প্রচ্ছদ / অপরাধ ও গোনাহ / হাশরের ময়দানে বিচার হবার আগেই কবরে শাস্তি পাওয়া কি অযৌক্তিক?

হাশরের ময়দানে বিচার হবার আগেই কবরে শাস্তি পাওয়া কি অযৌক্তিক?

প্রশ্ন

বিচারকার্য সমাধা হবার আগেই কবরে আজাব হবে কেন? এটিতো বিচার হবার আগেই শাস্তির সমতূল্য। এটি কতটুকু যৌক্তিক?

উত্তর

بسم الله الرحمن الرحيم

কবরের আজাব এটি হাদীস দ্বারা প্রমাণিত সত্য।

এখন প্রশ্ন হল বিচার হবার আগে শাস্তি কেন? এর ৩টি জবাব হতে পারে-

দুনিয়াতে ব্যক্তি ভাল মন্দ কাজ করার দ্বারাই উক্ত ব্যক্তির পরিণাম নির্দিষ্ট হয়ে যায়। ভাল কাজ করে থাকলে আরামের আর মন্দ কাজ করে থাকলে শাস্তির অধিকারী হয়ে যায়।

সেই হিসেবে কবরে গমণ করার দ্বারা দুনিয়াতে করা কৃতকর্মের শাস্তি পাওয়া এটি কোন অযৌক্তিক বিষয় নয়।

এটি আসলে মূল শাস্তি নয়। বরং দুনিয়াতে যেমন ফাঁসি বা অন্যান্য শাস্তি প্রদান করার আগে ব্যক্তিকে কয়েদ করে রাখা হয়, যা এক প্রকার শাস্তি। কবরের আজাবও তেমনি। মূল শাস্তির আগে লঘু শাস্তি প্রদান করা হয়। এটি দোষণীয় নয়।

এটি বান্দার উপকারের জন্য করা হয়। হাশরের ময়দানের ফায়সালার পর যে শাস্তি রয়েছে তা খুবই ভয়াবহ। সেই তুলনায়  কবরের শাস্তি কিছুই নয়।

দুনিয়াতে যেমন আল্লাহ তাআলা কোন বান্দাকে পরিচ্ছন্ন ও পবিত্র করার জান্য মাঝে মাঝে বিপদে ফেলেন, কষ্ট দেন, এর দ্বারা উক্ত ব্যক্তির গোনাহ মাফ হয়। সে আল্লাহর প্রিয়ভাজন হয়। তেমনি কিছু বান্দার কবরে আজাব হবার দ্বারা তার গোনাহগুলো আল্লাহ মাফ করে দিবেন। হাশরের ময়দানে উক্ত ব্যক্তি গোনাহহীন অবস্থায় উঠবে। তারপর সে শাস্তি পাওয়া ছাড়াই জান্নাতের অধিকারী হয়ে যাবে। তাই কবরের আজাব গোনাহগারের জন্য খারাপ নয় মঙ্গলের জন্যই নির্ধারণ করা হয়েছে।

এছাড়া আরো যৌক্তিক জবাব হতে পারে।

তবে সব যুক্তির বিপরীতে মূল কথা হল, গ্রহণযোগ্য হাদীস দ্বারা উক্ত বিষয়টি প্রমাণিত। তাই এর উপর ঈমান আনা প্রতিটি মুমিনের জন্য আবশ্যক।

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ: مَرَّ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِقَبْرَيْنِ، فَقَالَ: ” إِنَّهُمَالَيُعَذَّبَانِ، وَمَا يُعَذَّبَانِ فِي كَبِيرٍ، أَمَّا أَحَدُهُمَا: فَكَانَ لَا يَسْتَنْزِهُ مِنَ البَوْلِ – قَالَ وَكِيعٌ: مِنْ بَوْلِهِ – وَأَمَّا الْآخَرُ: فَكَانَ يَمْشِي بِالنَّمِيمَةِ “.

হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূল সাঃ দু’টি কবরের পাশ দিয়ে অতিক্রম হচ্ছিলেন। বললেন, এ দু’টি কবরে আযাব হচ্ছে। কোন বড় কারণে আজাব হচ্ছে না। একজনের কবরে আজাব হচ্ছে সে পেশাব থেকে ভাল করে ইস্তিঞ্জা করতো না। আরেকজন চোগোলখুরী করতো। {মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৯৮০, বুখারী, হাদীস নং-১৩৬১}

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَدْعُو وَيَقُولُ: «اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ القَبْرِ، وَمِنْ عَذَابِ النَّارِ، وَمِنْ فِتْنَةِ المَحْيَا وَالمَمَاتِ، وَمِنْ فِتْنَةِ المَسِيحِ الدَّجَّالِ»

হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাঃ দুআ করে বলতেন, হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে কবরের আজাব থেকে আশ্রয় চাই। জাহান্নামের আজাব থেকে আশ্রয়  চাই। জীবিত ও মৃত ফিতনা থেকে আশ্রয় চাই এবং দাজ্জালের ফিতনা থেকে আশ্রয় চাই। {বুখারী, হাদীস নং-১৩৭৭}

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা-জামিয়া ফারুকিয়া দক্ষিণ বনশ্রী ঢাকা।

ইমেইল– [email protected]

0Shares

আরও জানুন

ইমামের সামনের সুতরা কি মাসবূক মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট?

প্রশ্ন ইমামের সুতরা মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট কি না? এবং ইমামের সুতরা মসবুক ব্যাক্তির জন্য যথেষ্ট …