প্রশ্ন
আমার পাশের বাড়ির একটা মেয়ে। সে গত তিন সপ্তাহ আগে গোপনে বিবাহ করার পর তৃতীয় দিনই তিন তালাকের মাধ্যমে ডিভোর্স হয়ে যায়।গার্জিয়ানরা ডিভোর্সের জন্য বাধ্য করে। বিবাহের পর মেয়ে বাবার বাড়িতেই ছিলো, ইতিমধ্যে তাদের কোন শারিরিক সম্পর্ক হয়নি। এখন প্রশ্ন হলো এ মেয়ের কি ইদ্দত পালন করতে হবে? এখন তার গার্জিয়ানরা আবার তার স্বামীর সাথে বিবাহ দিতে চাচ্ছে।যদি তাই হয় তাহলে কি এ মেয়ের হিলা লাগবে?এর পদ্ধতিটা কি হবে? একটু অনুগ্রহ করে বলবেন প্লিজ।
প্রশ্নকর্তা- নাম ঠিকানা প্রকাশে অনিচ্ছুক।
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
বিয়ের পর যদি স্বামী স্ত্রীর মাঝে খালওয়াতে সহীহাহ তথা স্বামী স্ত্রী একান্তে নির্জনে কিছু সময় বসবাসের সুযোগ না পেয়ে থাকে, তারপর তিন তালাক দেয়া হয়, তাহলে তালাকের শব্দের উপর নির্ভরশীল তালাক কয়টি পতিত হয়েছে। এক্ষেত্রে দু’টি সূরত হতে পারে। যথা-
১
স্বামী বলল, এক তালাক, দুই তালাক, তিন তালাক। কিংবা বলল, তুমি তালাক, তুমি তালাক, তুমি তালাক, কিংবা বলল, তালাক, তালাক তালাক।
এভাবে তালাক দিলে শুধু এক তালাকই পতিত হয়েছে বলে ধর্তব্য হবে। শেষের দুই তালাক অহেতুক সাব্যস্ত হবে। কারণ যে স্ত্রীর সাথে বিয়ের পর শারিরীক সম্পর্ক ছাড়াই তালাক প্রদান করা হয়, সে এক তালাকের মাধ্যমেই বাইন হয়ে যায়। তাই যখন স্বামী এক তালাক বলেছে, তখনি স্ত্রী বাইন তালাকপ্রাপ্তা হয়ে স্বামীর অধিকার থেকে পৃথক হয়ে গেছে। তাই এরপরের দুই তালাক পতিতই হয়নি।
এভাবে তালাক দিয়ে থাকলে এখন যদি আবার উক্ত স্বামী স্ত্রীকে ফেরত নিতে চায়, তাহলে নতুন মোহর ধার্য করে নতুন করে বিয়ে করে নিলেই হবে। কোন ইদ্দত পালন ও হিলা করতে হবে না।
২
স্বামী বলল, এক, দুই তিন তালাক। কিংবা তোমাকে তিন তালাক দিলাম, কিংবা তুমি তিন তালাক।
এভাবে তালাক দিলে তিন তালাকই পতিত হবে। কারণ তালাক বলা হয়েছে তিন শব্দ বলার পর। তাই তিন বলার পর তালাক বলায় সর্বশেষ শব্দের সাথে তালাক শব্দটি সংশ্লিষ্ট হয়ে তিন তালাকই পতিত হয়ে যায়। আর বাকি দু’টির ক্ষেত্রে তিন তালাক বলা হয়েছে একই সাথে। তাই তালাক তিনটিই পতিত হয়ে যাবে।
তাই এখন আর উক্ত স্ত্রীকে প্রথম স্বামী গ্রহণ করতে পারবে না।
হ্যাঁ, যদি স্বাভাবিকভাবে উক্ত স্ত্রীলোকের অন্য কোথাও বিয়ে হয়, দ্বিতীয় স্বামীর সাথে ঘর সংসার করা অবস্থায় কোন কারণে তালাক হয়ে যায়। তাহলে তালাকের পর ইদ্দত পালন শেষে আবার প্রথম স্বামীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে। এছাড়া কোন সূরত নেই।
إذَا طَلَّقَ الرَّجُلُ امْرَأَتَهُ ثَلَاثًا قَبْلَ الدُّخُولِ بِهَا وَقَعْنَ عَلَيْهَا فَإِنْ فَرَّقَ الطَّلَاقَ بَانَتْ بِالْأُولَى وَلَمْ تَقَعْ الثَّانِيَةُ وَالثَّالِثَةُ وَذَلِكَ مِثْلُ أَنْ يَقُولَ أَنْتِ طَالِقٌ طَالِقٌ طَالِقٌ (الفتاوى الهندية، كتاب الطلاق، الْفَصْلُ الرَّابِعُ فِي الطَّلَاقِ قَبْلَ الدُّخُولِ-1/373)
(قَوْلُهُ: طَلَّقَ غَيْرَ الْمَدْخُولِ بِهَا ثَلَاثًا وَقَعْنَ) سَوَاءٌ قَالَ أَوْقَعْت عَلَيْك ثَلَاثَ تَطْلِيقَاتٍ أَوْ أَنْتِ طَالِقٌ ثَلَاثًا (البحر الرائق، كتاب الطلاق، فصل فى طلاق غير المدخول بها-2/213، النهر الفائق، كتاب الطلاق، فصل فى الطلاق قبل الدخول-2/352
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।