প্রশ্ন
আস সালামু আলাইকুম।
মুফতী সাব আপনার কাছে আমি একটা গ্রুত্ব পুর্ন পশ্ন করতে চাই। বর্তমানে কনফিশন তৈরি করছে অনেক। ইসলামের মুল বিষয় কোরআন সুন্নাহ।। আপনার কিছু লিখা সুন্নাহের সমন্ধে ধারন দিছে।। কিন্তু হাদিসের মুলনিতী গুলো আমাদের জানা প্রয়োজন। সে সমন্ধে আমার কিছু প্রশ্ন নিম্নে দেওয়া হল আসা করি দলিল সহ উত্তর দিয়ে আমাদের সঠিক জ্ঞান অর্জনে সাহায্য করবেন।
১.হাদিস কাকে বলে?
২.হাদিসের প্রকারভেদ কি?
৩.সাহাবা ও তাবে তাবেঈনদের কথা ও কাজ কি হাদিস?
নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
হাদীসের সংজ্ঞা
হাদীসের প্রসিদ্ধতম সংজ্ঞা হল,
اقوال النبى صلى الله عليه وسلم وأفعاله وأحواله (فتح الملهم-1/6
রাসূল সাঃ এর কথা,কর্ম এবং অবস্থাকে বলা হয় হাদীস। {ফাতহুল মুলহিম-১/৬}
আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহঃ লিখেন-
وَقَالَ الطِّيبِيُّ: الْحَدِيثُ أَعَمُّ مِنْ أَنْ يَكُونَ قَوْلَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَالصَّحَابِيِّ وَالتَّابِعِيِّ وَفِعْلَهُمْ وَتَقْرِيرَهُمْ.
আল্লামা তীবী রহঃ বলেন- হাদীস এটি আম শব্দ। এর মাঝে রাসূল সাঃ এর কথা এবং সাহাবী এবং তাবেয়ীদের কথা এবং তাদের কর্ম ও তাকরীর তথা কোন কিছু দেখে চুপ থাকা বিষয়ও শামিল। {তাদরীবুর রাবী-৬}
তাহলে আল্লামা তীবী রহঃ এর মতে হাদীস হল ৯টি বস্তুর সমন্বয়। তথা-
১- রাসূল সাঃ এর কথা।
২- রাসূল সাঃ এর কর্ম।
৩- রাসূল সাঃ এর তাকরীর।
৪- সাহাবী রাঃ এর কথা।
৫- সাহাবী রাঃ এর কর্ম।
৬- সাহাবী রাঃ এর তাকরীর।
৭- তাবেয়ীগণ রহঃ এর কথা।
৮- তাবেয়ীগণ রহঃ এর কর্ম।
৯- তাবেয়ীগণ রহঃ এর তাকরীর।
আল্লামা তীবী রহঃ এর মত ৯ প্রকারকেই হাদীস বলেছেন হাফিজ ইবনে হাজার আসকালানী রহঃ। দেখুন-
وَقَالَ شَيْخُ الْإِسْلَامِ فِي شَرْحِ النُّخْبَةِ: الْخَبَرُ عِنْدَ عُلَمَاءِ الْفَنِّ مُرَادِفٌ لِلْحَدِيثِ، فَيُطْلَقَانِ عَلَى الْمَرْفُوعِ وَعَلَى الْمَوْقُوفِ وَالْمَقْطُوعِ.
{তাদরীবুর রাবী-৬}
হাদীসের প্রকারভেদ
আসলে এ বিষয়টি অনেক দীর্ঘ বিষয়। হাদীসের অনেক প্রকার রয়েছে। যেমন কয়েকটি প্রকার নিচে উদ্ধৃত করা হল। বাকি বিস্তারিত দেখতে পড়তে হবে উলুমুল হাদীসের গ্রন্থাবলী।
আমাদের কাছে পৌছা হিসেবে হাদীস তিন প্রকার। যথা-
১-খবরে মুতাওয়াতির।যা বিশাল জনগোষ্ঠি বর্ণনা করেছেন, যা মিথ্যা হওয়া স্বাভাবিকভাবে অসম্ভব।
২- খবরে ওয়াহিদ।যা শুধু একজন বর্ণনা করেন।
খবরে মুতাওয়াতির আবার দুই প্রকার।
১- মুতাওয়াতিরে লফজী তথা শব্দ ও অর্থ হিসেবে মুতাওয়াতির।
২- মুতাওয়াতিরে মানুয়ী তথা যা অর্থ হিসেবে মুতাওয়াতির শব্দ হিসেবে নয়।
খবরে ওয়াহিদ আবার তিন প্রকার। যথা-
১- মাশহুর।প্রতিটি স্তরেই যা তিনজন বা তার চেয়ে বেশি ব্যক্তি করে বর্ণনা করেছেন কিন্তু তাওয়াতুরের পর্যায়ে পৌছেনি।
২- গরীব।যাতে একজন বর্ণনাকারী থাকে।
৩- আজীজ। যার প্রতিটি স্তরে দুইজনের থেকে কম বর্ণনাকারী নেই।
খবরে ওয়াহিদের মাশহুর, আজীজ এবং গরীব শক্তিশালী ও দুর্বল হওয়া হিসেবে আবার দুই প্রকার।
যথা-
১- মাকবুল।
২- মারদূদ।
মাকবুল হাদীস স্তর হিসেবে আবার দুই প্রকার। যথা-
১-সহীহ।
২-হাসান।
সহীহ হাদীস আবার দুই প্রকার। যথা-
১-সহীহ লিজাতিহী।
২-সহীহ লিগাইরিহী।
হাসান হাদীসও দুই প্রকার। যথা-
১-হাসান লিজাতিহী।
২-হাসান লিগাইরিহী।
মাকবুল হাদীস আবার আমল হিসেবে দুই প্রকার। যথা-
১-মামুলেবিহী তথা যার উপর আমল জারি আছে।
২- গায়রে মামুলিবিহী তথা যার উপর আমল জারি নেই।
এরকম আরো অনেক প্রকার রয়েছে। যা উলুমুল হাদীসের গ্রন্থাবলীতে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
যেমন
১-মুকাদ্দিমায়ে ফাতহুল মুলহিম।
২-মুকাদ্দিমায়ে ইবনুস সালাহ।
৩-তাদরীবুর রাবী।
৪-তাইসীরু মুসতালাহিল হাদীস।
৫-মুকাদ্দিমায়ে মিশকাত।
৬- শরহু নুখবাতিল ফিকার।ইত্যাদি।
সাহাবা রাঃ ও তাবেয়ীগণ রাঃ এর বক্তব্যের হুকুম কি?
আমরা ইতোপূর্বের হাদীসের সংজ্ঞা দ্বারাই বুঝে গেছি যে, অনেক বিজ্ঞ মুহাদ্দিসীনদের মতে সাহাবা রাঃ এবং তাবেয়ীগণ রাঃ এর বক্তব্যও হাদীস বলেই ধর্তব্য।
দেখুন, তাদরীবুর রাবী, শরহু নুখবাতিল ফিকার,মুকাদ্দিমায়ে মিশকাত।
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।