প্রশ্ন
From: মুহাম্মদ কবীর
বিষয়ঃ বিবাহ সম্পর্কে
প্রশ্নঃ
আসসালামু আলাইকুম,
একটি স্পর্শ কাতর মাস’আলা জানার জন্য বার্তাটি দিলাম। আশা করি ইসলামের দৃষ্টিতে সঠিক দিক-নির্দেশনাটি দিবেন।
আমার পরিচিত একজন পুরুষ- শিশু থাকা কালে- তার সমবয়সী আরেক জন বালকের সাথে পরস্পরের লিঙ্গ পরস্পরের পায়ুপথে লাগায়। কিন্তু তা কেউই প্রবেশ করায়নি। এর কিছুদিন পর এক সময় অপর পুরুষটি সাবালক হওয়ার পরপরই বিয়ে করে এবং তার একটি কন্যা সন্তান হয়। ইতোমধ্যে মেয়েটি সাবালিকা হয়েছে।
কিন্তু পরিচিত পুরুষটি পড়া-শুনায় লেগে থাকে। সুতরাং সে বিয়ে করেনি। এখন সে পড়াশুনা শেষ করে একটা ভাল অবস্থায় আছে। এই অবস্থায় সে চায় অপর পুরুষের সেই মেয়েটিকে বিবাহ কিন্তু আমার কাছে এর মাস’আলা জানা নাই। তাই তার সাথে পরমর্শ্য করেই এর মাস’আলাটা জানার জন্য আপনার/আপনাদের কাছে বার্তা দিলাম।
এখন প্রশ্ন হল- “এই পুরুষটির জন্য কি ঐ পুরুষের কন্যাটি হারাম হয়ে যাবে?”
আশা করি সঠিক মাস’আলাটা জানাবেন।
(আমি বললাম এই মেয়েটিকেই বিয়ে করার দরকার কি? অন্য কোথাও করে নিক। কিন্তু মেয়েটির তার খুব পছন্দ হয়েছে। তাই শরিয়তের বাধা না থাকলে সে এই মেয়েটিকে্ই বিয়ে করতে চায়! আর যদি শরিয়ত বাধা দেয় তাহলে সে ফিরে আসবে।)
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
বিয়ে করতে পারে। কোন সমস্যা নেই।
যদিও পুরুষে পুরুষে এহেন ঘৃণ্য কাজ করা গর্হিত পাপ কাজ। কিন্তু এর দ্বারা বিবাহ সম্পর্কিত কোন হুরমত সাব্যস্ত হয় না।
وَلَا تَنكِحُوا مَا نَكَحَ آبَاؤُكُم مِّنَ النِّسَاءِ إِلَّا مَا قَدْ سَلَفَ ۚ إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَمَقْتًا وَسَاءَ سَبِيلًا [٤:٢٢]
حُرِّمَتْ عَلَيْكُمْ أُمَّهَاتُكُمْ وَبَنَاتُكُمْ وَأَخَوَاتُكُمْ وَعَمَّاتُكُمْ وَخَالَاتُكُمْ وَبَنَاتُ الْأَخِ وَبَنَاتُ الْأُخْتِ وَأُمَّهَاتُكُمُ اللَّاتِي أَرْضَعْنَكُمْ وَأَخَوَاتُكُم مِّنَ الرَّضَاعَةِ وَأُمَّهَاتُ نِسَائِكُمْ وَرَبَائِبُكُمُ اللَّاتِي فِي حُجُورِكُم مِّن نِّسَائِكُمُ اللَّاتِي دَخَلْتُم بِهِنَّ فَإِن لَّمْ تَكُونُوا دَخَلْتُم بِهِنَّ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ وَحَلَائِلُ أَبْنَائِكُمُ الَّذِينَ مِنْ أَصْلَابِكُمْ وَأَن تَجْمَعُوا بَيْنَ الْأُخْتَيْنِ إِلَّا مَا قَدْ سَلَفَ ۗ إِنَّ اللَّهَ كَانَ غَفُورًا رَّحِيمًا [٤:٢٣]
وَالْمُحْصَنَاتُ مِنَ النِّسَاءِ إِلَّا مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ ۖ كِتَابَ اللَّهِ عَلَيْكُمْ ۚ وَأُحِلَّ لَكُم مَّا وَرَاءَ ذَٰلِكُمْ [٤:٢٤]
যে নারীকে তোমাদের পিতা-পিতামহ বিবাহ করেছে তোমরা তাদের বিবাহ করো না। কিন্তু যা বিগত হয়ে গেছে। এটা অশ্লীল, গযবের কাজ এবং নিকৃষ্ট আচরণ।
তোমাদের জন্যে হারাম করা হয়েছে তোমাদের মাতা, তোমাদের কন্যা, তোমাদের বোন, তোমাদের ফুফু, তোমাদের খালা, ভ্রাতৃকণ্যা; ভগিনীকণ্যা তোমাদের সে মাতা, যারা তোমাদেরকে স্তন্যপান করিয়েছে, তোমাদের দুধ-বোন, তোমাদের স্ত্রীদের মাতা, তোমরা যাদের সাথে সহবাস করেছ সে স্ত্রীদের কন্যা যারা তোমাদের লালন-পালনে আছে। যদি তাদের সাথে সহবাস না করে থাক, তবে এ বিবাহে তোমাদের কোন গোনাহ নেই। তোমাদের ঔরসজাত পুত্রদের স্ত্রী এবং দুই বোনকে একত্রে বিবাহ করা; কিন্তু যা অতীত হয়ে গেছে। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাকরী, দয়ালু।
এবং নারীদের মধ্যে তাদের ছাড়া সকল সধবা স্ত্রীলোক তোমাদের জন্যে নিষিদ্ধ; তোমাদের দক্ষিণ হস্ত যাদের মালিক হয়ে যায়-এটা তোমাদের জন্য আল্লাহর হুকুম। এদেরকে ছাড়া তোমাদের জন্যে সব নারী হালাল করা হয়েছে, [সূরা নিসা-২২,২৩,২৪]
عَنْ أَبِي مُوسَى قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” إِذَا أَتَى الرَّجُلُ الرَّجُلَ فَهُمَا زَانِيَانِ، وَإِذَا أَتَتِ الْمَرْأَةُ الْمَرْأَةَ فَهُمَا زَانِيَانِ “
হযরত আবূ মুসা আশআরী রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, যে পুরুষ পুরুষের সাথে নোংরা কাজে লিপ্ত হয়, উভয়ে জিনাকারী সাব্যস্ত হবে। তেমনি যে নারী আরেক নারীর সাথে কুকর্মে লিপ্ত হয় উভয়ে জিনাকারী সাব্যস্ত হবে। {শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-৫০৭৫, সুনানুল কুবরা লিলবায়হাকী, হাদীস নং-১৭০৩৩}
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” اقْتُلُوا الْفَاعِلَ وَالْمَفْعُولَ بِهِ، فِي عَمَلِ قَوْمِ لُوطٍ،
হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, লুত আঃ এর কওমের মত কুকর্মে লিপ্ত উভয়কে হত্যা করে ফেল। {মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২৭২৭, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-২৫৬১, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪৪৬২, সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-১৪৫৬, সুনানে দারাকুতনী, হাদীস নং-৩২৩৪}
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।
ইমেইল– [email protected]