে নয়।

আশায়েরী ও মাতুরিদী কোন নতুন আকিদা নয়। নয় হানাফী আকিদার বাহিরের কোন আকিদা। আকিদা একই। শুধু অন্য ফিরক্বা তথা মুতাজিলাদের থেকে নিজেকে আলাদা করতেই আমরা নিজেদের মাতুরিদী ও আশআরী বলে থাকি।

আশা করি বিষয়টি পরিস্কার হয়েছে। জাযাকাল্লাহ।

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।

ইমেইল[email protected]

0Shares

আরও জানুন

ইমামের সামনের সুতরা কি মাসবূক মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট?

প্রশ্ন ইমামের সুতরা মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট কি না? এবং ইমামের সুতরা মসবুক ব্যাক্তির জন্য যথেষ্ট …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *