প্রচ্ছদ / তালাক/ডিভোর্স/হুরমত / নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে স্ত্রীকে তিন তালাক দেবার হুকুম কী?

নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে স্ত্রীকে তিন তালাক দেবার হুকুম কী?

প্রশ্ন

স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে তালাকের হলফনামা

(কোর্ট তালাক)

আমি মোঃ সুমন পাটোয়ারী, পিতা আঃ হালিম পাটোয়ারী, মাতা শেফালী বেগম, ঠিকানা-সাং + পোঃ কালিকাপুর, থানা মতলব, জেলা-চাঁদপুর, ধর্ম-ইসলাম, জাতীয়তা-বাংলাদেশী। এই মর্মে হলফপূর্বক ঘোষণা করিতেছি যে,

০১। আমি জন্মসূত্রে বাংলাদেশের স্থায়ী নাগরিক ও বাসিন্দা বটে এবং আমি আমার ভবিষ্যতের ভাল মন্দ বুঝিতে সক্ষম। যেহেতু আমি একজন প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ। তাই আমি আমার নিজের যে কোন ব্যাপারে আমি নিজেই একক এবং স্বাধীন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিতে পারি। রাষ্ট্র তথা সমাজ আমাকে সেই নাগরিক অধিকার প্রদান করিয়াছেন। আমি আমার সময়মত নাগরিক অধিকার প্রয়োগ করিব।

০২। আমার সহিত বিগত ০৩/০৬/২০০৯ ইং তারিখে সেলিনা আক্তার, পিতা-দেলোয়ার হোসেন, মাতা-রাশিদা বেগম, সাং + কালিকাপুর, থানা-মতলব, জেলা-চাঁদপুর এর সহিত ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক দেন মোহরানা বাবদ মং-১,০০,০০০/= (এক লক্ষ) টাকা ধার্য্য করিয়া এবং ৫০,০০০/= (পঞ্চাশ হাজার) টাকা পরিশোধ করিয়া বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হই।

০৩। বিবাহের পর হইতে তাহার সহিত আমার মত ও মনের অমিল দেখা দেয় ও কোন প্রকার বনি বনাত হইতেছে না। সে আমাকে না বলে কারণে অকারণে পিত্রালয়ে চলে যায়। সে আমাকে স্বামী হিসেবে মূল্যায়ন করে না। নিজের ইচ্ছামত চলাফেরা করে। সে আমার প্রতিও কোন প্রকার ভাল আচরণ করেন না। যা শরীয়তের পরিপন্থী। এমতাবস্থায় আমি আমার ভবিষ্যতের কথা চিন্তা ভাবনা করিয়া উক্ত স্ত্রীকে তালাক প্রদান করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি।

০৪। সে মতে অদ্য স্থানীয় স্বাক্ষীগণের সম্মুকখে উপস্থিত হইয়া উক্ত স্ত্রীকে ১/২/৩/ “তালাকে বায়েন” দিয়া বিবাহ বন্ধন চিরতরে ছিন্ন করিলাম। যাহা মাননীয় নোটারী পাবলিকের কার্যালয়ে উপস্থিত হইয়া ঘোষণা করিলাম।

০৫। অদ্য হইতে সে আমার স্ত্রী নহে এবং আমি তাহার স্বামী নই। ভবিষ্যতে সে যদি আমাকে স্বামী হিসাবে দাবী করে তবে তাহা সর্ব আদালতে অগ্রাহ্য/বাতিল বলিয়া গণ্য হইবে।

০৬। আমার উপরোক্ত সিদ্ধান্তের ব্যাপারে আমাকে কেহ কোন প্রকার চাপ বা জোর জবরদস্তি করে নাই। আমি স্বেচ্ছায় উক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিয়াছি। অত্র হলফনামা কাজী অফিসে রেজিষ্ট্রি করিয়া নেওয়ার পর কার্যকরী হইবে।

এতদ্বার্থে স্বেচ্ছায়, স্বজ্ঞানে, সুস্থ মস্তিস্কে, অন্যের বিনা প্ররোচনায় অত্র হলফনামা পড়িয়া, বুঝিয়া, শুনিয়া ও মর্ম অবগত হইয়া মাননীয় নোটারী পাবলিক এর আদালতে উপস্থিত হইয়া নিজ নাম সহি সম্পাদন করিলাম।

তাং ০৬/০৮/২০১৮ ইং।

উল্লেখিত মাসআলাটির হুকুম জানানোর জন্য সবিনয় অনুরোধ জানাচ্ছি। আল্লাহতালা আপনার হায়াতে বরকত দান করুন।

উত্তর

بسم الله الرحمن الرحيم

উপরোক্ত বিবরণ অনুপাতে স্ত্রী তিন তালাক হয়ে স্বামীর জন্য হারাম হয়ে গেছে। এখন আর উক্ত স্ত্রীর সাথে ঘর সংসার করার কোন সুযোগই নেই।

এমতাবস্থায় যদি উক্ত স্ত্রীর তালাকের উদ্দত শেষে অন্য কোথাও বিয়ে হয়। তারপর তার সাথে সহবাসসহ ঘর সংসার করতে থাকে। তারপর উক্ত দ্বিতীয় স্বামী মারা যায় বা তালাক প্রদান করে, তাহলে ইদ্দত শেষে প্রথম স্বামী আবার নতুন করে বিয়ে করতে পারবে।

এছাড়া আর কোন উপায়ে উক্ত স্ত্রীকে প্রথম স্বামীর জন্য রাখা জায়েজ নয়।

فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا تَحِلُّ لَهُ مِن بَعْدُ حَتَّىٰ تَنكِحَ زَوْجًا غَيْرَهُ ۗ فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا أَن يَتَرَاجَعَا إِن ظَنَّا أَن يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ ۗ [٢:٢٣٠]

তারপর যদি সে স্ত্রীকে (তৃতীয়বার) তালাক দেয়া হয়, তবে সে স্ত্রী যে পর্যন্ত তাকে ছাড়া অপর কোন স্বামীর সাথে বিয়ে করে না নেবে,তার জন্য হালাল নয়। অতঃপর যদি দ্বিতীয় স্বামী তালাক দিয়ে দেয়, তাহলে তাদের উভয়ের জন্যই পরস্পরকে পুনরায় বিয়ে করাতে কোন পাপ নেই। যদি আল্লাহর হুকুম বজায় রাখার ইচ্ছা থাকে। [সূরা বাকারা-২৩০]

وقال الليث عن نافع كان ابن عمر إذا سئل عمن طلق ثلاثا قال لو طلقت مرة أو مرتين فأن النبي صلى الله عليه و سلم أمرني بهذا فإن طلقتها ثلاثا حرمت حتى تنكح زوجا غيرك

হযরত নাফে রহ. বলেন,যখন হযরত ইবনে উমর রাঃ এর কাছে ‘এক সাথে তিন তালাক দিলে ‎তিন তালাক পতিত হওয়া না হওয়া’ (রুজু‘করা যাবে কিনা) বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলো,‎তখন তিনি বলেন-“যদি তুমি এক বা দুই তালাক দিয়ে থাকো তাহলে ‘রুজু’ [তথা স্ত্রীকে বিবাহ করা ছাড়াই ফিরিয়ে আনা] করতে পার। ‎কারণ,রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে এরকম অবস্থায় ‘রুজু’ করার আদেশ দিয়েছিলেন। ‎যদি তিন তালাক দিয়ে দাও তাহলে স্ত্রী হারাম হয়ে যাবে, সে তোমাকে ছাড়া অন্য স্বামী গ্রহণ করা পর্যন্ত। {সহীহ বুখারী-২/৭৯২, ২/৮০৩}

عن مجاهد قال كنت عند ابن عباس فجاء رجل فقال إنه طلق امرأته ثلاثا. قال فسكت حتى ظننت أنه رادها إليه ثم قال ينطلق أحدكم فيركب الحموقة ثم يقول يا ابن عباس يا ابن عباس وإن الله قال (وَمَنْ يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَلْ لَهُ مَخْرَجًا) وإنك لم تتق الله فلم أجد لك مخرجا عصيت ربك وبانت منك امرأتك

অর্থ: হযরত মুজাহিদ রহঃ. বলেন,আমি ইবনে আব্বাস রাঃ-এর পাশে ছিলাম। সে সময় এক ব্যক্তি ‎এসে বলেন-‘সে তার স্ত্রীকে তিন তালাক দিয়েছে। হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ চুপ করে রইলেন। আমি ‎মনে মনে ভাবছিলাম-হয়ত তিনি তার স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনার কথা বলবেন (রুজু করার হুকুম দিবেন)। কিছুক্ষণ ‎পর ইবনে আব্বাস রা. বলেন,তোমাদের অনেকে নির্বোধের মত কাজ কর;[তিন তালাক দিয়ে দাও!] তারপর ‘ইবনে ‎আব্বাস! ইবনে আব্বাস! বলে চিৎকার করতে থাক। শুনে রাখ আল্লাহ তা‘য়ালা বাণী-“যে ‎ব্যক্তি আল্লাহ তা‘য়ালাকে ভয় করে আল্লাহ তা‘য়ালা তার জন্য পথকে খুলে দেন। তুমিতো স্বীয় রবের নাফরমানী করেছো [তিন তালাক দিয়ে]। এ কারণে তোমার স্ত্রী তোমার থেকে পৃথক হয়ে গেছে। {সুনানে আবু দাউদ-১/২৯৯, হাদীস নং-২১৯৯, সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-১৪৭২০, সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-১৪৩}

ولو استكتب من آخر كتابا بطلاقها وقرأه على الزوج، فأخذه الزوج وختمه وعنوانه وبعث به إليها، فأتاها وقع إن أقر الزوج أنه كتابه (رد المحتار-4/456)

ولو قال للكاتب: أكتب طلاق امرأتى كان إقرارا بالطلاق وإن لم يكتب (رد المحتار-4/456)

وإن كان الطلاق ثلاثا فى الحرة أو ثنتين فى الأمة لم تحل له حتى تنكح زوجا غيره نكاحا صحيحا، ويدخل بها ثم يطلقها، او يموت عنها (الهداية-2/399

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক ও প্রধান মুফতী-তা’লীমুল ইসলাম ইনস্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

ইমেইল[email protected]

0Shares

আরও জানুন

ইমামের সামনের সুতরা কি মাসবূক মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট?

প্রশ্ন ইমামের সুতরা মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট কি না? এবং ইমামের সুতরা মসবুক ব্যাক্তির জন্য যথেষ্ট …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *