সংকলক– লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
বেরেলবী ভাইয়েরা শয়তানের জন্য শুধু ইলমে গায়েব এর দাবিদারই নয়, বরং অন্যান্য অনেক মর্যাদার অধিকারী হওয়ার দাবিও করে থাকে। চৌদ্দশত বছরের আহলে ইসলামের সর্বসম্মত আক্বিদা হল যে, প্রতিটি স্থানে বিদ্যমান হওয়া এটা আল্লাহ তাআলা ছাড়া কারো জন্যই প্রমাণিত নয়। কিন্তু রেজাখানী বেদআতিরা এ বৈশিষ্ট নবীগণ ছাড়া আর কার কার জন্য মানে একটু লক্ষ্য করুন।
শয়তান প্রতি স্থানে হাজির নাজির!
মুফতী আহমাদ ইয়ারখান বেরেলবী রেজাখানী লিখেনঃ
“শয়তান এবং তার বংশধররা গোটা পৃথিবীর সবাইকে দেখে। কিন্তু মানুষ তাদের দেখে না। যেখানেই কেউ ভাল কাজ করার ইচ্ছে করে, তার নিয়তের খবর পেতেই ততক্ষনাৎ সে ধোঁকা দিতে ছুটে আসে। যখন আল্লাহ তাআলা গোমরাহকে এত ইলম দিয়েছেন যে, সে সর্বত্র হাজির নাজির, তাই নবীজী সাঃ যিনি সারা পৃথিবীর পথপ্রদর্শক তাকেও হাজির নাজির বানিয়েছেন। {তাফসীর নূরুল ইরফান-২৪৩, আলআরাফ-২৭}
এ লেখায় বেরেলবী রেজাখানীদের হাকীম সাহেব নিজেদের যে আক্বিদার কথা প্রকাশ করল, তা একটু ভেবে দেখুনঃ
শয়তানের ব্যাপারে লিখেছে যে, সে সর্বত্র হাজির নাজির। যখন দুজাহানের সর্দার রাসূল সাঃ এর ব্যাপারে লিখেছে যে, তাকেও হাজির নাজির বানানো হয়েছে। শয়তানের ব্যাপারে “সর্বত্র” ব্যাবহার করা হয়েছে, আর রাসূল সাঃ এর থেকে “সর্বত্র” শব্দকে বাদ দেয়া হয়েছে।
তাহলে কি শয়তান সর্বত্র হাজির নাজির, আর রাসূল সাঃ শুধুই হাজির নাজির?
এখানে শয়তানের প্রতি মোহাব্বতের আতিশয্য প্রকাশ করা হয়েছে তা স্পষ্ট।
শয়তান কোন সিমায় সীমাবদ্ধ নয়
“ইবলিস একই সময়ে প্রতিটি দিকে প্রতিটি ব্যক্তির কাছে পৌঁছতে পারে। সে কোন সীমায় সীমিত নয়”। {তাফসীরে নাঈমী-৮/৩২৬}
ইবলিসের জন্য সীমাবদ্ধতার বেড়ি বিদূরিতকারী রেজাখানীরা ইবলিসের জন্য ভ্রমণ ও ঘোরাফেরাও প্রমাণিত করতে চেষ্টা করেছে।
সম্ভবত শয়তানের প্রতি মোহাব্বতের বেনজীর হওয়ার প্রতিযোগিতায় সর্বকালের শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে চেয়েছে তারা। দেখুন কী বলে?
শয়তান ও তাদের শক্তি
এ বিতাড়িত সৃষ্টি শয়তানকেও আল্লাহ তাআলা এত শক্তি দিয়েছেন যে, সে যদি ভ্রমণ করতে চায়, তাহলে অল্প সময়ে পুরো দুনিয়া চক্কর দিয়ে আসতে পারে। {তাহাফ্ফুজে আকায়েদে আহলে সুন্নাত-৪৬৮, সৈয়দ মুহাম্মদ মদনী মিয়া}
শয়তান প্রতিটি স্থানে হাজির নাজির
“এ সমস্ত অনুভূতি, প্রতিটি স্থানে হাজির নাজির হওয়া, প্রতিটি ব্যক্তির প্রতিটি সময়ের খবর রাখা, এ শক্তি আল্লাহ তাআলা ইবলিসকে দিলেন ধোঁকা দেওয়ার জন্য। {তাফসীরে নাঈমী-৮/৩৩৫}
অর্থাৎ শয়তান রেজাখানীদের সকল খবর যেমন রাখে, সাথে তার শক্তিমত্বাও খুব সহজলভ্য ও ব্যাপক। রেজাখানীদের মতে ইবলিসের সর্বত্র হাজির নাজির হওয়ার আরো কিছু উদ্ধৃতি দেখুন-
শয়তানের শক্তি হল সে সর্বত্র হাজির নাজির
“ইবলিস হাজির নাজির”। {তাফসীরে নাঈমী-৮/৩৩৫}
আরো বলেঃ “এ জাহান্নামী [শয়তান] এর এ শক্তি আছে যে, সে সর্বত্র হাজির নাজির”। {তাফসীরে নাঈমী-৩/৫৫}
ইবলিসকে শুধু সর্বত্র হাজির নাজির একথাই বিশ্বাস করে না, আরো একধাপ এগিয়ে শয়তানী মোহাব্বতের প্রকাশ করে এ দাবিও করে যে, সে কোটি স্থানে একই সাথে হস্তক্ষেপও করতে পারে। দেখুন-
“ইবলিস প্রতিটি সময় প্রতিটি ব্যক্তির কাছে পৌঁছতে পারে, একই সময়ে কোটি স্থানে হস্তক্ষেপ করতে পারে। তাই ইবলিস হাজির নাজির। {তাফসীর নাঈমী-৮/৩৩৫}
একথা পূর্বেও উল্লেখ করা হয়েছে যে, রেজাখানী বেদআতিরা শয়তানকে শুধু হাজির নাজিরই বিশ্বাস করে না, বরং রাসূল সাঃ এর চেয়েও ক্ষমতাধর হাজির নাজির বিশ্বাস করে থাকে।
শয়তান নবীজী সাঃ এর চেয়েও উঁচু স্তরের হাজির নাজির?!
মৌলভী আব্দুস সামী রামপুরী বেরেলবী রেজাখানী সাহেব লিখেনঃ
“মিলাদ মাহফিলের দাবিদাররাতো দুনিয়ার সমস্ত পাক-নাপাক স্থানের মজলিসে, ধর্মীয় ও অন্যান্য মজলিসে রাসূল সাঃ হাজির একথার দাবি করে না। মালাকুল মওত এবং ইবলিসের হাজির হওয়া এর চেয়ে অধিক স্থানে তথা পাক, নাপাক, কুফর ও গায়রে কুফরী স্থানে হয়ে থাকে। {আনওয়ারে সাতেহা}
শয়তান নবীজী সাঃ এর তুলনায় অধিক স্থানে হাজির নাজিরই নয় বরং শয়তানের আমলের পরিমাণ এত বেশি যে, আমলের কারণে নবুওয়ত পাওয়া গেলে শয়তান নাকি নবুওত পেত। দেখুন কি বলে?
শয়তান নবুওয়তের হকদার
“যদি নবুওয়ত আমলের উপর ভিত্তি করে হত, তাহলে শয়তানের তা পাওয়া উচিত”। {তাফসীরে নাঈমী-১/৩১২}
নাউজুবিল্লাহ! তাহলে কি শয়তানের আমল নবীওয়ালা ছিল? [আস্তাগফিরুল্লাহ!]
শয়তানের আমল দেখলে সে নবুওতের হকদার হয়ে যাবে? [নাউজুবিল্লাহ]
বাহ! কি চমৎকার মোহাব্বত শয়তানের প্রতি। কি পরিমাণ স্পর্ধার কথা যে, শয়তানকে তার আমল হিসেবে নবুওয়তের হকদার বানিয়ে দিল!
যদি শয়তানের আমল এতই নবীওয়ালা হতো, তাহলে সে কেন জঘন্য শাস্তি পাবে? তার এ নবীওয়ালা আমলের মাঝে কি ধোঁকা, বেআদবী, অহংকার, ঘৃণা,প্রতারণা, মিথ্যাচার, অশ্লিলতা ইত্যাদি নেই? এরকম লাখো খারাবী তার মাঝে থাকা সত্বেও তার আমল নবীওয়ালা হল কিভাবে?
শয়তান ও নবীজী সাঃ সমমানের হওয়ার কুফরী আক্বিদা
তাযকীরায়ে গাউসিয়্যার ২৫৭ নং পৃষ্ঠায় লিখেছেঃ
আশেকদের কাছে রং সব একই: ইবলিস ও মুহাম্মদ [সাঃ] সমান সমান।
ঈমান বিধ্বংসী কেমন জঘন্য উপমা স্থাপন করে এ দাবি করল যে, শয়তানের মাঝে নবুয়তী আমল পাওয়া গেছে, তারপর আরো একধাপ এগিয়ে ইবলিসকে রাসূল সাঃ এর সাথে সমান সমান হওয়ার দাবি করে বসল।
শয়তান ও তাওহীদ স্বীকার করা
“শুধু আল্লাহ তাআলা তাওহীদতো শয়তানও মানে। আর অনেক কাফেরও একত্ববাদে বিশ্বাসী”। [তাফসীরে নাঈমী-৩/৪৯}
বুঝে আসে না তাওহীদ তথা একত্ববাদ বিষয়ে ওদের এত দুশমনী কিসের? যায়গায় যায়গায় তাওহীদ বিষয়ে ঠাট্টা করা হয়েছে। মুফতী আহমাদ ইয়ারখান গুজরাটি রেজাখানী বলেনঃ
মুআহহিদ তথা একত্ববাদে বিশ্বাসী হয়ো না, নতুবা মার খাবে। {নয়ি তাক্বরীরী-৭৬}
আমরা বেরেলবী রেজাখানীদের জিজ্ঞেস করি, যদি তাওহীদের দ্বারা মুক্তি না পাওয়া যায়,তাহলে কি শুধু মোহাব্বতের দ্বারা মুক্তি পাওয়া যাবে?
কস্মিনকালেও নয়। যেমনিভাবে একত্ববাদে বিশ্বাসী কাফেররা জান্নাতে যাবে না, ঠিক তেমনি মুশরিক আশেকরাও জাহান্নাম থেকে বাঁচতে পারবে না। আল্লাহ তাআলা সুস্পষ্ট ঘোষনা দিয়েছেন-
إِنَّ اللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَن يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَن يَشَاءُ ۚ وَمَن يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا بَعِيدًا [٤:١١٦
নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা তাকে ক্ষমা করেন না, যে তাঁর সাথে কাউকে শরীক করে। এছাড়া যাকে ইচ্ছে ক্ষমা করেন। যে আল্লাহর সাথে শরীক করে সে সদূর ভ্রান্তিতে পতিত হয়। {সূরা নিসা-১১৬}