প্রচ্ছদ / দিফায়ে ফিক্বহে হানাফী / বিতর নামাযে দুআয়ে কুনুত কখন কিভাবে পড়তে হয়?

বিতর নামাযে দুআয়ে কুনুত কখন কিভাবে পড়তে হয়?

প্রশ্ন

From: Muhammad Habib
বিষয়ঃ Bitir namaz

প্রশ্নঃ
আশা করি ভালো আছেন হুজুর, আমার জানার বিষয় হল যে বিতির নামাযে দু’আয়ে কুনুত কখন কি ভাবে পরব দলিল সহ জানালে উপকৃত হতাম .Maaf korben amar ager proshne ekti vul chilo.

উত্তর

بسم الله الرحمن الرحيم

দুআয়ে কুনুত বিতিরের তৃতীয় রাকাতে সূরা ফাতিহা ও সূরা মিলানোর পর তাকবীর বলে নতুন করে হাত উঠিয়ে তারপর হাত বেঁধে রুকুর আগে পড়তে হয়।

عَاصِمٌ الأَحْوَلُ، قَالَ سَأَلْتُ أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ ـ رضى الله عنه ـ عَنِ الْقُنُوتِ، فِي الصَّلاَةِ فَقَالَ نَعَمْ‏.‏ فَقُلْتُ كَانَ قَبْلَ الرُّكُوعِ أَوْ بَعْدَهُ قَالَ قَبْلَهُ‏.‏ قُلْتُ فَإِنَّ فُلاَنًا أَخْبَرَنِي عَنْكَ أَنَّكَ قُلْتَ بَعْدَهُ، قَالَ كَذَبَ إِنَّمَا قَنَتَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بَعْدَ الرُّكُوعِ شَهْرًا،

আসিমুল আহওয়াল রহ. বলেন: আমি হযরত আনাস রা.কে নামাযে দুআ কুনূত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন: হ্যাঁ, (নামাযে দুআ কুনূত পড়বে)। আমি বললাম: রুকুর আগে না পরে? তিনি বললেন: রুকুর আগে। আমি বললাম: অমুক আমাকে আপনার সম্পর্কে খবর দিয়েছে যে, আপনি বলেছেন রুকুর পরে। তিনি বললেন: সে মিথ্যা বলেছে। রসূলুল্লাহ স. রুকুর পরে মাত্র এক মাস দুআ কুনূত পড়েছেন। (বুখারী: ৩৭৯৬)

সহীহ। শাব্দিক কিছু তারতম্যসহ এ হাদীসটি মুসলিম,আবু দাউদ এবং নাসাঈ শরীফেও বর্ণিত আছে। (জামিউল উসূল: ৩৫৩১)

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ أَنَّهُ كَانَ يَقْرَأُ فِي آخِرِ رَكْعَةٍ مِنَ الْوِتْرِ قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ ثُمَّ يَرْفَعُ يَدَيْهِ وَيَقْنُتُ قَبْلَ الرَّكْعَةِ قَالَ الْبُخَارِيُّ هَذِهِ الْأَحَادِيثُ كُلُّهَا صَحِيحَةٌ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا يُخَالِفُ بَعْضُهَا بَعْضًا , وَلَيْسَ فِيهَا تَضَادٌ لِأَنَّهَا فِي مَوَاطِنَ مُخْتَلِفَةٍ

হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রা. বিতিরের শেষ রাকাতে সূরা ইখলাস পড়তেন। অতঃপর উভয় হাত উত্তোলন করতেন এবং রুকুর পূর্বে দুআ কুনূত পড়তেন। ইমাম বুখারী রহ. বলেন: রসূলুল্লাহ স.-এর এ হাদীসগুলো সবই সহীহ যার একটি অপরটির বিরোধী নয়; এতে কোন বৈপরীত্যও নেই। কেননা, (দৃশ্যতঃ যে বৈপরীত্য লক্ষ্য করা যায়) তা স্থানের বিভিন্নতার কারণে হয়েছে। (জুযউ রফইল ইয়াদাইন: ৯৬)

ইমাম বুখারী রহ. তাঁর ‘জুযউ রফইল ইয়াদাইন’ কিতাবে হাদীসটি উল্লেখ করে এটাকে সহীহ বলে মন্তব্য করেছেন। হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রা. থেকে অনুরূপ বর্ণনা ইবনে আবী শাইবাতেও নির্ভরযোগ্য সনদে বর্ণিত হয়েছে। (হাদীস: ৭০২৭ ও ৭০২৮)

عَنْ عَبْدِ اللهِ ؛ أَنَّهُ كَانَ يَرْفَعُ يَدَيْهِ فِي قُنُوتِ الْوِتْرِ

হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত: তিনি বিতির নামাযের দুআয়ে কুনূতের সময়ে হাত উঠাতেন। (ইবনে আবী শাইবা: ৭০২৭)

এ হাদীসের রাবীগণ সবাই-ই বুখারী/মুসলিমের রাবী। শুধু লাইস বিন আবী সুলাইম কিছুটা দুর্বল। তবে এ হাদীসের বিষয়বস্তু অনেক সহীহ হাদীস দ্বারা সমর্থিত। সুতরাং হাদীসটি সহীহ লিগইরিহী। ইবনে আবী শাইবা ভিন্ন আরেকটি সনদেও উক্ত হাদীসটি বর্ণনা করেছেন (হাদীস নম্বর- ৭০২৮)

أُبَيِّ بْنِ كَعْبٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يُوتِرُ بِثَلَاثِ رَكَعَاتٍ، كَانَ يَقْرَأُ فِي الْأُولَى بِسَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الْأَعْلَى، وَفِي الثَّانِيَةِ بِقُلْ يَا أَيُّهَا الْكَافِرُونَ، وَفِي الثَّالِثَةِ بِقُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ، وَيَقْنُتُ قَبْلَ الرُّكُوعِ، فَإِذَا فَرَغَ، قَالَ عِنْدَ فَرَاغِهِ «سُبْحَانَ الْمَلِكِ الْقُدُّوسِ»، ثَلَاثَ مَرَّاتٍ يُطِيلُ فِي آخِرِهِنَّ (رَوَاه النَّسَائِىْ فِىْ بَابِ ذِكْرِ اخْتِلَافِ أَلْفَاظِ النَّاقِلِينَ لِخَبَرِ أُبَيِّ بْنِ كَعْبٍ فِي الْوِتْرِ)

হযরত উবাই বিন কা’ব রা. বলেন: রসূলুল্লাহ স. তিন রাকাত বিতির পড়তেন। ১ম রাকাতে সূরা আ’লা, দ্বিতীয় রাকাতে সূরা কাফিরুন এবং তৃতীয় রাকাতে সূরা ইখলাস পড়তেন। আর রুকুর পূর্বে কুনূত পাঠ করতেন। নামায শেষ করে سبحان الملك القدوس দুআটি তিনবার বলতেন। আর শেষ বারে টেনে পড়তেন। (নাসাঈ: ১৭০১)

সহীহ। আলী বিন মাইমূন ব্যতীত এ হাদীসের রাবীগণ সবাই-ই বুখারী-মুসলিমের রাবী। আর আলী বিন মাইমূন ثقة “নির্ভরযোগ্য”। (তাকরীব: ৫৩৯২)

জামিউল উসূলের তাহকীকে শায়খ আব্দুল কাদির আরনাউত বলেন: هو حديث صحيح “হাদীসটি সহীহ”। (জামিউল উসূল: ৪১৪৭)

শায়খ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। (সহীহ-জঈফ নাসাঈ: ১৬৯৯) শাব্দিক কিছু তারতম্যসহ এ হাদীসটি আবু দাউদ: ১৪৩০ এবং ইবনে মাজাহ: ১১৭১ নম্বরেও বর্ণিত হয়েছে।

عَنْ عَلْقَمَةَ «أَنَّ ابْنَ مَسْعُودٍ وَأَصْحَابَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، كَانُوا يَقْنُتُونَ فِي الْوَتْرِ قَبْلَ الرُّكُوعِ»

হযরত আলকামা রহ. বলেন: হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রা. এবং সাহাবায়ে কিরাম রুকুর পূর্বে কুনূত পড়তেন। (ইবনে আবী শাইবা: ৬৯৮৩)

সহীহ। এ হাদীসের রাবীগণ সবাই-ই বুখারী/মুসলিমের রাবী। হাফেজ ইবনে ইবনে হাজার আসকালানী রহ. হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। (আদদিরায়াহ: বিতির নামায অধ্যায়)

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।

ইমেইল[email protected]

0Shares

আরও জানুন

আজানের সময় বা খানা খাওয়া ও বাথরুমে গমণ এবং স্বাভাবিক অবস্থায় মাথায় কাপড় রাখার হুকুম কী?

প্রশ্ন আমার চারটি বিষয়ে জানার ছিলো : ________ ১, বাথরুমে অবস্থানকালীন সময়ে মাথায় কাপড় দেওয়ার …