প্রচ্ছদ / কাফন-দাফন-জানাযা / লাশ কবরে রাখা ও দাফন শেষ পর্যন্ত কী কী দুআ সুন্নাত? কবরে তিন দিন পর্যন্ত পানি ছিটানোর হুকুম কী?

লাশ কবরে রাখা ও দাফন শেষ পর্যন্ত কী কী দুআ সুন্নাত? কবরে তিন দিন পর্যন্ত পানি ছিটানোর হুকুম কী?

প্রশ্ন

আপনাদের কবর জিয়ারত সম্পর্কে প্রকাশিত প্রশ্ন উত্তরটি খুব ভাল লেগেছে!
তবে আমার আরো কিছু কথা জানার প্রয়োজন আছে! তা এই যে লাশ কবরস্থানে আনার পর তাকে কবরে রেখে সম্পূর্ন রূপে মাটি দেওয়া পর্যন্ত এই পুরো সময়টাতে পড়ার জন্যে কোন নির্দিষ্ট দোয়া আছে কি?

যদি থাকে তবে তা কি?
আর দাফনের পর থেকে ৩ দিন সকালে কবরে গিয়ে পানি ছিটিয়ে আসার বিধান কি? আমাদের এলাকার লোকেরা মনে করে যে মুর্দা এই পানি পান করে থাকে! তাদের এই বিশ্বাষ কতটুকু সত্য? তা জানালে খুবি উপকৃত হতাম!

উত্তর

بسم الله الرحمن الرحيم

দুআ প্রসঙ্গে

লাশ কবরে আনার সময় তথা খাটিয়া বহন করে কবর পর্যন্ত আনার সময় নির্দিষ্ট কোন দুআ নেই। এই সময় চুপচাপ আখেরাতের ফিকির করে। মনে মনে মৃত ব্যক্তির জন্য দুআ করবে। কোন আওয়াজ করবে না।

ইবনু জুরাইজ রাহ. বলেন-

أَنّ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ كَانَ إِذَا تَبِعَ الْجنَازَةَ أَكْثَرَ السّكُاتَ، وَأَكْثَرَ حَدِيثَ نَفْسِهِ.

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন জানাযার পিছনে চলতেন তখন অধিক চুপ থাকতেন এবং চিন্তায় পূর্ণ মগ্ন থাকতেন। -মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস ৬২৮২; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ১১৩১৫

হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

لَا تُتْبَعُ الْجَنَازَةُ بِصَوْتٍ، وَلَا نَارٍ.

জানাযার পিছনে যেন শব্দ না করা হয় এবং আগুন না নেওয়া হয়। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩১৬৩; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৯৫১৫

সুনানে কুবরা বায়হাকী ও ইবনুল মুনযিরের আলআওসাতের এক বর্ণনা থেকে জানা যায়, সাহাবায়ে কেরামের আমল ব্যাপকভাবে এমনি ছিল; তাঁরা জানাযার পিছনে যাওয়ার সময় কোনো আওয়াজ করতেন না। -সুনানে কুবরা, বায়হাকী ৪/৭৪; আলআওসাত, ইবনুল মুনযির ৫/৪২২ (৩০৩৪)

এ সমস্ত হাদীস ও আছারের আলোকে ফকীহগণ বলেছেন, জানাযার পিছনে চলার সময় মূল কাজ হল আখেরাতের ফিকিরে থাকা। যিকির করতে চাইলে তা হবে অনুচ্চ স্বরে। এক্ষেত্রে যিকির করতে গিয়ে আওয়াজ উঁচু করা ঠিক নয়। -বাদায়েউস সানায়ে ২/৪৬; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৩৭।

তবে কবরে লাশ রাখার সময় দুআ পড়বে ‘বিসমিল্লাহি ওয়াআলা মিল্লাতি রাসূলিল্লাহ’।

عن ابن عمر قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: إذا وضعتم موتاكم فى قبورهم فقولوا بسم الله وعلى ملة رسول الله (المستدرك، كتاب الجنائز-2/523، سنن الترمذى- 1/202، رقم-1046، سنن ابن ماجه-1/111، رقم-155، مسند احمد-2/27، رقم-4812، 4990، 5233، 5370، 6111)

وقول واضعه بسم الله وعلى ملة رسول الله (الفتاوى الهنيدة- 1/166، جديد-1/227)

কবরে লাশ রাখার পর মাটি দেবার সময় পড়বে-‘মিনহা খালকনাকুম, ওয়াফীহা নুয়ীদুকুম ওয়ামিনহা নুখরিজুকুম তারাতান উখরা’।

عَنْ أَبِي أُمَامَةَ قَالَ: لَمَّا وُضِعَتْ أُمُّ كُلْثُومٍ ابْنَةُ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي الْقَبْرِ. قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: {مِنْهَا خَلَقْنَاكُمْ وَفِيهَا نُعِيدُكُمْ، وَمِنْهَا نُخْرِجُكُمْ تَارَةً أُخْرَى} [طه: 55

হযরত আবু উমামা রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন রাসূল সাঃ এর মেয়ে উম্মে কুলসুম রাঃ কে কবরে রাখা হয়,  তখন রাসূল সাঃ পড়েন মিনহা খালকনাকুম ওয়াফীহা নুয়ীদুকুম ওয়ামিনহা নুখরিজুকুম তারাতান উখরা।

[মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২২১৮৭, মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস নং-৩৪৩৩, সুনানুল কুবরা লিলবায়হাকী, হাদীস নং-৬৭২৬, জামেউল মাসানীদ ওয়াস সুনান, হাদীস নং-১১০২৪, মাযমাউজ যাওয়ায়েদ, হাদীস নং-৪২৩৯।

মাটি দেয়া শেষ হবার পর পড়বে-

اللَّهُمَّ اغْفِرْ لَهُ، اللَّهُمَّ ثَبِّتْهُ».(আল্লা-হুম্মাগফির লাহু, আল্লা-হুম্মা সাববিতহু)। অর্থাৎ “হে আল্লাহ! আপনি তাকে ক্ষমা করুন, হে আল্লাহ্‌ আপনি তাকে (প্রশ্নোত্তরের সময়) স্থির রাখুন।

এছাড়া মৃতের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনামূলক এবং সুওয়াল জওয়াব সহজ হবার জন্য যেকোন দুআই পড়া যাবে।

عَنْ عُثْمَانَ بْنِ عَفَّانَ، قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، إِذَا فَرَغَ مِنْ دَفْنِ الْمَيِّتِ وَقَفَ عَلَيْهِ، فَقَالَ: «اسْتَغْفِرُوا لِأَخِيكُمْ، وَسَلُوا لَهُ بِالتَّثْبِيتِ، فَإِنَّهُ الْآنَ يُسْأَلُ»

উসমান ইবনু আফফান (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃতের দাফন শেষ করে সেখানে দাঁড়িয়ে বলতেনঃ তোমাদের ভাইয়ের জন্য তোমরা ক্ষমা প্রার্থনা করো এবং সে যেন প্রতিষ্ঠিত থাকে সেজন্য দু‘আ করো। কেননা তাকে এখনই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। [সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৩২২১]

কবরে পানি ছিটানো

এটি একটি অহেতুক কাজ। কুরআন ও হাদীসে এর কোন ভিত্তি নেই। কবরের উপরে মাটিতে পানি দিলে কবরের ভিতরে থাকা ব্যক্তি কিভাবে পানি পান করবে? এটাতো সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও হাস্যকর কথা।

আর মৃত ব্যক্তির কি শুধু তিনদিনই পানি পানের প্রয়োজন? তাহলে শুধু তিনদিন কেন পানি দেয়া হয়?

এর মানে এটি একটি ভুয়া ও  বানোয়াট পদ্ধতি। যা সম্পূর্ণ বিদআত। এটাকে পরিত্যাগ করা আবশ্যক।

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক ও প্রধান মুফতী – মা’হাদুত তালীম ওয়াল  বুহুসিল ইসলামী ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম আমীনবাজার ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া ফারূকিয়া দক্ষিণ বনশ্রী ঢাকা।

0Shares

আরও জানুন

ইমামের সামনের সুতরা কি মাসবূক মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট?

প্রশ্ন ইমামের সুতরা মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট কি না? এবং ইমামের সুতরা মসবুক ব্যাক্তির জন্য যথেষ্ট …