প্রশ্ন
কুরবানি নিয়ে আমার বেশ কিছু জানার আছে
১ কুরবানি কখন ওয়াজিব হয়?
২। কোন এক পরিবারে তিন জন সন্তান থাকে। এদের তিনজন ই উপার্জনক্ষম এবং তিন জনের আলাদা সামর্থ্য থাকা সত্বেও যদি তিনজন মিলে বাবার নামে এক অংশ (বাবা বেচে আছেন) কুরবানি দেয় তা হবে কিনা?
৩। আলহামদুলিল্লাহ আমার বাবা প্রতিবছর করবানি আদায় করেন। আমি একজন ছাত্র। সম্প্রতি আমার বৃত্তির টাকা ও টিঊশনের টাকা মিলিয়ে আমার কিছু টাকা জমা হয়েছে।এই অবস্থায় আমার উপর আলাদাভাবে কুরবানি ওয়াজিব কিনা?? আর যদি হয় তাহলে বাবা যেই টাকাতে শরিক হন আমি ওখানে কিছু দিয়ে সাহায্য করলে আদায় হবে কিনা?? অথবা আদায়ের নিয়ম কি হবে তা বিস্তারিত জানালে ভালো হবে??
অতি তাড়াতাড়ি উত্তর জানালে ভালো হয় । এই বিষয়টা নিয়ে চিন্তিত আছি। অগ্রিম জাজাকুমুল্লাহ
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
১ এর উত্তর
কুরবানীর দিনসমূহে যার কাছে আবশ্যকীয় প্রয়োজন অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকে, তাহলে তার উপর কুরবানী করা আবশ্যক।
নেসাব পরিমাণ হল, সাড়ে বায়ান্ন তোলা বা এর সমমূল্য পরিমাণ অতিরিক্ত সম্পদ মজুদ থাকা। যা বর্তমান বাজার অনুপাতে প্রায় চল্লিশ হাজার টাকা।
(وَأَمَّا) (شَرَائِطُ الْوُجُوبِ) : مِنْهَا الْيَسَارُ وَهُوَ مَا يَتَعَلَّقُ بِهِ وُجُوبِ صَدَقَةِ الْفِطْرِ دُونَ مَا يَتَعَلَّقُ بِهِ وُجُوبُ الزَّكَاةِ،………. وَالْمُوسِرُ فِي ظَاهِرِ الرِّوَايَةِ مَنْ لَهُ مِائَتَا دِرْهَمٍ أَوْ عِشْرُونَ دِينَارًا أَوْ شَيْءٌ يَبْلُغُ ذَلِكَ سِوَى مَسْكَنِهِ وَمَتَاعِ مَسْكَنِهِ وَمَرْكُوبِهِ وَخَادِمِهِ فِي حَاجَتِهِ الَّتِي لَا يَسْتَغْنِي عَنْهَا، فَأَمَّا مَا عَدَا ذَلِكَ مِنْ سَائِمَةٍ أَوْ رَقِيقٍ أَوْ خَيْلٍ أَوْ مَتَاعٍ لِتِجَارَةِ أَوْ غَيْرِهَا فَإِنَّهُ يُعْتَدُّ بِهِ مِنْ يَسَارِهِ،(الفتاوى الهندية، كتاب الأضحية، فصل شرائط الوجوب-5/292، رد المحتار، كتاب الاضحية-9/452-453، مجمع الانهر-4/167)
২ এর উত্তর
পরিবারের যত প্রাপ্ত বয়স্ক সদস্যের নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকবে, তাদের প্রত্যেকের উপর আলাদা কুরবানী করা আবশ্যক। শুধু এক অংশ গ্রহণ করার দ্বারা কুরবানীর দায়িত্ব মুক্ত হবে না। বরং কুরবানী না করার গোনাহ হবে।
তাই পরিবারে যত সদস্যের উপর কুরবানী আবশ্যক, তাদের সকলেরই কুরবানীতে স্বতন্ত্র অংশ রাখতে হবে। বাবার নামে কুরবানী দিলে তাদের দায়িত্ব মুক্ত হবে না। বরং কুরবানী না করার গোনাহ হবে।
أَلَّا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِزْرَ أُخْرَىٰ [٥٣:٣٨
কিতাবে এই আছে যে,কোন ব্যক্তি কারও বোঝা নিজে বহন করবে না। [সূরা নাজম-৩৮}
فتجب التضحية على حر مسلم مقيم موسر (تنوير الأبصار مع الدر-9/452-453
الأضحية واجبة على كل حر مسلم مقيم موسر فى يوم الأضحى عن نفسه (الهداية-4/443
৩ এর উত্তর
যদি আপনার জমানো টাকা নিসাব পরিমাণ সম্পদের সমমানের হয়, এবং তা কুরবানীর দিনসমূহের প্রয়োজন অতিরিক্ত হয়, তাহলে কুরবানী করা ওয়াজিব।
এক্ষেত্রে একটি পশুতে যেহেতু সাতজন অংশগ্রহণ করতে পারে। তাই এক পশু ক্রয় করে, তাতে পরিবারের যত সদস্যের উপর কুরবানী করা আবশ্যক, তাদের জন্য একটি করে অংশ রাখলে এক পশু দিয়েই সকলের কুরবানী আদায় হয়ে যাবে। তবে এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে, যেন কারো অংশই এক সপ্তামাংশ থেকে কম না হয়।
عَنْ جَابِرٍ، قَالَ: خَرَجْنَا مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُهِلِّينَ بِالْحَجِّ: «فَأَمَرَنَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ نَشْتَرِكَ فِي الْإِبِلِ وَالْبَقَرِ، كُلُّ سَبْعَةٍ مِنَّا فِي بَدَنَةٍ
জাবির রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনম, আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে হজ্জের ইহরাম বেঁধে রওনা হলাম। অতঃপর তিনি উট ও গরুতে আমাদের মধ্যে সাতজন করে শরীক হবার (ও কুরবানী করার) নির্দেশ দিলেন। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৩১৮, ৩০৪৯]
ولو لأحدهم أقل من سبع لا يجز عن أحد (الدر المختار مع رد المحتار-9/457)
واذا كان الشركاء فى البدنة أو البقرة ثمانية لا يجزئهم، لأن نصيب أحدهم أقل من السبع (الفتاوى التاتارخانية، كتاب الأضحية، الفصل الثامن فيما يتعلق بالشركة فى الضحايحا-17/453، رقم-2780
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক ও প্রধান মুফতী – মা’হাদুত তালীম ওয়াল বুহুসিল ইসলামী ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম আমীনবাজার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া ফারূকিয়া দক্ষিণ বনশ্রী ঢাকা।