প্রশ্ন
নাম- মুহাম্মাদ মাসউদ রাহান
বিষয়- শীআ কর্তৃক বর্ণিত গাদীরে খুমের হাদীসের সত্যতা।
আস্সালামু আলাইকুম অরহমাতুললাহ।
আপনার জন্য আমি অধম অনেক দোয়া করি। আশা করি আল্লাহর অশেষ রহমতে ভালো আছেন।
জনাব, আমাদের এখানে এক শীয়া মতাবলম্বী গাদীরে খুমের হাদীস মানুষকে শুনিয়ে সাহাবায়ে কেরামদের প্রতি মন্দ ধারণা তৈরির অপচেষ্টা করছে। দয়া করে যদি তাদের বর্ণিত এ হাদীসের হাকীকত টুকু একটু জানাতেন!
আল্লাহ পাক আপনাদের এলেম কালাম আরো বাড়িয়ে দিন।
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
গাদীরে খুমের মূল ঘটনা হল, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজ্জ শেষে যখন মদীনা ফিরছিলেন তখন মদীনার উপকণ্ঠে গাদীরে খুম নামক স্থানে এসে যাত্রাবিরতি করেন। তখন বুরাইদা আসলামী রাঃ নামে একজন সাহাবী হযরত আলী রাঃ এর বিষয়ে কিছু অভিযোগ নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে পেশ করেন।
এরপর নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গাদীরে খুমে একটি ভাষণ প্রদান করেন। যাতে তিনি তার মৃত্যু সন্নিকটে হবার ইশারা করেন এবং কুরআন ও সুন্নাহকে আকড়ে ধরার তাকীদ করেন।
সেই সাথে আহলে বাইতের সদস্যদের প্রতি ভালোবাসা মোহাব্বতের প্রতি গুরুত্বারোপ করেন। হযরত আলী রাঃ বিষয়ে ইরশাদ করেন যে, আমি যাদের বন্ধু, আলীও তাদের বন্ধু।
উক্ত ভাষণের মাধ্যমে আহলে বাইতের প্রতি সকলের মোহাব্বতের সম্পর্ক রাখার তাকীদ করা হয়েছে। এর দ্বারা বুরাইদা আসলামী রাঃ এর মন থেকে হযরত আলী রাঃ এর প্রতি যে ধারণা ছিল তা দূরিভূত হয়ে যায়।
ব্যাস এতটুকুই। উক্ত খুতবার কোথাও নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পর হযরত আলী রাঃ কে খলীফা নিযুক্ত করতে হবে এমন কোন কথা নেই। শুধু মোহাব্বতের তাকীদ করা হয়েছে। আর মোহাব্বত কখনোই নেতৃত্বের হকদার হবার মানদণ্ড নয়।
মোহাব্বততো মা বাবাকেও করতে হয়। মোহাব্বত স্ত্রী সন্তানকেও করতে হয়। কিন্তু এর মানে কি এ মোহাব্বত নেতৃত্বের গুণ?
যদি শুধু নবী পরিবারের সদস্য হওয়া এবং অধিক মোহাব্বতই নেতৃত্ব পাবার যোগ্যতা হয়, তাহলে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পর হযরত ফাতিমা রাঃ প্রথম খলীফা হবার প্রথম হকদার। তারপর হযরত হাসান রাঃ, তারপর হযরত হুসাইন রাঃ, তারপর হযরত আলী রাঃ।
শিয়া সম্প্রদায়ের মূলনীতি অনুপাতে নবী পরিবারের সদস্য হওয়া এবং মোহাব্বতই খলীফা হবার মানদণ্ড হলেও হযরত আলী রাঃ চতুর্থ খলীফা। তাহলে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের অনুসারীগণ হযরত আলী রাঃ কে চতুর্থ খলীফা নিযুক্ত করা অপরাধ মনে করা হয় কেন?
গাদীরে খুমের ঘটনাকে হযরত আলী রাঃ এর প্রথম খলীফা হবার দলীল হিসেবে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে, এবং সাহাবায়ে কেরামের যুগে কেউ পেশ করেনি। এমন কি আহলে বাইতের কোন সদস্য গাদীরে খুমের ভাষণকে খলীফা হবার দলীল হিসেবে কখনোই পেশ করেননি।
এটা পরবর্তী যুগের কট্টরপন্থী শিয়াদের উর্বর মস্তিস্কের ফসল।
এমন কি নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইন্তেকালের পর যখন সাকীফায়ে বনী সা’আদে খিলাফত বিষয়ে মাশোয়ারা হচ্ছিল। তখন গাদীরে খুমে উপস্থিত সাহাবাগণও ছিলেন। ছিলেন আহলে বাইতের সদস্যগণও। কিন্তু কেউ গাদীরে খুমের ভাষণকে খিলাফতের দলীল হিসেবে উপস্থাপন করেননি।
এর মানে গাদীরে খুমের ঘটনাটি কেবলি আহলে বাইতের প্রতি একটি মোহাব্বতের তাগীদ ছাড়া অন্য কিছু ছিল না। যা যেমন সকল সাহাবাগণ জানতেন, তেমনি আহলে বাইতের সদস্যগণও জানতেন। তাই এ বিষয়কে সামনে কেউ আনেননি। [সীরাতে মুস্তাফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-৩/১৪৯-১৫১, ইদ্রিস কান্ধলবী রহঃ কৃত]
বিস্তারিত জানতে হলে পড়ুন- মাওলানা মুহাম্মদ নাফে সংকলিত ‘হাদীসে ছাকালাইন’।
সুতরাং গাদীরে খুমের ভাষণকে সামনে এনে সাহাবায়ে কেরামগণের সমালোচনা করা অজ্ঞতা ও কথা সত্য মতলব খারাপ ছাড়া কিছু নয়।
আল্লাহ তাআলা আমাদের শিয়াদের মিথ্যাচার থেকে হিফাযত করুন। আমীন।
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক ও প্রধান মুফতী – মা’হাদুত তালীম ওয়াল বুহুসিল ইসলামী ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম আমীনবাজার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া ফারূকিয়া দক্ষিণ বনশ্রী ঢাকা।