প্রশ্নঃ
আসসালামু আলাইকুম।
মান্নত করা কি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহ? মানুষজন মান্নত করে কেন? এটা কি নিজের উপর শরিয়াতের হুকুমকে চাপিয়ে আনা নয়? মান্নত আদায়ের আগেই মৃত্যু এসে হাজির হলে তো তার জিম্মায় তা বাকি থেকে যাবে।
মান্নত করলে ফায়দা কি? মান্নতের ব্যাপারে আল্লাহর পক্ষ থেকে কি স্পেশাল সাহায্যের ওয়াদা আছে?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।
উত্তর:
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
আপনি যেভাবে মান্নতকে দেখছেন তা ঠিক নয়। মান্নতের দুই সূরত। যথা-
১
নিজের পছন্দসই কোন কাজ হলে আল্লাহর শুকরিয়া স্বরূপ কোন ইবাদত করার আগ্রহ প্রকাশ করা।
২
কৃপণ ও আমলের প্রতি অনাগ্রহী ব্যক্তি আল্লাহর সাথে সওদাবাজী করে মান্নত করা।
প্রথম প্রকার মান্নত জায়েজ। করতে কোন সমস্যা নেই।
বাকি দ্বিতীয় প্রকার মান্নত ঠিক নয়। এ দ্বিতীয় প্রকার মান্নতের ক্ষেত্রে হাদীসে ইরশাদ হয়েছে যে,
« لاَ تَنْذُرُوا فَإِنَّ النَّذْرَ لاَ يُغْنِى مِنَ الْقَدَرِ شَيْئًا وَإِنَّمَا يُسْتَخْرَجُ بِهِ مِنَ الْبَخِيلِ ».
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
তোমরা মান্নত করো না। কেননা মান্নত তাকদীরের কিছুই পরিবর্তন করতে পারে না। বরং মান্নতের দ্বারা কৃপণের ধন-ই কেবল বের হয়। (মুসলিম শরীফ, হাদীস নং- ৪৩২৯)
হযরত ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, –
عَنِ ابْنِ عُمَرَ عَنِ النَّبِىِّ -صلى الله عليه وسلم- أَنَّهُ نَهَى عَنِ النَّذْرِ وَقَالَ « إِنَّهُ لاَ يَأْتِى بِخَيْرٍ وَإِنَّمَا يُسْتَخْرَجُ بِهِ مِنَ الْبَخِيلِ
রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মান্নত করতে নিষেধ করেছেন। এবং বলেছেন তা কোন কল্যাণ বয়ে আনে না। বরং তা দ্বারা কৃপণের ধন-ই কেবল বের হয়। (মুসলিম শরীফ, হাদীস নং ৪৩২৭।) এরূপ অর্থবোধক হাদীস আরো রয়েছে।
কিন্তু প্রথম প্রকারের মান্নতের ক্ষেত্রে এ নিরুৎসাহ প্রযোজ্য হবে না। তবে উভয় প্রকার মান্নতই কাজ হয়ে গেলে পূর্ণ করা আবশ্যক।
যদি মান্নত একদম বেকারই হতো, তাহলে শরীয়তে তা পূর্ণ করার বিধান দেয়া হতো না।
আর কোন ইবাদত নিজের উপর চাপিয়ে আনা এটি কোন খারাপ বিষয় নয়। বরং অনেক ক্ষেত্রেই উত্তম। যেখানে মান্নত হবার জন্য মৌলিক ইবাদত হওয়া আবশ্যক। তাই ইবাদত নিজের উপর লাযিম করে নেয়া অনুত্তম হবে কেন?
আর কাংখিত কাজটি পূর্ণ না হলে মান্নতকৃত বস্তু আদায় করা আবশ্যক নয়।
মান্নত তাকদীরকে পরিবর্তন করতে পারে না। কিন্তু তাকদীরে লিপিবদ্ধ কাজটি সুন্দরভাবে পরিস্ফুটিত হতে সহায়ক হতে পারে।
لِأَنَّ غَيْرَ الْبَخِيلِ يُعْطِي بِاخْتِيَارِهِ بِلَا وَاسِطَةِ النَّذْرِ. قَالَ الْقَاضِي: عَادَةُ النَّاسِ تَعْلِيقُ النُّذُورِ عَلَى حُصُولِ الْمَنَافِعِ وَدَفْعِ الْمَضَارِّ فَنَهَى عَنْهُ، فَإِنَّ ذَلِكَ فِعْلُ الْبُخَلَاءِ إِذِ السَّخِيُّ إِذَا أَرَادَ أَنْ يَتَقَرَّبَ إِلَى اللَّهِ تَعَالَى اسْتَعْجَلَ فِيهِ وَأَتَى بِهِ فِي الْحَالِ، وَالْبَخِيلُ لَا تُطَاوِعُهُ نَفْسُهُ بِإِخْرَاجِ شَيْءٍ مِنْ يَدِهِ إِلَّا فِي مُقَابَلَةِ عِوَضٍ يُسْتَوْفَى أَوَّلًا، فَيَلْتَزِمُهُ فِي مُقَابَلَةِ مَا سَيَحْصُلُ لَهُ، وَيُعَلِّقُهُ عَلَى جَلْبِ نَفْعٍ أَوْ دَفْعِ ضُرٍّ، وَذَلِكَ لَا يُغْنِي عَنِ الْقَدَرِ شَيْئًا أَيْ نَذْرٌ لَا يَسُوقُ إِلَيْهِ خَيْرًا لَمْ يُقَدَّرْ لَهُ، وَلَا يَرُدُّ عَنْهُ شَرًّا قُضِيَ عَلَيْهِ، وَلَكِنَّ النَّذْرَ قَدْ يُوَافِقُ الْقَدَرَ فَيُخْرِجُ مِنَ الْبَخِيلِ مَا لَوْلَاهُ لَمْ يَكُنْ يُرِيدُ أَنْ يُخْرِجَهُ. وَقَالَ الْخَطَّابِيُّ: مَعْنَى نَهْيِهِ عَنِ النَّذْرِ إِنَّمَا هُوَ التَّأْكِيدُ لِأَمْرِهِ وَتَحْذِيرُ التَّهَاوُنِ بِهِ بَعْدَ إِيجَابِهِ، وَلَوْ كَانَ مَعْنَاهُ الزَّجْرَ عَنْهُ حَتَّى يَفْعَلَ لَكَانَ فِي ذَلِكَ إِبْطَالُ حُكْمِهِ وَإِسْقَاطُ لُزُومِ الْوَفَاءِ بِهِ، إِذْ صَارَ مَعْصِيَةً، وَإِنَّمَا وَجْهُ الْحَدِيثِ أَنَّهُ أَعْلَمَهُمْ أَنَّ ذَلِكَ أَمْرٌ لَا يَجْلِبُ لَهُمْ فِي الْعَاجِلِ نَفْعًا وَلَا يَصْرِفُ عَنْهُمْ ضَرًّا، وَلَا يَرُدُّ شَيْئًا قَضَاهُ اللَّهُ تَعَالَى بِقَوْلِ: ” فَلَا تَنْذُرُوا “. عَلَى أَنَّكُمْ تُدْرِكُونَ بِالنَّذْرِ شَيْئًا لَمْ يُقَدِّرْهُ اللَّهُ لَكُمْ، أَوْ تَصْرِفُونَ عَنْ أَنْفُسِكُمْ شَيْئًا جَرَى الْقَضَاءُ بِهِ عَلَيْكُمْ، إِذَا فَعَلْتُمْ ذَلِكَ فَاخْرُجُوا عَنْهُ بِالْوَفَاءِ، فَإِنَّ الَّذِي نَذَرْتُمُوهُ لَازِمٌ لَكُمْ.
قَالَ الطِّيبِيُّ: تَحْرِيرُهُ أَنَّهُ عَلَّلَ النَّهْيَ بِقَوْلِهِ: فَإِنَّ النَّذْرَ لَا يُغْنِي مِنَ الْقَدَرِ، وَنَبَّهَ بِهِ عَلَى أَنَّ النَّذْرَ الْمَنْهِيَّ عَنْهُ هُوَ النَّذْرُ الْمُقَيَّدُ الَّذِي يُعْتَقَدُ أَنَّهُ يُغْنِي عَنِ الْقَدَرِ بِنَفْسِهِ، كَمَا زَعَمُوا، وَكَمَا نَرَى فِي عَهْدِنَا جَمَاعَةً يَعْتَقِدُونَ ذَلِكَ لَمَّا شَاهَدُوا مِنْ غَالِبِ الْأَحْوَالِ حُصُولَ الْمَطَالِبِ بِالنَّذْرِ، وَأَمَّا إِذَا نَذَرَ وَاعْتَقَدَ أَنَّ اللَّهَ تَعَالَى هُوَ الَّذِي يُسَهِّلُ الْأُمُورَ، وَهُوَ الضَّارُّ وَالنَّافِعُ. وَالنُّذُورُ كَالذَّرَائِعِ وَالْوَسَائِلِ، فَيَكُونُ الْوَفَاءُ بِالنَّذْرِ طَاعَةً، وَلَا يَكُونُ مَنْهِيًّا عَنْهُ، كَيْفَ وَقَدْ مَدَحَ اللَّهُ تَعَالَى جَلَّ شَأْنُهُ الْخِيَرَةَ مِنْ عِبَادِهِ بِقَوْلِهِ: {يُوفُونَ بِالنَّذْرِ} [الإنسان: 7] وَ {إِنِّي نَذَرْتُ لَكَ مَا فِي بَطْنِي مُحَرَّرًا} [آل عمران: 35] قُلْتُ: وَكَذَا قَوْلُهُ: {إِنِّي نَذَرْتُ لِلرَّحْمَنِ صَوْمًا} [مريم: 26] وَفِيهِ أَنَّ قَوْلَهُ: أَنَّ النَّذْرَ الْمُقَيَّدَ هُوَ الْمَنْهِيُّ عَنْهُ غَيْرُ مُسْتَقِيمٍ، لِأَنَّهُ يَتَرَتَّبُ عَلَيْهِ مَا سَبَقَ مِنْ أَنَّهُ يَكُونُ مَعْصِيَةً لَا يَجِبُ الْوَفَاءُ بِهِ، وَالْحَالُ أَنَّهُ لَيْسَ كَذَلِكَ، فَالظَّاهِرُ أَنْ يُقَالَ: إِنَّ الْمَنْهِيَّ عَنْهُ هُوَ الْقَيْدُ، أَعْنِي الِاعْتِقَادَ الْفَاسِدَ مِنْ أَنَّ النَّذْرَ يُغْنِي عَنِ الْقَدَرِ. قَالَ: وَأَمَّا مَعْنَى ” فَإِنَّمَا يُسْتَخْرَجُ بِهِ مِنَ الْبَخِيلِ ” فَإِنَّ اللَّهَ تَعَالَى يُحِبُّ الْبَذْلَ وَالْإِنْفَاقَ، فَمَنْ سَمَحَتْ أَرْيَحِيَّتُهُ فَذَلِكَ، وَإِلَّا فَشَرْعُ النُّذُورِ لِيُسْتَخْرَجَ بِهِ مَالُ الْبَخِيلِ. (مرقاة المفاتيح-3/563-564)
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।