প্রচ্ছদ / আকিদা-বিশ্বাস / অপবাদের কবলে ফাযায়েলে আমাল [পর্ব-৫] জুনায়েদ বাগদাদী রহঃ এর স্বপ্নে শয়তানকে বিবস্ত্র দেখা!

অপবাদের কবলে ফাযায়েলে আমাল [পর্ব-৫] জুনায়েদ বাগদাদী রহঃ এর স্বপ্নে শয়তানকে বিবস্ত্র দেখা!

প্রশ্ন

লা-মাযহাবী শায়েখ তাউসীফুর রহমান তার “ফাযায়েলে আমাল কী হাকীকত” নামক ভিডিও লেকচারে বলেছেন যে, জুনায়েদ বাগদাদী একদা শয়তানকে উলঙ্গ অবস্থায় স্বপ্নে দেখেছেন। এদের নজরে শুধু মেয়ে আসে, কিংবা দাড়িহীন ছেলে দেখে বা শয়তান আসে, এছাড়া তৃতীয় চতুর্থ আর কিছু নজরে আসে না।

জুনায়েদ বললেন, তোমার লজ্জা হয় না যে, তুমি উলঙ্গ হয়ে ঘুরছো। শয়তান বলল, এরা কোন পুরুষ যে, লজ্জা করবো, পুরুষতো হল, ঐ তাবলীগী জামাত যা মসজিদে সুনেজিয়াতে বসে আছে। তারা আসল পুরুষ। জিকির করতে করতে আমার অন্তর  জ্বালিয়ে দিয়েছে। ………….শেষ পর্যন্ত।

উক্ত ঘটনা উদ্ধৃত করে তিনি দাবী করছেন যে, উলামায়ে দেওবন্দের আক্কীদা হল, তাদের ওলীদের কাছে ইলমে গায়েব রয়েছে। উলামায়ে দেওবন্দের বুযুর্গরা ইলমে গায়েবের দাবী করে।

এ বিষয়ে আপনাদের উত্তর আশা করছি।

উত্তর

بسم الله الرحمن الرحيم

তাউসীফুর রহমান একজন জঘন্য মিথ্যুক ও প্রতারক। ফাযায়েলে আমালে বর্ণিত উক্ত ঘটনার কোথাও “তাবলীগী জামাত” শব্দটি নেই। সে ইচ্ছেকৃত তাবলীগী জামাতকে বদনাম করার জন্য নিজের পক্ষ থেকে জুড়ে দিয়েছে। যা তার জঘন্য মিথ্যুক হবার প্রমাণ বহন করে।

আমরা প্রথমে মূল ঘটনাটি ফাযায়েলে আমাল থেকে দেখে নেইঃ

‘হযরত জুনায়েদ রহঃ হইতে বর্ণনা করা হইয়াছে যে, তিনি একবার স্বপ্নে শয়তানকে উলঙ্গ অবস্থায় দেখিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, মানুষের সামনে উলঙ্গ হইয়া থাকিতে তোর কি লজ্জা হয় না? শয়তান বলিল, ইহারা কি মানুষ: মানুষতো উহারা, যাহারা শোনাজিয়ার মসজিদে বসা আছেন। যাহারা আমার শরীরকে দুর্বল করিয়া দিয়াছে, আমার কলিজাকে পুড়িয়া কাবাব করিয়া দিয়াছে। হযরত জুনায়েদ রহঃ বলেন, আমি শোনিজিয়ার মসজিদে গিয়া দেখিলাম কয়েকজন বুযুর্গ হাটুর উপর মাথা রাখিয়া মোরাকাবায় মশগুল রহিয়াছেন। তাহারা আমাকে দেখিয়া বলিতে লাগিলেন, খবীশ শয়তানের কথায় কখনও ধোঁকায় পড়িও না। [ফাযায়েলে আমাল, উর্দু-৪৩৭, বাংলা ফাযায়েলে আমাল-৩৭৬-৩৭৭, ফাযায়েলে জিকির-৭০-৭১, দারুল কিতাব প্রকাশনী]

 

দেখুন উপরোক্ত অংশের কোথাও তাবলীগী জামাত শব্দটি নেই। কিন্তু মিথ্যুক তাউসীফুর রহমান এ মিথ্যা জোড়ে দিয়েছে। সেই সাথে উলামায়ে কেরামের উপর অভিযোগ উত্থাপন করল, তারা নাকি শুধু মহিলা আর দাড়িহীন ছেলে আর শয়তানকেই স্বপ্নে দেখে। আল্লাহ হিফাযত করুন এমন দাজ্জাল থেকে।

উপরোক্ত ঘটনার কোথাও ইলমে গায়েবের কোন ছিটেফোটাও নেই। শোনিজিয়ার মসজিদের বুযুর্গদের স্বপ্নের ঘটনাটি জানার বিষয়টি কাশফের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা জানিয়ে দিয়েছেন।

কাশফ আর ইলমে গায়েব সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়। যা আমরা আগের লেখাগুলোতেও পরিস্কার করেছি।

আর শায়েখ জাকারিয়া রহঃ উক্ত ঘটনাটি নিজে নিজে বানিয়ে লিখেননি। বরং তা নকল করেছেন “রউজুর রাইয়্যাহীন” গ্রন্থ থেকে। দেখুন- রউজুর রাইয়্যাহীন-১৩৯]

n new 1

কাশফকে ইলমে গায়েব সাব্যস্তকারীদের প্রতি প্রশ্ন

ইমাম নববী রহঃ, ইমাম ইবনে কাইয়্যিম রহঃ, ইমাম কুরতুবী রহঃ, ইমাম রাজী রহঃ, ইমাম গাযালী রহঃ এ ৫ জন ইমাম হযরত উসমান রাঃ এর একটি ঘটনা নকল করেছেন।

قال دخلت على عثمان رضي الله عنه وكنت قد لقيت امرأة في طريقي فنظرت إليها شزراً وتأملت محاسنها فقال عثمان رضي الله عنه لما دخلت يدخل علي أحدكم وأثر الزنا ظاهر على عينيه أما علمت أن زنا العينين النظر لتتوبن أولأعزرنك فقلت أوحي بعد النبي فقال لا ولكن بصيرة وبرهان وفراسة صادقة

তিনি বলেন, আমি হযরত উসমান রাঃ এর নিকট আসলাম। পথিমধ্যে আমি এক নারীর সাথে সাক্ষাৎ হল। তখন আমি তার দিকে আড়চোখে তাকালাম। আর তার সৌন্দর্যতা গভীরভাবে নিরীক্ষণ করলাম। এরপর হযরত হযরত উসমান রাঃ এর খিদমাতে উপস্থিত হলে, তিনি আমাকে বললেন, তোমাদের কেউ কেউ আমার কাছে আগমন করে এমতাবস্থায় যে, তার চোখে মুখে যিনার চিহ্ন থাকে। তোমার কি জানা নেই যে, কুদৃষ্টি করা হচ্ছে চোখের যিনা? তুমি তওবা কর। নতুবা তোমাকে সাজা দেব। আমি জিজ্ঞাসা করলামঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পরেও ওহী আগমন করে কি? তিনি বললেন, না, কিন্তু অন্তর্দৃষ্টি ও দূরদর্শীতার মাধ্যমে জানা যায়।

উক্ত ঘটনাটি বিভিন্ন শব্দে নিম্নবর্ণিত গ্রন্থগুলোতে বিদ্যমানঃ

ইহয়াউ উলুমিদ্দীন-৩/২৩-২৪।

n new 2

তাফসীরে কুরতুবী-১২/২৩৬।

n new 3

তাফসীরে রাজী-২১/৮৯।

n new 4

কিতাবুর রূহ-২৮৯, ভিন্ন ছাপা-৬৭৫।

n new 5

বুস্তানুল আরেফীন-৩৮৮

n new 6

যদি ফাযায়েলে বর্ণিত ঘটনায়  জুনায়েদ বাগদাদী রহঃ কে দেখে শোনিজিয়ার বুযুর্গদের “ খবীশ শয়তানের কথায় কখনও ধোঁকায় পড়িও না” কথাটি ইলমে গায়েব হয়, তাহলে উপরোক্ত কিতাবগুলোতে বর্ণিত হযরত উসমান রাঃ এর চোখের যিনার কথা বলে দেয়ার ঘটনাটি কী হবে? এটা কি ইলমে গায়েব হয়ে যায় না?

এমন ঘটনা শায়েখ জাকারিয়া রহঃ আনলে শিরক করলে উক্ত ঘটনা যে কিতাবে আছে সেই মূল কিতাব রউজুর রাইয়্যাহীনের লেখক আব্দুল্লাহ বিন আস’আদ আলইয়াফেয়ী আলইয়ামেনী রহঃ এর হুকুম কী হবে?

সেই সাথে একই ধরণের কাশফের ঘটনা হযরত উসমান রাঃ থেকে ইমাম কুরতুবী, ইমাম গাযালী, ইমাম রাজী, ইমাম নববী ও ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম রহঃ আনার মাধ্যমে কি তারা শিরকের প্রচার করেছেন? শিরক করেছেন?

লা-মাযহাবী বন্ধুদের কাছে এ বিষয়ে পরিস্কার জবাব চাই।

আমাদের কথা পরিস্কার যে, যেমন ফাযায়েলে আমালের ঘটনাটি শিরক নয়। তেমনি উপরোক্ত গ্রন্থসমূহে বর্ণিত উসমান রাঃ এর ঘটনাও শিরক নয়। বরং দু’টোই কাশফ। আল্লাহ তাআলা উপরোক্ত অবস্থায় তাদের জানিয়ে দিয়েছেন। তাই তারা জেনেছেন। এটি তাদের কারামত। এসবকে শিরক বলা ইলমে গায়েব ও কাশফ সম্পর্কে অজ্ঞতা আর কিছু নয়।

আল্লাহ তাআলা আমাদের লা-মাযহাবী শায়েখদের মিথ্যাচার ও প্রতারণা থেকে হিফাযত করুন।

অপবাদের কবলে ফাযায়েলে আমাল [পর্ব-৪] জনৈক বুযুর্গের কয়েকদিন যাবত পেশাব পায়খানা না করার ঘটনা

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।

মুহাদ্দিস-জামিয়া উবাদা ইবনুল জাররাহ, ভাটারা ঢাকা।

ইমেইল[email protected]

0Shares

আরও জানুন

ইমামের সামনের সুতরা কি মাসবূক মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট?

প্রশ্ন ইমামের সুতরা মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট কি না? এবং ইমামের সুতরা মসবুক ব্যাক্তির জন্য যথেষ্ট …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *