প্রচ্ছদ / তালাক/ডিভোর্স/হুরমত / ‘ওরে আমি ছাইড়া দিছি এবং ওর সাথে সংসার করা সম্ভব না’ বলার দ্বারা কি তালাক হয়?

‘ওরে আমি ছাইড়া দিছি এবং ওর সাথে সংসার করা সম্ভব না’ বলার দ্বারা কি তালাক হয়?

প্রশ্ন

আসসালামু আলাইকুম। আমি (নামটি উহ্য রাখা হলো)।

আমার সাথে আর শ্বশুর ও শ্বশুর বাড়ির লোকজনের সাথে বেশ কিছুদিন যাবৎ ঝামেলা চলছিল। আমার বিয়েছে ৭ বছর যাবৎ। আমার দুইটা বাচ্চাও আছে।

ঘটনার শুরু হয় আমার স্ত্রী যখন ২য়বার মা হয়। তখন সে আট মাসের গর্ভবতী ছিল। তখন আমার ভাইয়ের বিয়ের কথাবার্তা চলছিল। আমার শ্বশুরের সবগুলো মেয়েই ভালো। তাই আমার শালিকে আমার ভাইয়ের জন্য আনতে চাইছিলাম।

কিন্তু আমার শ্বশুর বিয়ে না দিয়ে আমার ব্যাপারে, আমার ভাইয়ের ব্যাপারে আবোল তাবোল কথা বলে আমারে আরো রাগায়া ফেলছে। যাইহোক, এখানে আরো অনেক ঘটনা আছে।

আমি মূল কথায় আসি।

আমার ঘটক চাচা আমাকে ফোন দেয়। তখন আমি তাকে বলছি “ওরে আমি ছাইড়া দিছি, ওর বাপরে বলবেন আইসা নিয়া যাইতে”।

এই কথাটা মূলত রাগে এবং ঐ চাচা ও আমার শ্বশুরকে ভয় দেখানোর জন্য বলছি।

এর দুইদিন পরে আমার ফুফু শ্বাশুরীর সাথে সিএনজি দিয়ে আসতেছিলাম। ফুফু শ্বাশুরী আমাকে কিছু কথা শুনায়।

ফুফুশ্বাশুরী ও আমার শ্বশুরের কানে যাতে কথাগুলো যায় এই উদ্দেশ্যে বলছি “এক হুজুর বলছে আমাদের এক তালাক হয়ে গেছে। আপনার ভাইয়ের কারণে আমাদের এক তালাক হইছে”।

এর এক সপ্তাহ পরে আমি আমার স্ত্রীকে ফোন করে বলি: “তোমার বাবা যদি তোমার বোনকে আমার ভাইয়ের সাথে বিয়ে না দেয় তাহলে আমি তোমাকে তিন তালাক দিমু”।

এখন আমার শ্বশুর তার মেয়েকে আমার ভাইয়ের কাছে বিয়ে দেয় নাই। আর আমার ভাইয়ের অন্য জায়গায় বিয়ে হয়ে গেছে।

এর দুইদিন পরে আমার স্ত্রীকে ভয় দেখানোর জন্য ও শুনানোর জন্য বলছি “তোমার বাবা ও ভাইরে আইসা তোমারে নিয়া যাইতে বলো, তোমার সাথে সংসার করা আমার পক্ষে সম্ভব না।

এর ৫/৭দিন পর আমার শ্বশুর আমার বাড়িতে আট নয়জন লোক নিয়ে না জানিয়ে আসে।

আমাকে অনেক অপমান করায় আমি ক্ষিপ্ত হয়ে বলি: “দিলাম এক তালাক”।

যেদিন আমার শ্বশুর লোকজন নিয়ে আসে আমি ঐদিন আরেকটা কথা বলছি “থাকলে দুইবোন, না থাকলে কেউ না”।

আমি রাগ করে বলছি। মানে বুঝাইছি যে, শালীরে না দিলে আমার বউকেও নিয়া যান।

বিঃদ্রঃ

আমার স্ত্রীকে তালাক দেয়ার বা ছাড়ার ইচ্ছা বা নিয়ত অতীতে বা বর্তমানে কখনোই ছিল না।

এই কথাগুলো আমার শ্বশুর ও শ্বাশুরী ও বউকে ভয় দেখানোর জন্য বলছি এবং রাগে বলছি।

উত্তর

بسم الله الرحمن الرحيم

উপরোক্ত বিবরণ অনুপাতে আপনার স্ত্রীর উপর দুই তালাক পতিত হয়েছে। ভবিষ্যতে আপনি আর এক তালাকের মালিক রয়েছেন। তাই ভবিষ্যতে এসব কথা বলতে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত।

من أقر بطلاق سابق يكون ذلك إيقاعا منه فى الحال (المبسوط للسرخسى، دار الكتب العلمية بيروت-6/133)

ولو أقر بالطلاق كاذبا أو هازلا وقع قضاء لا ديانة (رد المحتار،  زكريا-4/440، كرتاشى-3/236)

سرحتك وهو “رها كردم” لأنه صار صريحا فى العرف (وقوله) “رها كردم” أى  سرحتك يقع به الرجعى (رد المحتار، زكريا-4/530، كرتاشى-3/299)

ولو قال لامرأته: أنت طالق، فقال له رجل: ما قلت؟ فقال: طلقتها، أو قال: قلت هى طالق، فهى واحدة فى القضاء، لأن كلامه انصرف إلى الإخبار بقرينة الاستخبار (بدائع الصنائع، زكريا-3/163، كرتاشى-3/102، الفتاوى الهندية، زكريا-1/355، جديد-1/423، بزازية على هامش الهندية-4/181، جديد-1/118، قاضى خان على هامش الهندية-1/452، جديد-1/273) 

ولو قال: أطلقك لم يقع (سكب الأنهر، دار الكتب العلمية بيروت-2/4)

بخلاف كنم، لانه استقبال فلم يكن تحقيقا بالتشكيك،  وفى المحيط لو قال بالعربية: أطلقك لا يكون طلاقا (الفتوى الهندية-1/384، جديد-1/452)

وانا أطلق نفسى لم  يقع، لأنه وعد (رد المحتار،  زكريا-4/559، كرتاشى-3/319)

فالكنايات لا تطلق بها إلا بنية (رد المحتار،  زكريا-4/528، كرتاشى-3/296، البحر الرائق، زكريا-3/526، كويته-3/302، هداية-2/374، الفتاوى الهندية-1/442، جديد-1/374، خانية على هامش الهندية-1/468، جديد-1/284، بدائع الصنائع، زكريا-3/167-169)

كطلقتك وأنت طالق، ومطلقة يقع بها واحدة رجعية (رد المحتار، زكريا-4/457، كرتاشى-3/247-249)

বিঃদ্রঃ

আপনি যেভাবে স্ত্রী ও তার পরিবারের উপর অন্যায় আবদার করে চাপ প্রয়োগ করেছেন তা শরয়ী দৃষ্টিতে খুবই গর্হিত ও গোনাহের কাজ।

একজন ব্যক্তি তার মেয়েকে কোথায় বিয়ে দিবে, কার সাথে বিয়ে দিবে এটা তাদের ব্যক্তিগত বিষয়।

এভাবে নিজের ভাইয়ের জন্য বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে এভাবে বলপ্রয়োগ করা শরয়ী দৃষ্টিকোণ এবং সামাজিক ভদ্রতার দৃষ্টিতে খুবই নিচু পর্যায়ের আচরণ।

এহেন আচরণের জন্য আপনার উচিত আপনার স্ত্রী এবং শ্বশুর শ্বাশুরীর কাছে ক্ষমা চাওয়া। আপনাকে আল্লাহ তাআলা দুইটা সন্তান দান করেছেন। আল্লাহ  তাআলা তাদের মঙ্গল করুন।

নিজে একবার ভেবে দেখুন এভাবে কেউ যদি আপনার মেয়ে এবং আপনার উপর বিয়ের জন্য চাপ প্রয়োগ করে তাহলে আপনার কেমন লাগবে?

তাই আপনার উচিত তাদের কাছে ক্ষমা চাওয়া এবং ভবিষ্যতে এমন বাজে আচরণ করা থেকে নিজেকে শুধরে নেয়া।

والله اعلم بالصواب

উত্তর লিখনে

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তা’লীমুল ইসলাম ইনস্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া ইসলামিয়া দারুল হক লালবাগ ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা: জামিয়াতুস সুন্নাহ কামরাঙ্গিরচর, ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা: কাসিমুল উলুম আলইসলামিয়া, সালেহপুর আমীনবাজার ঢাকা।

পরিচালক: শুকুন্দী ঝালখালী তা’লীমুস সুন্নাহ দারুল উলুম মাদরাসা, মনোহরদী নরসিংদী।

শাইখুল হাদীস: জামিয়া ইসলামিয়া আরাবিয়া, সনমানিয়া, কাপাসিয়া, গাজীপুর।

ইমেইল[email protected]

0Shares

আরও জানুন

ইমামের সামনের সুতরা কি মাসবূক মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট?

প্রশ্ন ইমামের সুতরা মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট কি না? এবং ইমামের সুতরা মসবুক ব্যাক্তির জন্য যথেষ্ট …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *