প্রচ্ছদ / প্রশ্নোত্তর / মৃত্যুর আগের ও পরের বন্টিত ও অবন্টিত সম্পদের মিরাস পদ্ধতি

মৃত্যুর আগের ও পরের বন্টিত ও অবন্টিত সম্পদের মিরাস পদ্ধতি

প্রশ্ন

শ্রদ্ধেয় মুফতী সাহেব। উপরের প্রশ্নটি আমার ছিল। তাই এখানে আরো একটি বিষয় ক্লিয়ার করলে উপকৃত হতাম ।

আমার বাবা জীবিত থাকতে স্বজ্ঞানে তাঁর চাকরী কোম্পানীর পেনশনের নথিপত্রে তাঁর ৩ ছেলে,২ মেয়ে ও ১ স্ত্রীর নামে শতাংশ হিসেবে যা বন্টন করে গেছেন তা এইঃ

১ স্ত্রী = ২০ %

৩ ছেলে ২০% করে = ৬০%

২ মেয়ে ১০ করে = ২০%

এই মোট = ১০০%

যা শরীয়তের থেকে কিছুটা কম বেশি। যেমনঃ শরীয়াত অনুসারে মোট সম্পত্তির ৮ ভাগের ১ ভাগ হিসেবে স্ত্রী শতাংশ মোতাবেক পাবে = ১২.৫% কিন্তু আব্বু দিয়ে গেছেন ২০%।

অবশিষ্ট সম্পত্তি (১০০-১২.৫)=৮৭.৫ এর ৪ ভাগ করলে (৮৭.৫/৪=২১.৮৭৫%) শতাংশ

হিসেবে ১ ছেলে পায় ২১.৮৭৫% কিন্তু আব্বু দিয়ে গেছেন ২০% ।

আর ১ ভাইয়ের ২১.৮৭৫% শতাংশ হলে দুই বোনের এক এক জন শতাংশ হিসেবে পাচ্ছে

২১.৮৭৫/২=১০.৯৩৭৫% কিন্তু আব্বু দিয়ে গেছেন ১০% ।

এখন আমার প্রশ্ন হলো শরীয়ত অনুযায়ী কম বেশি হওয়া সত্ত্বেও জীবিত থাকতে আব্বুর স্বজ্ঞানে বন্টন করা এই পদ্ধতিতেই কি পেনশন বন্টন করতে হবে নাকি শরীয়ত অনুযায়ীই করতে হবে?

পেনশন ব্যতিত তাঁর চাকুরী কোম্পানী থেকে প্রাপ্ত অন্যান্য এককালীন টাকা বা অনুদানকেও সেই দুই পদ্ধতির কোন পদ্ধতিতে বন্টন করতে হবে?

পেনশন ব্যতিত তাঁর চাকুরী কোম্পানী থেকে প্রাপ্ত অন্যান্য এককালীন টাকা বা অনুদানকেও সেই দুই পদ্ধতির কোন পদ্ধতিতে বন্টন করতে হবে? যদিও পেনশন ছাড়া কোং কর্তৃক অন্যান্য অনুদানের ক্ষেত্রে তিনি কি পদ্ধতি লিখে গিয়েছেন তা আমি নিশ্চিত করে এখনো জানতে পারি নি ।

চাকুরী কোং এর সুবিধাধি ব্যতিত তাঁর স্থাবর ও বাইরের অন্যান্য অস্হাবর সম্পত্তিতে তাঁর কোনো নির্দেশনা ছিল না । তাই এক্ষেত্রে কোন পদ্ধতিতে বন্টন করতে হবে ?

দয়া করে এ বিষয়টিও ক্লিয়ার করলে কৃতজ্ঞ থাকব। জাযাকাল্লাহ ।

উত্তর

بسم الله الرحمن الرحيم

প্রথমে একটি কথা বুঝে নিন, প্রশ্নের উত্তর দেয়া হয় প্রশ্নকারীর দেয়া বিবরণ ও তথ্যের উপর নির্ভর করে। তাই আপনি প্রশ্ন করার সময় যদি কোন তথ্য উল্লেখ করতে ভুলে যান, তাহলে উত্তরে উক্ত বিষয়টি পরিস্কার করে বলা হবে না এটাই স্বাভাবিক। যাইহোক ইতোপূর্বের প্রশ্নে আপনি এখন যেভাবে দুইভাগ করে প্রশ্ন করেছেন, সেভাবে করেননি, তাই বিস্তারিত উত্তর দেয়া হয়নি।

আপনার পিতা মৃত্যুর সময় কতজন নিকত্মীয় জীবিত ছিলেন?

আপনার বিবরণ অনুযায়ী-

১ স্ত্রী।

৩ ছেলে।

২ মেয়ে।

সম্পদ কয় ধরণের?

আপনার বিবরণ অনুযায়ী দুই ধরণের। যথা-

১-আপনার পিতা জীবিত ও সুস্থ্য অবস্থায় আত্মীয়দের নামে কিছু অংশ নিজেই বন্টন করে গেছেন।

২-সুস্থ্য ও জীবিত অবস্থায় কিছু সম্পদ বন্টন করে যাননি।

এবার উত্তরের দিকে খেয়াল করুন-

আপনার পিতা সুস্থ্য অবস্থায় যে সম্পদ পরিবারের সদস্যের মাঝে বন্টন করেছেন যদিও তা তার মৃত্যু পরবর্তী শরীয়তের মিরাস বন্টনের সাথে সাযুজ্যপূর্ণ নয়, তবু এর দ্বারা যদি আপনার পিতা কারো উপর অবিচার করার মানসিকতায় না করে থাকেন, তাহলে তিনি গোনাহগার হননি। সেই সাথে তার বন্টনকৃত পদ্ধতি অনুসারেই তা বন্টিত করে মিরাসপ্রাপ্তদের দেয়া হবে। এর কোন ব্যত্যয় করা হবে না।

সহজ কথায়, আপনার পিতা জীবিত সুস্থ্য অবস্থায় যে সম্পদ যেভাবে বন্টন করে গেছেন, উক্ত সম্পদ সেভাবেই বন্টিত হবে। মৃত্যু পরবর্তী শরয়ী মিরাসী পদ্ধতি এতে কার্যকর হবে না।

وفى الهندية- لا بأس به اذا لم يقصد به الاضرار وان قصد به الاضرار سوىبينهم وهو المختار- (الفتاوى الهندية ٤/٣۹۱

 وفى الردالمحتار- لو وهب رجل شيأ لأولاده فى الصحة واراد بفضيل البعض على البعض………….عن ابى حنيفة لابأس به اذا كان التفضيل لزيادة فضل له فى الدين وان كان سواء يكره(ردالمحتار )١٢/٦٠٨

তথ্যসূত্র

১-ফাতওয়া আলমগীরী-৪/৩৯১

২-ফাতওয়া শামী-১২/৬০৮

৩-ফাতহুল বারী-৫২১৪

৪-ফাইজুল বারী-৩/৩৬৮

৫-আহসানুল ফাতওয়া ৭/২৫৬

৬-ফাতওয়া রহিমীয়া ৯/৩১৪

৭-ফাতওয়া মুফতী মাহমুদ ৯/২৪৮

৮-ইমদাদুল ফাতওয়া ৩/৪৭০

৯-কেফায়াতুল মুফতী ৭/১৮০

১০-ফাতওয়ায়ে মাহমুদিয়া ১৬/৪৯৬

আর যেসব সম্পদ আপনার পিতা জীবিত অবস্থায় বন্টন করে যাননি। সেসব সম্পদ মৃত্যুর পর শরয়ী মিরাসী পদ্ধতিতে বন্টন করা হবে। এতে নিজের থেকে কোন পদ্ধতি আবিস্কার করা যাবে না।

যদি আপনার পিতা মৃত্যুকালে কেবল আপনার মা, আর তিন ছেলে আর দুই মেয়ে রেখে মারা গিয়ে থাকেন। আর কোন সন্তান বা মিরাস পায় এমন আত্মীয় রেখে না যান।

তাহলে যেসব সম্পদ আপনার পিতা জীবিত অবস্থায় বন্টন করে যাননি, তার সমুদয় সম্পদ, চাই তা নগদ অর্থ হোক বা স্থাবর সম্পত্তি হোক বা অন্য কোন কিছু হোক, সব কিছুর আট ভাগের এক ভাগ পাবে আপনার মাতা।

এরপর বাকি যা সম্পদ থাকবে, তার পুরোটাকে চার ভাগ করে এক ভাগ পাবে আপনার দুই বোন। আর বাকি তিন ভাগ পাবেন আপনারা তিন ভাই।

আশা করি এবার বিষয়টি পরিস্কার হয়েছে।

وَلَهُنَّ الرُّبُعُ مِمَّا تَرَكْتُمْ إِن لَّمْ يَكُن لَّكُمْ وَلَدٌ ۚ فَإِن كَانَ لَكُمْ وَلَدٌ فَلَهُنَّ الثُّمُنُ مِمَّا تَرَكْتُم ۚ مِّن بَعْدِ وَصِيَّةٍ تُوصُونَ بِهَا أَوْ دَيْنٍ ۗ [٤:١٢]

স্ত্রীদের জন্যে এক-চতুর্থাংশ হবে ঐ সম্পত্তির, যা তোমরা ছেড়ে যাও যদি তোমাদের কোন সন্তান না থাকে। আর যদি তোমাদের সন্তান থাকে, তবে তাদের জন্যে হবে ঐ সম্পত্তির আট ভাগের এক ভাগ, যা তোমরা ছেড়ে যাও ওছিয়্যতের পর, যা তোমরা কর এবং ঋণ পরিশোধের পর।  {সূরা নিসা-১২}

يُوصِيكُمُ اللَّهُ فِي أَوْلَادِكُمْ ۖ لِلذَّكَرِ مِثْلُ حَظِّ الْأُنثَيَيْنِ ۚ [٤:١١

আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের সন্তানদের সম্পর্কে আদেশ করেনঃ একজন পুরুষের অংশ দু’জন নারীর অংশের সমান। {সূরা নিসা-১১}

والله اعلم بالصواب

উত্তর লিখনে

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

ইমেইল- [email protected]

[email protected]

0Shares

আরও জানুন

ইমামের সামনের সুতরা কি মাসবূক মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট?

প্রশ্ন ইমামের সুতরা মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট কি না? এবং ইমামের সুতরা মসবুক ব্যাক্তির জন্য যথেষ্ট …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *