লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
নারী হোক বা পুরুষ। ধনী হোক বা গরীব। প্রতিটি মানুষেরই মৌলিক প্রয়োজন হল ইলম শিক্ষা করা। ইলম মানুষকে অন্য প্রাণী থেকে আলাদা হতে শেখায়। জমিনের মানবকে আসমানের উচ্চতায় পৌঁছে দেয়। ইলমের কারণেই মাটির মানুষ নূরের ফেরেশতার সেজদা দ্বারা সম্মানিত হয়েছে।
ইমাম গাযালী রহঃ লিখেছেনঃ
لأن الخاصية التي يتميز بها الناس عن سائر البهائم هو العلم فالإنسان إنسان بما هو شريف لأجله وليس ذلك بقوة شخصه فإن الجمل أقوى منه ولا بعظمه فإن الفيل أعظم منه ولا بشجاعته فإن السبع أشجع منه ولا بأكله فإن الثور أوسع بطناً منه ولا ليجامع فإن أخس العصافير أقوى على السفاد منه بل لم يخلق إلا للعلم وقال بعض العلماء ليت شعري أي شيء أدرك من فاته العلم وأي شيء فاته من أدرك العلم………فَإِنَّ غِذَاءَ الْقَلْبِ الْعِلْمُ وَالْحِكْمَةُ وَبِهِمَا حَيَاتُهُ كَمَا أَنَّ غِذَاءَ الْجَسَدِ الطَّعَامُ وَمَنْ فَقَدَ الْعِلْمَ فَقَلْبُهُ مَرِيضٌ وَمَوْتُهُ لَازِمٌ
যে বৈশিষ্ট্য মানুষ ও চুতষ্পদ জন্তুর মধ্যে পার্থক্য সূচিত করে, তা হচ্ছে জ্ঞান। মানুষ তখনই মানুষ বলে কথিত হবে যখন তার মধ্যে গৌরব ও শ্রেষ্ঠত্বের কারণ দিব্যমান থাকবে। মানুষের মর্যাদা দৈহিক শক্তির কারণে নয়। কেননা, উট তার চেয়ে বেশি শক্তির অধিকারী। মানুষের মর্যাদা বিশাল বপু হওয়ার কারণেও নয়, কেননা হাতীর বপু তার চেয়ে অনেক বিশাল। তেমনি বীরত্বের কারণেও নয়। কেননা, হিংস্র জন্তুর বীরত্ব মানুষের চেয়ে বড়। বরং একমাত্র জ্ঞানের দিক দিয়েই মানুষ সম্ভ্রান্ত। জ্ঞানের জন্যই মানুষ সৃষ্টি। জনৈক দার্শনিক বলেন, কেউ আমাকে বলুক, যে ব্যক্তি এলেম পায়নি, সে কি পেয়েছে এবং যে ব্যক্তি ইলম পেয়েছে, তার পাওয়ার আর কি বাকী আছে? ….. জ্ঞান ও প্রজ্ঞা হচ্ছে আত্মার খোরাক। এগুলোর মাধ্যমেই তার জীবন। যেমন দেহের খোরাক খাদ্য। যার জ্ঞান নেই, তার অন্তর রুগ্ন। মৃত্যু তার জন্য অবশ্যম্ভাবী। [ইহয়ায়ে উলুমিদ্দীন-১/৭, বাংলা অনুবাদ-১/২১]
ইলমের গুরুত্ব, তার পঠন ও পাঠনের প্রয়োজনীয়তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ইলমই মানুষের দুনিয়া ও আখেরাতের উন্নতি ও উৎকর্ষতার চাবিকাঠি।
এ কারণেই ইসলাম জ্ঞান শিক্ষা করাকে আলাদা গুরুত্ব প্রদান করেছে। প্রতিটি নর নারীর উপর প্রয়োজনীয় জ্ঞান শিক্ষা করাকে ফরজ বলে ঘোষণা করেছে। এক্ষেত্রে ইসলাম বাকি সকল ধর্মের উপর স্বাতন্ত্রতার স্বাক্ষর রেখেছে।
ইসলামের দৃষ্টিতে জ্ঞান ও জ্ঞান চর্চা
ইসলামই পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম ও সর্বশেষ ধর্ম, যা অজ্ঞতার অন্ধকারে ইলমের বাতি প্রজ্বলিত করেছে। ইলম ও আহলে ইলমকে সম্মানিত করেছে। ইলমের হাকীকত বিষয়ে জাতিকে পথনির্দেশনা দিয়েছে। ইলমের সম্পর্ক আল্লামুল গয়ূবের সাথে করে দিয়েছে। ইলমকে কারো জন্য স্বতন্ত্র না করে প্রতিটি মানুষের জন্য ইলম শিক্ষা করাকে আবশ্যকীয় করে ইলমকে অনন্য উচ্চতায় সমাসিন করেছে।
ইসলামে শুধুমাত্র আকীদা ও ইবাদতের ইলম অর্জনকেই ইলম বলে সংকোচিত করেনি, বরং এটি একটি সর্বব্যাপী বিষয় হিসেবে উপস্থাপন করেছে। তবে কুরআনী দৃষ্টিকোণ থেকে ইলম অর্জনের পদ্ধতি এভাবে প্রতিভাত করা হয়েছে যে, সৃষ্টিজগতের বিস্তৃত কিতাব এমনভাবে আত্মস্ত করতে হবে যে, যার মাধ্যমে মহান স্রষ্টার পরিচয় পর্যন্ত মানুষ পৌঁছতে পারে। আসমান, জমিন, চাঁদ, সূর্য, গ্রহ নক্ষত্র, দিন রাত, গরম শীত, বাতাস তুফান, জল স্থল, জড়পদার্থ, পাথর মাটি, ফল ফুল, গাছ পালা, নদী নালা, জন্তু জানোয়ার, সরিসৃপ প্রাণীকূল, জিন ইনসান। মোটকথা কুরআন এমন কোন বস্তু নেই যা নিয়ে গবেষণা চর্চা করতে নিষেধ করেছে।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেনঃ
أَلَمْ تَرَ أَنَّ اللَّهَ أَنزَلَ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً فَأَخْرَجْنَا بِهِ ثَمَرَاتٍ مُّخْتَلِفًا أَلْوَانُهَا ۚ وَمِنَ الْجِبَالِ جُدَدٌ بِيضٌ وَحُمْرٌ مُّخْتَلِفٌ أَلْوَانُهَا وَغَرَابِيبُ سُودٌ [٣٥:٢٧] وَمِنَ النَّاسِ وَالدَّوَابِّ وَالْأَنْعَامِ مُخْتَلِفٌ أَلْوَانُهُ كَذَٰلِكَ ۗ إِنَّمَا يَخْشَى اللَّهَ مِنْ عِبَادِهِ الْعُلَمَاءُ ۗ إِنَّ اللَّهَ عَزِيزٌ غَفُورٌ [٣٥:٢٨]
তুমি কি দেখনি আল্লাহ আকাশ থেকে বৃষ্টিবর্ষণ করেন, অতঃপর তদ্বারা আমি বিভিন্ন বর্ণের ফল-মূল উদগত করি। পর্বতসমূহের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন বর্ণের গিরিপথ-সাদা, লাল ও নিকষ কালো কৃষ্ণ।
অনুরূপ ভাবে বিভিন্ন বর্ণের মানুষ, জন্তু, চতুস্পদ প্রাণী রয়েছে। আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে জ্ঞানীরাই কেবল তাঁকে ভয় করে। নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী ক্ষমাময়। [সূরা ফাতির-২৭-২৮]
এ আয়াতে কারীমা দ্বারা স্পষ্টই বুঝা যাচ্ছে যে, রব্বে কারীমের সুবিশাল সৃষ্টি জগতের বৈচিত্রময় সৃষ্টি নৈপূণ্য দেখে আল্লাহ তাআলার পরিচয় পাওয়া, তার সামনে নিজেকে সঁপে দেয়া, তার ইবাদতে গুণকীর্তনে মগ্ন হওয়াই প্রকৃত ইলম। যারা এমন ইলমের অধিকারী হবেন তারাই আলেম। আর যারা রব্বে কারীমের পরিচয় পেয়ে তার বশ্যতা স্বীকার করবে না, তারা প্রকৃত আলেম হতে পারে না।
এ বিষয়ে আরো স্পষ্ট শব্দে অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছেঃ
إِنَّ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَاخْتِلَافِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ لَآيَاتٍ لِّأُولِي الْأَلْبَابِ [٣:١٩٠] الَّذِينَ يَذْكُرُونَ اللَّهَ قِيَامًا وَقُعُودًا وَعَلَىٰ جُنُوبِهِمْ وَيَتَفَكَّرُونَ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ رَبَّنَا مَا خَلَقْتَ هَٰذَا بَاطِلًا سُبْحَانَكَ فَقِنَا عَذَابَ النَّارِ [٣:١٩١]
নিশ্চয় আসমান ও যমীন সৃষ্টিতে এবং রাত্রি ও দিনের আবর্তনে নিদর্শন রয়েছে বোধ সম্পন্ন লোকদের জন্যে।
যাঁরা দাঁড়িয়ে, বসে, ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে এবং চিন্তা গবেষণা করে আসমান ও জমিন সৃষ্টির বিষযে, (তারা বলে) পরওয়ারদেগার! এসব তুমি অনর্থক সৃষ্টি করনি। সকল পবিত্রতা তোমারই, আমাদিগকে তুমি দোযখের শাস্তি থেকে বাঁচাও। [সূরা আলেইমরান-১৯০-১৯১]
সুতরাং বুঝা গেল, বোধসম্পন্ন জ্ঞানী তারাই যারা সৃষ্টিকূল থেকে রব্বে কারীমের পরিচয় পেয়েছে। তার সামনে সেজদায় অবনত হয়েছে। এছাড়া অন্য ব্যক্তিরা বাহ্যিক জ্ঞানী হলেও প্রকৃত জ্ঞানী বা ইলমধারী নয়।
ইলমে ওয়াহীর এ মহান জ্ঞান শিক্ষার প্রতি দাওয়াত দিয়ে অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছেঃ-
اقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِي خَلَقَ، خَلَقَ الْإِنسَانَ مِنْ عَلَقٍ، اقْرَأْ وَرَبُّكَ الْأَكْرَمُ، الَّذِي عَلَّمَ بِالْقَلَمِ، عَلَّمَ الْإِنسَانَ مَا لَمْ يَعْلَمْ [٩٦:٥]
পাঠ করুন আপনার পালনকর্তার নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্ত থেকে। পাঠ করুন, আপনার পালনকর্তা মহা দয়ালু, যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন, শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না। [সূরা আলাক-১-৫] দুনিয়ার সমস্ত দার্শনিকদের দর্শনের বিপরীতে এটাই ইসলামের স্বতন্ত্র শান ও মর্যাদা যে, ইসলাম জ্ঞান বিজ্ঞান শিক্ষাকে প্রকৃত উৎসমূল রব্বে কায়েনাতের সাথে জুড়ে দিয়েছে।
পৃথিবী সাক্ষী। জুলুমের ষ্টিমরোলার চলছিল তখন। আঁধারে ছেয়ে ছিল ধরিত্রী। শান্তির ক্ষীনালো পর্যন্ত জ্বলছি না কোথাও। নিকষ কৃষ্ণাধারে নিমজ্জিত সব। ক্ষণে ক্ষণে ভেসে আসতো জালিমের চাবুকের গর্জন। মজলুমের হাহাকার ধ্বনি। নিষ্পাপ চাঁদমুখী নবজাতক কন্যা-সন্তান গগনবিদারী আর্তনাদে জীবন্ত প্রোথিত হতো প্রায়ই। যার পায়ের নিচে জান্নাত সে মায়ের জাতি ছিল দাস-দাসির মত নিপেড়িত-নিষ্পেষিত। জুলুম, নিপিড়ণ, অনাচার আর অত্যাচারের এক অভয়রাণ্য ছিল গোটা ধরাধাম। খানিক শান্তি আর মুক্তির আশায় প্রহর গুণছিল মানবতা।
ঠিক এমনি সময়। দীগন্ত প্রসারী আলো নিয়ে। হেদায়াতের বার্তা নিয়ে। ইলমে ওয়াহীর দীপ্যমান শিখা হাতে দৃঢ়পদে দাঁড়িয়ে গেলেন গোটা সৃষ্টিজগতের রহমাতের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
রব্বে কারীমের সেই ঐশী বিকার্ণালোয় আলোকিত হতে থাকে মনোজগত। দূর হতে থাকে অজ্ঞতার কালিমা। তখন হিং¯্র মানব পশুগুলো ফিরে পায় তার মানব স্বভাব। গ্রহণ করে আখলাক ও চরিত্র মাধুরিমার উত্তম সবক। বকরীর রাখালগুলো হয়ে যায় আলোকিত রাহবার। অবাক দৃষ্টিতে পৃথিবী দেখে নববী ইলমের ধারকদের বিস্ময়কর পরিবর্তন। অজ্ঞতা আর মুর্খতার অন্ধকার গলি থেকে মানুষ উঠে আসতে থাকে জ্ঞান বিজ্ঞানের দীপ্যমান রাজপথে।
দীপ্ত কণ্ঠে ঘোষিত হয় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালামের বাণীঃ-
عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ أَبِي بَكْرَةَ، عَنْ أَبِيهِ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ” اغْدُ عَالِمًا أَوْ مُتَعَلِّمًا أَوْ مُسْتَمِعًا أَوْ مُحِبًّا، وَلَا تَكُنِ الْخَامِسَةَ فَتَهْلِكَ “
হযরত আব্দুর রহমান বিন আবী বাকরার পিতার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আলেম হও, নতুবা ছাত্র হও, নতুবা আলেমের অনুসারী শ্রোতা হও, অথবা আলেমকে মোহাব্বতকারী হও, কিন্তু পঞ্চম ব্যক্তি হয়ো না, তাহলে ধ্বংস হয়ে যাবে। [শুয়াবুল ঈমান লিলবায়হাকী, হাদীস নং-১৫৮১, মাযমাউয যাওয়ায়েদ, হাদীস নং-৪৯৫, আলমু’জামুল আওসাত, হাদীস নং-৫১৭১]
ইলম অর্জনের ফযীলত ও উদ্দেশ্য
ইসলাম ইলম ও ইলম অন্বেষীদের যে উঁচু মর্যাদায় উন্নীত করেছে তা সত্যিই অভাবনীয়। অসংখ্য হাদীসে এ সংক্রান্ত ফযীলত উদ্ধৃত হয়েছে। যেমনঃ-
رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: مَنْ سَلَكَ طَرِيقًا يَطْلُبُ فِيهِ عِلْمًا سَلَكَ اللَّهُ بِهِ طَرِيقًا مِنْ طُرُقِ الْجَنَّةِ، وَإِنَّ الْمَلَائِكَةَ لَتَضَعُ أَجْنِحَتَهَا رِضًا لِطَالِبِ الْعِلْمِ، وَإِنَّ الْعَالِمَ لَيَسْتَغْفِرُ لَهُ مَنْ فِي السَّمَوَاتِ، وَمَنْ فِي الْأَرْضِ، وَالْحِيتَانُ فِي جَوْفِ الْمَاءِ، وَإِنَّ فَضْلَ الْعَالِمِ عَلَى الْعَابِدِ، كَفَضْلِ الْقَمَرِ لَيْلَةَ الْبَدْرِ عَلَى سَائِرِ الْكَوَاكِبِ، وَإِنَّ الْعُلَمَاءَ وَرَثَةُ الْأَنْبِيَاءِ، وَإِنَّ الْأَنْبِيَاءَ لَمْ يُوَرِّثُوا دِينَارًا، وَلَا دِرْهَمًا وَرَّثُوا الْعِلْمَ، فَمَنْ أَخَذَهُ أَخَذَ بِحَظٍّ وَافِرٍ
হযরত আবু দারদা রাঃ বলেন, আমি রাসূল সাঃ কে ইরশাদ করতে শুনেছি যে, যে ব্যক্তি ইলমে দ্বীন হাসিল করার উদ্দেশ্যে কোন রাস্তায় চলে আল্লাহ তাআলা এ কারণে তাকে জান্নাতের রাস্তাসমূহ থেকে এক রাস্তায় চালিয়ে দেন। [অর্থাৎ ইলম হাসিল করা তার জন্য জান্নাতে প্রবেশের কারণ হয়ে যায়] ফেরেশতাগণ তালেবে ইলমের সন্তুষ্টির জন্য আপন পাখা বিছিয়ে দেন। আরামের জন্য আসমান জমিনের সমস্ত মাখলুক এবং মাছ যা পানিতে রয়েছে সকলেই মাগফিরাতের দুআ করে। নিঃসন্দেহে আবেদের উপর আলেমের ফযীলত এরূপ যেরূপ পূর্ণিমার চাঁদের ফযীলত সমস্ত তারকারাজির উপর। নিঃসন্দেহে উলামায়ে কেরাম আম্বিয়া আলাইহিস সালামের উত্তরাধিকারী। আর আম্বিয়াগণ দিনার ও দিরহাম এর উত্তারাধিকারী বানান না। তারাতো ইলমের উত্তরাধিকারী বানান। অতএব যে ব্যক্তি ইলমে দ্বীন হাসিল করল, সে পরিপূর্ণ অংশ লাভ করল। [সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৩৬৪১, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২১৭১৫, মুসনাদুশ শামীন, হাদীস নং-১২৩১, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৮৮]
আরেক হাদীসে ইরশাদ হয়েছেঃ-
أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ يَقُولُ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” إِنَّ مَثَلَ الْعُلَمَاءِ فِي الْأَرْضِ، كَمَثَلِ النُّجُومِ فِي السَّمَاءِ، يُهْتَدَى بِهَا فِي ظُلُمَاتِ الْبَرِّ وَالْبَحْرِ، فَإِذَا انْطَمَسَتِ النُّجُومُ، أَوْشَكَ أَنْ تَضِلَّ الْهُدَاةُ “
হযরত আনাস বিন মালিক রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, নিশ্চয় জমিনে উলামায়ে কেরামের উপমা হল, আসমানের তারকারাজীর মত। জলে ও স্থলের অন্ধকারে তা দিয়ে সঠিক পথ নির্ণিত হয়, আর যখন তা হারিয়ে যায়, তখন পথচারী পথচ্যুৎ হয়। [মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১২৬০০, মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-৩৫১৭৮, মাযমাউয যাওয়ায়েদ, হাদীস নং-৪৮৯]
ইসলাম শুধু ইলম অর্জন ও অর্জনকারীর ফযীলতই বর্ণনা করেনি, বরং ইলম দ্বারা কোন ইলম উদ্দেশ্য তাও নির্দিষ্ট করে দিয়েছে।
যে ইলম মানুষের দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণকর, শুধু সেই ইলম শিক্ষাই ফযীলতপূর্ণ। অপ্রয়োজনীয় ও অহেতুক ইলম শিক্ষা করা থেকে নিজেকে বিরত রাখার তাগিদও ইসলাম প্রদান করেছে। যেমন নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুআ করতেন, হে আল্লাহ ! আমি তোমার কাছে উপকারহীন ইলম অর্জন থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করি। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-২৭২২, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-২৫০]
কতটুকু ইলম শিক্ষা করা ফরজ?
হাদীসে এসেছে যে, প্রতিটি মুসলিম নরনারীর উপর ইলম শিক্ষ করা ফরজ। [সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-২২৪, মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-৬৭৪৬]
ফরজ ইলম আবার দুই প্রকার। ফরজে আইন ও ফরজে কিফায়া।
ক) ফরজে আইন
ফরজে আইন বিষয়ে শায়েখ তক্বীউদ্দীন আবুল বাক্বা মুহাম্মদ বিন আহমাদ বিন আব্দুল আজীজ বিন আলী ফতূহী হাম্বলী ইবনে নাজ্জার (মৃত্যু ৯৭২ হিজরী) বলেন,
سمى فرض عين، لأن خطاب الشارع يتوجه إلى كل مكلف بعينه، ولا تبرأ ذمة المكلف منه إلا بأدائه بنفسه (شرح الكوكب المنير-1/274)
অর্থাৎ ফরজে আইন এজন্য বলা হয় যে, কেননা, শরীয়তদাতার নির্দেশ প্রতিটি মুকাল্লাফ (মুসলিম, বালেগ, বোধসম্পন্ন) ব্যক্তিকে শামিল করে, নিজে উক্ত কাজটি আদায় করা ছাড়া মুকাল্লাফ ব্যক্তি দায়িত্বমুক্ত হয় না। [শরহুল কাউকাবুল মুনীর-১/২৭৪]
ইসলামের মাঝে ফরজ হল, বান্দার দ্বীন পালন, আমলের ইখলাস এবং পারস্পরিক লেনদেন এর ক্ষেত্রে যার মুখাপেক্ষি সেই বিষয়ক ইলম অর্জন করা।
প্রতিটি আকেল বালেগ নরনারীর উপর জরুরী দ্বীনী ইলম শিক্ষা গ্রহণ করা ফরজ। এর মাঝে রয়েছে অজু গোসল, নামায রোযার ইলম। যার নেসাব পরিমাণ মাল আছে, তার জন্য যাকাতের ইলম শিক্ষা করাও ফরজ। যার উপর হজ্জ ফরজ তার হজ্বের বিধানাবলী জানাও ফরজ। ব্যবসায়ীর জন্য ব্যবসা সংক্রান্ত জ্ঞান অর্জন করা ফরজ। যেন লেনদেনে নিষিদ্ধ ও হারাম বিষয় থেকে বেঁচে থাকতে পারে। এমনিভাবে প্রতিটি পেশাজীবির জন্য তার পেশা সংক্রান্ত শরয়ী ইলম শিক্ষা করা ফরজ।
ইসলামের মৌলিক ৫ স্তম্ভের ইলম অর্জন করা, ইখলাস সংক্রান্ত ইলম অর্জন করাও ফরজ। কারণ, ইখলাসের উপর আমল কবুল হওয়া নির্ভরশীল। হালাল ও হারাম সংক্রান্ত ইলম, লৌকিকতা তথা রিয়া সম্পর্কে জানাও জরুরী। কারণ, রিয়ার কারণে মানুষ আমলের সওয়াব থেকে বঞ্চিত হয়। হিংসা ও অহংকার সংক্রান্ত বিধিবিধান জানাও আবশ্যক। কারণ, এ দু’টি আমলকে ধ্বংস করে দেয়, যেমন আগুন কাষ্ঠখণ্ড পুড়িয়ে দেয়।
যে ব্যক্তি ক্রয় বিক্রয় বা বিবাহ শাদী করতে চায়, তার জন্য ক্রয়বিক্রয় ও বিবাহ সংক্রান্ত হুকুম জানাও ফরজ।
হারাম ও কুফরী বাক্যাবলী সম্পর্কিত ইলম থাকাও ফরজ।
ইমাম ইবনে আবেদীন শামী রহঃ বলেন, আমার জীবনের কসম! হারাম ও কুফরী বাক্য সম্পর্কিত ইলমটা বর্তমান সময়ের জন্য সবচে’ বেশি জরুরী। কারণ হল, অধিকাংশ আম মানুষ কুফরী কথা বলে তাদের অজ্ঞাতেই। একারণেই জাহিল লোকদের জন্য প্রতিদিন তার ঈমানকে নবায়ন করা উচিত। আর দুইজন সাক্ষীর সামনে প্রতি এক দুই মাস অন্তর অন্তর বিবাহ দোহরিয়ে নেয়া উচিত।
এমন কুফরী বক্তব্য পুরুষদের থেকে কম হলেও নারীদের থেকে অনেক হয়ে থাকে। [শামী-১/১২৬]
ইমাম গাযালী রহঃ বলেন,
তিন প্রকার ইলম শিক্ষা করা ফরজ। যথা, ইলমুত তাওহীদ, ইলমুসি সির, এবং ইলমুশ শরীয়াহ।
এতটকু জ্ঞান রাখা তওহীদ সম্পর্কে যা দ্বীনের মূলের অন্তর্ভূক্ত। আল্লাহ তাআলা সম্পর্কে এ জ্ঞান রাখা যে, তিনি জীবিত, সকল কিছুর উপর ক্ষমতাশালী, সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী, তার কোন শরীক নেই, সকল গুণে গুণান্বিত, মাখলুকের সিফাত থেকে পবিত্র। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তাআলার বান্দা এবং রাসূল। আল্লাহর পক্ষ থেকে মনোনিত, তিনি অহীর ব্যাপারে সত্যবাদী ইত্যাদি।
ইলমুস সির বলতে, অন্তরকে নিষিদ্ধ বিষয় থেকে পবিত্র করা এবং কাম্য বস্তু দিয়ে ভরপুর করা। ইখলাস, নিয়ত, আমলের হিফাযত ইত্যাদি।
আর ইলমুশ শরীয়ত বলতে উদ্দেশ্য হল, ব্যক্তির জন্য যা কিছু আদায় করা ফরজ সে সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করাও ফরজ। [মিনহাজুল আবেদীন ইলা জান্নাতি রাব্বিল আলামীন, ইমাম গাযালীকৃত-৪৮-৪৯]
খ) ফরজে কেফায়া
শায়েখ ইবনে নাজ্জারের মতে, ফরজে কেফায়া বলা হয়ঃ
سمي فرض كفاية لأن قيام بعض المكلفين به يكفي للوصول إلى مقصد الشارع في وجود الفعل، ويكفي في سقوط الإثم عن الباقين، مع كونه واجباً على الجميع
ফরজে কেফায়া নামকরণ করা হয়েছে, কারণ হল, কিছু মুকাল্লাফের আদায় করার দ্বারা শরীয়তপ্রদানকারীর উদ্দেশ্য হাসিল হয়ে যায়, বাকিরা আদায় না করার গোনাহ থেকে রক্ষা পায়। যদিও সবার উপর বিষয়টি আবশ্যক ছিল। [শরহুল কাউকাবুল মুনীর-১/২৭৪]
শরহু তাহরীরে এসেছেঃ الْمُتَحَتِّمِ الْمَقْصُودُ حُصُولُهُ مِنْ غَيْرِ نَظَرٍ بِالذَّاتِ إلَى فَاعِلِهِ তথা ঐ আবশ্যকীয় বিষয়, যা ব্যক্তি বিশেষকে নির্ধারিত করা ছাড়া অর্জিত হওয়া উদ্দেশ্য হয়।
এটা দ্বীনী হতে পারে, যেমন জানাযার নামায। আবার দুনিয়াবী হতে পারে, যেমন প্রয়োজনীয় নির্মাণ সংক্রান্ত জ্ঞান।
ঐশী ইলমের ধারাসমূহ
মানব সভ্যতার উৎকর্ষ সাধণে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে উপকারী ইলম শিক্ষা প্রদান করেছেন। তার মৌলিক ধারা বা বিষয় ছিল ৪টি। যথা- ১) কুরআন তিলাওয়াত। ২) আত্মিক পরিশুদ্ধায়ন। ৩) কুরআনের শিক্ষা প্রদান। ৪) হিকমত শিক্ষা।
কুরআনে কারীমে ইরশাদ হচ্ছেঃ-
هُوَ الَّذِي بَعَثَ فِي الْأُمِّيِّينَ رَسُولًا مِّنْهُمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِهِ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَإِن كَانُوا مِن قَبْلُ لَفِي ضَلَالٍ مُّبِينٍ [٦٢:٢
তিনিই নিরক্ষরদের মধ্য থেকে একজন রসূল প্রেরণ করেছেন, যিনি তাদের কাছে পাঠ করেন তার আয়াতসমূহ, তাদেরকে পবিত্র করেন এবং শিক্ষা দেন কিতাব ও হিকমত। ইতিপূর্বে তারা ছিল ঘোর পথভ্রষ্টতায় লিপ্ত। [সূরা জুমআ-২]
অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছেঃ-
لَقَدْ مَنَّ اللَّهُ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ إِذْ بَعَثَ فِيهِمْ رَسُولًا مِّنْ أَنفُسِهِمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِهِ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَإِن كَانُوا مِن قَبْلُ لَفِي ضَلَالٍ مُّبِينٍ [٣:١٦٤]
আল্লাহ ঈমানদারদের উপর অনুগ্রহ করেছেন যে, তাদের মাঝে তাদের নিজেদের মধ্য থেকে নবী পাঠিয়েছেন। তিনি তাদের জন্য তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করেন। তাদেরকে পরিশোধন করেন এবং তাদেরকে কিতাব ও কাজের কথা শিক্ষা দেন। বস্তুতঃ তারা ছিল পূর্ব থেকেই পথভ্রষ্ট। [সূরা আলেইমরান-১৬৪]
নববী যুগে ইলমী প্রতিষ্ঠান
নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় অবস্থানকালে দারুল আরকামে এবং মদীনায় হিজরতের পর মসজিদে নববীর আসহাবে সুফফাদের মজলিসই ছিল ইসলামের জ্ঞান শিক্ষার মাদরাসা কাঠামোর প্রাথমিক রূপ।
ইলম বিলুপ্তির পরিণতি
ইলমহীন মানুষ মৃত। ইলমওয়ালা ব্যক্তি জীবিত। যেমন মৃত মানুষের শরীরে প্রাণ নেই বলে, তাকে যেদিকে ইচ্ছে নিয়ে যাওয়া যায়, যেদিকে ইচ্ছে কাৎ করা যায়। তেমনি ইলমহীন ব্যক্তিকে শয়তান যেদিকে ইচ্ছে ধাবিত করে। তাকে শয়তান নিজের খেলনার বস্তুতে পরিণত করে। পক্ষান্তরে ইলমধারী ব্যক্তিকে শয়তান ভয় পায়। তাকে পথভ্রষ্ট করা শয়তানের পক্ষ এতোটা সহজ নয়।
এ কারণেই ইলমের বিলুপ্তি সামগ্রিক অধঃপতনের কারণ হয়। হাদীসে ইলমের বিলুপ্তি বিষয়ে জোরদার সতর্ক করা হয়েছে। যেমন-
ক) ইলমের বিলুপ্তি ভ্রষ্টতার কারণঃ-
عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ، قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ “ إِنَّ اللَّهَ لاَ يَقْبِضُ الْعِلْمَ انْتِزَاعًا، يَنْتَزِعُهُ مِنَ الْعِبَادِ، وَلَكِنْ يَقْبِضُ الْعِلْمَ بِقَبْضِ الْعُلَمَاءِ، حَتَّى إِذَا لَمْ يُبْقِ عَالِمًا، اتَّخَذَ النَّاسُ رُءُوسًا جُهَّالاً فَسُئِلُوا، فَأَفْتَوْا بِغَيْرِ عِلْمٍ، فَضَلُّوا وَأَضَلُّوا ”.
আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনুল ‘আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, আল্লাহ্ তা‘আলা বান্দার অন্তর থেকে ইল্ম বের করে উঠিয়ে নেবেন না; বরং আলিমদের উঠিয়ে নেওয়ার মাধ্যমেই ইল্ম উঠিয়ে নেবেন। যখন কোন আলিম বাকী থাকবে না তখন লোকেরা জাহিলদেরই নেতা হিসেবে গ্রহণ করবে। তাদের জিজ্ঞাসা করা হবে, তারা না জেনেই ফতোয়া দিবে। ফলে তারা নিজেরাও গোমরাহ হবে, আর অপরকেও গোমরাহ করবে। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১০১]
খ) ইলমের বিলুপ্তি কিয়ামতের আলামতঃ-
أَنَسٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم “ إِنَّ مِنْ أَشْرَاطِ السَّاعَةِ أَنْ يُرْفَعَ الْعِلْمُ، وَيَثْبُتَ الْجَهْلُ، وَيُشْرَبَ الْخَمْرُ، وَيَظْهَرَ الزِّنَا ”.
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, কিয়ামতের কিছু নিদর্শন হলঃ ইলম লোপ পাবে, অজ্ঞাতার বিস্তৃতি ঘটবে, মদপান ব্যাপক হবে এবং ব্যভিচার ছড়িয়ে পড়বে। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং- ৮০]
عَنْ أَنَسٍ، قَالَ لأُحَدِّثَنَّكُمْ حَدِيثًا لاَ يُحَدِّثُكُمْ أَحَدٌ بَعْدِي سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ “ مِنْ أَشْرَاطِ السَّاعَةِ أَنْ يَقِلَّ الْعِلْمُ، وَيَظْهَرَ الْجَهْلُ، وَيَظْهَرَ الزِّنَا، وَتَكْثُرَ النِّسَاءُ وَيَقِلَّ الرِّجَالُ، حَتَّى يَكُونَ لِخَمْسِينَ امْرَأَةً الْقَيِّمُ الْوَاحِدُ
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি তোমাদের এমন একটি হাদীস বর্ণনা করব যা আমার পর তোমাদের কাছে আর কেউ বর্ণনা করবেন না। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, কিয়ামতের কিছু নিদর্শন হলঃ ইলম কমে যাবে, অজ্ঞতার প্রসার ঘটবে, ব্যভিচার ছড়িয়ে পড়বে, স্ত্রীলোকের সংখ্যা বেড়ে যাবে এবং পুরুষের সংখ্যা কমে যাবে, এমনকি প্রতি পঞ্চাশজন স্ত্রীলোকের জন্য মাত্র একজন পুরুষ হবে তত্ত্বাবধায়ক। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৮১]
গ) আল্লাহর নাম যতদিন থাকবে ততদিন কিয়ামত হবে নাঃ-
عَنْ أَنَسٍ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ” لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى لَا يُقَالَ فِي الْأَرْضِ: اللهُ، اللهُ “
হযরত আনাস রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, কিয়ামত সংঘটিত হবে না যে পর্যন্ত এমন অবস্থা সৃষ্টি হবে যে, পৃথিবীতে ‘আল্লাহ আল্লাহ’ বলার মত কেউ থাকবে না। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৪৮, সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-২২০৭]
কওমী মাদরাসা কেন টিকিয়ে রাখা প্রয়োজন?
আমি নির্ধিদ্ধায়, নিঃসংকোচে বলতে পারি যে, পৃথিবী টিকিয়ে রাখতে হলে কওমী মাদরাসা টিকাতে হবে। ধ্বংসের হাত থেকে জাতিকে রক্ষা করতে হলে ইলমে নববীর কাননগুলো সুরক্ষিত রাখতে হবে। হিফাযত করতে ইলমের প্রতিষ্ঠান ও ইলমের ধারক উলামায়ে কেরামকে।
কারণ, মাদরাসা আছে বলেইতো আল্লাহর নাম এখনো শিক্ষা দেয়া হচ্ছে। মক্তবের শিশুদের জবানে জবানে রব্বে কারীমের নাম উচ্চারিত হচ্ছে। মাদরাসা আছে বলেইতো ইলম জিন্দা আছে। কওমী মাদরাসার বরকতেই এখনো উলামা তৈরী হচ্ছে প্রতি বছর।
আর আল্লাহর নাম যতদিন থাকবে ততদিন কিয়ামত হবে না। কিয়ামত হবে না মানে? আসমানটা ভেঙ্গে পড়বে না, জমিনটা ধ্বসে যাবে না। পাহাড়গুলো তোলার মত উড়বে না। সূর্য প্রতিদিন পূর্ব দিগন্ত থেকে উদয় হবে। হারিয়ে যাবে নিয়মিত পশ্চিম দিগন্তে। কিন্তু ইলম না থাকলে, উলামা না থাকলে, আল্লাহর নাম না থাকলে, ধেয়ে আসবে প্রলয়ংকারী ধ্বংস। নেমে আসবে আঁধারের অমানিশা। ঘটবে প্রলয়ংকারী কিয়ামত।
এজন্য, দুনিয়াবী স্বার্থে হলেও মাদরাসা টিকিয়ে রাখা জরুরী। আল্লাহ তাআলা আমাদের ইলমের ধারক উলামা এবং ইলমের প্রতিষ্ঠান দ্বীনী মাদরাসার খিদমাত করে তার প্রিয়ভাজন হবার তৌফিক দান করুন। আমীন।