প্রশ্ন
আস সালামুআলাইকুম সম্মানিত
মুফতি সাহেব আশা করি আল্লাহর রহমতে ভালো আছেন হুজুর আমার বউয়ের সাথে মোবাইলে আমার ঝগড়া হয় ঝগড়ার মধ্যে আমি এভাবে বলি এক তালাক দুই তালাক তিন তালাক হুজুর আমার বলেছে সেই কিছু সুনেনি হুজুর আমি কাতারে থাকি হুজুর আমার একটা মেয়ে আছে আমার শুশুর অনেক গরিব আমার বউ বলতেছে আমার বাড়ি থেকে যাবেনা সে আরও বলে সে এখানে মারা যাবে হুজুর আমি এখন কি করব আমি অনেক টেনশনে আছি হুজুর আমি মাদ্রাসার ছাএ ছিলাম আমি নামায পরি হুজুর দয়া করে যানাবেন ।
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
আপনি মাদরাসায় পড়লেতো আপনার কাছে বিষয়টি পরিস্কার থাকার কথা। তারপরও আমাদের কাছে কেন প্রশ্ন করছেন ভাই?
আপনি মাদরাসায় পড়ার পরও এমন বোকামী কি করে করলেন? স্ত্রীর সাথে রাগারাগি হলেই তালাক বলতে হবে একথা আপনাকে কে শিখাল?
আর তালাক বললেও তিন তালাকই বলতে হবে এটাই বা কার শিক্ষা?
দুইটা কাজই বোকামীসূলভ কাজ। একেতো ঝগড়া হলেই তালাক দেয়া বাচ্চাদের মত কাজ।
আর যেখানে এক তালাক দিলেই স্ত্রী স্বামী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সেখানে তিন তালাক দেবার দরকার কি?
যদি কোন স্বামী তার স্ত্রীকে রাখতে না চায়, তাহলে এক তালাক দিলেইতো হয়। এক তালাকে বাইন বললে, কিংবা এক তালাক দিলে, ইদ্দত শেষে উক্ত মেয়ে আরেক স্থানে বিবাহ বসতে পারে। সেখানে রাগ করে তিন তালাক দেবার কোন মানে হয় না। অহেতুক ও শিশুসূলভ কাজ।
কারো গলা কেটে ফেলার পর ভুল হয়েছে বলে যেমন কোন ফায়দা নেই, তেমনি স্ত্রীকে তিন তালাক দেবার পর ভুল হয়েছে বলার দ্বারাও কোন ফায়দা নেই।
আপনার শ্ব্শুর গরীব, সন্তান আছে এসব কথা কেন তালাকের মত জঘন্য শব্দ বলার আগে খেয়াল হয়নি? কেন এমন শিশুসূলভ আচরণ করেন আপনারা?
আমাদের দায়িত্ব বিধান বলে দেয়া। মানা না মানা আপনার দায়িত্ব।
স্ত্রীকে তিন তালাক দেবার মাধ্যমে তিন তালাক পতিত হয়ে যায়। স্ত্রী শুনুক আর না শুনুক। তা’ই আপনার স্ত্রী তিন তালাকপ্রাপ্তা হবার মাধ্যমে আপনার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এখন ইদ্দত শেষে আপনার স্ত্রীর যদি অন্য কোথাও বিয়ে হয়। দ্বিতীয় স্বামীর সাথে ঘর সংসার করা অবস্থায় কোন কারণে তালাকপ্রাপ্তা হয়, তাহলে ইদ্দত শেষে আপনি আবার উক্ত মেয়েলোককে বিবাহ করতে পারবেন। এছাড়া আর কোন গত্যান্তর নেই।
فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا تَحِلُّ لَهُ مِن بَعْدُ حَتَّىٰ تَنكِحَ زَوْجًا غَيْرَهُ ۗ فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا أَن يَتَرَاجَعَا إِن ظَنَّا أَن يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ ۗ وَتِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ يُبَيِّنُهَا لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ [٢:٢٣٠]
তারপর যদি সে স্ত্রীকে (তৃতীয়বার) তালাক দেয়া হয়, তবে সে স্ত্রী যে পর্যন্ত তাকে ছাড়া অপর কোন স্বামীর সাথে বিয়ে করে না নেবে, তার জন্য হালাল নয়। অতঃপর যদি দ্বিতীয় স্বামী তালাক দিয়ে দেয়, তাহলে তাদের উভয়ের জন্যই পরস্পরকে পুনরায় বিয়ে করাতে কোন পাপ নেই। যদি আল্লাহর হুকুম বজায় রাখার ইচ্ছা থাকে। আর এই হলো আল্লাহ কতৃꦣ2453; নির্ধারিত সীমা; যারা উপলব্ধি করে তাদের জন্য এসব বর্ণনা করা হয়। {সূরা বাকারা-২৩০}
وقال الليث عن نافع كان ابن عمر إذا سئل عمن طلق ثلاثا قال لو طلقت مرة أو مرتين فأن النبي صلى الله عليه و سلم أمرني بهذا فإن طلقتها ثلاثا حرمت حتى تنكح زوجا غيرك
হযরত নাফে রহ. বলেন,যখন হযরত ইবনে উমর রাঃ এর কাছে ‘এক সাথে তিন তালাক দিলে তিন তালাক পতিত হওয়া না হওয়া’ (রুজু‘করা যাবে কিনা) বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলো,তখন তিনি বলেন-“যদি তুমি এক বা দুই তালাক দিয়ে থাকো তাহলে ‘রুজু’ [তথা স্ত্রীকে বিবাহ করা ছাড়াই ফিরিয়ে আনা] করতে পার। কারণ,রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে এরকম অবস্থায় ‘রুজু’ করার আদেশ দিয়েছিলেন। যদি তিন তালাক দিয়ে দাও তাহলে স্ত্রী হারাম হয়ে যাবে, সে তোমাকে ছাড়া অন্য স্বামী গ্রহণ করা পর্যন্ত। {সহীহ বুখারী-২/৭৯২, ২/৮০৩}
তিন তালাক বিষয়ে আরো দলীল জানতে হলে পড়ুন
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।