প্রচ্ছদ / জায়েজ নাজায়েজ / ন্যায্য অধিকার পেতে মিথ্যা বলা ও বাধ্য করা জায়েজ আছে কি?

ন্যায্য অধিকার পেতে মিথ্যা বলা ও বাধ্য করা জায়েজ আছে কি?

প্রশ্ন

আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ!

আমাদের আসাম রাজ্যে বেকারত্বের হার বেশি। সেই সাথে মুসলিম শিক্ষিত চাকরিজিবীর সংখ্যাও বেশি। এই হিন্দু গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে মুসলমানরা সর্বক্ষেত্রে লাঞ্চিত, বঞ্চিত হচ্ছে বিচারলয় এবং সার্বিক অধিকার থেকে।

আসাম রাজ্যে নতুন স্কুল গজিয়ে উঠছে। যা মূলত কাগজপত্রে বিদ্যমান। সেসব স্কুল এখন রাষ্ট্র সরকার রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে সরকারী করতে চাচ্ছে। বেশ কিছু সরকারী করে ফেলেছে বাকিগুলো আগামী মার্চ মাসের মাঝে করে ফেলবে। ওসব প্রতিষ্ঠানের কাগজপত্রে দেখানো হচ্ছে যে, বিগত ১৯৯০ সাল থেকে উক্ত প্রতিষ্ঠানসমূহ চলমান, অথচ বাস্তবে তা নয়। এসবই সদ্য প্রতিষ্ঠিত।

অনেক আন্দোলনের পর সরকার বাধ্য হয়ে এসব প্রতিষ্ঠানকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে হচ্ছে। সরকারও স্বীকৃতি দিচ্ছে সামনের নির্বাচনে ভোট পাবার আশায়।

সরকার যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিচ্ছে, তাতে পড়াশোনাও শুরু হয়ে গেছে।

এখন আমার প্রশ্ন হল, সরকারকে এভাবে বাধ্য করে চাকরি করা কি শরীয়ত সম্মত কি না?

প্রশ্নকর্তা-এমদাদুল হুসাইন, জেলা-হাইলিকান্দী, ষ্টেট-আসাম, দেশ-ইন্ডিয়া।

 

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

আপনার প্রশ্নের মৌলিক বিষয় আসলে দু’টি। যথা-

১-  নিজের ন্যায্য অধিকার প্রাপ্তির জন্য মিথ্যা কথা বলা বা লিখা জায়েজ কি না?

২-  নিজের ন্যায্য অধিকার আদায়ে কর্তৃপক্ষকে বাধ্য করা জায়েজ কি না?

ন্যায্য অধিকার পেতে মিথ্যা বলা

মিথ্যা বলা হারাম। কবিরা গোনাহ এতে কোন সন্দেহ নেই। তবে ক্ষেত্রে বিশেষে মিথ্যা বলার সুযোগ রয়েছে। এতে করে গোনাহ হবে না। এর মাঝে একটি হল নিজের ন্যায্য অধিকার আদায় করতে মিথ্যা বলা জায়েজ আছে। নিজেকে জুলুম থেকে বাঁচাতে মিথ্যা বলা জায়েজ আছে।

সেই হিসেবে সত্যিই যদি শুধু মুসলিম বা সংখ্যালঘু হওয়ার কারণে যোগ্য হওয়া সত্বেও চাকরি থেকে বঞ্চিত হতে হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রয়োজন হওয়া সত্বেও সরকার প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি না দিয়ে থাকে, তাহলে প্রতিষ্ঠা সন ভুল উল্লেখ করে সরকারি স্বীকৃতি নেয়া জায়েজ হবে।

তবে যদি প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন না থাকে, বা যোগ্যতার কদর করা হয়ে থাকে, তাহলে মিথ্যার আশ্রয় নেয়া জায়েজ হবে না।

তবে সর্বক্ষেত্রেই মিথ্যা ছাড়াই স্বীকৃতি নেয়ার চেষ্টা করা উচিত। যদি সম্ভব না হয়, তাহলে স্বীয় ন্যায্য অধিকার আদায় করতে প্রয়োজনে মিথ্যা বলার সুযোগ রয়েছে।

الْكَذِبُ مُبَاحٌ لِإِحْيَاءِ حَقِّهِ وَدَفْعِ الظُّلْمِ عَنْ نَفْسِهِ وَالْمُرَادُ التَّعْرِيضُ لِأَنَّ عَيْنَ الْكَذِبِ حَرَامٌ (الدر المختار مع رد المحتار، كتاب الحظر والإباحة، فصل فى البيع-9/612، بزازية على هامش الهندية، كتاب الكراهية، الثالث فيما يتعلق بالمناهى-6/359

ন্যায্য অধিকার পেতে কর্তৃপক্ষকে বাধ্য করা

যদি রাষ্ট্রপক্ষ যোগ্যতা থাকা সত্বেও শুধুমাত্র সংখ্যালঘু বলে মুসলিমদের চাকরি থেকে বঞ্চিত করে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন থাকা সত্বেও বিশাল জনগোষ্ঠিকে শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত করে থাকে, তাহলে প্রয়োজনীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ ও তা পরিচালনা করতে সরকারকে ন্যয়ঙ্গত পদ্ধতিতে বাধ্য করা জায়েজ আছে। তবে সম্পদ লুণ্ঠন, হত্যা, রাহজানীমূলক আন্দোলন করা জায়েজ নয়। বরং সংগত আন্দোলনের মাধ্যমে নিজেদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে সরকারকে বাধ্য করা জায়েজ আছে। এতে শরয়ী কোন বিধি-নিষেধ নেই।

وَالْمُرَادُ بِالْكُفْرِ هُنَا الْمَعَاصِي، وَالْمَعْنَى لَا تُنَازِعُوا وُلَاةَ الْأُمُورِ فِي وِلَايَتِهِمْ وَلَا تَعْتَرِضُوا عَلَيْهِمْ إِلَّا أَنْ تَرَوْا مِنْهُمْ مُنْكَرًا مُحَقَّقًا تَعْلَمُونَهُ مِنْ قَوَاعِدِ الْإِسْلَامِ فَإِذَا رَأَيْتُمْ ذَلِكَ فَأَنْكِرُوهُ عَلَيْهِمْ، وَقُومُوا بِالْحَقِّ حَيْثُمَا كُنْتُمْ،(مرقاة المفاتيح، كتاب الإمارة والقضاء-4/117

সরকারী স্বীকৃতি পাবার পর যদি প্রতিষ্ঠানগুলোতে পড়াশোনা না হয়, তথা প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি না হয়, তাহলে বেতন নেয়া কিছুতেই জায়েজ হবে না।

والله اعلم بالصواب

উত্তর লিখনে

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

ইমেইল- [email protected]

[email protected]

0Shares

আরও জানুন

ইমামের সামনের সুতরা কি মাসবূক মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট?

প্রশ্ন ইমামের সুতরা মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট কি না? এবং ইমামের সুতরা মসবুক ব্যাক্তির জন্য যথেষ্ট …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *