প্রচ্ছদ / কাফন-দাফন-জানাযা / লাশের খাটিয়া বহন করার সময় চল্লিশ কদম গণনা করার প্রথা কি সঠিক?

লাশের খাটিয়া বহন করার সময় চল্লিশ কদম গণনা করার প্রথা কি সঠিক?

প্রশ্ন

মৃত ব্যক্তির লাশ কবরে নেবার সময় খাটিয়া কাঁধে নিয়ে চল্লিশ কদম গণনা করার একটি প্রথা আমাদের এলাকায় চালু আছে।

হুজুরের কাছে আমার প্রশ্ন হল, এই সিষ্টেমের কোন শরয়ী ভিত্তি আছে কি? দয়া করে জানাবেন।

উত্তর

بسم الله الرحمن الرحيم

أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ حَمَلَ جَوَانِبَ السَّرِيرِ الْأَرْبَعَ كَفَّرَ اللَّهُ عَنْهُ أَرْبَعِينَ كَبِيرَةً»

হযরত আনাস বিন মালেক রাঃ বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন। যে ব্যক্তি মৃতের খাটিয়ার চারপাশ বহন করে, এর দ্বারা আল্লাহ তাআলা তার চল্লিশটি কবীরা গোনাহ মাফ করে দেন। [আলমু’জামুল আওসাত, হাদীস নং-৫৯২০]

ফুক্বাহায়ে কেরাম উক্ত ফযীলত পাবার পদ্ধতি এই বলেছেন যে, মাইয়্যেতের খাঁটিয়ার চারপাশে দশ দশ কদম করে চলা।

এর পদ্ধতি হল, প্রথমে মাইয়্যেতের ডান হাতের দিকের খাটিয়ার পায়া নিজের ডান কাঁধে নিয়ে দশ কদম চলবে।

তারপর মাইয়্যেতের ডান পায়ের দিকের খাটিয়ার পায়া ডান কাঁধে নিয়ে দশ কদম চলবে।

তারপর মাইয়্যেতের বাম হাতের দিকের খাটিয়ার পায়া নিজের বাম কাঁধে নিয়ে দশ কদম চলবে।

তারপর মাইয়্যেতের বাম পায়ের দিকের খাটিয়ার পায়া নিজের বাম কাঁধে রেখে দশ কদম চলবে।

এভাবে করা মুস্তাহাব।

একথা মনে রাখতে হবে যে, উপরোক্ত পদ্ধতিতে জানাযার খাটিয়া নেয়া মুস্তাহাব। যদি কোন ব্যক্তি দুর্বলতার কারণে অথবা অন্য কোন কারণে তা না করে, কিংবা এরচেয়ে বেশি করে ফেলে, তাহলে এতে কোন সমস্যা নেই।

তবে কিছু এলাকার মানুষ এভাবে চল্লিশ কদম উঠানোকে জরুরী মনে করে, আবার অনেকে এর মাধ্যমে মৃতকে সওয়াব পৌঁছানো হয়, মনে করে। এ দু’টি বিষয়ই ভ্রান্ত কথা।

তাই এহেন ধারণা থেকে মুক্ত থাকা জরুরী।

এর মাধ্যমে শুধুমাত্র যিনি চল্লিশ কদম যান, কেবল সেই খাটিয়া বহনকারী সওয়াবের অধিকারী হয়ে থাকেন। যেমনটি আমরা হাদীসের মাঝে পেয়েছি।

(وَإِذَا حَمَلَ الْجِنَازَةَ وَضَعَ) نَدْبًا (مُقَدِّمَهَا) بِكَسْرِ الدَّالِ وَتُفْتَحُ وَكَذَا الْمُؤَخَّرُ (عَلَى يَمِينِهِ) عَشْرَ خُطُوَاتٍ لِحَدِيثِ «مَنْ حَمَلَ جِنَازَةً أَرْبَعِينَ خُطْوَةً كَفَّرَتْ عَنْهُ أَرْبَعِينَ كَبِيرَةً» (ثُمَّ) وَضَعَ (مُؤَخِّرَهَا) عَلَى يَمِينِهِ كَذَلِكَ، ثُمَّ مُقَدِّمَهَا عَلَى يَسَارِهِ ثُمَّ مُؤَخِّرَهَا كَذَلِكَ، (الدر المختار مع رد المحتار، كتاب الصلاة، باب صلاة الجنازة-2/231، سعيد، 2/533، زكريا)

“وينبغي” لكل واحد “حملها أربعين خطوة يبدأ” الحامل “بمقدمها الأيمن” فيضعه “على يمينه” أي على عاتقه الأيمن ويمينها أي الجنازة ما كان جهة يسار الحامل لأن الميت يلقى على ظهره ثم يوضع مؤخرها الأيمن عليه أي على عاتقه الأيمن “ثم” يضع “مقدمها الأيسر على يساره” أي على عاتقه الأيسر “ثم يختم ب” الجانب “الأيسر” بحملها “عليه” أي على عاتقه الأيسر فيكون من كل جانب عشر خطوات لقوله صلى الله عليه وسلم: “من حمل الجنازة أربعين خطوة كفرت عنه أربعين كبيرة” ولقول أبي هريرة رضي الله عنه “من حمل الجنازة بجوانبها الأربع فقد قضى الذي عليه (حاشية الطحطاوى على مراقى الفلاح-603-604)

ثم اعلم أن في حمل الجنازة شیئین، نفس السنة وکمالها، أما نفس السنة: هي أن یأخذ بقوائمها الأربع علی طریق التعاقب بأن یحمل من کل جانب عشر خطوات۔ جاء في الحدیث: من حمل جنازةً أربعین خطوةً کفرت له أربعون کبیرةً.” (الفتاوی التاتارخانیة، کتاب الصلاة، الفصل الثاني والثلاثون في الجنائز، حمل الجنازة زکریا ۳/34، رقم:3448)

ثُمَّ إنَّ فِي حَمْلِ الْجِنَازَةِ شَيْئَيْنِ نَفْسَ السُّنَّةِ وَكَمَالَهَا أَمَّا نَفْسُ السُّنَّةِ أَنْ تَأْخُذَ بِقَوَائِمِهَا الْأَرْبَعِ عَلَى طَرِيقِ التَّعَاقُبِ بِأَنْ تَحْمِلَ مِنْ كُلِّ جَانِبٍ عَشْرَ خُطُوَاتٍ وَهَذَا يَتَحَقَّقُ فِي حَقِّ الْجَمْعِ وَأَمَّا كَمَالُ السُّنَّةِ فَلَا يَتَحَقَّقُ إلَّا فِي وَاحِدٍ وَهُوَ أَنْ يَبْدَأَ الْحَامِلُ بِحَمْلِ يَمِينِ مُقَدَّمِ الْجِنَازَةِ، كَذَا فِي التَّتَارْخَانِيَّة.

فَيَحْمِلُهُ عَلَى عَاتِقِهِ الْأَيْمَنِ ثُمَّ الْمُؤَخَّرُ الْأَيْمَنُ عَلَى عَاتِقِهِ الْأَيْمَنِ ثُمَّ الْمُقَدَّمُ الْأَيْسَرُ عَلَى عَاتِقِهِ الْأَيْسَرِ ثُمَّ الْمُؤَخَّرُ الْأَيْسَرُ عَلَى عَاتِقِهِ الْأَيْسَرِ هَكَذَا فِي التَّبْيِينِ. (الفتاوى الهندية-1/162)

وكذا فى تبيين الحقائق-1/245، المبسوط للسرخسى-2/56، البحر الرائق-2/208، بدائع الصنائع-1/309، مجمع الأنهر-1/185-186)

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক -তা’লীমুল ইসলাম ইনস্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

ইমেইল[email protected]

0Shares

আরও জানুন

ইমামের সামনের সুতরা কি মাসবূক মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট?

প্রশ্ন ইমামের সুতরা মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট কি না? এবং ইমামের সুতরা মসবুক ব্যাক্তির জন্য যথেষ্ট …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *